মোটী
মোটী


আমার কলেজ লাইফের গল্প বলি। ট্র্যাজেডি না কমেডি আমি নিজেই জানি না।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে গ্রাজুয়েশন করার সময় প্রেম করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু কেউ গার্লফ্রেন্ড হবার জন্য রাজি হচ্ছিল না। হস্টেলে থাকতাম। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহুল্লোড় করেও মনের খোরাক পরিপূর্ণ হচ্ছিল না। মনে হত কিসের যেন একটা অভাব। খুব লোনলি ফিল হত। কারণ একটাই, জীবনে একজন নারীর অভাব। রূপম ইসলামের “এই একলা ঘর আমার দেশ” গানটা বারবার শুনতাম। গানের লাইনটা “আমি কিছুতেই ভাবব না তোমার কথা বোবা টেলিফোনের পাশে বসে” শুনে আমার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠত এবং আমার অজান্তেই আমাকে প্রেম করার জন্য উদ্বুদ্ধ করত। আমি আমার ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু সেই ভালোবাসা নেওয়ার কেউ ছিল না। সহপাঠিনী বা জুনিয়ররা কেউ রাজি হবে না দেখে অর্কুটে (তখন ফেসবুক আমদানি হয় নি) ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। এলোপাথাড়ি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো আরম্ভ করলাম। কিছু রেস্পন্স পেলাম, কিছু পেলাম না।
একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটল। একটি মেয়ে অর্কুটে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার পর স্ক্র্যাপবুকে লিখে পাঠাল, “হাই”। আমি খুব আনন্দিত হয়ে রিপ্লাই দিলাম, “হ্যালো”। এভাবেই স্ক্র্যাপে কথা বলার সূত্রপাত। এরপর প্রায়ই আমাদের কথা হতে লাগল। আমি মেয়েটার সম্বন্ধে জানতে চাইতাম। ও আমার সম্পর্কে জানতে চাইত। আমার অর্কুট প্রোফাইলে কি করি, কোথায় থাকি ডিটেলস দেওয়া ছিল আর কিছু পুরি-দীঘা-গ্যাংটক ঘুরতে যাওয়ার ছবি আপলোড করা ছিল। ও নিশ্চয়ই এগুলো দেখেছিল। ওর কোন প্রোফাইল পিকচার ছিল না। ডিটেলস বলতে বাড়ি কোথায়, কলেজ স্টুডেন্ট এটুকুই দেওয়া ছিল। কিন্তু প্রোফাইলটা ফেক নয় এটা বুঝতে পেরেছিলাম ওর ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বান্ধবীদের ছবিতে ওর কমেন্টস আদানপ্রদান দেখে। আমি মনে মনে ওকে সুন্দরী কল্পনা করে নিয়েছিলাম। ও নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। দু’এক মাস চ্যাটিং চলল। একদিন খুব আগ্রহী হয়ে চ্যাটে লিখলাম, “শুধু এইটুকু চ্যাট করে মন ভরছে না। আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে চাই”।
ও খুব কায়দা করে লিখে পাঠাল, “এইটুকু চ্যাটে না হলে বেশি বেশি করে চ্যাট করো। তোমার নম্বরটা ইনবক্স করে দাও। আমি সময় হলে ফোন করব”। আমি নম্বরটা ওর ইনবক্সে দিলাম। বুঝলাম ও এখুনি আমাকে ফোন নম্বর দিতে চাচ্ছে না। আমার সম্পর্কে একটু কনফিডেন্ট হয়ে নিতে চায়, আমি ঠিক ডিপেন্ডেবল কিনা। আরো মাসখানেক চ্যাটিং চলল।
একদিন সন্ধেবেলা আমার ফোনে মেসেজ এলো, “হাই! আমি সঙ্গীতা”। আমি খুব এক্সসাইটেড হয়ে গেলাম। তিন মাস ধরে যার সাথে চ্যাট করছি, এবার তার সাথে ফোনে কথা বলতে পারব। আমি ওর নম্বরে ফোন করলাম। ও ফোনটা ধরে ফিসফিস করে বলল, “এখন ঘরে অনেকে আছে। আমি রাতে ফোন করব”। তখন ওর কলেজ পরীক্ষার পর কিছুদিনের জন্য ছুটি ছিল আর ও বাড়িতেই ছিল। তারপর থেকে আমি ওকে ফোন করতাম না। পাছে বাড়িতে কেউ জানতে পেরে প্রথমেই প্রেমটা কেঁচে যায়। ও যখন আশেপাশে কেউ থাকত না তখন ফোন করত। মাসখানেক ফোনে কথা বলার পর ফোনেও মন ভরছিল না।
এবার দেখা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। ও বলল, “ক’দিন দাঁড়াও। কলেজ খুলুক। কলেজে যাই। তারপর দেখা করব”। ওকে দু’একবার ফোনে ওর ছবি পাঠানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু ও বলেছিল, “আমি তোমাকে টেস্ট করতে চাই। দেখতে চাই আমি তোমার সামনে এলে তুমি আমাকে চিনতে পারো কি না”। এ তো আশ্চর্য আবদার! শুধু গলা শুনে কি কারো চেহারা আন্দাজ করা যায়! তবু আমি বলাতে একটু হিন্টস দিয়েছিল ওর চেহারা একটু গুবলুগাবলু টাইপের। আমি বলেছিলাম আমার গুবলুগাবলু-ই পছন্দ। কিছুদিন পর ওর কলেজ খুলল। ও নর্থবেঙ্গল ইউনিভারসিটির হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। একদিন বিকেলবেলা ওর কলেজ শেষে আমরা সায়েন্স সেন্টারে মিট করব ঠিক করলাম। আমি সময়মত পৌঁছে গিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ও তখনও আসেনি। ভীষণ রোমাঞ্চ লাগছিল। চার-পাঁচ মাস ধরে না দেখেই প্রেম করে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ বাদেই ওকে দেখতে পাব। আমার মানসসুন্দরীকে কল্পনা করে মনে খুশির ঢেউ উঠতে লাগল। বাসু চ্যাটার্জীর “হঠাৎ বৃষ্টি” সিনেমায় এরকম দেখিয়েছিল।
বাংলাদেশের নায়ক ফিরদৌস ইন্ডিয়ান নায়িকা প্রিয়াঙ্কার সাথে সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না দেখেই প্রেম করেছিল, শুধু চিঠি লিখে প্রেম। সিনেমার শেষ দৃশ্যে দুজনের দেখা হয়। আমারও নিজেকে সিনেমার নায়ক মনে হচ্ছিল। আজ আমার নায়িকার সাথে দেখা হবে।
আমি পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। অনেকক্ষণ পর দেখলাম, একটি মেয়ে এসে রিক্সা থেকে নামছে। এই কি সেই! কি মোটী রে! দেখলাম মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারলাম ইনিই সেই নায়িকা। দেখলাম, নায়িকা বেশ সাজুগুজু করে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। লজ্জায় আমার দিকে তাকাতে পারছিল না, বারবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছিল। আমি ভালো করে মুখশ্রী দর্শন করছিলাম। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী, কিন্তু সমস্যা হল একটু বেশিই মোটা। আমার প্রত্যাশানুরুপ না হওয়ায় একটু আশাহত হলাম। ওর সঙ্গে পার্কে একটা বেঞ্চে বসে গল্প করছিলাম। ও কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ ফ্রি হয়ে কথা বলতে লাগল। কিন্তু আমার মধ্যে একটা দ্বিধা, সঙ্কোচ কাজ করতে লাগল। ঠিক আমার মনের মত হয়নি বলে স্যাটিসফায়েড হতে পারছিলাম না। ফোনে এতদিন কত সুন্দর প্রাণ খুলে গল্প করছিলাম, কিন্তু আজ মন সায় দিচ্ছিল না। ঐ দিন দেখাসাক্ষাতের পালা চুকিয়ে বাদামভাজা খেয়ে ফিরে এলাম।
রাত্রিবেলা আমাকে ফোন করল। উচ্ছ্বাস অনুভব করছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে ওর পছন্দ হয়েছে। ফোন ধরে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সাহস করে ওকে বলেই ফেললাম, “দেখো, তুমি ঠিক আমার মনের মত সুন্দরী না। আমি আরো সুন্দরী এক্সপেক্ট করেছিলাম। তার উপর তুমি যা মোটা, তোমাকে তো কোলেই তুলতে পারব না। জড়িয়ে ধরতে গেলেও আমার দু’হাতে তোমার সারকামফারেন্স কভার করতে পারব না। সিনেমার নায়করা যেরকম নায়িকাকে কোলে তুলে নিয়ে বাগানের মধ্য দিয়ে গান করতে করতে হেঁটে চলে যায়, তোমাকে নিয়ে তা কোনদিন করতে পারব না”।
ও দেখলাম চুপ করে গেল। আমি অনেকবার হ্যালো হ্যালো করলাম। ও কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিল। মনে মনে ভাবলাম কাজটা কি ঠিক করলাম, মেয়েটাকে শুধুশুধু কষ্ট দিলাম। পরদিন খুব ভোরবেলা ফোন এলো। আমি ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে ফোন ধরে হ্যালো বলার পর বলল “তুমি যে এরকম হবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি একটু গুবলুগাবলু টাইপের। তা শুনেও তুমি আমার সাথে প্রেম করলে কেন?”
(মনে মনে বললাম তুমি একটু না, বেশ ভালোই গুবলুগাবলু) একটু থেমে আবার বলল “এতদিন যখন নিজের মেন্টাল সাপোর্ট দরকার ছিল, তখন আমার পেছনে ঘুরঘুর করেছ, এখন যেই দেখেছ যে মেয়ে তো পটে গেছে, তাই এখন আর ভালো লাগছে না। অসভ্য, ইতর কোথাকার!”
বলে কাঁদতে লাগল। ওর গলার আওয়াজ শুনে মনে হল, রাতে ঘুমায় নি, কান্নাকাটি করেছে। আমিও যে ভালো ঘুমিয়েছি, তা নয়। ওর কথা শুনে আমি বলার কিছু পেলাম না। ভীষণ অপরাধবোধ হতে লাগল। ওকে এতটা মানসিক যন্ত্রণা আমি দিতে চাইনি। মনে হল, ও আমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে। তাই আমাকে হারানোর বেদনায় এভাবে কষ্ট পাচ্ছে। ভীষণ অনুশোচনা হল। অনেক ভেবেচিন্তে স্থির করলাম, এত ভালো একটি মেয়ে যে আমাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, তারসঙ্গে এতদিন প্রেমালাপ করার পর পিছিয়ে আসাটা বিশ্বাসভঙ্গ করা হবে। তার উপর, কাউকে প্রেম করার পর ছেড়ে দেওয়া IPC (Indian Prem Code) ৪২০ ধারা অনুযায়ী গর্হিত অপরাধ। হা!হা!
মুখশ্রীটাই তো সব নয়, মানুষের মনের সৌন্দর্যটাই আসল। একটা অকৃত্রিম ভালোবাসাকে যদি আজ পদদলিত করি, কোনদিন ভবিষ্যতে হয়ত একটু ভালোবাসার জন্য আমাকে তড়পে মরতে হবে। তালাত মেহমুদের গানটা মনে পড়ল, “তুমি সুন্দর যদি নাহি হও, তাই বলো কিবা যায় আসে, প্রিয়ার কি রূপ সেই জানে, সেই জানে ওগো যে কখনো ভালোবাসে...”। সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব ত্যাগ করে নায়িকাকে মনে স্থান দিলাম। ও আমাকে প্রচুর ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিল।
তারপর মোটামুটি আরও বছরখানেক আমাদের প্রেমপর্ব চলল। ও ইতিমধ্যে ডিগ্রি কমপ্লিট করে বাড়ি চলে এসেছিল। বাড়ি আসার পর আমাদের দেখাসাক্ষাৎ একেবারেই কমে গেল। দু’তিন মাসে এক-আধবার দেখা হত। ওকে বলতাম, আমাদের ব্যাপারটা বাড়িতে জানাতে। কিন্তু ও আরও সময় চাচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিল, যদি বাড়িতে মেনে না নেয়। ওদের ফ্যামিলি নাকি খুব কনজার্ভেটিভ। তাই শুধু ফোনেফোনেই আমাদের যোগাযোগ ছিল। একদিন রাত্রিবেলা আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো। দেখি, ও লিখে পাঠিয়েছে, “আমার বাড়ি থেকে এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। কারণ একে তো আমার নিজের পছন্দ করা তার উপর তুমি কাস্টের দিক থেকে আমাদের থেকে নিচু। আমি এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই না”। খুব আশ্চর্য হলাম। বহুবার ওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ফোন রিসিভ করল না। শেষে সিমটাই পাল্টে ফেলল। রহস্যজনকভাবে আমার প্রেমের সলিলসমাধি ঘটল। এসএমএসের মাধ্যমেও যে ব্রেক-আপ করা যায়, আগে জানতাম না।
ব্যাপারটা এত রহস্যময়, কোন কথা নেই, বার্তা নেই; একটা মেসেজ করে দিল আর দু’বছরের সম্পর্ক শেষ। আমার মাথায় ঢুকছিল না। এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে নি তো, আবার আমার থেকে বেটার কাউকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিল না তো, এরকম খেয়াল আসতে লাগল। নাহ, এর একটা অনুসন্ধান করা দরকার। এটা কি ছেলেখলা নাকি! ইচ্ছে হল থাকলাম, ইচ্ছে হল চলে গেলাম। ওর উপর আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এ আবার কি রকম প্রেম! আমার জন্য বাড়িতে একটু লড়াই তো করতে পারত। বাড়িতে বলল আমাদের সম্পর্ক মানবে না আর সাথে সাথে পালটি খেয়ে গেল। এ তো বেবফা সনমের গল্প। নাহ, এ তো চিটিং কেস। এখন আমি কোথায় আবার প্রেমিকা খুঁজে বেড়াব?
ভেবেচিন্তে প্ল্যান করলাম, এর রহস্যভেদ করতেই হবে। ওর বাড়ি আমার জানা ছিল না। কিন্তু শহর আর পাড়ার নাম জানা ছিল। তাই খুঁজে বের করা এমন কিছু অসম্ভব ব্যাপার নয়। ঐ এলাকায় একটু নজরদারি করলেই আমি নায়িকার সন্ধান পেয়ে যাব আর ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমাকে ছেড়ে যাবার আসল কারণটা ডিটেলস জানতে পারব। ধরে বেঁধে প্রেম কোনদিন হয় না, তা আমি জানি। তাই ও আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না চাইলে, আমি ওকে জোরাজোরি করব না। ওর জীবন থেকে সরে আসব। সম্প্রতি ধুপগুড়ির ছেলে অনন্ত ভালোবাসার এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। প্রেমিকা বিয়ে করতে অস্বীকার করলে প্রেমিকার বাড়ির সামনে দু’দিন ধরনা দিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে। মহান প্রেমিক! ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্ল্যাকার্ড ধরেছে। আমার সে ধরনের কোন ইন্টেনশন ছিল না। শুধুমাত্র বেবফা সনমের আসল স্বরূপ উদ্ঘাটন করাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।
আমার এক্স-প্রেমিকার শহরে আমার এক বন্ধুর বাড়ি ছিল। ছুটির দিন দেখে বন্ধুর বাড়ি গেলাম। যাবার পর আমার মর্মান্তিক প্রেমের গল্প বন্ধুকে শোনালাম। ওর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, আমার নায়িকার বাড়ি ওদের বাড়ি থেকে কাছেই। বন্ধু বলল, “দেখ ভাই, এখন অনুসন্ধান করে কি লাভ! সম্পর্কই যেখানে শেষ। মেয়ে যখন পিছিয়ে গেছে, তখন আর কিছু করার নেই। ওকে ভুলে যা। নতুন কাউকে খুঁজে নে। দেখবি ক’দিন বাদে ওর কথা আর মনেই পড়বে না”।
আমি তখন ভাবলাম, সত্যিই তো। ওর সঙ্গে দেখা করে কি লাভ? ও একটা এম্ব্যারাসিং সিচুয়েশনে পড়বে। হয়ত কথাই বলতে চাইবে না। সত্যিটা জেনেই বা আমি কি করব? ও তো আর ফিরে আসবে না। আর ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য ধুপগুড়ির প্রেমিকের মত ধরনাও দিতে যাব না। নিজের সেলফ-রেস্পেক্ট এতটাও কম নয়।
বন্ধু বলল, “ওসব বাদ দে। চল একটা সিনেমা দেখে আসি। মন ভালো হবে”। বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখতে গেলাম। টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, আমার নায়িকা একটু দূরে গাছতলায় রিক্সা থেকে নামল। আমাকে দেখতে পায়নি। গাছতলায় দাঁড়িয়ে রইল। আমি ওকে লক্ষ্য করছিলাম। দেখি টিকিটের লাইনে আমার কয়েকজনের আগে দাঁড়ানো একটা ছেলে টিকিট নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে ওর দিকে ছুটে গেল।
দেখে তো আমার মাথা পুরো ঘুরে গেল। মনে হল নিশ্চয়ই ওর বয়ফ্রেন্ড হবে। তার মানে নতুন পাখি জুটিয়ে নিয়ে আমাকে কাঁচকলা দেখিয়ে চলে গেছে। নায়িকাকে দেখে বেশ খোশমেজাজে মনে হল। মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে উঠল। সিনেমা আমার মাথায় উঠল। হনহন করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও আমাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কোন কথা বলল না। ঐ ছেলেটা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করল, -“কি ব্যাপার দাদা? কি হয়েছে? কে আপনি?”
আমি বললাম, “তুমি কে?”
-“আমি রাজর্ষি। ওর বয়ফ্রেন্ড”
-“ওহ! তাহলে আমি যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই সত্যি হল”
-“তার মানে?”
-“মানে আবার কি! এতদিন তো আমি বয়ফ্রেন্ড ছিলাম। এখন তুমি বয়ফ্রেন্ড হলে কিভাবে?”
-“ওহ! কেন! আপনাকে তো বিদায় দিয়েই দিয়েছে, এখন আবার কি করতে এসেছেন?”
নায়িকা ওকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে বলল, “তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না। আসলে রাজর্ষি’ই আমার প্রথম প্রেম। কলেজে থাকতে আমাদের প্রেম হয়েছিল। তারপর আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হওয়াতে ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন আমি খুব নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। তাই তুমি যখন অ্যাপ্রোচ করলে তখন তোমাকে না করতে পারিনি। এখন রাজর্ষি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার আমার জীবনে ফিরে এসেছে। জীবনে প্রথম প্রেমের প্রতি টান সবসময়ই বেশি থাকে। তাকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায়না। আমিও ওকে না করতে পারিনি। তোমাকে মিথ্যে কথা বলে তোমার কাছ থেকে সরে এসেছি বলে তুমি মাইন্ড করো না। তুমি আমার চেয়ে আরও ভালো জীবনসঙ্গী পাও, এই আমি চাই”।
রাজর্ষি পাশ থেকে আমাকে বলল, “তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পাচ্ছি। কিন্তু মন খারাপ করে কি হবে বলো। তুমি সঙ্গীতা’কে ভুলে যাও। আমাদের মধ্যে আর কাবাব মে হাড্ডি হতে এসো না। তুমি ভালো থেকো”।
সিনেমার টাইম হয়ে গেছে দেখে ও নায়িকাকে নিয়ে হলে ঢুকে গেল। নায়িকা আমাকে বাইবাই করে চলে গেল।
আমার আর সিনেমায় যাওয়ার প্রবৃত্তি হল না। নিজেকে
বাংলার চার অক্ষর মনে হচ্ছিল। যাই হোক, কিছুদিন পর আমার জীবনে নতুন এক নায়িকার আগমন ঘটল। পুরনো নায়িকার কথা ভুলে গেলাম।