Sucharita Das

Crime Others

3.4  

Sucharita Das

Crime Others

রিয়ার ডায়েরি

রিয়ার ডায়েরি

4 mins
435


 রিয়া আমার বান্ধবী শ্রাবনীর একমাত্র মেয়ে। ও যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ে তখন ওর মায়ের ডায়েরি লেখা দেখে জানতে চেয়েছিল, কি লেখে ওর মা রোজ ওতে। ওর ছোট্ট মনের কৌতূহল মেটাতে শ্রাবনী ওকে বলেছিলো, এটা ডায়েরি, আর এতে সারাদিনের মনের সব কথা লিখে রাখতে হয় ।এরপর মেয়ে ওর বাবার কাছে আবদার করলো ওরও একটা ডায়েরি চাই মায়ের মতোই। ওর বাবা তখন ওকেও একটা ডায়েরি দিয়েছিল। কি খুশি মেয়ের সেটা হাতে পেতে। পরদিন থেকেই রিয়া মাঝেমাঝেই ডায়েরিতে কিছু লিখতো। শ্রাবনীকে মাঝে মাঝে ওর লেখা সেই ডায়েরি পড়তেও দিতো। শ্রাবনী রিয়াকে উৎসাহ দেবার জন্য মাঝে মাঝে রিয়ার হাত থেকে নিয়ে ওর ডায়েরি পড়েও দেখতো। রিয়া ওতে ওর সারাদিনের কথা লিখতো বাবা যেহেতু ঘরে থাকতো না সারাদিন, তাই ওর বাবাকে উদ্দেশ্যে করেই রিয়ার সারাদিনের ডায়েরি লেখা, এই যেমন --------


"বাবা জানো আজ মা আমাকে খুব বকেছে। আমি একটুও দুষ্টুমি করিনি তাও। "


"বাবা আজ মা আমাকে একটা টেস্টি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিয়েছে। তুমি সান ডে তে ঘরে থাকবে যখন, তখন মা তোমাকেও বানিয়ে খাওয়াবে। তখন আমরা দুজন একসাথে খাব "। 


"জানো বাবা, আজ আমার স্কুলে যেতে একটুও ইচ্ছা করছিল না, তাও মা আমাকে জোর করে স্কুলে পাঠিয়েছিল। "


"বাবা আজ স্কুলে ইমনের সঙ্গে আড়ি হয়ে গেছে। ও নিজের নতুন পেনসিল বক্সটা আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল। আমি তো শুধু দেখছিলাম বলো, ওর ওইভাবে কেড়ে নেবার কি ছিল? "

এইধরনের রোজকার কথাবার্তায় রিয়ার ডায়েরি ভরা থাকতো। 


কদিন আগেই শ্রাবনী আমাকে ফোন করে বলেছিল রিয়ার জন্য একটা ভালো টিউশন টিচার চাই। আমিও বিভিন্ন কাজের অছিলায় ভুলে গিয়েছিলাম কথাটা। সেদিন শ্রাবনী জানালো ওর এক ভাসুরের ছেলের কাছে রিয়া টিউশন পড়তে যাচ্ছে কদিন ধরে। খুব যত্ন করে পড়ায় সে রিয়াকে। ওর ভাসুরের বাড়িটাও সামনেই, তাই শ্রাবনী রিয়াকে হেঁটেই পৌঁছে দিয়ে আসতে পারে। পড়া হয়ে গেলে আবার গিয়ে নিয়ে আসে। আমিও নিশ্চিন্ত হলাম শুনে। এর ঠিক তিনমাস পর সেদিন হঠাৎই শ্রাবনী ফোন করলো। ওর গলার স্বর বেশ বিচলিত। বললো এখনই দেখা করতে চায় আমার সঙ্গে। দেরি না করে শ্রাবনীর বাড়ি বিকালেই গেলাম। শ্রাবনী জানালো রিয়া নাকি কদিন ধরে খুব অদ্ভুত ব্যবহার করছে। অতো প্রাণোচ্ছল মেয়ে, যে কিনা সারাদিন বকবক করতেই থাকে সে ভালো করে কথাই বলছে না। সবসময় চুপচাপ, মনমরা হয়ে থাকে। কেমন একটা আতঙ্কের ছাপ ওর চোখে মুখে যেন। ঘুমের ঘোরেও রিয়া চমকে উঠছে মাঝে মাঝেই। শ্রাবনীর সব কথা শুনে আমিও খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। রিয়া তখন ঘরে ছিল না, টিউশন পড়তে গিয়েছিল। সেদিন আমি আর শ্রাবনী রিয়াকে আনতে গেলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার যে রিয়া আমাকে দেখলেই 'আন্টি আন্টি' বলে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসে, একনাগাড়ে ওর মনের জমিয়ে রাখা সব কথা বলতেই থাকে, সেই রিয়া আমাকে দেখে কেমন যেন ম্লান হেসে আমাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরলো। ব্যাপারটা আমাকেও বেশ ভাবিয়ে তুললো। রিয়া টিউশন থেকে ফিরেই কিন্তু ওর ঘরে চলে গিয়েছিল। শ্রাবনী বললো বেশ কয়েকদিন যাবত রিয়া নাকি এরকমই আচরন করছে। টিউশন থেকে ফিরে যে রিয়া সন্ধ্যেবেলা কি টেস্টি জলখাবার খাবে বলে ওর মাকে সবার আগে জানতে চাইতো, সেই রিয়ার এখন না খাওয়াতে উৎসাহ, না কথা বলাতে। আমি রিয়ার ঘরে গেলাম ওর সঙ্গে একটু কথা বলবো বলে । রিয়া তখন বাথরুমে। ভাবলাম একটু অপেক্ষা করি, ও ফ্রেশ হয়ে আসুক, দেখা করেই নীচে যাব একসাথে। ওর বিছানায় বসলাম একটু। চোখে পড়লো রিয়ার সেই ডায়েরি। শ্রাবনী ওর এই ডায়েরির কথা আমাকে আগেই জানিয়েছিল। কৌতুহলবশত রিয়ার ডায়েরিটা হাতে নিয়ে খুললাম। সামনের দিকে রিয়ার ওর বাবাকে অভিযোগ করে লেখা কথাগুলো পড়ে আমার মুখেও হাসির রেখা দেখা দিলো। সত্যি বাচ্ছারা কত ইনোসেন্ট হয়, ওদের মনের কোথাও কোনো কালিমা নেই, ফুলের মতো নিষ্পাপ, পবিত্র ওদের মন। আনমনা হয়ে রিয়ার ডায়েরি হাতে নিয়ে এসবই ভাবছিলাম। হঠাৎই ডায়েরির পাতা আনমনে ওল্টাতে গিয়ে দেখলাম রিয়ার লেখা কিছু কথা-------


"জানো বাবা বিট্টু দাদা আজকাল আমার সঙ্গে কেমন যেন করে। আমার একটুও ভালো লাগে না। "


"বাবা আজ বিট্টু দাদা আমাকে খুব জোরে ব্যাথা দিয়েছে। আমি যখন বললাম, বাড়ি গিয়ে বাবাকে বলে দেব, তখন বললো কাউকে বলতে নেই এসব কথা"। 


"বাবা আমার আজকাল বাথরুম করতে খুব কষ্ট হয়, খুব ব্যাথা করে। কিন্তু তোমাদের বলতে পারিনা তাও। সেজন্যই তো লিখে রাখছি। মা বলেছে মনের সব কথা ডায়েরিতে লিখে রাখতে হয়। বিট্টু দাদা বলেছে, এসব কথা বলতে নেই। নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। "


রিয়ার ডায়েরি পড়ে আমার সারা শরীর আনচান করছে। আমি দরদর করে ঘামছি তখন। কোনোরকমে রিয়ার ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে কিচেনে শ্রাবনীর কাছে গেলাম। শ্রাবনী তখন আমাদের জন্য জলখাবারের ব্যবস্থা করছিল। শ্রাবনীকে হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে ড্রইং রুমে নিয়ে এলাম। শ্রাবনীকে রিয়ার ডায়েরিটা খুলে বললাম, "পড় এটা তাড়াতাড়ি"। আমরা যখন ডায়েরি পড়ছিলাম রিয়া তখন ওর ঘর থেকে নেমে এসেছে। ডায়েরি পড়ে শ্রাবনীও তখন থরথর করে কাঁপছে। রিয়াকে আদর করে কাছে ডেকে জানতে চাইলাম আমরা ওর সঙ্গে বিট্টু কি করেছে। রিয়া প্রথমে বলতে না চাইলেও তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর এতদিনের জমিয়ে রাখা কষ্ট সব বললো আমাদের। আমার আর শ্রাবনীর চোখেও তখন জলের ধারা। ভাবছি ওইটুকু একটা মেয়ে, কতো কষ্ট পেয়েছে এই কদিন। অথচ কাউকে বলতে পারেনি নিজের কষ্টটা। সেজন্যই এরকম মনমরা, নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছিল দিনের পর দিন। আমরা দুজনেই ঠিক করলাম কালই কোনো ভালো গাইনোকোলজিস্টের কাছে ওকে নিয়ে যাব। কে জানে মেয়েটার অভ্যন্তরীণ অঙ্গে কোনো চোট আছে কিনা। শ্রাবনীকে বললাম , রিয়া আগে সুস্থ হোক, তারপর ওর ভাসুরের ছেলের ক্রিয়াকলাপ সবার সামনে আনতেই হবে। দরকার হলে পুলিশ স্টেশনে যাব। কারণ এরকম বিকৃত মানসিকতার মানুষদের মুখোশগুলো সকলের সামনে খুলে দেওয়াটা খুব দরকার একটা সুস্থ সমাজের জন্য। 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime