Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

খয়েরী খাম

খয়েরী খাম

3 mins
171


টেবিলের ওপর তোমার অভিযোগ ভরা খামটা পড়ে আছে। বিদেশে চাকরি করতে চলে যাওয়াতে। মিউচুয়াল ডিভোর্স এর কেসটার ডেটে আমাদের দুই জনের কেউ ই হাজির হতে পারিনি। তাই হয়তো এইভাবে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছো। সবকয়টি মিথ্যা অভিযোগে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওতো অভিযোগ তুমি করলে কি করে। তোমার আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো থাকার কথা নয়। তোমার সব অফিসের মেয়েরা আলাদা করে বয়ফ্রেন্ড রেখেছে। তাই তুমি বয়ফ্রেন্ড করেছিলে। ফুর্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলে। আমি তো কখনো বলিনি তুমি বাড়ি ছাড়ো। নিজের আত্মসন্মান বাঁচতে, গিয়েছো আমাদের বাড়ি থেকে। তোমার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি তোমাকে এখনো ভালো বাসি কোনো কারণ ছাড়াই। তেমন কোনো কারণে ভালোবেসে ফেলেছো ছেলেটাকে। আসলে কোনও পুরুষকে একটা মেয়ে বিয়ে করে না। বিয়ে করে তার সামাজিক অবস্থানকে। আর বিয়ে পাঁচ বছর পরেও আমার অবস্থা নরবরে ছিলো। তাই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো। এতে কোন কিছু দোষের নেই।


তুমি জানো আমার তেমন কোন বন্ধু নেই। আমার বন্ধু কলম ডাইরি। কষ্ট গুলো কে খাতায় নামিয়ে দিতে পারলেই হলো। একটা গল্প হয়ে একটু হাততালি কুড়াবে। কিন্তু দশপাতা লিখে মনের কষ্ট গুলো ঠিক খাতাতে নামতে পারছি না। ঘড়িতে তখন ২-৩০ বাজে। লাখ শুরু করলাম আবার।

তন্দ্রাটা ভেঙে গেলো একটা দৃশ্য দেখে।"২ টা বেজে ৩০ মিনিট। হঠাতই ঘুমটা ভেঙে গিয়ে উঠে বসলো নীলাঞ্জনা। বিছানার পাশের রাখা টেবিল থেকে এক গ্লাস জল খেয়ে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো সে।একটা দীর্ঘশ্বাস এর সাথে পূর্ণিমারর জোঁছনা মৃদূহাওয়া যেনো মিলে একাকার..!!

আসলে ইদানীং খুব ঘুম হয় কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ করে ভেঙে যায়।বারান্দা থেকে বেডরুমটা দেখা যায়। বাতাসে পর্দাটা উড়তে বিছানায় নিষ্পাপ একটা ৩ বছর বয়সী ছেলের মুখটা।"

হঠাৎ মনে হল আমার। সত্যি আমাদের একটা সন্তান থাকলে কি এরকম বিচ্ছেদ হতো আমাদের। টাকা পয়সার অভাবে শেষের দিকে তুমি তোমার সিস্টএর ওষুধ গুলো ও খেতে না। মা হবার স্বপ্নের সাথে ও আপোষ করেছিলে তুমি। বৌদি তুমি ফোন করেছিলে নাকি মাঝে একবার। শুনেছি তোমার নতুন বয়ফ্রেন্ড নাকি তোমাকে অনেক ভালো ডাক্তার দেখিয়েছে , তুমি নাকি এখন সুস্থ। ডিভোর্সটা পেলেই, ছেলে মেয়ে নিয়ে নেবে একটা।

আজ তোমার জন্মদিন ছিলো। তোমার গোলাপ নিয়েছিলাম। কিন্তু কেন জানি ফুলটা তোমার উপর ভীষণ অভিমান করেছে। তোমার কাছে যেতে চায়না। আমাকেও যেতে দেয়না। শেষে আমি আর আমার গোলাপ অভিমান করে এই ডাইরীর পাতায় আজীবন বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ তোমার পাঠানো খয়েরী খাম।আর কোনদিন দেখতে হবেনা আমার ভালোবাসার গোলাপগুলোকে। দূরে থেকেও তোমার ভালো চাইবো। ভালো থেকো, আমার অপূর্ণ ভালোবাসা।

দোষটা আমারও না তোমারও না। না তোমার পরিবারের ছিলো, না আমার পরিবারের। দোষটা মূলত কারোরই না। সৃষ্টিকতারও না। কারণ তিনি জেনে বুঝে সব তাঁর বান্দার ভালোর জন্য করেন। তোমার সাথে বিচ্ছেদের মূলে ছিলো আমার-তোমার বয়সের সমতা। সমবয়সী মানেই সম্ভব না, এই মানসিকতা আজ আমায়-তোমায় এক হতে দেয়নি। আরেকটা সরকারী চাকরীই না হোক খাওয়া পড়ে থাকার মতো তো চাকুরী দরকার ছিলো, যেটা হতে একটু দেরীতে হয়ে গেল প্রিয়। জানিনা এ সমাজ আদতেই সুস্থ আছে কিনা। আর কয়েকটা ঘন্টা পর হয়তো বিদেশের মাটিতে চেলে যাবো। তুমিও হয়তো অনেক ভালো আছো। জানো? আজ আমি তোমার বাড়িতে যেতাম। প্রস্তাব দিতাম ফিরে আসার।পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি একটা মেয়ে কে ভালো রাখার, যদি টাকা পয়সাটাই ভালো থাকার একমাত্র শর্ত হয়। আজ চাঁদ টা উঠেছে পূর্ণ রূপে। চাঁদ দেখতে তুমি এখনও উঠো নিশ্চয়ই মাঝরাতে। ভেবেছিলাম আজ রাত বারোটায় হাজির হবো তোমার ঝুল বারান্দায় তোমাকে অবাক করে দিতে।

খয়েরী খাম টা আটকে দিলো আমাকে।তুমি হয়তো এখন আর এমন কিছু চাইছো না আমার কাছ থেকে শুধু একটা স্বাক্ষর চাইছো। খয়েরী খামটা সেটাই বললো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract