STORYMIRROR

Ananya Podder

Inspirational Others

2.6  

Ananya Podder

Inspirational Others

জীবনের হিসেব

জীবনের হিসেব

9 mins
476


"মা, আমি ওঘরে শোবো না | তুমি আমার সাথে এ ঘরে শুতে এসো | "


গুনগুনের কথায় আবার বুক কেঁপে উঠল ঝুমুরের | আজকের রাতটাও বোধহয় একরাশ অশান্তি নিয়ে নিদ্রাবিহীন হয়ে কাটাতে হবে | মাঝেমধ্যেই কি যে হয় অনিকেতের, বুঝতেই পারে না ঝুমুর | নিজের সমস্ত ডিপ্রেশন ওই বাচ্চা মেয়েটার উপর ঢেলে দিতে যেন বদ্ধ পরিকর সে | কলেজের প্রফেসর অনিকেত | অঙ্কে পি. এচ. ডি করেছে সে | সারাদিন অঙ্কের বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকাই তার কাজ, লেখাপড়াটা সে এতটাই ভালোবাসে | কর্মজগতে তার বিশাল নাম আর প্রতিপত্তি | কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রচুর ডিপ্রেশন |


ঝুমুর জানে, অনিকেতের ডিপ্রেশনের একটা বড়ো কারণ, ঝুমুর নিজে | অনিকেত যে স্ত্রী হিসেবে তাকে প্রথম থেকেই মানতে পারেনি, সেটা ফুলসজ্জার রাতেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল অনিকেত | অনিকেতের ইচ্ছে ছিল, ওর স্ত্রী ওর মতনই বিশাল কিছু হবে | কিন্তু অনিকেতের বাবার পছন্দ ছিল ঝুমুর | ঝুমুরের যখন বিয়ে হয় অনিকেতের সঙ্গে, তখন ঝুমুর সবে প্রাইমারি স্কুলে চাকরিটা পেয়েছে | ঝুমুরের বাবা আর শ্বশুর একই ব্যাংকে কাজ করতেন | তবে ঝুমুরের বাবা ছিলেন ক্লার্ক আর ঝুমুরের শ্বশুর ছিলেন ম্যানেজার |


একদিন ব্যাঙ্কে ঝুমুর একটা বিশেষ কারণে বাবার সাথে দেখা করতে এলে ঝুমুরের শ্বশুর অনিমেষ মিত্রের পছন্দ হয়ে যায় ঝুমুরকে | ঝুমুরের মধ্যে বেশ একটা সাবেকিয়ানা আছে | বিছানায় সারাদিন শুয়ে থাকা স্ত্রী আর ছন্নছাড়া হয়ে থাকা সংসারটাকে সামলে রাখার মতো গুণ ঝুমুরের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি | তাই মাস দুয়েকের মধ্যেই চার হাত এক হয়ে যায় ঝুমুর আর অনিকেতের |


প্রফেসর স্বামীর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা বৌ, এমন অসম একটা সম্পর্কে ডিপ্রেশনের স্বীকার হতে থাকে অনিকেত | অঙ্ক থেকে দশ হাত দূরে পালানো ঝুমুরের সাথে কথা বলেও শান্তি পায় না অনিকেত | তার বুদ্ধির সামনে ঝুমুরের বুদ্ধি সবসময়েই কম পড়ে যায় যেন !! তার পরিচিত জগতেও ঝুমুর খুব বেমানান | তবে অনিমেষবাবু ও তার স্ত্রী রজনী ছেলেবৌকে নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট | ঘরে বাইরে সবকিছু কি সুন্দর করে সব সামলায় ঝুমুর !! ঝুমুরের সবচেয়ে বড়ো গুণ যেটা, সেটা হোলো তার একটা অনুভূতিপ্রবণ মন আছে, আর সেই মনের আঁখি দিয়েই জগৎটাকে দেখতে ভালোবাসে সে যেটা আবার হিসেবকষা অনিকেতের পছন্দ হয় না | তবুও সংসার, সম্পর্ক সবকিছুই মোটামুটিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো সবাই |


কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হোলো তখন যখন গুনগুন বড়ো হতে শুরু করলো | অনিকেতের ইচ্ছে ছিল, গুনগুন তার বাবার মতো অঙ্ককে ভালোবাসবে, অঙ্ক নিয়েই বাঁচবে, অঙ্ক নিয়েই মরবে | কিন্তু হোলো উল্টোটা | গুনগুনের মন ভালোবাসলো সাহিত্যকে | তার লেখার হাতও দুর্দান্ত!! তাই বলে অঙ্কতে সে যে খুব কাঁচা, তা নয়, তবে অঙ্কটা তার ভালোবাসা হয়ে উঠতে পারেনি, শুধুমাত্র একটা বিষয় হয়েই রয়ে গেছে |


এটাই একটা বিশাল ক্ষোভের সৃষ্টি করলো অনিকেতের মধ্যে | নিজের মতো করে মেয়েকে তৈরী করতে পারছে না দেখে আবারও নতুন করে ডিপ্রেশনের স্বীকার হোলো সে | মনের সাথে প্রতিদিনের টানাপোড়েন, "কেন গুনগুন এমন হোলো??... কেন গুনগুন আমার মতো হোলো না??... ঝুমুর একদম সাদামাটা বলেই কি গুনগুন ওর মায়ের মতো হতে চাইলো ?? যদি ঝুমুর আমার মতো প্রফেসর বা ডাক্তার বা কোনো সরকারী আমলা হতো, তাহলে তো আর গুনগুন এরকম এতো সাধারণ হয়ে থাকতো না !! "


এতগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনিকেত তার বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, আর তখনই সব হিসেব নিকেশ ভুলে ভরা হয়ে ওঠে তার কাছে | গুনগুন যত বড়ো হতে থাকলো, বাবার সাথে দূরত্ব তৈরী হতে থাকলো ততো বেশি | গুনগুনের মনটাকে বুঝতেই পারছে না অনিকেত | জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার শাসনে মেতে উঠেছে সে |


ঝুমুরের ভয় হয় | গুনগুন এখন রোজ স্কুল থেকে ফেরার সময় বলে, "আমার বাড়িতে ঢুকতে একটুও ইচ্ছে করে না মা | বাবাকে দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায় | আমাকে নিয়ে তুমি আলাদা থাকতে পারো না ?? "


ঝুমুর গুনগুনকে কি করে বোঝায়, অনিকেতের আপত্তিই তো সেইখানে | সে তো সবসময় চায়, গুনগুন ঝুমুরের সান্নিধ্যের বাইরে থাকুক | কিন্তু গুনগুন আবার মা অন্ত প্রাণ !! মায়ের সাথে মন খুলে কথা বলা যায়, মায়ের সাথে প্রাণ ভরে বাঁচা যায় |


বিপরীতে অনিকেত সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেয় গুনগুনের উপরে | গুনগুনের যেন কোনো স্বাধীনতাই নেই | বাবার কথাই শেষ কথা তার জীবনে | এদিন রাত্রেও গুনগুন ঝুমুরকে বলল, "ওই লোকটার সাথে আমি থাকবো না মা | ওই লোকটা আমার সমস্ত প্রব্লেমের কারণ | যত দূরে থাকবে আমার থেকে, ততো ভালো থাকবো আমি | "


ঝুমুর ধমকের সুরে বলল , "বাবাকে বাবা বলেই বলতে শেখো গুনগুন | "ওই লোকটা" আবার কি কথা !! এই তোমায় শিক্ষা দিচ্ছি আমি !! "


"আমি জাস্ট পারছি না মা | আমার লাইফের কোনো কিছুতে নেই, অথচ হঠাৎ করে কিছু দেখে কোনো বিচার না করেই সে উলোটপালোট মন্তব্য করতে শুরু করে দেয় | আমার বেসিক প্রেস্টিজটার প্রতিও তার খেয়াল আছে?? সে যদি কারোর সম্মানের কথা না ভাবে, তাহলে তাকে রেস্পেক্ট করার কথাই বা ভাববো কেন বলতে পারো ?? আসলে কি জানো মা, বাবা তোমার প্রতিই থ্যাংকফুল নয়, তো, আর কারোর প্রতি কি করে থ্যাংকফুল হবে বলো ?? তোমাকেই তো রেস্পেক্ট করতে পারে না বাবা | তুমি যে নিজেও একটা মানুষ, তোমারও যে একটা মন আছে, কোনোদিন ফিল করেছে কি বাবা সেটা ?? করেনি, আমি ডেফিনেটলি জানি, কোনোদিন তোমার জন্য এতটুকু ফিল করেনি | তোমাকেই যখন বাবা বুঝতে পারে না, তখন আমাকে বুঝবে কি করে?? এভাবে রোজ রোজ বাবার বিশ্রী কথা আমি আর সহ্য করতে পারছি না | আই এম জাস্ট ফেডেড আপ!! "


কথাগুলি বলেই পাশের ঘরে দুমদাম করে চলে যায় গুনগুন | একটা ক্লাস সিক্সে পড়া মেয়ের মানসিক যন্ত্রনাটাকে উপলব্ধি করে বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে ঝুমুরের | ঘরে গিয়ে স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করে, "আজ রাতটা গুনগুন আর আমি পাশের ঘরে শুই গিয়ে | তুমি বকেছো, তাই একটু আপসেট আছে মেয়েটা | আর এভাবেই বা বকাবকি করো কেন?? এখন বড়ো হচ্ছে ও, ওরও তো একটা মান সম্মান বোধ তৈরী হচ্ছে | সেটাকে তো আমাদের মেনে চলা উচিত, তাই না ?? "


অনিকেতের মনে এমনিতেই আগুন জ্বলছিল, ঝুমুরের কথায় সে আগুনে যেন ঘি পড়ে গেলো | সে চিৎকার করে বলল, "একদম যাবে না তুমি গুনগুনের কাছে | তোমার সঙ্গে থেকেই যত সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে আমার মেয়েটার | নিজে একটা প্রাইমারি টিচার হয়ে রয়ে গেলে, মেয়েটাকেও প্রাইমারি টিচার বানানোর জন্য তৈরী করছো | "


এতদিন চুপচাপ থাকা ঝুমুর এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না | সেও জবাব দিলো, "কেন বলো তো, প্রাইমারি টিচার হওয়া কি খারাপ ?? একজন প্রাইমারি টিচারের কি কোনো যোগ্যতাই নেই ?? একটা বাচ্চার জীবনের ভিতই তো তৈরী হয়

একজন প্রাইমারি টিচারের হাতে | কি খারাপটা আছে এই চাকরিতে ?? "


"কম্পিট করতে পারবে একজন প্রফেশরের সঙ্গে?? ", ব্যঙ্গের সঙ্গে প্রশ্ন ছোঁড়ে অনিকেত |


"প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গায় সঠিক অনিকেত | আমরা একটা বাচ্চার ইউনিভার্সিটি অবদি পৌঁছনোর মতো ভিত তৈরী করে দিই বলেই তোমরা সেই বাচ্চাগুলোকে পড়ানোর সুযোগ পাও | তোমার শিক্ষা তখনই যথার্থ হবে, যখন তুমি অন্যের শিক্ষাকে মর্যাদা দিতে পারবে | নাহলে, তোমার ওই বিদ্যে বুদ্ধি কতগুলো দামী সার্টিফিকেটেই গুটিকয়েক ডিগ্রী হয়ে রয়ে যাবে, জীবনে কাজে লাগবে না কোনোদিনই | "


স্ত্রীয়ের এমন স্পষ্ট কথা মানতে পারে না অনিকেত, সপাটে চড় বসিয়ে দেয় ঝুমুরের গালে | তারপর চিৎকার করে বলে ওঠে, "একদম বেশি কথা বলবে না তুমি | নেহাত আমার বাবা তোমায় দয়া করে এবাড়ির বৌ করে এনেছিলেন, তাই !! নাহলে কোনো যোগ্যতা আছে তোমার, আমার বৌ হবার ?? তোমাকে বিয়ে করে প্রতিদিনের টানাপোড়োনে একটু একটু করে তুষের আগুনে পুড়ে মরছি আমি | আর তোমাকেই বা কি বলার আছে | আমার বাবাই তো একজন ফুলিশ পার্সোন ছিলেন | অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনের জন্য একটা শিক্ষিত আয়া নিয়ে এলেন ঘরে !! কোন দিক থেকে যোগ্য তুমি আমার, বলতে পারো ?? তোমাকে বিয়ে করে জীবনের সব হিসেব ভুল হয়ে গেছে আমার | "


অনিকেতের এই শেষ কথাটা কিছুক্ষন আগে অনিকেতের দেওয়া শারীরিক আঘাতের চেয়েও নির্মম বোধ হোলো ঝুমুরের | দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে যে স্বামীর সাথে জীবন কাটিয়ে দিলো সে, সেই স্বামীর চোখে সে একজন শিক্ষিত আয়া মাত্র !! কথাগুলো ভাবতেই মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো ঝুমুরের | সত্যিই আর রোজকার এই সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না | আজ শ্বশুর - শাশুড়ি কেউই বেঁচে নেই | শিক্ষিত আয়ার কাজ এই সংসারে মিটে গেছে | অতএব, এই সংসার আঁকড়ে পড়ে থাকার আর কোনো মানে হয় না | কিন্তু ঝুমুর, এটাও জানে, গুনগুনকে নিয়ে তাকে কিছুতেই আলাদা হতে দেবে না অনিকেত | আর ঝুমুর চায় না, জোর করে গুনগুনের অভিভাবকত্ব নেওয়ার জন্য গুনগুনকে কোর্টের মুখ দেখতে হোক |


তাই, কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঝুমুর বলে, "বেশ, তোমার বাবা মায়ের সেবা করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন তোমার বাবা | আজ তাঁরা দুজনেই আর কেউ বেঁচে নেই | তাই এই সংসারে আমার থাকারও কোনো কারণ নেই | তোমার আমার বিয়েতে শুধু তোমার জীবনের হিসেবই ভুল হয়নি অনিকেত, হিসেব ভুল হয়ে গেছে আমার জীবনেরও | কিন্তু আমাদের দুজনের ভুল হিসেবে কার জীবনটা সবচেয়ে বেশি নষ্ট হচ্ছে জানো?? ওই বাচ্চা মেয়েটার | হ্যাঁ, অনিকেত, আজ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আর ডিপ্রেশনে গুনগুন আছে | কিন্তু তুমি বুঝবে না, ওর সমস্যাটা | বরং, নিজের ডিপ্রেশনটা একটু একটু করে ওর দিকে কনভে করছো তুমি |


তার চেয়ে বরং একটা কাজ করা যাক | তুমি আমি আলাদা হয়ে যাই, আর.... "


ঝুমুরের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অনিকেত বলে ওঠে, "গুনগুন কিন্তু তোমার সঙ্গে থাকবে না | তুমি ওর সাথে থাকলে ও কিছুতেই মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না | "


"আমাকে আমার কথাটা শেষ করতে দাও অনিকেত | গুনগুন যেমন আমার কাছে থাকবে না, ঠিক তেমনি গুনগুন তোমার কাছেও থাকবে না | আমার এক বন্ধু আছে, নৈনিতালে এক মিশনারী স্কুলের টিচার | সেখানে গুনগুনকে পাঠিয়ে দেবো ওর নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার জন্য | নিজের স্বপ্ন পূরণ করে ফিরে আসবে আবার |"


"সব খরচা আমি দেবো, তোমাকে কিছু করতে হবে না আমার মেয়ের জন্য | " দম্ভ নিয়ে বলে অনিকেত |


ঝুমুর একটু হাসে, বলে, "তুমি কি জানো অনিকেত, তোমার মেয়ে তোমায় ঘৃণা করে !! তোমার পরিচয়টাও দায়ে পড়ে বহন করে বেড়ায় !! কিছুই জানোনা, শুধু অঙ্কের হিসেবে টাকার অঙ্ক কষে গেলে!! অঙ্কে এমন ভালো হয়ে কি লাভ বলো তো, জীবনের সব হিসেবটাই যখন তোমার ভুলে ভরা !! তাই, গুনগুনের জন্য তোমাকে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না | প্রাইমারি টিচার হলেও আমার মাইনেতে মেয়ে কনভেন্ট স্কুলের বোর্ডিংয়ে রেখে পড়ানোর সামর্থ আমার আছে | তুমি গুনগুনের জন্য খরচ করলেই ওর নেওয়া সব সিদ্ধান্তে নিজের দাবী খাটাবে | তার চাইতে গুনগুন নিজের মতো করে বেড়ে উঠুক | আজ তোমায় গুডবাই বললেও তোমাকে একদিন আবার ডাকবো অনিকেত, শুধু এটা দেখানোর জন্য, যে, তুমি অঙ্কে কতটা কাঁচা!! "


********************************


সে ঘটনার পরে কেটে গেছে বছর কুড়ি | সেই রাতের পরে আবার অনিকেত আর ঝুমুর একজায়গায় হয়েছে | কারণ, মিস অয়ন্তিকা মিত্র ওরফে গুনগুন এবারের সাহিত্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে | সেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই নিমন্ত্রিত ঝুমুর ও অনিকেত |


অঙ্কের প্রফেসর হয়েও জীবনের হিসেব কষায় সে যে কতটা কাঁচা, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেই স্বামীকে ডেকে পাঠিয়েছে ঝুমুর | আজও ঝুমুরের এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি ছিল গুনগুনের | কিন্তু ঝুমুর মেয়ের কোনো আপত্তিকেই আমল দেয়নি |


এর পিছনে অবশ্য একটা কারণও আছে | গুনগুন যে বইটা লেখার জন্য এমন একটা পুরস্কার পাচ্ছে, তার নাম "দা লস্ট ক্যালকুলেশন ", যেখানে ঝুমুর একজন ছেলে ও তার বাবার তিক্ত সম্পর্কের সমীকরণকে তুলে ধরেছে | লেখিকা হিসেবে নিজের জীবনে এমন একটা জীবন্ত অভিজ্ঞতা ছিল বলেই গুনগুনের লেখা সেই উপন্যাসেও সেই সমীকরণ ছত্রে ছত্রে জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছিলো পাঠকের কাছে |


যেদিন অনিকেতের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলো ঝুমুর, সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল সে, "একদিন তোমাকে দেখিয়ে দেবো তুমি অঙ্কে কতটা কাঁচা !! "


আজ সেই দেখিয়ে দেওয়ার দিন ঝুমুরের | আজও বাবাকে নিজের মানুষ বলে মনে করে না গুনগুন | বাবার পরিচয় শুধুমাত্র ওই কাগজে কলমেই রয়ে গেছে তার | আজও এমন গর্বিত মুহূর্তে প্রেসের সামনে নিজের মাকেই পরিচয় করালো সে | একজন রিপোর্টার জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার বাবা কোথায়?? তার আজ কেমন অনুভূতি হচ্ছে, সেটা খুব জানতে ইচ্ছে করছে আমাদের | "


মিস অয়ন্তিকা মিত্র একটু স্মিত হেসে জবাব দিলেন, "আমার বাবা একজন অঙ্কের প্রফেশর, অঙ্ক কষতেই উনি বেশি ভালোবাসেন | এসব সাহিত্যের ব্যাপারে তার খুব একটা আগ্রহ নেই আর সত্যি কথা বলতে কি, উনি এসব ব্যাপারে খুব একটা বোঝেনও না | আপনারা আমার মায়ের সাথে কথা বলুন না!! আমার এই লেখার সত্ত্বাটা এসেছেই তো আমার মায়ের থেকে | "


প্রেসের লোকগুলোর ক্যামেরার আলো ঝলকে উঠল ঝুমুরের মুখের উপরে | একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আছে লেখিকা অয়ন্তিকা ও তার মা ঝুমুর মিত্র | আজ সেই ভিড়ে প্রফেসর অনিকেত মিত্রও থাকতে পারতেন | কিন্তু খাতায় অঙ্ক করে হিসেব কষা আর জীবনের হিসেব মেলানো যে এক জিনিস নয়, তা আজ অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করছেন ডক্টর অনিকেত মিত্র | কিন্তু ততক্ষনে জীবন খাতার অনেকগুলো পাতা তার ভুল অঙ্কে নষ্ট হয়ে গেছে !!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational