Sucharita Das

Others

4  

Sucharita Das

Others

চাওয়া পাওয়া

চাওয়া পাওয়া

8 mins
384


ছোট ভাইয়ের শোওয়ার ঘরের পাশ দিয়ে ডাইনিং এ জলের বোতলটা আনতে যাচ্ছিল গায়ত্রী। ইদানিং রাতে ঘুমের ঘোরে প্রায়ই গলাটা শুকিয়ে যায়।কে জানে কেন। এই বয়সেই তো শরীরে হাজার রোগের উপদ্রব শুরু হয়েছে।জল নিয়ে ফেরার সময় ভাইয়ের ঘরের বাইরে হঠাৎই পা দুটো যেন আটকে গেল গায়ত্রীর। এই তো ছ মাস হলো বিয়ে হয়েছে ওদের। ঘরের ভেতর থেকে ভাইয়ের বউয়ের আদুরে গলা কানে এলো ওর। নিজের ঘরে চলে যেতে গিয়েও যেন যেতে পারছে না ও। আচ্ছা ওর জীবনটাও তো এরকম আদরে সোহাগে মাখামাখি হয়ে থাকবার কথা ছিল। কিন্তু সে সৌভাগ্য ওর এ জন্মে আর হলো কই। দু ভাই , তাদের বউ ,মা,বাবা এই নিয়েই তো গায়ত্রীর পরিবার। চাকরি করে ভালো, ভাইয়ের বউয়েরাও যথেষ্ট আদর যত্ন করে ননদকে। সারাদিন তো অফিস। তারপর ফিরে এসে মা, বাবা ভাইয়ের বউদের নিয়ে কেটে যায় ওর সময়। ভাইয়েরা অফিস থেকে ফেরে একটু রাত করে। ভাইয়ের বউয়েরা তাদের একমাত্র ননদকে খুবই শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। দুজনেই চাকরি করে, সংসারের সব দায়িত্ব তাই এখনও গায়ত্রীর মা, বাবার উপরেই আছে। ভাই আর তাদের বউয়েরা নিজেদের সংসার খরচের টাকা পয়সা মা,বাবার হাতেই তুলে দেয় মাসের প্রথমে। গায়ত্রীও মা, বাবার হাতে নিজের মাইনের বেশ কিছু অর্থ দিয়ে দেয় মাসের প্রথমে। গায়ত্রীর বাবা নিজেও তো ভালো চাকরি করতেন,আর সেই সুবাদে ভালো পেনশনও পান। সে অর্থে দেখতে গেলে কোথাও কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু শুধুমাত্র স্বচ্ছলতা থাকলেই কি মনে শান্তি থাকে? বোধহয় না, আর সেটা বোধহয় গায়ত্রীর থেকে ভালো আর কেউ জানে না। কত রাত যে তার বিনিদ্রায় কেটে যায় তার হিসাব কি কেউ রেখেছে। সারাদিন কাজেকর্মে ,গল্পে, হাসি, আনন্দে কেটে গেলেও রাতের এই সময়টুকু যখন সবাই যে যার ঘরে নিজেদের মত করে সময় কাটায়, তখন একা সঙ্গীহীন গায়ত্রী নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকে। সারারাত অস্থিরতায় এপাশ ওপাশ করতে থাকে। গলা শুকিয়ে যায় বারবার। আজও তো বোতলের জল শেষ হয়ে গিয়েছিল বলেই ডাইনিং স্পেসে জল আনতে গিয়েছিল ও। আর ছোট ভাইয়ের ঘরটা যে ডাইনিং এর পাশেই। গায়ত্রী তাড়াতাড়ি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ভাই বা ভাইয়ের বউ দেখলে কি ধারণা হবে তাদের ওর সম্পর্কে। ছিঃ ছিঃ ভাবলেও খারাপ লাগছে ওর।


 অথচ ওর কি এই জীবন কাম্য ছিল?

মা, বাবা ঠিক বয়সে বিয়েও দিতে চেয়েছিল ওর । কিন্তু সমীরনের কাছ থেকে ধোঁকা খেয়ে ওর যেন বিয়ে, সম্পর্ক, বিশ্বাস এইসব কথাতে একটা ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। সমীরন যে ওকে ছেড়ে ওরই প্রিয় বান্ধবী সুতনুকাকে বিয়ে করবে, সেটা গায়ত্রীর স্বপ্নেরও অতীত ছিল। কলেজে পড়বার সময়ই ওর পরিচয় হয় ওর থেকে তিন বছরের সিনিয়র সমীরনের। একে অপরকে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মাঝে মাঝে সমীরন চাইতো ওর সঙ্গে সময় কাটাতে একান্তে। কিন্তু গায়ত্রীর তখন অতো সাহস ছিল না, বাড়িতে এই কথা বলে বেড়োবে যে সে সমীরনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। আর তাই সুতনুকার সাহায্য নিতে হয়েছিল ওকে সেইসময়। সুতনুকাকে ওর বাড়ির সবাই চিনতো, আর তাই ওর সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে বললে বাড়িতে কেউ কোনো আপত্তি করবে না। সেই শুরু, তারপর থেকে যখনই সমীরনের সঙ্গে দেখা করতে যেত ও, সঙ্গে সুতনুকাও থাকতো। তিনজনে একসঙ্গে কাছাকাছি কতো জায়গায় যে যেত ওরা। সমীরন চাকরি পাবার পর ওরা তিনজন যখন রেস্টুরেন্টে বসেছিল, গায়ত্রী সমীরনকে বলেছিল ওর বাড়িতে এবার বিয়ের জন্য এসে কথা বলতে। সমীরন ঘাড় নেড়ে সম্মতিও জানিয়েছিল তাতে। কিন্তু তখনও তো ও ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে, ওরই দুজন সবথেকে কাছের বিশ্বাসযোগ্য মানুষই ওর বিরূদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্র রচনা করছে।



সেদিন কলেজে ফেয়ারওয়েল ছিল ওদের। সবাই খুব সেজেগুজে এসেছিল ওরা। সমীরনের পছন্দের নীল রঙের শাড়িতে গায়ত্রী সেদিন নিজেকে সাজিয়েছিল। কারণ ফেয়ারওয়েলের অনুষ্ঠানের পর সমীরনের সঙ্গে আজ দেখাও করতে যাবার কথা আছে যে। সুতনুকাকেও সেইমতো বলে রেখেছিলো ও। কি আশ্চর্য! সুতনুকাও আজ নীল রঙের শাড়ি পড়ে এসেছে। কলেজে অনুষ্ঠানের শেষে ওরা দুজন সমীরনের বলে দেওয়া জায়গায় পৌঁছে গেল। সমীরনের হাতে একটা কিছু আছে প্যাকেটে। গায়ত্রী মনে মনে ভাবলো, হয়তো ওর জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছে সমীরন। কিন্তু ওর সেই ভুল অচিরেই ভেঙে গেল যখন সমীরনের হাতে ও কোনো উপহার না, একটা বিয়ের কার্ড দেখতে পেল। কিন্তু সমীরনের বাড়িতে কার বিয়ে? সেরকম কেউ তো নেই ওর বাড়িতে যার বিয়ে উপলক্ষে সমীরন ওকে কার্ড দিতে পারে। ও কিছু জানতে চাইবার আগেই সমীরন ওকে কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বললো,"প্লিজ ভুল বুঝোনা আমাদের।" কিসের ভুল, কার ভুল কিছুই তো গায়ত্রী বুঝতে পারছিল না। কার্ডটা হাতে নিয়ে ও খুলে যা দেখলো, তাতে ওর মনে হচ্ছিল ও এখুনি পড়ে যাবে। সমীরন আর সুতনুকার বিয়ের কার্ড এটা। আর ওকে নিমন্ত্রণ করছে সেই বিয়েতে সমীরন। গায়ত্রী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি সেদিন। সমীরনের গালে সপাটে একটা চড় মেরেছিল ও, আর তারপর সুতনুকার গালেও। এতবড় বিশ্বাসঘাতকতার জবাবে যদিও এই চড়টা খুবই সামান্য ছিল, কিন্তু আর কিই বা করতে পারতো ও সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। যে বন্ধুকে ও নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিল,সে কি করে এতটা নীচে নামতে পারলো তা গায়ত্রীর বোধগম্য হচ্ছিলো না। আর সমীরন? তার মতো বিশ্বাসঘাতককে গায়ত্রী এতদিন কি করে চিনতে পারেনি সেটাই সে বুঝতে পারছিল না। না এরপর আর গায়ত্রীর কখনও দেখা হয়নি ওদের সঙ্গে। বন্ধুদের কাছে শুনেছিল পরবর্তীতে, ওরা নাকি বিয়ের পর ব্যাঙ্গালোরে চলে গিয়েছিল সমীরনের চাকরি সূত্রে। অবশ্য ওদের থাকা বা না থাকা নিয়ে গায়ত্রীর সে অর্থে কোনো মাথাব্যথা আর ছিলও না। সে তার জীবন থেকে ধুলোর মতই ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল এই দুজনের অস্তিত্বকে। আর নিজে হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার এক মানুষ। যার জীবনে মানুষের আশা, ভরসা, বিশ্বাস, ভালোবাসার কোনো মূল্য আর ছিল না। যার জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল এরপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা শুধু। বিয়ে, সম্পর্ক এইসবে সে আর নিজের জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়নি। আর তাই মা, বাবার হাজার বলা সত্ত্বেও গায়ত্রী আর বিয়ে করতে চায়নি। বিয়ে করে নিজেকে কোনো রকমের বন্ধনে আবদ্ধও করতে চায়নি। নিজের জীবনটাকে তার নিজের কাজ আর পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ রাখতে চেয়েছে সে এরপর। কিন্তু আজ এত বছর পরও কোথাও যেন নিজেকে তার অসম্পূর্ণ বলেই মনে হয়। সেও তো আর পাঁচটা মেয়ের মতোই কাজকর্ম, স্বামী, সংসার এসবের মধ্যেই নিজের সুখটাকে খুঁজে পেতে চেয়েছিল , কিন্তু সবার জীবনে বোধহয় সব সুখ সহ্য হয়না। গায়ত্রীর জীবনটাও অনেকটা সেরকমই হয়তো।




সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ছোট ভাইয়ের বউয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার জন্য কিছু উপহার কিনতে সামনের শপিং মলটায় গিয়েছিল গায়ত্রী। সঙ্গে অফিস কলিগ শ্রাবন্তীও ছিল। এটা,ওটা দেখছিলো ওরা ঘুরে ঘুরে। হঠাৎই ওর চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলার দিকে। এই কবছরে চেহারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও ,গায়ত্রীর কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে চিনতে এতটুকুও অসুবিধা হলো না। সুতনুকাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দেখেও না দেখার ভান করে গায়ত্রী এড়িয়ে যেতে চাইলো সুতনুকাকে। কিন্তু সুতনুকা তো ওর দিকেই এগিয়ে আসছে মনে হচ্ছে। গায়ত্রী মনে মনে ভাবলো, যে গভীর ক্ষতটাকে সে এতদিন চাপা দিয়ে রেখেছে সযত্নে। তাকে দগদগে ঘায়ে পরিবর্তিত হতে দেবে না ও কিছুতেই, আজ এত বছর পরে। ও তাড়াতাড়ি লিফটের সামনে গিয়ে বাটন প্রেস করে দাঁড়ালো। কিন্তু একি সুতনুকাও তো ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই সুতনুকা ওকে বললো,"গায়ত্রী আমাকে একটু সময় দিবি?কয়েকটা কথা শুধু বলবো তোকে"। আজ এত বছর পর গায়ত্রীর মনে সুতনুকার প্রতি সেই অভিমান, ক্ষোভ হয়তো আর নেই , কিন্তু তাও কোথাও যেন একটা না বলা কষ্ট গায়ত্রীর গলার ভেতর আজও দলা পাকিয়ে আছে। কিন্তু ও সেটা কিছুতেই সুতনুকাকে বুঝতে দেবে না এই মুহূর্তে। ও সুতনুকার সঙ্গে গিয়ে শপিং মলের ভেতরেই একটা ফুড প্লাজাতে বসলো। শ্রাবন্তীর কিছু কাজ ছিল, ও তাই গায়ত্রীকে বলে বেড়িয়ে গিয়েছিল। 



দুজনের জন্য দুটো কফির অর্ডার দিয়ে গায়ত্রী সুতনুকার পাশে এসে বসলো। ও চুপ করেই ছিল, আজ ও কিছুই বলবে না।সুতনুকা বলবে আর ও শুনবে, এরকম ভাবেই নিজের মনকে প্রস্তুত করেছিল ও। হঠাৎই ওকে অবাক করে দিয়ে সুতনুকা ওর থেকে জানতে চাইলো,"গায়ত্রী তুই আজও ভালোবাসিস সমীরনকে তাই না রে? আর সেজন্যই তুই আজও বিয়ে করিসনি। জানিস গায়ত্রী সমীরনের সঙ্গে বিয়ের পর নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়েছিল সেদিন আমার। কোথাও যেন নিজেকে জয়ী বলেও মনে হয়েছিল। তোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সমীরনকে বিয়ে করেছিলাম যে। তোকে হারিয়ে দিয়ে সমীরনকে পেয়েছিলাম সেদিন, জয়ী তো নিজেকে মনে হবেই। কিন্তু আমার এই ধারণাটা যে কতটা ভুল তার প্রমান আমি এক বছরের মধ্যেই পেয়েছিলাম। নতুন বিয়ের পর সমীরন আমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারতো না। আসলে তখন তো সবকিছুই নতুন থাকে, তাই হয়তো ও আবেগে ভেসে গিয়েছিল কদিন আমার সাহচর্যে। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মধ্যেই সমীরন কথায় কথায় তোর সঙ্গে আমার তুলনা করতো। তুই কতটা বুদ্ধিমতী, তোর কতটা ধৈর্য্য,তোর কতো গুণ। বিশ্বাস কর ,নিজেকে অন্য কারুর সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা করা হলে যে কতটা অসহায় লাগে মনের দিক থেকে, তা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না আমি। জানিস গায়ত্রী, তখন তোর উপর মনে মনে খুব রাগ হতো আমার। মনে হতো তুই দূরে থেকেও আমাদের দুজনের মধ্যেই আছিস সর্বদা। ধীরে ধীরে নিজেকে সমীরনের জীবনে অযাচিত বলে মনে হচ্ছিলো আমার। আর তারপর যখন আমার সন্তান জন্ম দেওয়াতে অপারগতার কথা ডাক্তার জানালো ওকে, সেদিন যেন ওর সমস্ত ধৈর্যেরই অবসান ঘটেছিল। সেদিন ওইভাবে অপমানিত হবার পর আমিও আর থাকবো না সমীরনের সঙ্গে ,মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। জানিস গায়ত্রী আসলে সমীরনের মতো ছেলেরা কখনও কারুর স্বামী বা প্রেমিক হতে পারে না।"



এতক্ষণ সুতনুকার সব কথা মন দিয়ে শুনছিল গায়ত্রী শুধু। সুতনুকা ওর ভাবলেশহীন মুখের অভিব্যক্তি দেখে অবাক হয়ে গেল। গায়ত্রী সুতনুকার অবাক হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,"কি ভাবছিস, আমি কেন তোর জীবনের এতবড় ঘটনা শোনবার পরও এরকম নির্লিপ্ত আছি। আসলে কি জানিস তো সুতনুকা, তুই বা তোরা (আমি সমীরনের কথাও বলছি) পুরোনো যে অতীতটাকে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছিস নিজেদের জীবনে দুঃস্বপ্নের মতো, আমি সেই অতীতের অস্তিত্বটাকে ওইদিন রেস্টুরেন্টে তোদের দুজনের সামনেই ধুলোর মতো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে চলে এসেছিলাম। আর যে জিনিস আমি একবার ফেলে দিই তার দিকে আর পিছন ফিরে তাকাই না রে। যাইহোক ভালো থাকিস ,আর আশাকরি তুই তোর সব প্রশ্নের উত্তর এবার পেয়ে গেছিস। চলি রে ,অনেক কাজ আছে।" সুতনুকাকে পেছনে ফেলে গায়ত্রী এগিয়ে যায়।




সেদিন রাতে গায়ত্রী মনে মনে ভাবে, জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবটা হয়তো অতটাও সহজ না, যতটা সে ভেবেছিল। এতদিন নিজেকে নিঃস্ব, অসম্পূর্ণা এক নারী বলে মনে হয়েছিল তার। সে ভেবেছিল জীবনে সে কিছুই পায়নি। স্বামী, সংসার, সন্তান এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ সুতনুকা সব পেয়েও তো তার থেকেও শতগুণ বেশি নিঃস্ব হয়ে গেছে। যে সুতনুকা একদিন তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিজেকে সুখী করতে গিয়েছিল, আজ সে সর্বহারা। নিজের জীবনের একটা আলাদা পরিচয়ও তো তৈরি করতে পারেনি সে। আর সমীরনের কথা তো ছেড়েই দিচ্ছে ও। তার তো কোনো মেরুদন্ডই নেই বলে মনে করে গায়ত্রী। গায়ত্রীর আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে। ভাগ্যিস ওরকম মেরুদন্ডহীন ছেলের পাল্লায় পড়েনি ও সেদিন।  



না এরপর থেকে আর কখনও গায়ত্রী জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাব করতে যাবে না। কারণ জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির এই খেলায় সে আজ কোথাও না কোথাও পরিপূর্ণ নিজের জীবনে। অন্তত আজ সুতনুকার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে ওর সেটাই মনে হচ্ছে। আজ অনেকদিন পর গায়ত্রীর দু চোখের পাতা নিজের অজান্তেই ভারি হয়ে এলো।  


Rate this content
Log in