SHUBHAMOY MONDAL

Horror Thriller

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Horror Thriller

মাঝি পেত্নীর খপ্পরে

মাঝি পেত্নীর খপ্পরে

4 mins
438


মাঝি পেত্নীর খপ্পরে

শুভময় মণ্ডল


এটা ঠিক গল্প নয়, আবার চাক্ষুষ দেখা ঘটনাও না। আসলে গল্পদাদুর অতিথি যে পাত্রদাদু এসেছিলেন কলকাতা, তাঁরই গ্রামে গিয়ে ঘটনাটার সম্মুখীন হলাম। বিশ্বাস অবিশ্বাস - সে পাঠকের মর্জির ওপর ছেড়ে বরং ঘটনাটায় আসি।


নররা অনেক পুরানো এক প্রায় ঐতিহাসিক গ্রাম। তার চৌহদ্দিতে শ্মশান, বড় বড় দু' দু'খানা নদী, বিশাল মাঠ, একসময় থাকা ঘন বন (যদিও এখন তা নেহাতই পাতলা) প্রাচীন সাঁওতাল জাতির মানুষদের থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক/অত্যাধুনিকাদের বাসস্থান সবই রয়েছে।


আমার এই কাহিনীর নায়ক এক গোয়ালা নন্দন, নাম আশিস। আমি যখন ওখানে গেলাম - এই ঘটনার সেটা শেষ দিন। তার আগে তিনদিন ধরে, বেচারা আশিস ঝাঁটাপেটা, ছেঁড়া জুতোর ঘা, চড় থাপ্পর তো হাতে গোণা যাবে না, আর শুকনো লংকা পোড়ার ধোঁয়া শুঁকতে শুঁকতে কাহিল হয়ে পড়েছিল!


তার অপরাধ কি এমন ছিল যে এত অত্যাচার হবে তার ওপর? (অবশ্য যার ওপর এতকিছু হচ্ছিল, সে কিন্তু নির্বিবাদেই সব অত্যাচার হাসি মুখে মানছিল, আর এটাই আমার নজর আরো বেশি করে যেন কাড়লো।) - কথাটা আমি অজিতবাবুকে বলতেই তিনি বললেন আমায় আসল ঘটনাটা।


আশিস দিন দুয়েক আগে এক শনিবার দুপুরে গরু চড়াতে গিয়েছিল মাঠে। ধান উঠে যাবার পর ফাঁকা মাঠ, শুকনো নদীর চরেও প্রচুর ঘাস পেয়ে গরুর পাল তো একজায়গাতেই চড়ছিল। সে তাই নদীর পাশেই একটা অর্জুন গাছের ছায়ায় শুয়ে দিব্যি লম্বা ঘুম দিয়েছিলো। 


ঘুম যখন ভাঙে তার তখন সন্ধ্যে হয়ে এসেছে প্রায়। দেখে - একটা তালের শুকনো বাখনা ( গোটা তাল পাতা আর কি!) তার গায়ের ওপর চাপানো! আসে পাশে কেউ কোথাও নেই, গরুগুলো তখনও ঘাস চিবাচ্ছে। ও ভালো করে এদিক ওদিক চেয়ে দেখে - পাশাপাশি কোথাও আর কোন গাছও নেই। তবে, ঐ অর্জুন গাছের ওপর (নাকি গায়ে গায়েই) পরগাছা হয়ে জন্মেছে একটা তালগাছ! হয়তো তারই ডাল ওটা!


কিন্তু অত বড় তালপাতার ডাল ওপর থেকে এসে তার গায়ে পড়লে তার ঘুম ভাঙতো না? তাহলে? বিষয়টা তখনই তাকে অতটা না ভাবালেও, পরে ভাবালো খুবই। তখনকার মত তো গরুর পাল নিয়ে বাড়ি ফিরলো সে, কিন্তু আসল বিপত্তি শুরু হল রাতের বেলা।


ঘুমাতে ঘুমাতে দেখে তার নাভিটা নেমে যাচ্ছে ক্রমাগত নিচের দিকে! কোন বেদনা বা যন্ত্রণা নেই, কিন্তু অস্বাভাবিক অস্বস্তিতে ঘুমাতে পারলো না! বিষয়টা তার বাবা মাকে বলতে তারা পরদিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তাকে।


ডাক্তারবাবু সব লক্ষণ দেখে তাকে রক্তপরীক্ষা করাতে বলেন এবং তার অসুখ সম্ভাব্য জণ্ডিস ধরে নিয়ে ওষুধ পত্রও দিয়ে দেন। কিন্তু রক্ত পরীক্ষা করে তার মধ্যে কোন রূপ কোন রোগের আভাসও মিললো না! সেদিনই দুপুরে শুরু হলো আর এক নতুন বিপত্তি।


বেচারা আশিস খাওয়া দাওয়া করে দুপুরবেলা ঘুম দিয়েছিলো বারান্দায়। মনে হয় - কে যেন তার হাত ধরে টানছে, আর বাড়ি থেকে বাইরে যেতে বলছে! আশিস তার সেই ডাক এড়িয়ে যেতে পারছে না কিছুতেই। অগত্যা সে বিছানা ছেড়ে, তক্তা থেকে নেমে আসে।


ওর বাবা কিন্তু ছেলের ভাবগতি লক্ষ্য করছিল সকাল থেকেই। এখন, সে তক্তা থেকে নামতেই, প্রথমে তাকে ঝাঁটা পেটা, তারপর শুকনো লংকা পুড়িয়ে শোঁকানো সব করে সে। একটু আধটু ঝাড় ফুঁক যা তারও জানা ছিল, সব প্রয়োগ করলো ছেলেকে অপদেবতাদের থেকে বাঁচাতে।


কিন্তু তা'তে সাময়িকভাবে তখন আশিসকে তারা থামাতে পারলেও, রাতের বেলা সেই অশরীরীর ডাকে সাড়া দেবার জন্য সে পাগল প্রায় হয়ে উঠলো। তখন, তাকে সামলানো দায় হলো তাদের। অগত্যা, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলো তারা তাকে সারা রাত।


আশিস সচেতনে থাকতে নিজেও তাদেরকে তাইই করতে বলছিলো। কারণ, ঐ ডাক এলে তার মধ্যে যে পাগলামি শুরু হচ্ছিল সেটা তারও অজানা ছিল না। সে শুধু ঐ অপ্রাকৃত, অদ্ভুতুড়ে ডাকাডাকির সময়টুকু ব্যতিরেকে, বাকি সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করছিল।


পরদিনই তাই ডাকা হল কাঞ্চনপুর শ্মশানের সেই বিখ্যাত ওঝাকে। তিনি আসতেই জায়গাটা কেমন যেন অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে গেলো। কেউ কিছু দেখেনি, শোনেনি কিন্তু তিনি আসতেই সকলেই অনুভব করলো বাতাসটা যেন হালকা হয়ে গেল! যেন অসংখ্য অশরীরী নিঃশব্দে সেই স্থান ত্যাগ করায় পরিবেশটাই বদলে গেল!


আমি যখন ওখানে পৌঁছালাম, তখন তিনি তাঁর বিদ্যার প্রয়োগ দ্বারা আশিসকে তার নখদর্পনে দেখাতে পেরেছেন সেই অর্জুন গাছটার ছবি! আশিস নিজে সেই গাছ দেখে চিনতে পেরে, তাঁকে বলে ঐ গাছটার কথা। কারণ, তাঁর দু'চোখ তো বন্ধ!


তারপর আশিস ও তার পাশে থাকা বাকিরাও দেখলো সেই নখদর্পনেই - ঐ অর্জুন গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত এক আদিবাসী রমণীর গলায় ফাঁস দেওয়া শরীর। তার পা দুটো মাটি থেকে মাত্র কয়ক বিঘৎ ওপরে - ঠিক সেই স্থানে যেখানে পরশু দুপুরে ঘুমিয়েছিলো আশিস!


ব্যস, কি ঘটেছে তা' বুঝতে আর কারোরই বাকি রইলো না! তিনি চোখ খোলার আগেই, সেই অর্জুন গাছটা ডালপালা নিয়ে হঠাৎই জমি থেকে উৎপাটিত হয়ে গিয়ে পড়লো নদীর খালে। তিনি আশিসকে আশীর্বাদ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন মাঝিপাড়ার (সাঁওতালদের ওখানে মাঝিই বলে) দিকে।


পরে জানা গেলো, কয়েক বছর আগে নাকি বরের সাথে ঝগড়া করে, ওখানে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গিয়েছিল এক সাঁওতাল রমণী। তার বরেরও রাগ ছিল খুব, তাই হয়তো তাদের প্রথামাফিক তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেনি। ওঝার দৌলতে বুঝি এবার তার সেই আত্মার মুক্তি হলো!




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror