খুনটুসি থেকে বিলাপ
খুনটুসি থেকে বিলাপ


মনে পড়ে সেই পুরানো দিনের কথা। লম্বা সূতোর দুপাশে দিয়াশালাই বাক্স বেঁধে দূরে জানালায় বসে কথা বলা। কত যে হতো বদমায়েশির পরামর্শ। বাড়ির বড়োদের টের না দিয়ে শীতের দুপুরে বনে কুল খেতে যাওয়ার, গ্রীষ্মের দুপুরে পুকুরে সাঁতার কাটতে যাওয়ার পরামর্শ। একে অন্যের বদমায়েশির কথা বড়োদের রিপোর্ট করার শাসানি নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে, ভাইয়ে-বোনে কতো খুনটুশিই না তো সেদিন।কি আনন্দেই না দিন কাটতো তখন।
কেন যে হলাম ধীরে ধীরে বড়ো। বাড়লো পড়াশোনার চাপ। করতে হবে রেজাল্ট ভালো। মনে এলো বিষময় প্রতিযোগিতা। ছুটে ছুটে চলো অন্যকে ছাড়িয়ে, তাল গাছ মারিয়ে আরো আরো আরো ওপরে। উঠতে হবে তোমায় চূড়াই, করতে হবে শিখর জয়। একটার পর একটা হিমালয় শিখর। মাধ্যমিক শিখর, উচ্চমাধ্যমিক শিখর, স্নাতক শিখর, স্নাতকোত্তর শিখর করো জয়। কি ক্লান্তি মোর প্রাণে। যূপকাষ্ঠের কাছে দাঁড়ানো ছাগ আমি।
ক্লাতিকে করো জয় পথিক, ছুটে চলো এখনো যে আছে পথ চলা বাকী বলে গেল রাতজাগা পাখি। লভিতে হবে তোমায় আত্মপ্রতিষ্ঠা। দাও এক এক করে চাকরির পরীক্ষা। যেই মিলিবে চাকরি তেমনি পাইবে ভালো পাত্রী।
এলো ঘোর অমানিশা। প্রবেশ করিলাম সংসারে। মান-অভিমান, রোগজ্বালা, সন্তান-সন্ততির পড়াশোনা, তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা করতে গিয়ে হলো যে হার্টের ব্যামো, জয়েন্টে-জয়েন্টে ব্যাথা। ছেলে-মেয়ে কালের নিয়মে চলে গেল আমাদের ছেড়ে নিজেদের সংসারে।
ব্রাত্য বুড়া-বুড়ি, গ্যাস-অম্বল করে সঙ্গী বেঁচে আছি। ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে শুধু শৈশব ও যৌবনের রঙিন দিনগুলি। প্রলাপে-বিলাপে কোনমতে দিন গুজরান করি।