Sucharita Das

Horror

3.0  

Sucharita Das

Horror

ঢাকাই শাড়ি

ঢাকাই শাড়ি

6 mins
498


  "আমাকে একটু পরে দেখ্,খুব সুন্দর মানাবে তোকে"। না এই কথাটা কোনো মানুষের না।এটা একটা শাড়ি বলছে। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? প্রথম টা আমার ও এই এক ই অবস্থা হয়েছিল।আমার ও বিশ্বাস হচ্ছিল না আপনাদের মতো। কি ? জানতে ইচ্ছা করছে তো এই শাড়ি সম্পর্কে সব কথা। তাহলে আপনাদের ও আমার সঙ্গে ফিরে যেতে হবে চার বছর আগের এক অদ্ভুত ঘটনায়। বিশ্বাস করা বা না করা, সেটা সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাহলে চলুন ফিরে যাই চার বছর আগের অতীতে......

 আমাদের বাড়ির ঠিক পাশেই ছিলো লাভলি দের বাড়ি। লাভলি ঠিক আমার বন্ধু না। কিন্তু পাশাপাশি থাকতে থাকতে বন্ধুর মতোই হয়ে গিয়েছিল। বলা ভালো বন্ধুর থেকেও বেশি, আমার বোনের মতো।ওরা বাঙালি না, অবাঙালি। কিন্তু তা সত্ত্বেও লাভলি দের বাড়ি র সাথে আমাদের বাড়ির খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। লাভলির মা, মানে সিমরন আন্টি দারুন দারুন পাঞ্জাবি ডিশ রান্না করে খাওয়াতেন। যেটা আমার খুব প্রিয়। আবার অপরদিকে আন্টি পছন্দ করতো বাঙালি রান্না, বাঙালি সাজগোজ।আর স্পেশালি বাঙালিদের শাড়ি।আর শাড়ির মধ্যে আন্টির সবথেকে পছন্দ ছিলো ঢাকাই শাড়ি।


 সেই বছর দুর্গাপূজোর ঠিক আগেই লাভলি আর সিমরান আন্টি অমৃতসর যাবে বললো। ওখানে লাভলি র নানা আর নানী থাকে। লাভলি যখন কথাটা বললো এসে আমাদের বাড়িতে, মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। কারণ আমার ঘোরার সঙ্গী চলে যাচ্ছে। তাও করার কিছু ই নেই। নির্দিষ্ট দিনে লাভলি রা চলে গেল। এদিকে আমিও পূজো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।আজকাল তো ফোনে র যুগ,রোজ ই কথা হতো লাভলি র সঙ্গে ফোনে , আর না হলে মেসেজ এ । কিন্তু কয়েকদিন ধরে লাভলি না ফোন করছিল আর না অনলাইন আসছিল। ভাবলাম ব্যস্ত আছে হয়তো। নতুন জায়গায় গেছে। একটু তো ঘুরবে ও আশেপাশে।তাই আমিও আর অতটা মাথা ঘামাইনি ব্যাপারটা নিয়ে। ভাবলাম সময় পেলেই যোগাযোগ করবে।


কিন্তু না, আজ পনেরো দিন হয়ে গেল, লাভলি র কোনো খবর নেই। এবার তো ব্যাপার টা আমার কাছে একটু চিন্তার ই মনে হচ্ছে।আর দেরি না করে সকালে গেলাম ওদের বাড়িতে। ভাবলাম বাড়িতে তো অবশ্যই কোনো খবর পাবো। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। কারণ লাভলি বা ওর মা কেউই বাড়িতে ও কোনো খবর দেয়নি। আর তাই ওর বাড়ির লোকজন ও সমান চিন্তিত। ব্যাপারটা কি? না কোনো মেসেজ, না কোনো ফোনে যোগাযোগ। এপাশ থেকে করলেও কোনো রকম রিপ্লাই নেই। এবার তো সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু করবার ও কিছু নেই। অগত্যা অপেক্ষা করতে ই হবে।


সেদিন দুপুরে লাঞ্চ করে, একটু শুয়ে আছি ফোনটা নিয়ে।ভাবছি মেয়েটার কথা। হঠাৎই ওপাশ থেকে লাভলি র ফোন। তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম। আমি কিছু জিগ্যেস করবার আগেই ওপাশ থেকে লাভলির উৎকণ্ঠা মিশ্রিত কন্ঠ,"তুমি কালকে ই পাপা র সঙ্গে এখানে চলে এসো । আমরা খুব বিপদে র মধ্যে আছি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না"। মেয়েটা বলে কি? এতো দূরের রাস্তা, বললেই কি যাওয়া সম্ভব নাকি। তাছাড়া আমাকে ও তো জিজ্ঞেস করতে হবে বাড়িতে।হুট বললেই তো আর অমৃতসর পৌঁছে যেতে পারিনা। আমি বললাম ওকে," কি হয়েছে লাভলি? একটু তো বলো ব্যাপারটা"।ও শুধু বললো "প্লিজ দিদি , তুমি একবার এসো এখানে, তুমি ই পারবে এই সমস্যা থেকে আমাদের বের করতে।এতো কথা ফোনে বলতে পারবো না'। কি যে করবো কিছুই মাথায় আসছিল না। সন্ধ্যে বেলা লাভলি র বাবা এসে ও ওই একই কথা বললো। বাড়িতে বলে অবশেষে পরের দিন আমি আর আঙ্কেল রওনা দিলাম অমৃতসরের উদ্দেশ্যে। টিকিট তো কনফার্ম হওয়ার প্রশ্নই নেই, এই একদিনে। কোনো রকমে টি টি কে রিকোয়েস্ট করে আঙ্কেল একটা সিট  জোগাড় করলেন আমার জন্য।


পরের দিন রাত্রি তে আমরা পৌঁছালাম লাভলি দের বাড়ি। ওখানে যেতে ই লাভলি আমাকে বললো,"দিদি মা আর নেই"।বলছে কি মেয়েটা? নেই মানেটা কি? জিজ্ঞেস করলাম," কি হয়েছে ব্যাপারটা বলো লাভলি। এভাবে আর টেনশন নিতে পারছি না"। এরপর লাভলি যা শোনালো, তাতে আমার ও পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল মনে হচ্ছিল। ঘটনা টা হলো... ওখানে যাবার পর একদিন দুপুরে একটি সেলস গার্ল কিছু জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলো বিক্রি করতে।এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো শাড়ি র কালেকশন ও ছিলো। আর আপনাদের তো আগেই বলেছি , আন্টির শাড়ির প্রতি দুর্বলতার কথা।আর তাই একটা লাল ঢাকাই শাড়ি দেখে আন্টি আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। শাড়িটা কিনে নেয়।


আর তারপর আন্টি শাড়িটা আলমারি তে রেখে দেয়। সেই দিন সন্ধ্যে বেলা থেকেই শুরু হয় সমস্যা। যতবারই আন্টি আলমারি র সামনে গেছে, প্রত্যেকবার ই আলমারির ভেতর থেকে একটাই কথা শোনা যাচ্ছে,"আমাকে একটু পরে দেখ্, খুব সুন্দর মানাবে তোকে"। প্রথম প্রথম আন্টি কাউকে কিছু বলেনি, ভেবেছে মনের ভুল। কিন্তু তিন চার দিন পর ও যখন এই একই ঘটনা ঘটে যাচ্ছিলো, তখন লাভলি কে জানায় ব্যাপারটা। প্রথমে তো লাভলি ও ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না। তাই ও আন্টিকে বলেছিলো শাড়ি টা আলমারি থেকে বের করে বাইরে রাখতে। সেটাই করা হলো। কিন্তু একি? আবার যতবারই শাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে আন্টি, ততবার ই শুনতে পাচ্ছে সেই মেয়েলি কন্ঠ ,"আমাকে একটু পরে দেখ্, খুব সুন্দর মানাবে তোকে"।

এরপরের ঘটনা আরও ভয়ংকর। পরের দিন লাভলিদের কোনো রিলেটিভের বাড়িতে যাবার ছিলো। আর আন্টি ওই শাড়িটাই পরে যাবে বলে মনস্থির করে। লাভলি অনেক বার বারণ করেছিলো ওর মা কে। কিন্তু সিমরান আন্টি কোনো কথাই শুনতে চায়নি। আর যেই মূহুর্তে ওই শাড়িটা আন্টি পরেছিল, তার পর মূহুর্ত থেকেই শাড়ি সমেত আন্টিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর ঘটনাটা ঘটেছিল লাভলির সামনেই। আর তাই ও এতটা বেশি ভয় পেয়ে গেছে। বুঝতেই পারছে না ব্যাপারটা ঠিক কি ঘটেছে। সেই মুহূর্তে ওর মনে হয়েছে কোনো কারণে ,আমি থাকলে ওর মনোবল কিছুটা হলেও বাড়বে।আর তাই ও আমাকে বারবার আসতে বলছিল ওর কাছে।


কিন্তু সিমরন আন্টি গেল কোথায়। একটা জলজ্যান্ত মানুষ তো আর এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে পারে না।তাও আবার নিজের ঘর থেকে। একটা শাড়ি র মধ্যে কি এমন ছিলো, যাতে সিমরন আন্টি একেবারে হারিয়ে গেল ওটা পরবার পর ই।এইসব প্রশ্নের উত্তর আমরা পেলাম দু এক দিনের মধ্যেই। পরের দিন সন্ধ্যেবেলা আমি আর লাভলি ঘুরছিলাম ছাদে। আর চিন্তা করছিলাম এবার লোকাল থানায় গিয়ে একটা রিপোর্ট লেখানো উচিত। এভাবে আর কতদিন। হঠাৎই লাভলির ফোনে একটা কল এলো অজানা নাম্বার থেকে। আমি ওকে বললাম রিসিভ করতে।অপর প্রান্ত থেকে যা বললো তাতে আমরা দুজন হতবাক হয়ে গেলাম।


ফোনের ওপাশ থেকে তখন একজন ভদ্রলোক বললেন, "আমি বর্ধমান জেলা থেকে বলছি। আপনার মা কি নিখোঁজ গত দু তিন দিন ধরে। উনি আমাদের এখানে আছেন। আপনার পরিচয় আর নাম্বার উনি দিয়েছেন।তাই আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। আপনারা এসে ওনাকে নিয়ে যান। আর উনি ভালো আছেন। আমি নিজের ঠিকানা আপনাকে জানিয়ে দেব। দরকার হলে এই নাম্বারে কথা বলতে পারেন"। লাভলি ফোনটা রেখে সব বললো। আমরা আর দেরি না করে পরের দিন কোনো রকমে ট্রেনে উঠলাম। ওখান থেকে আমরা বাড়িতে না ফিরে, বর্ধমানে ই গিয়েছিলাম। রাস্তায় ওই ভদ্রলোককে ফোন করে ঠিকানা জেনে নিয়েছিলাম।


ওখানে গিয়ে আমরা দেখি সিমরন আন্টি বসে আছে। সেই মুহূর্তে নিজেদের চোখকে এতগুলো লোক অবিশ্বাস ই বা করি কিভাবে। সুদূর অমৃতসর থেকে চোখের নিমেষে একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে বর্ধমানের এই গ্ৰামে চলে আসতে পারে, সেটাও আমাদের কাছে আজ ও রহস্য।আমি লাভলি কে বারণ করলাম আন্টিকে এই মুহূর্তে কিছু জিজ্ঞেস না করতে। এরপর আমরা যা শুনলাম তাতে শরীরের সমস্ত রক্ত মনে হচ্ছিল হিম হয়ে যাবে।ওই ভদ্রলোক বললেন, ওনার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে একবছর আগেই দিয়েছিলেন। আর ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।ওনার ছোট মেয়ে তার দিদির কাছে আইবুড়ো ভাতের দিন পরবে বলে, একটা লাল ঢাকাই শাড়ি র আবদার করেছিলো।ওর দিদি ওকে ফোনে বলেও ছিলো একটা সুন্দর লাল ঢাকাই সে কিনেছে , তার বোনের জন্য।ওর দিদি ওকে আরো বলেছিলো,এই ঢাকাই শাড়িটা পরে দেখিস, তোকে খুব মানাবে। কিন্তু বিয়ের আগের দিন যখন ওনার বড়ো মেয়ে আসছিলো জামাইয়ের সঙ্গে,কার অ্যাক্সিডেন্ট এ ওরা দুজনে ই মারা যায়। বোনকে‌ তার পছন্দের শাড়ি আর ওর দেওয়া হয়নি।


এবার আমার কাছে ব্যাপারটা আস্তে আস্তে পরিস্কার হচ্ছিল।আমি লাভলি কে একটু আলাদা ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, শাড়িটার পাশ দিয়ে যখন আন্টি যাচ্ছিল তখন তো ঠিক এই ধরণের একটা কথাই শুনতে পাচ্ছিলো আন্টি।আমার সঙ্গে সঙ্গে লাভলি ও এবার ঘামতে শুরু করলো। আমাদের এই ধারণা সঠিক হলো, যখন ওই ভদ্রলোক বললেন যে,"আপনার মা যখন এখানে এসেছিলেন ,তখন ঠিক ওই রকমই একটা লাল ঢাকাই পরেছিলেন উনি। ঠিক যেমনটি আমার বড়ো মেয়ে তার বোনের জন্য কিনেছিলো"। আমি আর লাভলি তখন মনে মনে ভগবানকে ডাকছি।যাতে ভালভাবে কাল বাড়ি ফিরতে পারি। ওই লাল ঢাকাই কিভাবে ওই সেলস্ গার্ল এর কাছে গেলো সেটার উত্তর আমাদের কারুর ই জানা ছিলো না।

            


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror