Manasi Ganguli

Tragedy

2  

Manasi Ganguli

Tragedy

খ্যাতির বিড়ম্বনা

খ্যাতির বিড়ম্বনা

2 mins
926


    'বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ' এ প্রবাদ বহুকাল চলে আসছে। বর্তমানে একটি চতুর্দশ পার্বণ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে,তা হল বইমেলা, কলকাতা বইমেলা। আর কলকাতায় বইমেলা এলেই বাঙালির তখন সাজো সাজো রব,একদিন তো যেতেই হবে। কত বই,কত স্টল,কত দেশের মিলনস্থল এই বইমেলা। এটি কলকাতার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মেলা।

    বইমেলা এলেই রিনার মনটা হাঁকপাঁক করে একদিন অন্তত যাবার জন্য। অপেক্ষা করে কবে সুযোগ হয়। ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে গিয়ে মজা দেখে ও। নিজে কিছু বই কেনে,ছেলেমেয়ে দুটোকে ওদের মতো বই কিনে দেয়। ছেলেটা তখন খুব ছোট,তাও নিজে পছন্দ করে বই কেনে সে। রিনা একটু অডিটরিয়ামে গিয়ে বসে,কত বইপ্রকাশ,কত গুণীজনের দেখা পাওয়া যায় সেখানে,তাদের মূল্যবান বক্তব্য শোনা যায়,কিন্তু বাচ্চারা ছোট,ওদের ভালো লাগেনা তাই কিছুক্ষণ ওদের বাবা ওদের বাইরে নিয়ে গিয়ে কিছু খাবার-দাবার কিনে দেয়,মিতা শান্তি মত অডিটোরিয়ামে বসে। যদিও বেশিক্ষণ নয় তবু যেটুকু সময় থাকে অনেক খুশি নিয়ে বাড়ি ফেরে।

     সেবার বইমেলার গেটে ঢোকার মুখেই দেখে ওর প্রিয় স্কুল টিচার মিতা রায় গেট দিয়ে ঢুকছেন। মিতাদি ওকে খুব ভালোবাসতেন স্কুলে, তারপর স্কুল ছেড়ে উনি কলেজে অধ্যাপনায় যুক্ত হন। রিনা খুব মিস করত দিদিকে। এরপর দিদির খুব নামডাক হয় কবি হিসাবে। রিনার গর্ব হয় ওর প্রিয় দিদির এত খ্যাতির কথা জানতে পেরে। গর্ব করে সবাইকে বলে সে,তার প্রিয় স্কুল টিচার ছিলেন উনি। রিনা দিদির খুব খোঁজ খবর রাখতো,টিভিতে ওনার প্রোগ্রামও অনেক দেখেছে ও,আর দিদির কবিতার বই বেরোলেই ও কিনে ফেলত। দিদির গুণমুগ্ধ ও। দিদি অবশ্য এসব জানতে পারতেন না। তা অতবছর বাদে দিদিকে দেখে রিনার মনটা খুশিতে ভরে গেল। দিদি তখন খ্যাতির চূড়ায়,বড় বড় কবিদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। সেই দিদিকে গিয়ে একটা প্রণাম করার লোভ সামলাতে পারে না রিনা,দৌড়ে যায় দিদির দিকে। কিন্তু একি,দিদির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দিদি যেন পালাবার পথ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওকে প্রণাম করবার কোনো সুযোগ না দিয়েই দিদি এদিকওদিক করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রিনা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও দিদির অ্যাটিটিউড বুঝতে পারল। সরে দাঁড়াল সে দিদির পথের সামনে থেকে। বিষণ্ণ মনে ফিরে গেল একটু দূরে দাঁড়ানো ওর স্বামী-সন্তানদের কাছে। কাউকে কিছু না বলে রিনা দৌড় লাগিয়েছিল দিদির দিকে তাই ওরাও হাঁ করে তাকিয়ে ছিল সেদিকে কি ব্যাপার জানতে। রিনাকে ফিরে আসতে দেখে ওরা জানতে চায়,"কি হল,ছুটলেই বা কেন ফিরে এলেই বা কেন?"

    রিনার বুকের ভেতর তখন কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে রয়েছে,কান্নায় গলা বুজে,কথা বলতে পারছে না,চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে,কোনোক্রমে তা দমন করে রেখেছে,কাউকে বুঝতে দিতে চায় না সে যে তার প্রিয় দিদি খ্যাতির শিখরে উঠে আজ তাকে চিনতে পারলেন না। এ বুঝি তাঁর খ্যাতির বিড়ম্বনা! আর তাই অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিগুলিকে উত্তর দিল,"একজন পরিচিত ভেবে ভুল করেছিলাম"।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy