Ananya Podder

Abstract Drama Inspirational

3  

Ananya Podder

Abstract Drama Inspirational

কারামুক্তি

কারামুক্তি

5 mins
196



আজও রাত বারোটা বেজে গেছে, কিন্তু সমীরের বাড়ি ফেরার নাম নেই | মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর মিথ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে নবনীতা, কিন্ত মেয়ের চোখেও ঘুম নেই | দশ বছরের মেয়েও মাকে একা রেখে ঘুমিয়ে যেতে ভয় পায়, পাছে বাবা এসে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে !!


শাশুড়ি পাশের ঘর থেকে উঠে এসে বললেন , "বৌমা, একবার ফোন করে দেখবে নাকি?? "


নবনীতার মন চায়না, কিন্তু বয়স্ক শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন লাগায় সমীরকে | সমীর তখন নেশায় চুর হয়ে আছে, তবে এ নেশা কোনো গাঁজা বা মদের নেশা নয় | এ নেশা টাকার নেশা!! এ নেশা মদের চেয়েও বাজে, কারণ এ নেশার নাম জুয়া |


একটা সময় সমীরকে নিয়ে শাশুড়িমায়ের খুব গর্ব ছিল, তার ছেলের কোনো নেশা নেই বলে | এমনকি সমীর সিগারেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেনি কখনো, অন্য কিছু তো দূরের কথা |


আসলে সমীর মানুষ হিসেবে খারাপ ছিল না | বছর দুয়েক আগেও একটা সুস্থ সুন্দর জীবন ছিল সমীর - নবনীতার | কোথায়, কিভাবে যে দীপাঞ্জনের সাথে দেখা হয়ে গেলো সমীরের, জীবনের সব হিসাব যেন গেলো উল্টে !!


দীপাঞ্জন অবিবাহিত ছেলে, ভালো চাকরি করে | কিন্তু পরিবার বলে কিছুই নেই | তাই তার বাড়িতে রাতের বেলায় বসে সব ব্যাচেলর, ননব্যাচেলরদের আড্ডা | সবার ইনকাম ভালো থাকায় টাকা ফেলে জুয়া খেলতে অসুবিধে হয়না কারোরই | যদিও সমীর স্বীকার করে না, কিন্তু নবনীতা বোঝে, কোন সর্বনাশী খেলা খেলছে সমীর | তবে একটাই ভালো দিক, সেই আসরে মদ আসলেও মদ ছুঁয়ে দেখে না সমীর |


অন্য দিনের মতো আজও ব্যস্ত সমীর ধমক দিলো স্ত্রীকে, "ফোন করেছো কেন?? বলেছি না, যখন যাওয়ার হবে, ঠিক ফিরে যাবো বাড়িতে |"


নবনীতা বিরক্তির সাথে বলল, "রাত বারোটা বেজে গেছে,, এরপরেও তোমার সময় হয়না বাড়ি ফেরার ?? "


"বেশি কথা বোলো না তো নীতা,, ফোন রাখো | এখন ব্যস্ত আছি | "


"কি এমন মাথামুন্ডু করছো ওখানে, যে, বৌয়ের সাথে দুটো কথা বলারও সময় নেই তোমার?? "


সমীর বেশ রেগে গিয়ে বলল, "এতো প্রশ্ন করার কিছু নেই তোমার | বৌ বৌয়ের মতো থাকো |"


নবনীতা গলার সুর নরম করে বলল, "ফিরে এসো না গো লক্ষ্মীটি | কাল সকালে সোনার স্কুল, তোমার অফিস, আমার অফিস,.... রাত করে ঘুমোলে সকালে উঠে কাজ করবো কি করে?? "


তবুও সমীরের মন গলল না | সে জবাবে বলে, "অত ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো | আমি আসবো না এখন |".... কথাগুলো বলেই নবনীতার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দেয় সমীর |


সমীরের মা আবার এসে জিজ্ঞেস করেন, "ফোন করেছিলে?? কি বলল সমীর?? "


নবনীতা শাশুড়িকে বলল, "আপনি ঘুমোতে যান মা, আপনার ছেলে একটু পরেই চলে আসবে | "


শাশুড়ি বললেন, "ঘুমোতে আর পারি কই, বলো?? রাত বিরেতে ঘরে ফিরে যে তোমার সাথে ঝগড়া করে সমীর, সে কি বুঝি না?? "


নবনীতা শাশুড়িকে বলতে পারলো না, "আপনার ছেলে শুধু ঝগড়াই করে না, গায়েও হাত তোলে | জুয়ায় হেরে গেলে যে সব রাগটা এসে বৌয়ের উপরে দেখায় সমীর, সেটা বুঝতে বাকি থাকে না নবনীতার | কিন্তু তার কিছু করার নেই | সমীরের এই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে হয়, কারণ, নবনীতার রক্তে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে | ফার্স্ট স্টেজ বলে, ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছেন সেরে যাওয়ার | কিন্তু নিজের নিশ্বাসের উপরে বিশ্বাস করতে ভয় হয় নবনীতার | তার অসুস্থতার কথা সে এবং সমীর ছাড়া আর কেউই জানে না | তাই মেয়ের হাত ধরে বাড়ির বাইরে পা রাখতেও মন কাঁপে নবনীতার |


কতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে সমীরকে সে , "ওখানে যেও না তুমি, ওটা নরক | কোনোদিন দেখো, বড়ো সরো বিপদে পড়ে যাবে তুমি | তোমার ভালো চাই বলেই বলছি কথাগুলো | "


সমীর বিজ্ঞের মতো জবাব দিতো, "আমার ভালো মন্দ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না | আমার ভালো মন্দ নিয়ে আমিই না হয় ভাবি | আমার ব্যাপারে একদম নাক গলাবে না তুমি | "


বাইরে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে, সাথে নামে বৃষ্টি | এ দুর্যোগ যেন ঠিক নবনীতার জীবনে আসা দুর্যোগের মতনই | অসুস্থ স্ত্রীয়ের গায়ে যে স্বামী হাত তুলতে পারে, তার সাথে থাকা মানে স্বেচ্ছায় কারাবাস নেওয়া, যা নবনীতা চুপচাপ করে যাচ্ছে |


মেয়েকে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে জানলার ধারে বসে থাকে নবনীতা | হঠাৎ করে একদিনে বড়োলোক হয়ে ওঠার নেশায় সমীর জীবনে যে কত বড়ো সর্বনাশ ডেকে আনছে, সেটা অনুমান করতেই ভয়ে কেঁপে উঠল নবনীতা | মনে মনে ভাবলো, যত কষ্টই হোক, সোনার জন্য সমীরকে শিক্ষা দিতে হবে | সে যে নেশার কারাবাসে পড়েছে তার থেকে বার করে আনতে হবে সমীরকে | না হলে, সমীরকেই বাদ দিয়ে দিতে হবে জীবন থেকে | দরকার পড়লে, একাই লড়বে সোনাকে নিয়ে, সেই লড়াই ক্যান্সারের সাথেই হোক বা সমীরের সাথে | এই দুর্যোগের কারাবাস থেকে যে করেই হোক মুক্তি পেতেই হবে তাকে | তবেই তো মেয়েটাকে একটা সুস্থ জীবন দিতে পারবে সে !!


এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গিয়েছিলো জানা নেই, ঘুম ভাঙলো শাশুড়ির আর্তনাদী গলার শব্দে, "বৌমা, বাড়িতে পুলিশ!! "


নবনীতা ঘরের দরজা খুলে দেখলো, পুলিশ দাঁড়িয়ে | সাব ইন্সপেক্টর বিশ্বাস বললেন, "এটা সমীর চন্দের বাড়ি তো?? আমরা সমীর চন্দকে আরেস্ট করেছি আরও দুজনের সাথে | কাল রাতে উনি যে বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন, সেখানে একজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে | তাই, বাকি তিনজনকে আরেস্ট করেছি আমরা | আপনারা থানায় এসে দেখা করবেন | "


সব শুনে নবনীতা বলল, "বেশ, নিয়ে যান ওকে | সমীর চন্দ আমাদের কেউ হয় না | "


সমীরের মা কেঁদে ওঠেন, "এ কি বলছো বৌমা?? তুমি এভাবে সরে গেলে আমার ছেলের পাশে কে দাঁড়াবে?? "


নবনীতা বলে, "আজ আমার আনন্দ করার দিন মা | আজ বিয়ে নামক কারাবাস থেকে মুক্তি আমার | অনেক বুঝিয়ে ছিলাম ওকে | বলেছিলাম, "ওটা নরক, যেওনা ওখানে | " তখন বলেছে "বৌ বৌয়ের মতো থাকবে |"..... আপনার ছেলে খুন করুক বা না করুক, অপরাধী তো সে বটেই | সে স্ত্রী সন্তানের মনের খোঁজ রাখেনি, বয়স্কা মায়ের চিন্তার কথা ভাবেনি | যে পুরুষ সংসারে থেকে সংসারের ক্ষতি করে, সেই পুরুষের চেয়ে বড়ো অপরাধী আর কেউ হয় না | আপনি ওকে নিয়ে যান ইন্সপেক্টর | ওর ভালো মন্দ ওই বুঝে নেবে | বরাবর তাই বুঝে এসেছে, আজও না হয় তাই বুঝবে | "


পুলিশ চলে গেলে বাটিতে চায়ের জল বসায় নবনীতা | অনেকদিন বাদে একটা রাতে মার না খেয়ে সে সকাল দেখেছে | আজ এই সকালটা তো উপভোগ করতেই হবে তাকে !! আপাতত, সমীরকে নিয়ে ভাবতে চায় না নবনীতা | সে চায়, সমীর সত্যিই কারাবাসের জীবন কাটাক কটা দিন | তবেই না সে, নবনীতা ও তার মেয়ের কারাবাসে কাটানো জীবনটাকে উপলব্ধি করতে পারবে !! পরে মনে হলে উকিলের সাথে কথা বলা যাবে খন | কিন্তু এখন এই মুহূর্তে কারামুক্তির অনুভূতিটুকু উপভোগ করতে গরম চায়ে চুমুক দিলো নবনীতা | কাল সারারাত দুর্যোগের পরে আজ সকালটা সত্যিই খুব মিষ্টি লাগছে তার |








Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract