ভুঁড়ি কান্ড
ভুঁড়ি কান্ড
একদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রুহুল আমিন সাহেব দুপুর বেলায় যখন খাবার খেতে বসেন,তখন দেখতে পান দুপুরের খাবারে ভাতের সাথে ডাল,আলুভর্তা,ছোটো মাছ ছাড়া আর কিছু নেই। রুহুল আমিন সাহেব তখন রেগে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ
—“ আজকের দিনেও কি মাংস রান্না হয় নি?”
—“গত রাতেই তো পোলাও দিয়ে মাংস খেয়েছো। একদিন মাংস ছাড়া ভাত না খেলে কিছুই হবে না।”
—“কি! আমি এতো কষ্ট করে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করি। আর আমি খেতে পাবো না আমার পছন্দের খাবার?”
—“আমি তা বলে নি। তোমার ভুঁড়ি দেখেছো কতটুকু বেড়েছে। আগে তোমার ভুঁড়ি কমাও,তারপর আরো ভালো খেতে পাবে।”
—“আবারো আমার ভুঁড়ি নিয়ে কথা। ধ্যাত! আজ ভাতই খাবো না।”
এই বলে রুহুল আমিন সাহেব তার বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন। উত্তপ্তমাখা রোদেলা দুপুর।অন্যদিকে তিনি মেজাজ গরম নিয়ে তার বাসা থেকে কিছুটা দূরের একটি ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেয়ালে একটি পোস্টার লক্ষ্য করলেন। সেখানে লেখা “দ্রুত সময়ে মেদ বাড়ান,১০০% গ্যারান্টি। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই.....”। এটি দেখে রুহুল আমিন সাহেবের মেজাজ আরও বেশি খারাপ হয়ে গেলো। তিনি আর রাগ সামলাতে পারলেন না। তাঁর দুহাত দিয়ে দেয়ালের পোস্টারটি ছিড়ে ফেললেন। “একে তো ঘরের বউ শান্তি দেয় না। যেকোনো কিছুতে আমার ভুঁড়িটা নিয়ে কথা তোলে। আর অন্যদিকে এরা ভুঁড়ি আরও বাড়ানোর কথা বলে!” রুহুল আমিন সাহেব যখন বিড়বিড় করে এই কথাগুলো বলছিলেন তখন সেই মুহূর্তে একজন খাটো, শুকনো, কালো বর্ণের মাঝবয়সী লোক এসে হাজির হলেন। লোকটাকে দেখে যেন মনে হচ্ছে বেশ রাগী ভঙ্গিতে আছেন। তাঁর হাতে একটা লাঠির মতো কিছু একটা রয়েছে।
—“কি ভাই! এই পোস্টারডা ছিঁড়লেন ক্যান? কি সমস্যা আফনের?”
রহুল আমিন সাহেব তখন একটু ভীতু ভঙ্গিতে জবাব দিলেন:
— “কই! কোনো সমস্যা নেই। তবে মানুষের ভু্ঁড়ি নিয়ে মজা করা উচিত না।”
— “আফনের কি মনে অয় এইডা মজা করবার লাইগা দিসি?”
— “না, তবে একজন মোটা লোকের কাছে যদি এটি চোখে পড়ে। তবে বুঝেনই তো কত খারাপ লাগে। ”
— “কার খারাপ লাগতাছে, আর কার খারাপ লাগতাছে না৷ এইডা আমার বিষয় না। আমাগো ব্যবসা আমরা করুম। দেহি একশো টাহা বাইর করেন।”
রুহুল আমিন সাহেব একটু অবাক হয়ে...
— “ একশো টাকা কেনো?”
— “ওমা! আফনে আমার পোস্টার ছিঁড়ছেন।সেইডার ক্ষতিপূরণ দিবেন না? তাড়াতাড়ি দেন কইলাম”
— “আচ্ছা, দিচ্ছি দিচ্ছি। ”
রুহুল আমিন সাহেব লোকটির রাগী চোখ আর হাতে থাকা লাঠি দেখে আর কথা বাড়ালেন না। দ্রুত প্যান্টের পকেট হতে একশো টাকা বের করে তাকে দিলেন। লোকটি টাকা পেয়ে রুহুল আমিন সাহেবকে তাঁর হাতে থাকা লাঠিটি দিয়ে “ভ্রুম ভ্রম” শব্দ করে লাফাতে লাফাতে ফুটপাত থেকে আরো দূরে চলে যেতে লাগলো। রুহুল আমিন সাহেব তাঁর এইরূপ অঙ্গভঙ্গি থেকে কিছুটা অবাক হলেন। বিড়িবিড় করে বলতে লাগলেন “পাগল নাকি!”
— “য্যা, অই পাগলা মতিন। মাইনষেরে বোকা বানাইয়া টাহা লইয়া যায়।তবে কাউরে মারে না। বড়ই ভালা মানুষ।দ্যান, এইবার আমারে কিছু টাকা দিয়া সাহায্য করেন৷ ”
এই কথাটি শুনে রুহুল আমিন সাহেব তাঁর বাম পাশে তাকিয়ে দেখলেন একজন বুড়ো বয়সী ভিক্ষুক।
— “ এই নিন। পকেটে আর চারশো টাকা ছিলো। সবই রাখুন।”
— “আল্লাহ্ তোমারে আরো ট্যাকা দ্যাখ,বাজান।”
এই বলে ভিক্ষুকটি ফুটপাত থেকে অন্য রাস্তায় যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হতে লাগলো। খুব চতুর গতিতে রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য দেখে রুহুল আমিন সাহেব বলতে লাগলেন,“বয়স বেশি হলে কি হবে, বুড়ো সেয়ানা আছে।”
— “আর তুমিও কম বোকা নও!”
— “কে?”.....ওহ্! আচ্ছা তুমি?”
রুহল আমিন সাহেবের স্ত্রী তাকে বাসায় নিয়ে যেতে এসেছেন। কিন্তু তিনি আজ বাসায় যাবে না। প্রতিবার তাঁর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। যদিও বেশি দূরে যাওয়া হয় না তাঁর। কারণ, তিনি জানতেন তাঁর স্ত্রী তাকে অবশ্যই বাসায় নিয়ে যাবে। তবে আজ বেশি রাগান্বিত ছিলেন। তবে মেদ বাড়ানোর পোস্টারটি যদি তাঁর চোখে না পড়তো তবে তিনি অন্য কোনো এলাকায় চলে যেতেন।
— “ বাসায় চলো। ”
— “না, আমি যাবো না।”
—“ গরুর মাংস রান্না করেছি।”
এটি শুনে রুহুল আমিন সাহেবের জিভে যেন জল চলে এলো। তাঁর স্ত্রীর কাজল কালো চোখ আর মিষ্টি কন্ঠের এই কথাটি যেন তাঁর বারবার শুনতে ইচ্ছে করো। তাই তিনি আরেকবার এই কথাটি শুনতে চান।
— “কি বললে? আরেকবার বলো”
— “বাসায় চলো। গরুর মাংস রান্না করেছি। এই কড়া রোদে আর দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই।”
এটি শুনে রুহুল আমিন সাহেবের যেন ইচ্ছে করছে তার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে। খুশীতে তিনি এতোটাই আত্মহারা যেন ছয় বছর বয়সী শিশু তাঁর জন্মদিনের সেরা উপহার পেয়েছে এমন।
— “ভালোবাসি তোমাকে। তবে মাঝেমধ্যে এমন বেরিয়ে পড়তে দিও। তারপর আবার আমাকে ডেকে নিও। কেমন?”
এটি শুনে রুহুল আমিন সাহেবের ভুঁড়িতে তাঁর স্ত্রী হালকা ঘুষি দিলেন। রুহুল আমিন সাহেব বেশি ব্যাথা পাবার অভিনয় করতে লাগলেন। “ এই ভুঁড়িকে এইভাবে আঘাত করো না আর। এই ভুঁড়ির কারণে মাঝেমধ্যে পৃথিবীর যত অদ্ভুত ঘটনা আমি দেখতে পাই ”।

