মাছ ভাত
মাছ ভাত
নতুন কাজের দৌলতে বাংলা ছেড়ে বাইরে আসতেই হলো।নতুন একটা পৃথিবী নতুন একটি সংস্কৃতিক পরিবেশ।সোস্যাল মিডিয়া দৌলতে অনেকেই জেনে গেছে আমার পুরাতন পরিচয় আমি একজন ভাষা কর্মী। তবে নিজের মাতৃভাষার জন্য অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করারকে আমি অন্য মনে করি না। বেনারস শহরের বাঙালির সংখ্যা কম নয়। তাই যে সব বাঙালি গ্রাহকরা এখানে আসে তাদের সাথে আমি বাংলায় কথা বলি। এটা আমার অনেক সহকর্মী গাত্র দাহ হয়।
মাছে ভাতে বাঙালি নিয়ে বিশেষ করে শুরুর দিন থেকেই ব্যঙ্গের শিকার হতে হয়েছে। যদি আমি মাছ খাওয়া অতোটা পচ্ছন্দ করি না। আজকে যখন ক্যান্টিনে খাবারের কাউন্টারে দাঁড়াইছিলাম , পিছনের এক টেবিল থেকে তাকে লক্ষ্য করে কুকের উদ্দেশ্যে অক্ষয় বলে ওঠে - "বাবু ভাইয়া ইয়ে বাঙালি কো মাছলি ভাত খিলাও।" তারসাথে ওই টেবিলে বসা সকলেই ব্যঙ্গাত্মক ভাবে হেসে উঠলো।
হঠাৎ নিজেকে সামলাতে না পেরে। কাউন্টার ছেড়ে এগিয়ে যায় টেবিলের সামনে আর বলে - " দক্ষিণে লাগোয়া বঙ্গোপসাগর,আর মাঝে বয়ে চলেছে শিরা উপশিরা মতো বয়ে চলেছে গঙ্গা, তিস্তা, দামোদর, অসংখ্য নদী, অসংখ্য জলাশয়ে পরিপূর্ণ যেই ভূমির প্রধান ফসল সোনালী ধান সেই রূপকথার মতো বাংলার মানুষ মাছ ভাত খাবে নাতো কি খাবে... লিটটি চোখা ?"
বিজয় বললো - বড়ী বড়ী বাতোন কে আলাভা কুচ আতা ভি হ্যান তুম বাঙালিও কো ? ভেতো বাঙ্গালী।
কিছুক্ষন একটু চুপ করে থেকে হালকা হাসি নিয়ে বলে বললাম - পরাধীন ভারতের সর্বপ্রথম স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করেছিলাম আমরা বাঙালিরা। আমার বাংলার মাটিতে,প্রথম ভারতীয় শহীদ এক বাঙালি। ওই সাদা চামড়ার ইংরেজগুলো ভারতের যেই জাতিকে সব থেকে বেশি ভয় পেয়েছে, সেই জাতি বাঙালি। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির জনক একজন বাঙালি,জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বাঙালি, জাতীয় ধ্বনি 'বন্দেমাতরম' লিখেছেন এক বাঙালি, প্রথম নোবেলজয়ী এক বাঙালি, অর্থনীতিতে একবার নয় দুবার নোবেল এনেছে সেই বাঙালি, গাছের প্রাণ আছে প্রথম প্রমাণ করেছে যেই বিজ্ঞানী সে বাঙালি, আমেরিকার মাটিতে দাড়িয়ে যার বক্তৃতা সারা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছিল, আজও ভারতের যুবসমাজের যিনি আইকন তিনি একজন বাঙালি। ভারতে চলচ্চিত্রে অস্কার এনেছে একমাত্র বাঙালি। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে প্রথম উত্তীর্ণ, ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক, প্রথম ভারতীয় পরিসংখ্যানবিদ, প্রথম ভারতীয় মহিলা চিকিৎসক,প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার,বিশ্বখ্যাত ভারতের শ্রেষ্ট জাদুকর এরা সবাই যে বাঙালি। ৬৫-র যুদ্ধে ভারতীয় সেনার অধ্যক্ষ বাঙালি, ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রথম যুদ্ধবিমানের চালক একজন বাঙালি। বলিউডের সঙ্গীত বা অভিনয় বাঙালিদের ছাড়া অসম্পূর্ণ। ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের হারিয়ে লর্ডসে জামা ওড়ানোর সাহস রাখে একমাত্র বাঙালি, প্রথম ইংলিশ চ্যানেল পার করে বাঙালি, ভারত তথা এশিয়ার প্রথম বডিবিল্ডার বাঙালি, ভারতীয় বক্সিংয়ের জনক যে বাঙালি,ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়েছে বাঙালি। স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে ভারতীয় নারীসমাজের উত্থান, সঙ্গীত, সাহিত্য, খেলাধুলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সবেতেই এগিয়ে বাঙালি। পঞ্চাশ বছর মাত্র স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ দেখো আজ স্বনির্ভর। বাঙালিকে ছাড়া এই ভারতের গৌরব যে বড্ড ফিকে। তাই আমি গর্বিত আমি বাঙালি...
ক্যান্টিনে পরিবেশ হঠাৎই শান্ত হয়ে যায়। তার মাঝেই গর্ব করে বলে উঠি আবার - বাবু ভাইয়া, তো ফির আজ এক প্লেট মাছ ভাত হি লাগাও।
বাবু ভাইয়া বলে উঠলো " অবশ্যই দাদা। আমি ও আজ আলু সিদ্ধ করেছি নিজের জন্য। খাবে নাকি?"
