Ananya Podder

Romance Inspirational

4  

Ananya Podder

Romance Inspirational

শেষের পরে শুরু

শেষের পরে শুরু

10 mins
488


বাড়িতে এখন হুলুস্থূল কান্ড | লোকজন আসতে শুরু করে দিয়েছে | প্রতাপনারায়ণ চন্দ্রের নাতনির বিয়ে বলে কথা !! সাতদিন আগে থেকেই বাড়িতে লোকজনের আসা শুরু হয়ে গিয়েছে | দুর্গা পুজো শুরু হওয়ার আগে থেকেই যেমন চারিদিকে আলোর রোশনাই লেগে যায়, স্নিগ্ধার বিয়েতেও ঠিক একই রকম ভাবে সেজে উঠেছে প্রতাপনারায়ণ চন্দ্রের জমিদার বাড়ি |


কিন্তু এতো আলোর মধ্যেও স্নিগ্ধার চোখে মুখে অন্ধকার | জীবনের একটা বিশাল সুযোগ হাতের মধ্যে ধরা দিয়েও বেরিয়ে যাচ্ছে তার এই বিয়ের তারিখের জন্য |


বিষয়টা হোলো এই রকম -- স্নিগ্ধা খুব ভালো নাচ জানে | প্রায় বছর ছয়েক ক্লাসিকাল নৃত্য শেখার পরে দাদু প্রতাপনারায়ণের আদেশে স্নিগ্ধার নাচ শেখা বন্ধ হয়ে যায় | স্নিগ্ধার বাবা অনিমেষবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দেন মেয়েকে, "বাবার বিরুদ্ধে কথা বলবো, এমন সাহস আমার নেই | তোমার শখ ছিল নাচ শেখার, তাই শিখিয়েছিলাম, কিন্তু তোমার দাদু যখন একবার আপত্তি তুলেছেন তোমার এই শখের দিকে, তখন সই শখকে তোমায় ত্যাগ করতে হবে | "


স্নিগ্ধা জানে, সত্যিই তার বাবা তার দাদুর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলবেন না | কারণ, প্রতাপনারায়ণের বিরুদ্ধে যেই যাবে তাকেই তার বিষয় আসয়, সম্পত্তি, ব্যবসা সব কিছু থেকে বেদখল হতে হবে, যেটা অনিমেষবাবু মোটেও চান না |


তাই স্নিগ্ধা জানতো, তার নাচ শেখা এবং নৃত্যপরিবেশন নিয়ে তার বাবা মা কোনোদিনই তাকে সমর্থন করবেন না | তবুও নাচের প্রতি অদম্য ভালোবাসায় নাচকে সে ছাড়তে পারলো না | নিজের ঘরে থেকে সে সুদূর মুম্বাইয়ের কোরিওগ্রাফারের কাছে অনলাইনে নাচ শিখতে শুরু করলো, সবটাই হোলো তার দরজা বন্ধ ঘরে | সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকা বাবা মা কেউই জানতে পারলেন না, লেখাপড়ার সাথে সাথে তাঁদের অগোচরে স্নিগ্ধা কি ভেবে যাচ্ছিলো নিজের ভবিষ্যত নিয়ে | তবে স্নিগ্ধার মা জানতেন, মেয়ে ভালোবেসে আজও নাচটা চর্চা করে বাবাকে না জানিয়ে | সেটুকু জেনেও স্নিগ্ধার মা কল্পনা কোনোদিন মেয়েকে কিছু বলেননি |


কিন্তু সমস্যা তৈরী হয়ে গেলো, যখন স্নিগ্ধার বিয়ের আগেই নাচের একটা রিয়ালিটি শোএর অডিশনে পাশ করে গেলো স্নিগ্ধা | মেগা অডিশন মুম্বাইয়ে, কিন্তু প্রথম অডিশনেই গোল্ডেন বাজর পেয়ে সোজা প্রথম পনেরোতে নির্বাচিত সে | অথচ, মুম্বাই অবদি পৌঁছবার কোনো রাস্তাই খোলা দেখছে না স্নিগ্ধা | এদিকে বিয়ের তারিখ ঝড়ের মতো এগিয়ে আসছে | তারা সবাই এখন গ্রামের বাড়িতে, দাদুর কাছে থেকেই বিয়ে হবে স্নিগ্ধার, তার দাদুরই এক বাল্যবন্ধুর নাতির সাথে |


মাকে "বলবো, বলবো না " করেও শেষ পর্যন্ত সবটা জানালো স্নিগ্ধা | সবটা জানিয়ে বলল," মা, এমন কিছু করো যাতে বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া যায় | "


কল্পনা প্রমাদ গুনলেন !! অসম্ভব কিছুকে সম্ভব করার কথা বলছে স্নিগ্ধা !! তিনি ভীত গলায় বললেন, "আগুন নিয়ে খেলছিস স্নিগ্ধা | এমন খেলায় মেতে উঠিস না | এই আগুনে তুই একাই জ্বলবি না, জ্বলবে গোটা পরিবারও | এ ধরণের চিন্তা মাথাতেও আনিস না তুই,, নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে !! "


এরপরে আর কিছু বলার থাকলো না স্নিগ্ধার | তার শেষ ভরসাটুকুও তার মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিয়েছেন | মাকেও পুরোপুরি দোষ দিতে পারে না স্নিগ্ধা | তার দাবীটা সত্যিই অসঙ্গত নয় !!


একবার ভাবলো সে , বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে | কিন্তু এমন পরিকল্পনা যে খুব একটা ফলপ্রসু হবে না, সেটা ভেবেই থেমে গেলো স্নিগ্ধা | তার প্রধান কারণ দুটো -- প্রথম কারণ, সবাই ভাববে যে, স্নিগ্ধা কোনো ছেলের প্রেমে পড়ে তার সাথে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে | তাতে বংশের, দাদুর মুখে যে চুনকালি পড়বে, তাতে দাদুর তৃতীয় নয়নের আগুনে তার বাবা মায়ের ভবিষ্যত যে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত সে | আর তার দ্বিতীয় কারণটাই তার সবচেয়ে বড়ো বাধা -- সেটা হোলো মুম্বাই যেতে গেলে যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ তার হাতে নেই | অতএব সমস্ত ভাবনাকে নতসাৎ করে দিতে হোলো |


এখন কি করা যায়, সেটা ভেবেই অস্থির হতে শুরু করলো স্নিগ্ধা | তার স্বপ্নের সবটুকু শেষ হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে | তার স্বপ্নের কবরে শেষ মাটিটুকু পড়ে যাবে তার বিয়ের দিনে | তার পরে সব শেষ !! সাধারণ গৃহবধূর মতো জীবন চলবে তার, যতক্ষণ না মৃত্যু আসে তার জীবনে !!


এসব ছাইপাশ ভেবেই কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে স্নিগ্ধা | ঠিক এমন সময় কল্পনা এসে মেয়েকে বললেন, "স্নিগ্ধা, তৈরী হয়ে নে | প্রমোথেসবাবুরা এসেছেন তোর সাথে দেখা করবেন বলে | আবীরও এসেছে, সুন্দর করে একটু সেজে নিচে নেমে আয় | "


আবীর এসেছে শুনে মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো স্নিগ্ধার | জীবনে কোনো ছেলের প্রতিই কখনো কোনো আকর্ষণ অনুভব করেনি স্নিগ্ধা, তার ধ্যান জ্ঞান বলতে ছিলই নাচ | তাই আবীরকে ভালো না বাসলেও আবীরের সাথে বিয়েতে আপত্তি করেনি সে | বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে মেরে কেটে দুবার কথা হয়েছে ওদের মধ্যে, তাও হয়তো মিনিট পাঁচেকের জন্য, সেটাও আবার সবার মাঝে | আবীর একবারের জন্যও বলেনি কখনো, স্নিগ্ধার সাথে তার আলাদা ভাবে কথা বলার প্রয়োজন | তাই স্নিগ্ধাও কথা বলতে পারেনি তার সঙ্গে | যে ছেলে ভাবী স্ত্রীয়ের সাথে কথা বলার আর্জিটুকু জানাতে পারে না, সেই ছেলে যে স্নিগ্ধার স্বপ্নকে সফল করতে কিছুই করবে না, সেটা ভেবেই রাগ হয়ে গেল স্নিগ্ধার |


তবুও চোখে মুখে জল দিয়ে চেহারায় হালকা মেকআপ লাগিয়ে স্নিগ্ধা সবার সামনে গিয়ে বসলো | কিছুক্ষন সবার সাথে কথা বলার পরে হঠাৎই আবীর প্রতামনারায়ণকে বলে বসল, "দাদু, আমি কি স্নিগ্ধার সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে পারি ?? আর তো মাত্র সাতদিন, তারপরেই তো আমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাবো | একটু কথা বলতে পারি কি আমার ভাবী স্ত্রীর সঙ্গে ?? অনুমতি দেবেন ?? "


প্রতাপনারায়ণ বাবুর সত্যিই আপত্তি করার কিছু নেই | আর সাতদিন বাদে সত্যিই ওরা একে অপরের হয়ে যাবে | অতএব, কথা বলা যেতেই পারে | তাই, আবীর আর স্নিগ্ধা ছাদে গেলো কথা বলতে | খোলা ছাদ, অতএব বদ্ধ ঘরে আইবুড়ো মেয়েকে রাখার যে চিন্তা থাকে, সে চিন্তা খোলা ছাদে থাকে না |


যাইহোক, আবীর স্নিগ্ধাকে কাছে পেয়েই প্রথম প্রশ্ন করে বসলো, "আমাকে ভালোবাসো তুমি ?? "


স্নিগ্ধা স্তম্ভিত, এ কেমন প্রশ্ন আবীরের !!


সে জবাব দিলো, "ভালোবাসার মতো কোনো সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি | তাহলে এমন অনর্থক প্রশ্ন করা কেন ?? "


"ভালো না বেসেই আমাকে বিয়ে করছো !! তাহলে সেই বিয়ের সার্থকতা কোথায় ?? আমি জানি, তোমার জীবনে আমার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে, যা তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায় | বলো আমাকে, তুমি মনপ্রাণ দিয়ে কাকে চাও?? তোমার চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে, এই বিয়েতে তুমি খুশি নও | "


স্নিগ্ধা সত্যিই ভাবেনি, এমন একটা সুযোগ তাকে আবীর দেবে | একবার ভাবলো, চুপ করে থাকবে | কিন্তু তারপরেই ভাবলো, সবটা জানিয়ে দেওয়াই ভালো আবীরকে | সবকিছু তো শেষ হয়েই গেছে | তবুও শেষ চেষ্টা, যদি আবীর সবটুকু জেনে বিয়েটা পিছোতে পারে |


তাই, আবীরকে স্নিগ্ধা জানালো তার স্বপ্নের কথা, জানালো রিয়ালিটি শোতে তার নির্বাচিত হওয়ার কথাও | সব শুনে আবীর কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো, তারপরে বলল, "তোমাকে পৌঁছতে হবে কবে মুম্বাইতে ?? "


স্নিগ্ধা একরাশ বিষন্নতা নিয়ে বলল, "আমাদের বিয়ের ঠিক আগের দিন | "


আবীর আবার জিজ্ঞেস করলো, "কোন বিয়ে ?? আইনত বিয়ে নাকি, সাত্ত্বিক মতে বিয়ে ?? "


স্নিগ্ধা এসব তালগোলে ভুলেই গিয়েছিলো, যে সাত্বিক মতে বিয়ে হবার আগে তাদের আগামী পরশুতে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ আছে | বিয়ের উচ্ছাসটা যে একেবারেই চলে গিয়েছিলো তার জীবন থেকে !!


সে মৃদুভাবে বলল, "না, পৌঁছতে হবে আজ থেকে ছদিন পরে, ততদিনে আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে | "


"শেষ একটা প্রশ্ন করবো তোমায়, স্নিগ্ধা | নিজের স্বপ্নটুকু পূরণ করা ছাড়া আর কোনো চাহিদা নেই তো তোমার ?? আমাকে বিয়ে করায় অন্য কোনো দ্বিধা নেই তো তোমার মধ্যে ?? "


স্নিগ্ধা অস্ফুটে বলে, "আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা আমার নাচ | আমার স্বপ্নপূরণের সুযোগটুকুর সাথে বিয়ের সময়টার সংঘাত বেধেছে বলেই এতো সমস্যা | নাহলে এ বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি অতীতেও ছিল না, বর্তমানেও নেই | "


আবীর লাফ মেরে উঠে দাঁড়ায়, একরাশ উৎসাহ নিয়ে বলে, "তাহলে আর দুটো দিন অপেক্ষা করো, রেজিস্ট্রিটা হয়ে নিতে দাও, তারপর তোমাকে নিয়ে পালাবো মুম্বাই, পরশু রাতেই | আমি আজই ফ্লাইটের টিকিট কেটে রাখছি | "


স্নিগ্ধা হতবাক !! আবীর এসব কি বলছে!! তাকে নিয়ে নাকি মুম্বাই পালাবে সে !! স্নিগ্ধা ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই রইল আবীরের দিকে |


আবীর তার দিকে তাকিয়ে বলল, "বুঝলে না, কি বলতে চাইছি |" তারপর চেয়ারটা টেনে নিয়ে বলল, "দেখো, তোমার আবদার না তোমার দাদু শুনবেন, না কি আমার দাদু শুনবেন | বিয়েটা তো কিছুতেই পিছোবে না, সেটা তুমি আমি দুজনেই জানি | তাই আইনত স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলে আমিই তোমার গার্জিয়ান, তোমার ভালো মন্দ বুঝে নেওয়ার মানুষ | কিন্তু একথা জোর গলায় দুই বাড়ির কোনো দাদুর সামনেই বলার সাহস আমি রাখি না | যদিও বা সাহস করেও ফেলি, সবটা জেনে তোমার আশেপাশে এমন পাহারা বসবে, যে, তোমার স্বপ্ন এই গ্রামের মাটিতেই মিশে যাবে, মুম্বাই অবদি পৌঁছবে না | অতএব, এর থেকে ভালো নয় কি, আমরা পালিয়ে যাই !! তাহলে বেশ, একটা এডভেঞ্চারও হবে !! আর যখন রেজিস্ট্রিটা হয়ে যাচ্ছে, তখন তুমিও নিশ্চিন্তে আমার হাত ধরে বাড়ি ছাড়তে পারবে | এখান থেকে কলকাতা হয়ে সোজা মুম্বাই | প্লেনে চড়ে স্বপ্নের উড়ান দেবে তুমি !! কি রাজী তো ?? বলো, প্ল্যানটা ঠিক আছে তো ?? "


স্নিগ্ধা বোকার মতো শুনে যাচ্ছিলো আবীরের কথা | এমন কিছুও কি লেখা ছিল তার ভাগ্যে !! যে ছেলেটা একবারের জন্য স্নিগ্ধার সাথে কথা বলার অনুমতি চাইতে পারেনি, সেই ছেলেটাই নাকি তাকে নিয়ে পালাবে !! এ ভাবা যায় !!


স্নিগ্ধাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবীর বলল, "কি পালাবে তো আমার সাথে ?? উফফ!! আমার তো ব্যাপারটা ভাবলেই কেমন এক্সসাইটমেন্ট লাগছে !! সবাই প্রেমিকাকে নিয়ে পালায়, আর এই আবীর মিত্র পালাবে নিজের বৌকে নিয়ে | "


তারপরে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল, " তোমার জরুরি যা কাগজপত্র আছে, সেগুলো নেবে | আর সাময়িক কিছু জামাকাপড়, আর কিছু নেবে না | গয়নাগাটিও কিছু নেবে না | আমরা যা করতে চলেছি, তাতে দুই বাড়ির লোকজনই আমাদের ত্যাজ্য করবে | তাই, আমি চাই না, কেউ যাতে গয়না নিয়ে পালিয়েছি বলে আমাদের পিছনে পুলিশ লাগাতে না পারে | আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট অনিন্দ্যকে বলে তুলে নেব আমি | "


স্নিগ্ধা অবিশ্বাসের মতো চেয়ে রইল আবীরের দিকে | সে তো জানতো শেষের পরে আর কিছুই থাকে না | শেষ মানে সবটুকুই শেষ | কিন্তু শেষের পরেও যে একটা নতুন স্বপ্নের শুরু আছে, এ তো ভাবতেই পারেনি সে | কেন জানা নেই, এই মুহুর্ত থেকে আবীরের প্রতি একটা ভাললাগা তৈরী হচ্ছে তার, যা কিছুক্ষন আগেও শেষ হয়ে গিয়েছিলো |


পরিকল্পনা মতো রেজিস্ট্রির দিন রাতের বেলায় সব আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই হঠাৎ করে বিয়ের পাত্র-পাত্রী উধাও | দুই পরিবারের লোকজনই খোঁজ শুরু করলো | হঠাৎ করে একই সাথে দুজনের বেপাত্তা হওয়ার কারণ বোধগম্য হোলো না কারোরই | মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আবীর উবে গেলো কোথায়, এটাই ভাবতে পারছিলেন না কল্পনা |


এমন সময় প্রতাপনারায়ণের টেবিল থেকে উদ্ধার হোলো আবীরের লেখা একটা চিঠি |


শ্রীচরণেষু দাদু,


আমার বৌকে নিয়েই পালালাম আমি | কারণ, আমি জানি, স্নিগ্ধার স্বপ্নকে তোমরা কেউই বুঝবে না | নিজের স্ত্রীয়ের একটা ছোট্ট স্বপ্নকে যদি সার্থক করতে না পারি, তাহলে তার স্বামী হলাম কি করে ?? হাত পেতে তার খাওয়া পরার দায়িত্বই নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি তার ছোট বড়ো সব স্বপ্নপূরণেরও | তোমাদের কাছে তোমাদের সম্ভ্রমটাই বেশি | জানি, সেখানে আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ হওয়ার পথে তোমাদের কাছ থেকে শুধু "না" উত্তরই আসবে | তাই তোমাদের ইচ্ছেগুলোকে "না" বলে স্নিগ্ধাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে |


যেদিন স্নিগ্ধা জানিয়েছিল আমায়, গোল্ডেন বাজর পেয়ে সোজা প্রথম পনেরোতে নির্বাচিত হয়েছে ও, সেই মুহূর্তেই ঠিক করেছিলাম, এমন প্রতিভাকে শুধুমাত্র সংসারের রান্নাবাটি খেলায় নষ্ট হতে দেবো না, তাই পালিয়ে গেলাম | কারণ, আমি চাইনি, স্নিগ্ধা মিথ্যে হাসি মুখে সাজিয়ে সংসার করুক আমার সাথে | তাতে মানুষ অন্যকে সুখে রাখে বটে, তবে নিজে সুখী হয় না | আমার মায়ের সেই শুকনো, মিথ্যে হাসিটা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি | খুব কষ্ট হোতো আমার, অত ভালো গানের গলা থাকার পরেও মা হারমোনিয়ামটাকে খাটের তলায় ঝুল মাখিয়েই রেখে দিলো চিরকাল | তোমাদের ভুল চিন্তাধারাকে "না" করতে না পারার খেসারত আমার মা দিয়েছে নিজেকে অখুশি রেখে কিন্তু আমি চাইনা, আমার সন্তান স্নিগ্ধার শুকনো মুখ দেখে বড়ো হোক | তাই স্নিগ্ধার স্বপ্নপূরণের জন্য ওর উড়ানের সাথে আমিও উড়ান দিলাম | যাবার আগে স্নিগ্ধা নিজের সার্টিফিকেট, মার্কশীট আর গুটিকয়েক জামাকাপড় ছাড়া কিছুই নেয়নি | আজ থেকে আমার স্ত্রীয়ের যাবতীয় দায়িত্ব আমার | তুমি, স্নিগ্ধার দাদু, কেউই হয়তো আমাদের আশীর্বাদ করবে না, তবুও তোমাদের সবাইকে আমরা প্রণাম জানালাম | ফিরবো তো অবশ্যই, তবে সেদিন ফিরবো, যেদিন স্নিগ্ধা দেশে নিজের নাম তৈরী করতে পারবে | আমাদের প্রণাম নিও |


                       ইতি --

                স্নিগ্ধার জীবনের নতুন সাথী

                     আবীর ||


আবীর আর স্নিগ্ধার দুই দাদু যখন এই চিঠি পড়া শেষ করেছেন, তখন আবীর-স্নিগ্ধা পাড়ি দিয়ে দিয়েছে তাদের স্বপ্নের উড়ানের পথে | আর কয়েক ঘন্টা পরেই সেই উড়ান উড়ে যাবে মুম্বাইয়ের পথে, পিছনে ফেলে রেখে যাবে অনেকগুলো "না"," হবে না ", "করবে না ", " করা যাবে না " এমন কিছু নেতিবাচক শব্দকে | কারণ, মেঘের ভেলা কাটিয়ে যে স্বপ্ননগরীতে তারা পৌঁছবে সেখানে ইতিবাচক অনেককিছুই অপেক্ষা করছে স্নিগ্ধার জন্য | আর আবীরের জন্য অপেক্ষা করছে আবীরের ব্যাঙ্গালোরের ভাড়া বাড়িতে স্নিগ্ধার একটা গালভরা, মনভরা হাসি, যেখানে তারা জীবনের তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে |


আজ প্রথম, আবীরের হাতে হাত রেখে তার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুজলো স্নিগ্ধা, শেষের পরের শুরুটা যে এতো সুন্দর হয়, আবীর তার জীবনে না এলে সত্যিই জানা হোতো না তার!!


--------------------------------------------------------------


সমাপ্ত



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance