Rima Goswami

Comedy Fantasy

3  

Rima Goswami

Comedy Fantasy

কদলীবালার কনে দেখা

কদলীবালার কনে দেখা

4 mins
321


কদলীবালা মুকুর্যের চোখকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয় মশাই । চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন আমার জ্যাঠাইমা মেয়েপক্ষ কে । রানীগঞ্জ থেকে আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি সুদূর পলাশীতে । আমার জন্য সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে আর প্রতিবারই আমার জ্যাঠাইমার জন্য সেটা না বাচক হয় যাচ্ছে । আমি কুন্তল মুখার্জি , সিয়ারসলে থাকি । বয়স প্রায় চল্লিশের কোটায় কিন্তু সব পাত্রী পক্ষের কাছে বাড়ি থেকে বলে একত্রিশ বছর । যদিও দেখে একত্রিশ মনে হয় না আমাকে । দীর্ঘ দিন চাকরির জন্য চপ্পল খুইয়ে শেষমেষ যখন একটা সরকারি কেরানির চাকরি পেলাম তখন আমার দুই গাল বসে গেছে , মাথায় টাক পড়েছে , চোখের তলায় কালি জমেছে । আমাকে দেখে কোন পাত্রীর পছন্দ হয়না আমি জানি তবে ওই যে পিছনে সরকারি চাকরির স্ট্যাম্প ! ওটার জন্যই নিমরাজী হয়ে যায় কেউ কেউ । আসে পাশের এলাকা , শহর এই যেমন দুর্গাপুর , আসানসোল , বর্ধমান সব ছাটা হয়ে গেছে । কোথাও আমার সম্বন্ধ আর পাকা হয়নি , মানে জ্যাঠাইমা হতেই দেয়নি আর কি । এবার সাত ঘন্টার সফর করে সম্বন্ধ দেখতে এসে তখনো মেয়েকে আমি দেখিনি তবু রাজি হয়ে বসে আছি এমন সময় আমার জ্যাঠাইমার উৎপাত শুরু । সিঙ্গাড়াতে কামড় দিয়েছি সবে আর জ্যাঠাইমার বাক্য বানে জর্জরিত পাত্রী পক্ষের লোকজনের চোখ মুখ দেখেই আমি সিঙ্গাড়া খানা যথা স্থানে রেখে দিলাম । কে জানে বাবা আগের বারের মত যদি মেরে তাড়িয়ে ফাড়িয়ে দেয় । এদিকে খিদেও পেয়েছে দমে , পেটে ইঁদুর ছুঁচোতে ডন বৈঠক মারতে শুরু করেছে । মেয়ের বাবা বলেছিল মাত্র , তা বাবাজীবন কত বছর হলো চাকরির ? আর তাতেই জ্যাঠাইমা বেজায় খাপ্পা । আরে আমার মত ভাম শুটকি কে মেয়ে যদি এরা দেয় তো চাকরির জন্যই না দেবে ! তা একটু অনুসন্ধান করবে না ? আমার জ্যাঠাইমা মিসেস কদলীবালা দেখতে দশাসই রাবনের মত , শুধু দশটা মাথার জায়গায় একটা মাথা , বাজখাই গলা ওনার , জ্যাঠা আড়ালে বলেন ম্যাডাম হিড়িম্বা । তো উনি বলতে শুরু করলেন , আমাদের শহর বাজারে বাড়ি , জয়েন্ট ফ্যামিলি , ঠাকুমা মরার পর ওনার আন্ডারে আছেন ওনার বাকি জায়েরা মানে আমার মা আর বাকি কাকিমারা । ওনার চোখ সর্বত্র আর ওনার কান ও সজাগ সবসময় । মেয়ের বাড়ির অত খোঁজ কিসের শুনি ছেলে কত বছর চাকরি করে ? কুন্তল এর মত এত কার্তিক ঠাকুরের মত পাত্র তারা পাচ্ছে এই না ঢের ? কার্তিক ঠাকুরের মত পাত্র ! আমি , দাদা , মা , বাবা আর পাত্রী পক্ষের লোকজন সবাই অবাক ? কার্তিক ঠাকুর কবে থেকে বাংলা সিনেমার চিন্ময়ের মত দেখতে হলো ?


কারণ আমাকে অনেকটা চার মূর্তি সিনেমার টেনিদার মত দেখতে । উনি বলতে লাগলেন আমাদের ঘরের বউ হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মশাই ? তবে এটা ভাবলে হবে না যে মেয়ে ঘন ঘন বাপের ঘর আসবে । আপনার মেয়ের ল্যাজে ল্যাজে আমাদের ছেলে ঘুরবে । আমাদের ছেলে সিংহ মশাই বুঝলেন । সবাই আবার আমাকে একবার দেখে নিলো , আমাকে দেখতে খ্যাক শিয়াল ভিন্ন মনে হচ্ছে না মনে হয় । তবু মেয়ের বাড়ির লোকজন কিছুই বললো না । তারা কদলীবালা কে বুঝে নিয়েছে মনে হয় তাই চুপ থাকাটাই বিবেচনার কাজ বলে তাদের মনে হলো । এবার এলো মেয়ে ! নাম তার ফুলকি রায় । জ্যাঠাইমা শুনেই বললেন এমা ! আর নাম খুঁজে পাননি মেয়ের ! কেমন যেন ফুলকো লুচি লুচি লাগছে শুনতে । মেয়ে ওই কথা শুনে তো ফিক করে হেসে ফেললো । ভাগ্যিস সেটা জ্যাঠাইমা দেখতে পায়নি , না হলে ওখানেই সব ফিনিস । ফুলকির বয়স তেইশ বছর , এম এ পড়ছে । একটু হেলদি চেহারা , গায়ের রং না ফর্সা না কালো , পিঠ পর্যন্ত কালো ঘন চুল , টিকালো নাক , ওল্টানো ঠোঁট । খুব মিষ্টি দেখতে ফুলকি তবে বয়সে আমার থেকে বেশ কম । জ্যাঠাই মা ওকে হাঁটতে বললো , চুল খুলে দেখাতে বললো আর ও কিন্তু নির্দ্বিধায় সেসব করলো । তার পর হাজারটা প্রশ্ন করলো ফুলকিকে জ্যাঠাইমা । সব সে বলল , আর শেষে তার নিজ হাতে রান্না করা কাঁঠাল বিচির বরা , মাংস , বেগুন আলুর পোস্ত , আমরার চাটনি খেয়ে জ্যাঠাইমা বললেন ওনার মেয়ে পছন্দ হয়েছে । আমরা আশ্চর্য হলাম তবে কিছু বললাম না । এখানেও একটা প্যাঁচ ছিল বাকি ম্যাডাম কদলীবালার । উনি বললেন দেখ বাপু আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে তবে মুকুর্যে বাড়ির বউ হতে গেলে একটা আভিজাত্যময় নাম দরকার হে । তোমার নাম দিলুম আমি মেনকাবালা বুঝলে । আমি পড়লাম মহা ফাঁপরে , যা শেষে তীরে এসে তরী ডুবলো । ফুলকি আমার মত ভামের সাথে ঘর করবে এই না কত ! আবার তার নাম রাখবে জ্যাঠাইমা মেনকা ? আবার আমাকে অবাক করে ফুলকি রাজি হয়ে গেল জ্যাঠাইমার কথায় । এভাবেই আমার জীবনসঙ্গী হয়ে গেল সে জ্যাঠাইমা নামক বিভীষিকা কে জয় করে । বিয়ের পরে জেনে ছিলাম জ্যাঠাইমার সব শর্ত মেনে নেওয়া টা ফুলকির একটা চাল । তাকে বলুকনা শশুরবাড়ির লোকেরা মেনকা , তার অফিসিয়াল নাম তো আগেরটাই রইলো । আর জ্যাঠাইমা ! তাকে হ্যান্ডেল করাটা নাকি ফুলকির বাঁয়ে হাত কা খেল । ফিসফিস করে ফুলশয্যার দিন আমাকে ফুলকি বলেছিল মা সারদা র মন্ত্রটা জানো কুন্তল .....


যাকে যেমন তাকে তেমন , যেখানে যেমন সেখানে তেমন , যখন যেমন তখন তেমন ।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy