খাদকের প্রেম
খাদকের প্রেম
হস্টেল মেসের একই খাবার রোজ খেতে খেতে বোর হয়ে গেছিল সুদীপ। রাত আটটা নাগাদ যখন মেসের ঘণ্টা বাজল, তখন ভাবল সেদিন আর মেসে ঢুকবে না; বাইরে হোটেল থেকে ভালোমন্দ কিছু খেয়ে আসবে। বাড়ি যাওয়া হয়নি অনেকদিন। বাড়ি অনেক দূরে তো। বাড়ি থেকে ঘুরে এলে মুখের অরুচি অনেকটা কাটত।
ইউনিভার্সিটি গেট থেকে বেরিয়ে মেইন রোড ধরে হাঁটতে লাগল। কিছুদূর এগোলেই একটা ভালো হোটেল ছিল। রাস্তায় চোখে পড়ল একটা বিয়েবাড়ি। মাথায় হঠাৎ দুর্বুদ্ধি খেলে গেল। বিয়েবাড়িতে ঢুকে পড়লে কেমন হয়! খাওয়াটা তাহলে বেশ জম্পেশ হয়। নিজের ড্রেসটা একবার দেখে নিল। পরনে জিন্স টি-শার্ট। সেদিন সকালেই ধোপার কাছ থেকে ইস্ত্রি করে নিয়ে এসেছিল। নাহ, পোশাকআশাকে কারো সন্দেহ হবার কথা নয়। বেশ স্মার্টলি গিয়ে বিয়েবাড়িতে ঢুকে পড়ল।
গেটটা ফুল দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো ছিল; উপরদিকটা লাইটিং করা ছিল। গেট থেকে বাড়ির এন্ট্রান্স বরাবর প্যান্ডেলের রাস্তা চলে গেছে। খাওয়াদাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট বাড়ির সামনের দিকেই ছিল। কফি, ফুচকা, জিলিপি এসবের তিন-চারটা স্টল দেওয়া ছিল। খুব বেশি লোকজন তখনও আসে নি। বিয়ের লগ্ন বোধ হয় দেরিতে ছিল। স্টল থেকে ডানদিকে প্যান্ডেলের একটা প্যাসেজ গিয়ে মেইনকোর্স খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সুদীপ গিয়ে দেখল, তখনও কোন ব্যাচ বসেনি। তাই, ফুচকা, জিলিপি এসব স্ন্যাক্স খেয়ে টাইম পাস করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কিছু লোকজন যখন মেইন খাবারের দিকে এগোতে লাগল, তখন সুদীপও গিয়ে ফার্স্ট ব্যাচে বসে পড়ল।
বেবি নান, ফিস ফিঙ্গার, আর মাছের কালিয়া, কাতল ভাপা ইত্যাদি সাবাড় করার পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল পাঁঠার মাংসের জন্যে। মাটন ওর খুব প্রিয় ছিল। একটা থার্মোকলের বাটিতে মাংস চলে এলো। পাঁঠাটা বোধ হয় খুব কচি ছিল, তাই মাংসটা খুব টেস্ট হয়েছিল। ঐটুকু খেয়ে মন ভরল না। ক্যাটারারের ছেলেটাকে ডেকে বলল, “ভাই, একটু মাংস দিয়ে যা তো”।
ছেলেটা বালতি নিয়ে এসে দু’টুকরো মাংস দিয়ে গেল। তাতেও মন ভরল না। আবার মাংস দিতে বলল। ছেলেটা আবার দু’টুকরো মাংস দিয়ে চলে গেল।
একজন ভদ্রলোক টেবিলে টেবিলে ঘুরে জিজ্ঞেস করছিলেন, রান্না কেমন হয়েছে; কারো কিছু লাগবে কিনা। উনি মেয়ের বাবা বীরেনবাবু। সুদীপের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন কিছু লাগবে কিনা।
সুদীপ বলল, “দেখুন তো, বারবার অল্প করে মাংস দিয়ে চলে যাচ্ছে, খাবার সময় এত কঞ্জুসি করে কেন?”
বীরেনবাবুঃ “এই, এখানে মাংস দিয়ে যা”।
এবার ছেলেটা এসে বেশি করে মাংস দিয়ে গেল। সুদীপ রসনা তৃপ্তিতে মন দিল। ভদ্রলোক হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না বাবা”।
সুদীপ মনে মনে বলল, এই তো কেস খেয়ে গেলাম। মাংস নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয়নি। নিজেকে নর্মাল রেখে বলল, “আমি অর্পণের বন্ধু”। বিয়েবাড়িতে ঢোকার সময় খেয়াল করেছিল লাইটিংটা, “অর্পণ ওয়েডস অর্পিতা”।
বীরেনবাবুঃ “ওহ! জামাইয়ের বন্ধু। তা বাবা, বরযাত্রীরা তো এখনও কেউ এসে পৌঁছায়নি। তুমি আগেই চলে এলে?”
সুদীপঃ (আমতা আমতা করে) “আমার এক আত্মীয় থাকে এখানে। আমি বিকেলেই চলে এসেছিলাম। আমার আবার টাইমলি খাওয়াদাওয়া না করলে অম্বল হয়ে যায় কিনা। তাই আগেই ঢুকে পড়লাম। ওরা তো আসছেই”।
ক্যাটারারের ছেলেটাঃ “থাক, আর গুল মারতে হবে না। আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল। ইনি বিন বুলায়া মেহমান এসেছেন। তখন থেকে বারবার ডেকে ফাই-ফরমাশ করে যাচ্ছে। হাফ কিলো মাংস একাই টেনে দিয়েছে। আদেখলা একটা। দেখে মনে হয় কোনদিন মাংস খায়নি”।
সুদীপঃ “কী! এতবড় আস্পর্ধা! আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। আমার একটা মানসম্মান আছে। নেহাত অনেকদিন বাড়ি যাইনি। বাড়িতে সপ্তাহে দুদিন মাংস খাই। হস্টেলের খাবার খেতে খেতে বোর হয়ে গেছিলাম তাই। নাহলে আসতাম না”- বলে রাগ দেখিয়ে উঠে চলে গেল।
ঠিক সেই সময়েই বরযাত্রীদের নিয়ে বিয়েবাড়িতে প্রবেশ করছিল বর। পেছনে ব্যান্ডপার্টির বাজনা বাজছিল। গেটের কাছে সুদীপের সাথে দেখা হয়ে গেল।
-“আরে অর্পণদা, তুমি! তোমার বিয়ে নাকি?”
-“সুদীপ, তুই এখানে কি করে এলি?”
বর হাত নাড়িয়ে ব্যান্ডপার্টিকে থামতে বলল।
-“আমি তো এখানেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। তুমি এখানে বিয়ে করছ আর আমাকে একবার বললে না!”।
-“তুই এখানে পড়িস! আমি তো জানতামই না। তুই কখন বাড়ি আসিস, একবার দেখাও করিস না। কতদিন দেখা হয়নি বলত। তোর কথা মনেই ছিল না। কিছু মনে করিস না। চল ভেতরে চল”।
সুদীপকে নিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে এগোতে লাগল বর। বরযাত্রীরা পিছু পিছু আসছিল। সুদীপ বরকে অনুযোগের সুরে জানালো, সামান্য মাংস খাওয়া নিয়ে ওকে কিভাবে অপদস্থ হতে হয়েছে।
শ্বশুরমশাই এগিয়ে এসে জামাইকে বললেন, “রাস্তায় জ্যামে পড়ো নি তো বাবা?”
বরঃ “না। না। জ্যাম ছিল না”।
সুদীপের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল, “বাবা, ও হল সুদীপ। স্কুলে আমার জুনিয়র ছিল। আমাদের এলাকাতেই বাড়ি। ওকে নাকি ইন্সাল্ট করেছে বলল”।
বীরেনবাবুঃ “সরি বাবা। ভুল হয়ে গেছে। কিছু মনে কোরো না। আরেকটু মাংস খাবে?”
সুদীপঃ “না, আর দরকার নেই। যা খেয়েছি, দুদিন না খেলেও চলবে”।
বীরেনবাবুঃ “যাও বাবা। ছাদনাতলার পাশে সোফায় গিয়ে বোসো। বিয়ে দেখে তারপর যাবে কিন্তু। একদিন তো সবাইকেই ছাদনাতলায় বসতে হয়”।
এ কথার মানে কি বুঝতে পারল না সুদীপ।
সুদীপঃ “না, বিয়ে দেখতে গেলে অনেক রাত হয়ে যাবে। হস্টেল গেট আবার বন্ধ করে দেবে। আজ আসি”।
মাসখানেক পর একদিন অর্পণদার ফোন এলো।
বলল, “ভাই, তোর কাছে একটা রিকোয়েস্ট আছে। তুই কি টিউশন পড়ানোর জন্য সময় বের করতে পারবি?”
-“কেন? কাকে পড়াতে হবে?”
-“সুস্মিতার একজন টিউটর লাগবে”
-“সুস্মিতা কে?”
-“আমার শ্যালিকা”
-“ওহ!”
-“কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ওর অঙ্কের টিচার লাগবে”
-“কিন্তু আমি কখন পড়াব? আমার তো নিজের ক্লাস করতেই সারাদিন চলে যায়”
-“উইকেন্ডে পড়াবি। সন্ধেবেলাও পড়াতে পারিস। সপ্তাহে দু’দিন পড়ালেই যথেষ্ট। ভেবে দেখ”
-“আচ্ছা। তুমি কবে আসছ এখানে?”
-“এই উইকেন্ডে যাব। তুই ইচ্ছে থাকলে চলে আসিস”।
-“আচ্ছা”
উইকেন্ডে ফোন করে অর্পণ’দার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা করল। বীরেনবাবুর সাথে কথা বলে টিউশন পড়াতে রাজি হয়ে গেল।
কয়েকদিন পড়ানোর পর বুঝতে পারল, মেয়েটি ফাঁকিবাজ; পড়ায় মন নেই। নতুন কোন হিন্দি সিনেমা রিলিজ করেছে, সিনেমার কোন গান খুব হিট করেছে, এসব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট বেশি। একই অঙ্ক বারবার দেখিয়ে দেওয়া সত্বেও ভুল করত। এই ছাত্রীকে পড়ানো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়, তা বুঝতে পারল সুদীপ।
তবে মেয়েটির একটি গুণ ছিল। চমৎকার রান্না জানত। যেদিন করে সুদীপ পড়াতে আসত, সেদিন করে বিকেলের জলখাবার সুস্মিতাই তৈরি করত। পড়তে বসার আগেআগেই সুদীপের জন্য টিফিন রেডি করে ফেলত। মোগলাই পরোটা, লুচি
-আলুর দম, সুজির হালুয়া, চিকেন পকোড়া, মোচার চপ, চিঁড়ের পোলাও ইত্যাদি মুখরোচক খাবার একেকদিন একেকটা বানিয়ে জলখাবারে সুদীপকে পরিবেশন করত।
একদিন সুস্মিতা সুদীপকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা স্যার, আপনি কি খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন?”
সুদীপঃ “দেখো আমি এখানে তোমাকে পড়াতে আসি, খাওয়ার জন্য আসি না”। (এটা মনের কথা নয়, আসলে খাওয়ার জন্যই আসে)
সুস্মিতা (ন্যাকামি করে)ঃ “বলুন না স্যার। আপনি এত সিরিয়াস হয়ে থাকেন কেন সবসময়। আপনার মত এত নীরস লোক আমি দেখিনি। একদম কাটখোট্টা টাইপের। ভাল্লাগে না আমার”।
সুদীপ সুস্মিতার দিকে তাকাতেই মুখ ভেংচি কাটল সুস্মিতা।
সুদীপঃ “তোমার পড়াশোনায় কোন প্রোগ্রেস নেই। পড়ায় মন নেই। রেজাল্ট খারাপ হলে তো আমার দোষ পড়বে। তোমার বাবার কাছে তো আমাকে জবাবদিহি করতে হবে”।
সুস্মিতাঃ “জবাবদিহি কেন করতে হবে স্যার? বাবা কি জানে না আমি কি ধরনের স্টুডেন্ট? আপনি একদম টেনশন করবেন না। আপনাকে বাবা কিচ্ছু বলবে না”
বলে হেসে সুদীপের দিকে তাকাল সুস্মিতা। সুদীপ ভাবল, এ তো আচ্ছা মেয়ের পাল্লায় পড়া গেল! মাসখানেক পড়ানোর পর সুদীপ ভাবল, এমন অমনোযোগী ছাত্রীকে আর পড়াতে আসবে না। কিন্তু, ও যেহেতু খেতে খুব ভালবাসত আর সুস্মিতাদের বাড়িতে বিকেলের জলখাবারের কথা ভাবলেই জিভে জল এসে যেত, তাই টিউশন বন্ধ করতে পারল না।
মাসদুয়েক যাবার পর সুদীপ লক্ষ্য করত, সুস্মিতা খুব সাজগোজ করে পড়তে আসত আর পড়ানোর মাঝে অনাবশ্যক গল্প জুড়ে দিত। মাঝেমধ্যে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসত। কারণ ছাড়া কয়েকদিন পর পর ছোটখাটো গিফট আসতে লাগল। এসব তো ভালো লক্ষণ নয়। মেয়েটা ওকে পছন্দ করতে আরম্ভ করেছে, এই ধারণা সুদীপের মনে বদ্ধমূল হল। সুস্মিতাকে ওর একটু একটু ভালো লাগত; খুব বেশি না। কিন্তু সুস্মিতা যে ওকে একটু বেশিই পছন্দ করে, এ ব্যাপারে ওর মনে কোন সন্দেহ রইল না। টিউশন পড়ানো এখানেই ইতি টানা দরকার, এ কথা ওর মনে হয়েছিল। কিন্তু খাওয়ার লোভ এত মারাত্মক ছিল, যে সেই চিন্তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
সুদীপের কলেজে ক্যাম্পাসিং শুরু হল। প্রিপারেশনের জন্য মাসখানেক টিউশনে যেতে পারল না। কয়েকটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিল। একটা ইরিগেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে ওর সিলেকশন হয়ে গেল। সুস্মিতার বাবা একদিন ফোন করলেন।
-“কি ব্যাপার সুদীপ! মাসখানেক হল তুমি পড়াতে আসছ না”।
-“আমি ক্যাম্পাসিংয়ের জন্য ব্যস্ত ছিলাম। তাই আসতে পারিনি”।
-“তা বাবা, কোথাও সিলেকশন হল?”
-“হ্যাঁ। একটা ইরিগেশন কোম্পানিতে পেয়েছি। আমার ডিগ্রি কমপ্লিট করার পর জয়েন করতে বলেছে”।
-“বাহ, বাহ, বেশ বেশ”।
-“তা বাবা, সুস্মিতার পড়ার তো খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে বলছিল। তুমি কবে আসবে?”
-“আসব কি? ওর তো পড়ায় মনই নেই। খালি সিনেমার আলাপ জুড়ে দেয়”।
-“হ্যাঁ! এমন ছাত্রীকে কান মুলে দিতে পারোনা তুমি। তোমার ভরসাতেই তো দিয়েছি। তুমি ছেড়ে দিলে ও আরও উচ্ছন্নে যাবে। ক্যাম্পাসিং তো শেষ, এখন তো আসতে পারো”।
-“না, আমি আর পড়াব না”
-“কেন বাবা, সে কি কথা। আমি মেয়েকে আচ্ছা করে বকে দেব, যাতে পড়ায় ফাঁকি না মারে। তুমি তো গত মাসের মাইনেও নাওনি। এই সপ্তাহে এসো। কথা হবে”
পরের সপ্তাহে আসার পর সুস্মিতা অভিমানের সুরে সুদীপকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি এতদিন পড়াতে আসেননি কেন?”
-“না, আমি আর পড়াব না তোমাকে। আজকেই লাস্ট”।
সুস্মিতা কাঁদো কাঁদো সুরে বাবাকে ডাকতে লাগল।
বাবা এলে বলল, “বাবা, দেখো, উনি নাকি আর পড়াতে আসবেন না?”
-“আমাকেও তো তাই বলেছে। তুই তো পড়াশোনা করিস না”
-“এখন আমার কি হবে! উনি দেখিয়ে না দিলে তো ফেল করব পরীক্ষায়”
-“সে তুমি দেখিয়ে দিলেও ফেল করবে। তোমার রেজাল্টের দায়ভার আমি নিতে পারব না। আমি আসি”।
-“এহ!!! এতদিন পড়ানোর নাম করে আমার সঙ্গে যখন ইন্টু মিন্টু করেছে, তখন কিছু হয়নি। আর এখন বড় বড় বাতেলা মারছে” (অভিযোগের সুরে বলল সুস্মিতা)
-“কী!!! ইন্টু মিন্টু কিসের”
-“কিসের!!! এতদিন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমার সাথে ইন্টু মিন্টু করো নি? এখন আমার কোলে যদি চিন্টু চলে আসে, তখন কে সামলাবে?” –বলে কাঁদতে লাগল।
আকাশ থেকে পড়ল সুদীপ।
-“কি মিথ্যে কথা বলে রে!!! চিন্টু কোত্থেকে আসবে? আমি তো কোনদিন একটা কিসও করিনি”
-“নাহ কিছু করেনি! যদি আসার হয়, তাহলে ঠিকই আসবে”- বলে কান্নার ভলিউম বাড়িয়ে দিল সুস্মিতা।
এই মেয়ে এত ডেঞ্জারাস, আগে বুঝতে পারেনি সুদীপ। এখন তো পুরো ফেঁসে গেছে! মেয়েদের কান্না এক ধরনের বিপদ সঙ্কেত, যা উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই।
-“দেখো বাবা, যা করার করেছ। এখন আমার মেয়েটিকে তুমি গ্রহণ করো”। (বীরেনবাবু বললেন)
-“ইয়ার্কি নাকি!!! এখন বিয়ে করতে হবে আমাকে?”
-“এখন করবে কেন? এখন শুধু কথাবার্তা ফাইনাল করে রাখব। আগে চাকরি জয়েন করো। তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে”
-“না, আমি বিয়ে করবো না”
-“কেন? আপত্তি কিসের? দেখো তো আমার মেয়েটি তোমাকে কত ভালোবাসে। তোমার জন্য কি রকম কষ্ট পাচ্ছে”
-“পাক কষ্ট। আমি বিয়ে করতে পারব না। আপনি তো মেয়েটিকে আমার গলায় বেঁধে দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত হন” (রাগের স্বরে বলল সুদীপ)
-“দেখো বাবা। বৃদ্ধ লোকটাকে আর জ্বালিয়ো না। যদিও তুমি একটি মস্ত বড় খাদক, তবু তোমাকে আমার খুব পছন্দ। তার উপর সুস্মিতাও যখন তোমাকে পছন্দ করে, তাই বলছি। ছোট মেয়েটি আমার বড় আদরের। তুমি ভেবো না, আমি ওকে তোমার ঘাড়ে গছানোর চেষ্টা করছি। পড়াশোনায় ভালো না হলেও, ওর অনেক গুণ আছে। ও খুব সংসারী মেয়ে। আমার বাড়িটাকে কত সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। ওকে পেলে তুমি সুখী হবে, আমার বিশ্বাস”।
সুদীপের মনটা একটু নরম হল। সুস্মিতাকে ওর অল্প অল্প ভালো লাগত।
-“কিন্তু মাস্টারের সাথে ছাত্রীর বিয়ে! লোকে কি বলবে?” (সুদীপ বলল)
-“কিচ্ছু বলবে না বাবা। এরকম ঘটনা আকছার হয়ে থাকে। তুমি শুধু রাজি হয়ে যাও, তোমার বাড়িতে আমি কথা বলব”
-“কি গো, সুদীপের জন্য ক্ষীরের পায়েস নিয়ে এসো”-বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন বীরেনবাবু।
পায়েসের কথা শুনে সুদীপের মাথা ঠাণ্ডা হল। সুস্মিতার কান্নার ভলিউমও কমে গেল। কাছে এগিয়ে গিয়ে সুদীপ বলল, “তুমি বাবাকে মিথ্যে কথা বললে কেন? আমি কবে তোমার সাথে ইন্টু মিন্টু করেছি?”
-“করোনি কেন? কে বারণ করেছিল তোমাকে?”- বলে সোজাসুজি সুদীপের চোখের দিকে তাকাল সুস্মিতা।
সুদীপ পুরো থ’ হয়ে গেল। লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল। তারপর সুস্মিতাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলল, “তুমি আমাকে এত পছন্দ করো কেন?”
-“তুমি যে একটি ক্যাবলাকান্ত, তাই”
-“তুমি এত ডেস্পারেট মেয়ে! আমাকে আটকাবার জন্য বাবার সামনে মিথ্যে কথা বললে! কানটা ধরে মুলে দিতে হয়” বলে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে সুস্মিতার ঠোঁটে একটি নিবিড় চুম্বন করল সুদীপ।
********