Rita De

Abstract

2  

Rita De

Abstract

কবিতার

কবিতার

3 mins
830


কবিতা 

      

      সেদিন দেখলাম বাচ্চা বাচ্চারা 

       বটের ঝুরি ধরে দোল খাচ্ছে 

       নিশ্চিন্তে পুকুরের ওপরে 

      নির্ভরতা আর বিশ্বাসের খুঁটিটা মজবুত।

                         

                     ড. রীতা দে


         বাগর্থ - ড. রমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় 

   

ওয়ার্ডসওয়ার্থবলেছিলেন '

To me the meanest flower that blows gives thoughts too deep for tears. 

       অর্থাৎ নামগোত্রহীন সবচেয়ে অবজ্ঞাত ফুলটিও কবিমনকে চোখের জলের চেয়ে গভীরতর সত্যের কথা বলে ।রীতার কাছে তেমনি ভুবনে যা কিছু তুচ্ছ যা কিছু অবজ্ঞাত যেটাকে আমরা খেয়াল করি না সেটাকে খেয়াল করেই থমকে যাই। একটা কবিতা উৎসারিত হয়। অর্থাৎ রীতার কবিতাগুলোকে উদান হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । উদান বুদ্ধবচনের একটি সমাহার । সূত্রপিটকের খুদ্দকনিকায়ে বুদ্ধবচনের ছোট ছোট অংশগুলি সঙ্কলিত হয়েছে তার মধ্যে একটি হল উদান। ভগবান বুদ্ধ বোধিবৃক্ষমূলে সিদ্ধিলাভের পর সাতদিন বোধিবৃক্ষের তলাতেই ছিলেন । বিমুক্তি লাভের আনন্দ মেতে তারপরে উল্লাসেএকটি গাথা উচ্চারণ করলেন । নানা পরিস্থিতিতে ভগবানের- এই গাথা সন্নিবিষ্ট হয়েছে উদানে। এই উদানকে আমরা সাহিত্যপ্রকার বা genre বলতে পারি । 

রীতার কবিতাও ঐ genre- এর অন্তর্গত । 

     রীতা গ্রামের পথে চলতে চলতে হঠাৎ দেখে বট গাছের ঝুরিতে দোলনা রচনা করে শিশুরা পুকুরের ওপরে দোল খাচ্ছে ।রীতার মন্তব্য হ'ল নির্ভরতা ও বিশ্বাস এদের মধ্যে বেশ মজবুত ।

     এই একটি চিত্রকল্প উপলব্ধির দিগন্তপ্রসারী মাঠ মেলে ধরে । শিশুদের কাছে পুকুর অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক । আমরা সবাই বুঝি কামনা বাসনার দড়িতে দোলনা বেঁধে জীবনযাত্রা নির্বাহ করি ।দোলনার দড়ি তৈরী হয় আকাঙ্খা আর অহঙ্কারের দড়ি দিয়ে ।এবং আমরা জানি যে , যে কোনো মুহূর্তে আমরা ঐ দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যেতে পারি মৃত্যুর অতল গহ্বরে । প্রত্যেক দিন মিটিং মিছিল প্রেম বিরহ ঝগড়াঝাঁটি লাভক্ষতির দোলায় আমরা যে দুলছি যে কোনো মুহূর্তে সেই দোলা ভেঙ্গে যেতে পারে আর আমাদের তলায় আছে সেই অতল পুকুরটা যার পাঁকে আর যার অন্তরালে লতাপাতার আলিঙ্গনে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য । অথচ আমরা সেকথা ভেবে দেখি না । লোভ হিংসা আর অজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে আমরা ঐ শিশুদের মতো দুলতে থাকি । আবার চিত্রকল্পটিকে আর একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় । মনে রাখতে হবে পুকুর পাড়ে একটি প্রাচীন বট গাছ । বট গাছ কল্পতরু , বট গাছ সকলের আশ্রয়।সাপ ,কাঠবেড়ালি সকলেই বট গাছকে আশ্রয় করে থাকে ।আর মা মাটি মানুষের প্রতি ভালবাসায় বট গাছ ঝুরি নামিয়েছে ।এই ধরনের বট গাছ যদি পাওয়া যায় তাহলে মৃত্যুকে ঠাট্টা করে বট গাছের ঝুরি দিয়ে দোলনা বেঁধে মৃত্যুকে দেখিয়ে দেখিয়ে মৃত্যুর ওপর দোল খাওয়া যায় । কিন্তু বর্তমান পাঠকের প্রশ্ন সেই বট গাছ আজ কোথায় ? আর শিশুরাই বা কে ? ভগবান বলেন - তোমরা যদি শিশুর মতো সরল হতে না পারো স্বর্গের দুয়ার তোমাদের জন্য বন্ধ ।যুগে যুগে বুদ্ধ খ্রীষ্ট শঙ্করাচার্য জন্ম গ্রহণ করেছেন ।এঁরা শিশুর মতো সরল ছিলেন এবং এঁরা মৃত্যুকে উপহাস করে জীবনের দোলায় দুলেছেন ।কিন্তু তার কারন তাঁরা সেই বটগাছকে উপলব্ধি করেছিলেন , তাঁরা সেই ব্রহ্মাকে জেনেছিলেন যাঁর করুণার ঝুরির ওপর নির্ভর করে মৃত্যুর দোলায় দুলেছেন । কিন্তু আমাদের মধ্যে শিশুর সারল্য নেই । কোনো অনির্দেশ্য অনির্বচনীয় সত্যের বট গাছটি আমাদের চোখে ভাসে না , আমাদের কাছে শাশ্বত সত্যের ঝুরি নেমে আসে না । আমাদের অহমিকা পরিত্যাগ করে ঐ শিশুদের মতো নিষ্পাপ মনে সেই ঝুরি ধরে দোলায় দুলতে জানি না। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract