কি সুখে রয়েছে প্রাণ
কি সুখে রয়েছে প্রাণ
প্রায় পাঁচ বছর পর বিদেশ থেকে ফিরে ভালোই লাগছিল, নাড়ির টান বোধহয় একেই বলে। কলকাতার অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছিল। পুরানো বন্ধুরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছিল। মাত্র কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল। আমার বন্ধু ফাহাদ গাড়ির ব্যবসা করছিল ওর মামাতো ভাইএর সাথে। আমায় এয়ারপোর্টে আনতেও গেছিল ও। আমাদের কলেজে সাত জনের একটা গ্ৰুপ ছিল। মন্দার শুনলাম ওকালতি পাশ করে বারাসতে ভালোই পশার জমিয়েছে ওর বাবার সাথে। প্রসুন চাকরী না পেয়ে ওদের পারিবারিক ব্যবসায় ঢুকে গেছিল। অরীণ সরকারী চাকরী নিয়ে উত্তরবঙ্গে চলে গেছিল। ওর কাছেই শুনেছিলাম ললিত চাকরী না পেয়ে টিউশনি করছিল, আর অনিকের কথা ও সযত্নে এড়িয়ে গেছিল ।
সেদিন সন্ধ্যায় বিনুদার চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি, হঠাৎ দেখা হয়ে গেল অনিকের সঙ্গে। আগের থেকে আরো সুন্দর হয়েছে। একটা সাদা হুড তোলা টি শার্ট আর ফেডেড দামি ব্লু জিনস , ক্লিন শেভড, পায়ে উডল্যান্ডসে'র শু আর দামি মোবাইল বলে দিচ্ছিল এই কয়েক বছরেই ওর আর্থিক অবস্থা ফিরে গেছে। আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে দামি মোবাইলটা বার করে সেটায় মন দিয়েছিল।
মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেছিল যাদবপুরের তিনটে বছর। রংচটা দুটো জিনস আর হাতে গোনা দুটো গেঞ্জি আর পাঞ্জাবীতেই দিন কাটত। টিউশন করে মা আর দুই বোনের সংসারটাকে ও একাই বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সুলেখায় একটা ছোট্ট টালির ঘরে ভাড়া থাকত সে সময়। কলেজের পর আর যোগাযোগ ছিল না।বিদেশে বসেই শুনেছিলাম একটা কল সেন্টারে কাজ করছিল।
আমি ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, -" কিরে, চিনতে পারছিস ? কতদিন পর দেখা। ভালোই তো আছিস। চল চা খাই।"
ও হাসল। হাসিটায় কি একটা ছিল যেন। বলল, -"কেমন আছিস বল ?"
তক্ষুনি ওর মোবাইলে বেজে উঠল ওর প্রিয় গান -"দেখে যা ,যা অনির্বাণ....."
ও উশখুশ চোখে ফোন কানে দিয়ে রাস্তায় তাকালো, সাদা ধবধবে একটা বিদেশী গাড়ি থেমেছিল সামনেই।এক ঝলক দেখলাম গাড়ির চালকের আসনে এক মাঝবয়সী মহিলা। উগ্ৰ সাজগোজ আর হল্টার নেক টপটা চোখে লাগল। ও উঠতেই গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
চায়ের দোকানের বিনুদা একটা চায়ের ভাঁড় এগিয়ে দিয়ে বলল, -"বড় ভাল ছেলে ছিল। সংসারের চাপে নিজেকে বিক্রি করে বোন দুটোর বিয়ে দিয়েছে। মা এর চিকিৎসা করছে। মেয়েদের লোকে বেশ্যা বলে, ছেলেরাও আজকাল চাপে পড়ে এ পথে যাচ্ছে!পেটের দায় আর কি!"
চমকে উঠলাম, আমার কানে তখনো লেগে রয়েছে ওর রিংটোনটা।