Sucharita Das

Horror Classics

4  

Sucharita Das

Horror Classics

অতৃপ্তি

অতৃপ্তি

5 mins
1.3K


চাকরি সূত্রে যে এইরকম জায়গায় থাকতে হবে এটা মিতা স্বপ্নেও ভাবেনি। ছোট থেকে কোলকাতায় বড় হয়ে ওঠা।স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সবই কোলকাতায়। কিন্তু শেষে চাকরি পেল কিনা ওই গ্রামে। কিন্তু কিছুই করার নেই, কোলকাতা থেকে যে রোজ যাতায়াত করবে, সে উপায় ও নেই। অগত্যা এটাই মেনে নিতে হবে। জয়েন করবার দু দিন আগেই তাই নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একটা ছোট বাড়িতে শিফ্ট করলো। স্কুল থেকে বাড়িটার দুরত্ব এক কিলোমিটার এর মতো। এইটুকু দুরত্ব এমন কিছু না। হেঁটে ই যাতায়াত করা যাবে। যাইহোক জায়গাটা একটু বেশিই নিরিবিলি। চারিদিকে গাছপালায় ভরা। কোলকাতায় বড় হয়ে ওঠা মিতার তাই একটু গা ছমছমে অনুভূতি হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই। সরকারি চাকরি তার ছোটবেলার স্বপ্ন।


পরের দিনটা তো মিতার সারাদিন ঘর পরিষ্কার করা আর গোছানো তেই কেটে গেল। একটা মেয়েকে ঠিক করলো ঘরের কাজ আর রান্নার জন্য। পরের দিন সকালেই মেয়েটি চলে এলো। খুব চটপটে কাজকর্মে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব কাজ হয়ে গেল ওর। মিতা স্কুলে বেরোবার আগে ওকে যত্ন করে সাজিয়ে খেতে ও দিয়ে দিলো। ওকে সব বুঝিয়ে , মিতা স্কুলের জন্য বেরিয়ে পড়লো। প্রথম দিন তাই একটু আগেই যাওয়া উচিত। তারপর কিছুটা হাঁটতে ও হবে। স্কুলে পৌঁছতেই হেডস্যার খুব ই বিনীতভাবে আপ্যায়ন করলেন ওকে। আরো দুজন টিচার ছিলেন, তাঁরা ও খুব ই বিনয়ী। মিতার তাই কোনো রকম অসুবিধা হয়নি। হেডস্যার ক্লাসে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিলেন । সবমিলিয়ে দিনটা ভালই কাটল।


স্কুল ছুটির পর রাস্তায় আসতে মিতা ভাবছিল , সবার আগে বাড়িতে গিয়ে মাকে একটা ফোন করতে হবে। কারণ মা খুবই চিন্তায় আছে।আর বাবা মুখে কিছু না বললেও সমান চিন্তা করে। আকাশ টাও কদিন ধরে একটু মেঘলা মেঘলা করছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে । একটু ঝোড়ো হাওয়া ও চলছে। এমনিতে ও এইসময় টায় মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় ও। জুন মাসের মাঝামাঝি তো বর্ষা ও নেমে যাবে। ঝড় উঠেছে বলে একটু জোরে ই পা চালিয়ে হাঁটতে শুরু করলো ও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে চলে এলো মিতা। কাজের মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে চা আর জলখাবার দিয়ে গেল। মিতা র খুব ভালো লাগলো ওর এই আন্তরিকতা। তারপর রাতের খাবার বানিয়ে রেখে মেয়েটি চলে গেল ।


পরদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এক নাগাড়ে পড়ে চলেছে আর তার সাথে হাওয়া ও চলছে। মিতা একটা ছাতা নিয়ে স্কুলের জন্য বেরিয়ে পড়লো। অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে। স্কুলে যাওয়ার পথে একটা খুব বড়ো বাউন্ডারি দেওয়া বাড়ি পড়ে। গতকাল ই সেটা ওর চোখে পড়েছে। সাবেক আমলের বাড়ি, আর তার সাথে প্রকাণ্ড বাগান।আম,জাম, লিচু, কাঁঠাল সবই আছে। মিতার খুব ভালো লাগে এই ধরণের বাড়ি।ওর বন্ধু অনন্যা দেরও এই রকম বাগান ঘেরা বাড়ি আছে ব্যারাকপুর এ। যাইহোক ও কোনো রকমে স্কুলে পৌঁছে গেছে এটাই যথেষ্ট। এই বৃষ্টি আজ আর থামবে বলে মনে হচ্ছে না। 


স্কুল ছুটির পর ও তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে, এতো মেঘলা করে আছে আকাশ টা। একটু যেন ভয় ভয় করছিল ওর। নতুন জায়গা, তার উপর এই রাস্তায় লোকজন ও খুব কমই দেখা যায়। হঠাৎই মিতার মনে হলো দূরে যেন কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখে তো বয়স্ক বলেই মনে হচ্ছে। হবে কেউ, এই ভেবে সে সবে এগোতে যাবে, তখনই পিছন থেকে ওকে ডাকলো কেউ। "এই যে মা, একটু শুনবে?" মিতা পিছন দিকে ফিরে দেখল, এক বয়স্ক ভদ্রলোক তাকে ডাকছে।ও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ওনার? কোনো অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন কিনা উনি। অন্ধকারে মুখটা ভালো করে দেখতে ও পাচ্ছে না মিতা ওনার। ভদ্রলোক ওকে বললেন যে এই সামনেই ওনার বাড়ি। ওনার স্ত্রী খুব অসুস্থ, আর উনি একা । তাই রাস্তায় বেরিয়ে কাওকে দেখতে পান যদি, তার সাহায্য নিয়ে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। সেজন্য ই উনি দাঁড়িয়ে আছেন এখানে। একে তো নতুন জায়গা, কেউ চেনা পরিচিত ও না। ও মনে মনে একটু ভাবনায় পড়ে গেল।কে জানে এভাবে অচেনা কোনো মানুষের কথায় যাওয়া উচিত হবে কিনা। হঠাৎই ওকে অবাক করে দিয়ে বয়স্ক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, "তোমার কোনো ক্ষতি হবে না মা। তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো"।না এরপর আর কেন জানিনা মিতার মনে হলো অবিশ্বাস করা যায় না। সে ভদ্রলোকের পিছন পিছন চলতে শুরু করলো। কিন্তু এটা তো ওই সাবেক আমলের বাড়ি টা। যেটা মিতা আজ সকালে ও লক্ষ্য করছিল।


ভদ্রলোক বিশাল গেট খুলে ভেতরে ঢুকলেন।আর পিছনে মিতা ও কেমন যেন সম্মোহিতের মত ওনাকে অনুসরণ করছিল। বাগান পেরিয়ে ঘরের মুখ্য দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা। ঘরের দরজা হালকা ঠেলতেই খুলে গেল। মিতা ও ঘরের ভেতর ঢুকলো।কেমন যেন ভ্যাপসা গন্ধ ওর নাকে এলো। অনেক দিন ব্যবহার না করা হলে যেরকম মনে হয়। ভদ্রলোক সামনের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলেন। মিতা ও উঠতে লাগলো ওনার পিছনে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে সামনেই একটা ঘরের ভেতর ঢুকলো ওরা। পুরানো দিনের বিশাল খাট পাতা আছে ঘরের ভেতর। মিতা দেখল খাটে এক শীর্ণকায়া বয়স্কা মহিলা শুয়ে আছেন।এই ঘরে ঢুকে ও মিতার নাকে সেই রকমই ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এলো। ও এগিয়ে এসে ভদ্রমহিলাকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে , ভদ্রমহিলা ওর থেকে একটু জল খেতে চাইলেন। মিতা পিছন দিকে ফিরে ভদ্রলোক কে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল যে জল কোথায় রাখা আছে। কিন্তু একি ! ঘরের ভেতর তো নেই ভদ্রলোক।তখন সে ভদ্রমহিলাকে সবে বলতে যাবে যে ,জল এনে দিচ্ছে সে নীচের তলা থেকে। কিন্তু সামনে খাটের উপর তো কেউ নেই। মিতার হঠাৎ ঘরের ভেতর নজর পড়ে। পুরো ঘর অন্ধকার ঘুটঘুটে, কোথাও কেউ নেই। চারিদিকে মাকড়সার জাল। 


না আর কিছু মনে নেই ওর। যখন ওর জ্ঞান এলো ,তখন দেখল নিজের ঘরে শুয়ে আছে। কাজের মেয়েটি দোষ ওর কাছে বসে আছে। আরো অনেকেই আছে ঘরের ভেতর। ও তো কাওকে চেনে না। কিন্তু সবাই ওর থেকে এটা জানতে চাইছে যে, ও ওই পোড়ো বাড়িতে কেন ঢুকেছিল। কোনটা পোড়ো বাড়ি? ও জিজ্ঞেস করাতে সবাই যা বলল তাতে মিতা হতবাক। মিতা স্কুলের ছুটির পর ও আসছিল না দেখে কাজের মেয়েটি একটু এগিয়ে এসে ছিল ওকে খোঁজার জন্য। কিন্তু এরপর ও স্কুলে যাওয়ার রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখেছে যে পোড়ো বাড়ি টার গেট টা খোলা ছিল। আর তাই ও সন্দেহের বশে ভিতর গিয়ে দেখেছে যে মিতা ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কাজের মেয়ে টি মিতাকে বলল যে ওই বাড়িতে নাকি দুই বুড়ো বুড়ি থাকত অনেক দিন আগে। ওদের একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকতো। প্রথম প্রথম খোঁজ খবর নিলেও , বিয়ের পর নাকি আর খবর নিত না। বুড়ি অসুস্থ ই থাকত বেশিরভাগ সময়, ছেলের জন্য। এক বৃষ্টির রাতে বুড়ি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে , বুড়ো নাকি ডাক্তারের কাছে যেতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট এ মারা যান।আর তার পর বুড়িও ওই ঘরের ভেতর ই মারা গেছিল। অনেক দিন পর ঘর থেকে পচা গন্ধ পেয়ে সবাই গিয়ে দেখেছে যে বুড়ি আর নেই। ওদের ছেলেকে খবর দেওয়া সত্বেও সে আসেনি ওদের শ্রাদ্ধ শান্তি করবার জন্য।গ্ৰামের লোক ও আর এ ব্যাপারে কিছু করেনি তাই। এবার মিতা বুঝতে পারলো আসল ঘটনা। ওদের আত্মার শান্তি হয়নি।আর এটাই ওঁরা মিতা কে বোঝাতে চেয়েছেন। স্কুলে দুদিন ছুটিতে মিতা সবার আগে ওনাদের আত্মার শান্তি র জন্য পূজার আয়োজন করলো। তবে মিতা এটা আজ ও বুঝতে পারেনি যে , ওনারা ওকেই কেন এটা জানাতে চেয়েছিল। আমাদের জীবনে কিছু কথা অনেক সময় অজানা ই থেকে যায়।এটাও হয়তো সেই রকম ই একটা কথা



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror