মাঝির ব্যর্থ প্রেমিকা
মাঝির ব্যর্থ প্রেমিকা


ময়নার বয়স ষোল। এই বয়সে মাঝি পাড়ার সব মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। পরাণ মাঝি কথা দিয়েছে এই মরসুমে সাগরে মাছ ধরে নিজে বানাবে ঘর। সেই ঘরে তুলবে ময়নাকে। ময়নার মন ব্যাকুল হয়ে থাকে কখন আসবে সাগরে মাছের মরসুম। মনে মনে সব সময় প্রার্থনা করে এই মরসুমে যেন প্রতিদিন পরাণের নৌকা ভরে ওঠে মাছ।
সাগর জেটি যাওয়ার পথে ময়নাদের ঘর। অস্তরাগের সূর্য যখন লাল টিপা দেয় ময়নার কপালে তখন ঘাটে যায় পরাণ। ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ময়না। দেখা হয় দুজনের, কথা হয় পিরিতের। শ্যাম বর্ণের উপর সূর্যের লালিমায় অপরুপা হয়ে ওঠে ময়না। মন চায় ওদের সেদিনই মধুর মিলন। মিলনের জন্য ওদের মন ব্যাকুল যখন তখন।
কোথায় মিলবে ওরা। পরাণ থাকে তো অন্যের ঘরে। তাই ঘর চায় ঘর। যেতে হবে সাগরের বুকে
ছুড়তে জাল।সেদিন দুপুর থেকে শুরু ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আকাশের মুখে কালো হিজাব। ময়না আশায় বুক বেঁধেছে আজ পরাণ মাঝি যাবে না সাগরের বুকে। বাহুডোরে বেঁধে করবে পিরিতের গল্প।
পরাণ মাঝি সাগরে যাবে বলে হাঁটতে হাঁটতে ময়নাদের ঘরের পাশে। ময়না ব্যাকুল দাঁড়িয়ে ছিল আগে থেকে। পরাণ গেল না আটকানো, গেল সে সাগরের বুকে। সেই রাতে প্রবল বেগে ঝড় উঠলো সাগর বুকে। সাথে মুসল ধারায় বৃষ্টি। মাঝি পাড়ার সব ঘর তছনছ হয়ে গেছে। চারদিকে জল থৈথৈ। সকাল থেকে মাঝি পাড়ার মেয়ে- বৌয়েরা ঘাটে উদগ্রিব চিত্তে করছে অপেক্ষা। কখন আসবে ফিরে আত্মীয়ের নৌকা।
ময়না ঘাটে দাঁড়িয়ে একলা। আজ মন বড়ো ব্যাকুল উত্তলা। একে একে ফিরে এলো সব মাঝির নৌকা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ফিরলো না পরাণের নৌকা।