খোয়াব
খোয়াব
গল্প: খোয়াব
লেখা: কামরান চৌধুরী
-"কি মিয়া!এতক্ষন ধইরা কি লাইট লাগাইতাসো?দেহি তুমি নাইমা খাড়াও,আমি লাগাইতাসি.."
-" না হুজুর,আমি লাগাইতে পারমু,আপনার বয়স অইছে,যদি মই বাইয়া পইড়া যান তহন অনেক ব্যাথা পাইবেন! আমি মাশাআল্লাহ্ অহনও জুয়ান আছি আমি পারমু"
- " দূর! মিয়া, এগুলান কি কও তুমি!আমি কি অহনও এতো বুইড়া অইসি নি যে আমার মই বাইয়া উঠার বল নাই?"
- " না, হুজুর আফনে খাড়ান। আমিই লাগামু। কি ব্যাপার লাগে না ক্যান?"
এটি বলে মুয়াজ্জিন আনাস মসজিদের বাইরের দরজার উপরের এনার্জি বাল্বটি লাগানোর চেষ্টা করছেন।অন্যদিকে ফরিদ নগর জামে মসজিদের ইমাম মওলানা আবদুর রহমান তার মুয়াজ্জিনের লাইট লাগানো দেখছেন এবং ভাবছেন " আইজকা বাপ! তোমারে লাইট লাগাইয়া ছাড়মু আমি, প্রতিদিন নিশি রাইতে মসজিদের লাইট খুইলা নিয়া তুমি তোমার রুমে গিয়া লাগাও, আইজকা তোমার খবর আছে!"
এদিকে মুয়াজ্জিন আনাস চেষ্টায় করে যাচ্ছেন বাল্বটা লাগানোর কিন্তু কিছুতেই বাল্বটা ঠিকমতো রিংয়ে ঢুকছে না।
-"কি মিয়া! অইসে? মাগরিবের নামাজের টাইম হইয়া যাইতাসে, তাড়াতাড়ি করো?"
-"জ্বি হুজুর করতাসি,বুঝলাম না লাইটটা ঢুকতেসে না ক্যান!মনে হয় রিংয়ের কিছু অইসে!"
-"প্রত্যেকদিন লাইটটা খোলাখুলি করলে লাইটের রিং তো খারাপ অইবই?"
এটি শুনে মুয়াজ্জিন আনাস হঠাৎ করে বাল্বটি ধরে ঘাবড়ে যাওয়ার ভান করে দাঁড়িয়ে গেছে..
-"ঐ দেহো,আবার খাড়াইয়া গেসে!"
- " হুজুর, কি কন এগুলা? প্রত্যেকদিন লাইট খোলাখুলি করে মানে?"
ইমাম আবদুর রহমান তখন একটু গরম হয়ে বলে উঠলোঃ
- " আমি জানি মিয়া কে খোলাখুলি করে, রাইত ২টার পরে মসজিদের বাল্ব নিয়া যে তুমি তোমার রুমে গিয়া লাগাও, এইডা আমি ভালো কইরা জানি!"
মুয়াজ্জিন আনাস তখন অবাক হয়ে বললোঃ
- " দেহেন হুজুর, আফনে আমার বাপের বয়সী, না বুইজ্জা মিছা কথা কইয়েন না! "
- " চুপ কর বেয়াদপ, আমি মিছা কথা কই? নাকি তুই কস?"
এটি শুনে মুয়াজ্জিন মই থেকে নেমে বাল্বটা হাতে নিয়ে ইমাম রহমানের দিকে তেড়ে আসলো এবং বিষয়টা তাদের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতিতে রুপ নিলো।ঝগড়ার এক পর্যায়ে মুয়াজ্জিন আনাস তার হাতে নেওয়া বাল্বটি মাটিতে ছুড়ে মারলো এবং বাল্বটি ভেঙ্গে গেলো!!
বাল্ব ছুড়ে দেয়ার শব্দ শুনে ইমাম রহমানের হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। তিনি তার শোয়া থেকে উঠে বসলেন এবং ভাবতে লাগলেন " আস্তাগফিরুল্লাহ! এতক্ষন ধইরা আমি তাইলে খোয়াব দেখতাছিলাম?"
এটি বলে ইমাম সাহেব কিছুক্ষন ভাবতে লাগলেন এবং বিছানা থেকে উঠে তিনি ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং দেখলেন ঘড়িতে তখন রাত ২টা বাজছে। তিনি টর্চ হাতে নিয়ে মসজিদের দিকে গেলেন এবং মসজিদের কিছু পথ সামনে গিয়ে দূর থেকে মসজিদের বাইরে দরজার উপরে টর্চের আলো মারলেন। তারপর দেখতে পারলেন মসজিদের বাতিটি জ্বলছে। তারপর তিনি টর্চ বন্ধ করে মসজিদের সামনে মুয়াজ্জিন আনাসের ঘরের সামনে গিয়ে দেখলেন, মুয়াজ্জিন আনাসের রুমের দরজা বন্ধ এবং তার রুমও অন্ধকার। এটি দেখে ইমাম সাহেব একটু হাসলেন এবং ভাবতে লাগলেন " কি ভয়ানক খোয়াব দেখলাম! "
ইমাম রহমান তার ঘরে ফিরে গিয়েছেন। তার শয়ন কক্ষের দরজা বন্ধ করতেই তার বউ সাহেরা খাতুন বলে উঠলেনঃ
-"এতো রাইতে টর্চ নিয়া কই গেছিলেন?"
- " খোয়াব দেখতে! "
ইমাম সাহেব এই কথাটি বলে তিনি তার বউয়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। এবং তার বউ তখন বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ইমাম সাহেবের দিকে কিছুক্ষন তাকালেন এবং তিনিও শুয়ে পড়লেন।
