করো করুণা
করো করুণা
প্রিয় ডায়েরি,
(3/4/2020)
লক ডাউনের নবম দিনে করোনা নামক এই বিভীষিকার করুণায় আমাদের গৃহবধূদের কি করুণ অবস্থা হয়েছে তারই অভিজ্ঞতা গল্পের আকারে পরিবেশন করলাম.........
"মা আমার এই একঘেয়ে ভাত,ডাল, মাছ আর খেতে ইচ্ছা করছে না।অল্প ভাত দাও একদম।" মেয়ের কথায় রুমা খানিকটা ভাত উঠিয়ে নিলো প্লেট থেকে।এরপর কর্তার মন্তব্য, "বুঝলে রুমা বসে বসে আর খিদে হচ্ছে না।কাল থেকে কম ই খাবো।অল্পই রান্না করো "। রুমা কারুর কথারই কোনো উত্তর দিলো না। মনে মনে ভাবলো শুধু,"কম আর বেশি, রান্না তো করতেই হবে বাপু আমাকে। কই একথা তো কেউ বলছো না যে, রান্না করতে হবে না। বরং এখন লাঞ্চে কম খেলে আরোও ঝামেলা আমারই বাড়বে সন্ধ্যে বেলা কি জলখাবার বানাবো তার চিন্তায়। এই করোনার করুণায় কাজের লোকও আসছে না। বাসন মাজা, ঘর মোছা সব করতে হচ্ছে । সত্যি এই করোনা সবার উপর করুণা করলেও , আমাদের গৃহবধূদের অবস্থা যে তিমিরে ছিলো, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে, কর্তা সবাই ঘরে আছে। মুখে যতই এই মন্দার বাজারে সাদাসিধে খাবারের কথা বলা হোক , কার্যক্ষেত্রে সেটা যে হাতে গোনা কটা বাড়িতেই হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক রুমার বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয়।
আগে তবু মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধব বা ছুটির দিনে কর্তার সঙ্গে , বাইরে যাবার একটা ব্যাপার থাকতো বিকালের দিকে। সেজেগুজে মাঝে মাঝে ঘুরতে গেলে, মনটাও বেশ ফুরফুরে লাগে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেসব ও কল্পনার অতীত।রুমার মন তাই বেজায় খারাপ। আলমারির জামাকাপড় গুলো পিটপিট করে দেখছে আর ভাবছে , তাদের মালিকের স্বর্গ বাস হয়ে যায়নি তো? তারা আর কি করে জানবে, নাইটি আর হাউসকোট পড়ে ই তাদের মালিক যুদ্ধ করছে বর্তমানে। রুমা আনমনে ভাবে সেইসব সোনালী দিন গুলোর কথা। কি সুন্দর ছুটির দিনে বন্ধুরা ঘুরতে যেত, কতো রকমের ভঙ্গীতে ফটো তুলতো। তারপর সেইসব ফটো ফেসবুকে আপলোড করতো। কখনও বা ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে দিতো। কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব সোনালি দিন গুলো। এখন শুধুই ঘরে থেকে কাজ করে যাও। কিছু কর্তা ঘরের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও, তাদের বোঝাতে বোঝাতে নিজের ওই কাজটা দশবার করা হয়ে যাবে। অন্ততঃ রুমার তাই অভিমত।
সেদিন দুপুরে শুয়ে শুয়ে ফোনটা দেখছে রুমা। পাশে কর্তা শুয়ে আছেন আধশোয়া অবস্থায়। হঠাৎই খুব আগ্ৰহের সঙ্গে রুমাকে ফোনটা নিজের দিকে এগিয়ে দিলেন। রুমা তাকিয়ে দেখলো কর্তা বেশ হাস্যরত মুখে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখাতে চাইছে তাকে। দেখলো রুমা, একজন অত্যাচারিত পুরুষ লিখেছেন, তারা বাইরে বেরোতে পারছেন না, তার কারণ বাইরে করোনা ভাইরাস । কিন্তু ঘরে নাকি তারা করোনা ভাইরাসের থেকেও ভয়ঙ্কর কারুর সঙ্গে বসবাস করছেন। আর সে হলো তার গিন্নি। ভাবো অবস্থা, যার জন্য করে মরি সেই বলে চোর। এই লক ডাউনের বাজারে যেখানে ,সকাল থেকে রাত অবধি ওনাদের সেবায় তৎপর আমরা, সেখানে আমরা গৃহবধূরা নাকি তাদের কর্তা র কাছে করোনা ভাইরাসের থেকেও ভয়ঙ্কর। হে ভগবান! এটা শোনার পরও কি করোনা ভাইরাস আমাদের উপর করুণা করে পালাবে না।