STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

ললন্তিকা ( ধারাবাহিক)

ললন্তিকা ( ধারাবাহিক)

6 mins
168


গোপালকৃষ্ণ বাবু কিছুতেই সম্মতি দিতে চান না ; রুদ্র পুনরায় শ্মানঘাটে যাক । পূর্বেকার ইতিবৃত্ত তিনি সম্যক উপলব্ধি করেছেন । শ্মশানঘাট মানেই তো একরাশ নিস্তব্ধতা । নিঝুম রাতের কান্না ।

রুদ্র আপ্রাণ চেষ্টা করল তাঁকে বোঝানোর। যখন কিছুতেই তাঁকে রাজী করানো গেল না গুম হয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল ।

বনলতা বললেন - তুমি যাবে না ; ওকেও যেতে দিচ্ছ না, তাহলে বাকি রইলাম আমি। বল তো আমিই না হয় যাই।

গোপালকৃষ্ণ এর উত্তরে কি বলবেন ভেবে পেলেন না।

বনলতা দেবী বললেন - নিকট প্রতিবেশী। একই বিল্ডিং এ বাস করি। কেউ না গেলে পাঁচটা কথা উঠবে । অনুমতি দাও আমি আসি । বডি অলরেডি নীচে নামিয়ে দিয়েছে। শুনছ না তাদের কান্না !

গোপালকৃষ্ণ বললেন - বেশ, তবে আমি চললাম । তবু রুদ্রকে যেতে দিতে মন সায় দিচ্ছে না ।

রুদ্র তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলল - বাবা ! বুঝছেন না কেন ?

আপনি গেলে লোকে বলবে অমন জোয়ান ছেলে থাকতে এই বৃদ্ধ বয়সে আপনি এলেন কেন ? তখন কি বলবেন ? তাতে আমারও তো সম্মানহানি হবে । তার চেয়ে অনুমতি দিন আমি আসি । হাতে আর সময় নেই । ওরা অলরেডি চলে যাচ্ছে ।

উপায়ান্তর না দেখে গোপালকৃষ্ণ সম্মতি দিলেন এবং চক্রব্যুহ সাবধানতা অবলম্বন করতে বললেন ।

রুদ্র সামনে টাঙানো একটা গামছা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে গেল । লেট করলে বাবা যদি আবার মত পাল্টে ফেলেন !

বনলতা দেবী দু'হাত মাথায় ঠেকিয়ে বললেন - দুর্গা দুর্গা ।

শ্মশানযাত্রীর দল একটা মিনিবাস ভাড়া করে শবানুগমন করল ।

শ্মশানে সম্পাদিত পারলৌকিক বিধির পর দেহ বৈদ্যুতিক চুল্লিতে প্রবেশ করানো হল । হতভাগ্য পিতার হাত ধরে কয়েকজন তাঁকে সান্ত্বনা দিতে লাগল । রুদ্রও ছিল সেই দলে ।

হঠাৎ তার চোখের সামনে সেই কালো বিড়ালটা যেন লাফালাফি করতে লাগল । একমুখ বিশ্রী হাসি দিয়ে শবকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাচ্ছে যেন ।

রুদ্রর মনে পড়ে গেল মগরার শ্মশানঘাটের দৃশ্য । কালো বিড়ালের দাঁতগুলো তার কাছে মনে হল ধবধবে সাদা ঠিক যেমনটি দেখেছিল ওই কৃষ্ণকায় ডোমটির মুখে ।

স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠল কিছু কথা । রুদ্র মনে হল বিড়ালরূপী সেই ডোম যেন তাকে বলছে ' তোমরা তাহলে কৃষ্ণপুর থেকে আসছ । আচ্ছা ওখানেই তোমার বাড়ি? আর ওই পঙ্গু লোকটাও কি তোমার বাড়িতেই আছে?

চোখ দুটো বেশ করে রগড়ে নিল রুদ্র । ভুল দেখছে না তো ! বিড়ালদেহী সেই ডোম যেন তাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।

রুদ্র বরাবরই ভীতু প্রকৃতির । সে যেমন বিনীত স্বভাবের তেমনি কথায় বার্তায় কোনদিন উচ্চগ্রামে স্বর তোলে না । একটা অজানা আশঙ্কায় ভয় পেয়ে সে লোকজনের ভেতরে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করল ।

কমল সাহা নামের এক যুবক তাকে বলল - আপনি এমন করছেন কেন ? আপনাকে একটু অস্থির প্রকৃতির মনে হচ্ছে । ভয়ডর পেয়েছেন বুঝি ?

রুদ্র নিজেকে সংযত করে বলল - ভয় ! ভয় পাব কেন ? আমি তো আর ভীতু নই।

- না তা বলছি না ; তবে এমনটাই মনে হল । যেভাবে আপনি ঠেলেঠুলে মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন তাতে এমন মনে হতেই পারে । যাক নিশ্চিন্ত হলাম আপনি ঠিক আছেন ।

কিঙ্করবাবু পুত্রের মুখাগ্নি করেছেন । রুদ্রর সমবয়সী ছিল তাঁর ছেলে যযাতি । বেশ কিছুকাল রুদ্রকে জড়িয়ে কাঁদলেন । তারপর বললেন - বাবা ! আমি অশক্ত শরীরে তো মগরা যেতে পারব না । ছেলের অস্থিকলস নিয়ে তুমি যেও বাবা । ও তো তোমারই বন্ধু ছিল । অস্থিকলস নিয়ে তুমি গঙ্গায় বিসর্জন দিলে ওর আত্মা শান্তি পাবে ।

রুদ্র প্রথমে কিন্তু কিন্তু করছিল । অফিসের ছুটি নিয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করছিল ।

তখন কমল সাহা কিঙ্করবাবুকে বলল - ছেড়ে দিন কাকু । আমি বিসর্জন দিয়ে আসব ।

রুদ্রর পৌরুষে আঘাত লাগল ।

- সে কি কথা ? আপনি যাবেন কেন ? কাকাবাবু আমাকে যেতে বলেছেন; সুতরাং আমিই যাব ।

কমল সাহা বলল - আমি না হয় আপনাকে সঙ্গ দেব। কোন অসুবিধা হতে দেব না ।

ঘন্টা দুই পর চুল্লি থেকে বেরিয়ে এল ভস্ম হয়ে যাওয়া দেহ । তা থেকে কিছুটা ছাইভস্ম নিয়ে কেউ একটা পেতলের ঘটিতে ঢুকিয়ে দিয়ে লাল রঙের নতুন বস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিল ।

রুদ্র দেখল কালো বিড়ালটা পালিয়েছে। রাত তখন তিনটে । সকলে শ্মশান থেকে ফিরতে বাসে চেপে বসলেন ।

কিছুটা যেতে না যেতেই বাসের হেড লাইটে দেখা গেল একটা বিড়াল ; কালো নয়, ধূসর রঙের - সেটা বাসের রাস্তা কেটে পেরিয়ে গেল । বাস ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল ।

- এখন যাওয়া যাবে না ।

ড্রাইভার বলল হয় সকাল হয়ে যাক, লোক চলাচল শুরু হলে তখন গাড়ি ছাড়ব ।

কমল সাহা মুখ ভেংচিয়ে ড্রাইভারের নকল করে বলল - তখন গাড়ি ছাড়ব ! মামা বাড়ির আবদার নাকি ? সকাল হতে এখন অনেক দেরী । তোমার অসুবিধেটা কোথায় বল !

ড্রাইভার বিনয়ের সঙ্গে বলল - এটাই রীতি বাবু । জন্মকাল থেকে শুনে আসছি বেড়ালের রাস্তা কেটে দেওয়া অশুভ । এও জানি অনেক গাড়িতে এ জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে ।

কমল সাহা বলল - তা বলে এখানে ভুতের মত দাঁড়িয়ে থাকবে না কি ? যত সব আজগুবি কথা । বিড়ালে রাস্তা কেটেছে তো কি হয়েছে ? ও তো ড্রেইন টেনে দেয় নি !

- তা আপনি যাই বলুন বাবু, আমার অত সাহস নেই।

বাসের সকলে যখন গুঞ্জন করছে, তর্ক করছে ড্রাইভারের সঙ্গে, রুদ্র কিন্তু মুখ খোলেনি । চুপচাপ সব দেখে শুনে যাচ্ছে ।

কমল সাহার সাহস খুব বেশি। ড্রাইভারকে বলল - ঠিক আছে আমিই না হয় কাটা রাস্তা ঠিক করে দিয়ে আসছি, তবু দয়া করে চল বাপু ।

কমল গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল সামনের দিকে অনেকটাই। বাসের হেডলাইট জ্বালানো ছিল । সকলের নজর কমলের দিকে। ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিল ।

কমল বীরত্ব দেখিয়ে গাড়িতে উঠল । তারপর হাসাহাসি, হম্বিতম্বি অনেক কিছুই করল । কেউ তাকে কোনরূপ বাহবা দিল না দেখে গুনগুন করে বলল - আজকাল কারও উপকার করতে নেই। কৃতজ্ঞতাটুকুও হারিয়ে গেছে।

তারপর একসময় চুপ করে গেল । মোটামুটি সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওরা কৃষ্ণপুরে ফিরে এল । বাস থেকে নেমে যে যার ঘরে গিয়ে স্নান করে চা পান করল।

সেই কালো বিড়ালটি সকলের অগোচরে বাসে উঠেছিল এবং তেমনই লোকচক্ষুর অন্তরালে বাস থেকে নেমে কমলের পিছু পিছু ওদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল । কমল কেন কেউই তা' খেয়াল করল না। এমনকি কমলের বাড়ির লোকেরাও এর বিন্দুবিসর্গ জানতে পারল না ।

শুদ্ধ হয়ে চা পান করে কমল দেহটা এলিয়ে দিল বিছানায়। সারাটা রাত জাগরণে কেটেছে । ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছিল । মিনিট কয়েকের ভেতরে কমল গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে গেল ।

রুদ্রও যথারীতি বাড়ি পৌঁছে স্নান সেরে রাতের অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে বলছিল ।

গোপালকৃষ্ণ বললেন - দেখলে তো ! এই জন্যই ওকে যেতে নিষেধ করেছিলাম । শুনল না কোন কথা, চলে গেল । এখন যদি কোন অঘটন ঘটে যায় !

বনলতা , কল্যাণীও চিন্তিত হয়ে পড়ল । বনলতা দেবী ঘরময় গঙ্গাজল ছড়ালেন ওঁ শান্তি বলে ।

তারপর ছেলেকে নিয়ে বসলেন চা জলখাবার খেতে।

কমল সাহার অভিধানে ভয় বলে কোন শব্দ ছিল না। এক ঘুমে দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হল; ওর মা বিভা ওকে ডাকলেন - কমল ! ও কমল ! নে এবার ওঠ বেটা । কিছু খেয়ে নে। ভাত যে ঠাণ্ডা হতে চলল !

কমলের কোন হুঁশ নেই । অনেক্ষণ ডাকাডাকি করেও যখন বিভাদেবী কমলের কোন সাড়া পেলেন না ; তখন শরীর ঝাঁকিয়ে ওকে ওঠাতে গিয়ে দেখলেন হাত পা বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে । চোখে পলক পড়ছে না ।

কান্না জুড়ে দিলেন বিভাদেবী । পাশের ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে অনেকে ছুটে এলেন । দরজা খুলে দিলেন বিভাদেবী।

- ও গো দেখ তোমরা আমার ছেলেটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

সবাই ঢুকলেন । গায়ে হাত দিয়ে অনুভব করলেন শীতলতা । কেউ ডাক্তার আনতে ছুটলেন ।কমল যেমন নির্বিকার পড়ে ছিল ; তেমনই রইল।

( ক্রমশ )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror