ক্লাসরুম
ক্লাসরুম
ছেলেবেলার থেকে বন্ধু দের প্রিয় পাত্র ছিলাম আমি। ছোটখাটো চেহারা মানুষ আমি সাধ করে সবাই নাম রেখেছিলো পুঁচকি। তবে এ জন্য আমি রাগ করতাম না। কারণ ওটা ভালোবাসার ডাক ছিলো। স্কুলে লাইফটা মিস করি এখনো। কলেজে গিয়ে জীবন টা ভেবরে গেলো। বানিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলাম আমি। পড়াশোনা ফাঁকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ ছিলো।
দলগুলোর সঙ্গে বলতেই বোধহয় একটু আপনার ও খটকা লাগলো। আসলে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলাম আমি । কিন্তু দল দাস বা ভুটিয়া কমরেড ছিলাম না। আমি খোঁজ চালাতে চেষ্টা করেছি তখন সংসদীয় দল , না বিপ্লব, কোনো টা আমাদের প্রকৃত উন্নতি করতে সক্ষম। আসলে উন্নয়ন নামে বঞ্চিত হয়ে এসেছি আমরা। তাই চারদেয়ালের ক্লাসরুম এর বাইরে আমাদের সমাজ যে ক্লাস রুম টা আছে সেখানেই শিখতে চাইছিলাম সব কিছু।
যাইহোক, আমি বিশ্বাস ঘাতকতা করায় কলেজ ইউনিয়ান টা ছয় মাসের জন্য আরোকটি দলের দখলে যায়। ক্ষমতায় ফিরে আমার ওপর চড়াও হয় ওরা। তবে সেখানেই শেষ নয়। পরীক্ষা য় নকল করছি বলে আমার ছাত্র জীবন টা নষ্ট করে দেয়।তবে আমি লড়াই টা থামাই নি। বন্ধু দের বুদ্ধি তে পলিটেকনিক , সেখানে ব্যার্থ হয়ে। বিএ পাশ করে। বিয়ে করে ফেললাম নীলাঞ্জনা কে। আর নীলাঞ্জনার উৎসাহ আমার এমতে ভর্তি।
আবার নতুন করে ক্লাসরুম পেয়ে ভালো লাগছিলো। আসলে এমে তে ভালো রেজাল্ট করে , আমার চেনা জানা পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে হতো আমি কলেজে গিয়ে বকে যাওয়া ছেলে হয়ে যায়নি। আমার বদনাম ঘোচাতে তাই একটু গম্ভীর ভাবেই পড়াশোনা শুরু করলাম। ক্লাসরুম টাকে ভালো বাসতে শুরু করলাম।
বিবাহিত জীবনে প্রেম নাকি হারিয়ে যায়। একই ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে নীলাঞ্জনাও ভর্তি হয়েছিলো। ও সিন্দুর পরলেও তা ঢেকে রাখতো চুল। ওটা আগাগোড়া ওর স্টাইল। ভীষন চঞ্চল তাই হাতে শাঁখা পলা থাকতো না। ভেঙে ফেলতো বারবার। তাই মা বলেছিলো স্কুল কলেজ যাওয়া মেয়ে তুই অত শাঁখা পলা পড়ে কাজ নেই। অভাব আমাদের এমন ছিলো যাতে মনে হতো আমাদের সবে প্রেম হবে হবে করছে বা হয়েছে।কেউ বিশ্বাস করতো না আমাদের বিয়ে হয়েছে।
ক্লাসরুম নিয়ে গল্প আর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে গল্প বলছি কেন এ চিন্তা নিশ্চিত ঘুরপাক খাচ্ছে আপনার মাথায়। গল্পটা আসলে ক্লাসরুমকে নিয়ে। নিজের রূপ সৌন্দর্য নিয়ে অহংকারী কেয়া হঠাৎ হঠাৎ করে ক্লাসরুম এর ফ্যাস্ট বেঞ্চ বসাতে শুরু করা সবাইকে অবাক করে দেয়। সাধারণত পড়াশোনা বিষয় আলোচনা ছাড়া কোন মেয়ের সাথেই কথা বলতাম আমি। ক্লাসরুমে বুকিবয় বলেই বদনাম ছিলাম আমি। কেয়া আমার পাশে বসা, গায়ে পরে বন্ধুত্ব করা, ছেলেদের ইর্ষার কারণ শুধু নয় মেয়েদের মধ্যে ও গুঞ্জন শুরু হলো। যদিও আমার কানে পৌঁছে গিয়েছিল মৌমিতাদের কাছে ও চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল ছয় মাসের মধ্যে আমাকে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াবে।
ক্লাসরুম এ অনেকে কাছাকাছি এনেছিলো দুই জনকে , একটা মেয়ে একটা ছেলের ভালো বন্ধু ও হতে পারে তার প্রমাণ আমি দিয়েছিলাম। প্রেমে হাবুডুবু খেতে আমায় হয়নি, ও আমার কাছে হার মেনে, রাখীও পড়াবে বলেছিলো। কারণ আমার বোন ছিলো না। বোনের অভাবটা ও পূর্ণ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু একটা নতুন সম্পর্ক গড়তে গিয়ে , আরো একটা সম্পর্ক ভেঙে গেছিলো নীরবে। লোকে জানে নীলাঞ্জনা অফিসে তার পুরাতন প্রেমিকের দেখা পেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ওর ডাইরির পাতা বলছে ক্লাসরুম এ কেয়া কাছাকাছি আসা আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সেটা আমার অজান্তে। ক্লাসরুম লড়াই টা জয়ের চেষ্টা আমি করতাম ই না। জীবনটা যদি একটা ক্লাসরুম অনেক কিছুই শিখতে হয় এখান থেকে।
