কাপালিকের কবলে
কাপালিকের কবলে
কয়েকদিন ধরেই আমার এক আশৈশব বন্ধু ও সহকর্মী বার বার আমায় ফোন করছিলো। আমি অপিসের একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। তাই, ব্যস্ততার কারণেই তার সঙ্গে কথা বলে উঠতে পারছিলাম না।
কাল বাড়ি ফিরে দেখি - একটা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছে সে। অপিসেরই একজন কারোর যোগসাজশে, আমরা দুজন যে ভীষণ গোপন অ্যাসাইনমেন্টটায় কাজ করছি, তার সব খবর বাইরে ফাঁশ হয়ে যাচ্ছে।
তাকে নাকি প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে। কিন্তু সে নিজের অবস্থানে অটল আছে। খুব সম্ভবত, অপিসের বেইমানি করা ঐ লোকটিকেও সে চিহ্নিত করে ফেলেছে। শুধু আমি ফিরলেই, দুজনে আলোচনা করে তার পরেই তার পর্দা ফাঁশ করবে বলে অপেক্ষা করছে সে।
আমি তো খবরটা শুনেই, ব্যাগপত্র ফেলে ঐ অবস্থাতেই দৌড়ালাম তার বর্তমান ঠিকানায়! কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখি, আমাদেরই অপিসের লোকজনের ভিড়ে তার বাড়ি ভর্তি, বাইরে আমাদেরই অফিসের গাড়িগুলো সব দাঁড়িয়ে। আর একটা শববাহী গাড়িতে রাখা আমার বন্ধুর লাশ!
কাউকে কিচ্ছু বলতে পারলাম না, কি করে জানবো - এদেরই কে গোপনে আমাদের সাথে বেইমানি করছিলো? তবে তাদের মুখে শুনলাম, ইদানীং নাকি দু'দিন খুব অন্যমনস্ক, দুঃখিত আর হতাশ দেখাচ্ছিলো তাকে।
সকালে নাকি স্যুইমিং পুলে ওর দেহটা ভাসতে দেখা গেছে। তবে তার কোন স্যুইসাইড নোট মেলেনি। এখন পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে, এটা স্যুইসাইড নাকি অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ, কি রীপোর্ট দেয় সেটাই দেখার।
ওর বাড়ির লোক বলতে শুধু ওর এক কাকা এসেছেন। বাবা মা তো আগেই গত হয়েছিলেন। যাই হোক, শ্মশানযাত্রীদের দলে ভিড়ে গেলাম আমিও। কারণ, আমি তো জানি এটা মোটেও স্যুসাইড নয়, অ্যাক্সিডেন্টও নয় - এটা খুন!
আমার বন্ধু আর আমি একসাথে কত রাফটিং করেছি, আর সে কিনা ডুবে মারা গেলো? ওর বডির পোস্ট মর্টেম কেন করানো হল না, কার আদেশে, সেটা আমিও ঠিক বুঝলাম না।
যাই হোক, আমাদের এখানে শ্মশানটা আবার শহর থেকে অনেক দূরে, সমুদ্রের পাড়ে - বন জঙ্গলে ভর্তি একটা জায়গায়। কাঠের আগুনেই শবদাহ করা হয় এখানে এখনও।
একটা পাকা ঘর আর তার ভেতরে চিতা সাজানোর মতন একটাই চুল্লি - এই টুকুই সেখানে এখনও অবধি তৈরী হয়ে উঠতে পেরেছে - তাও সরকারি সহায়তায়।
ভিতরে একটা শবদাহ চলছিলো। বাইরে অপেক্ষায় ছিল আরো একটা। আমাদের শবদাহ করার পালা তার পর। কাকু আমার বন্ধুর পায়ের কাছে বসে আছেন তাকে ছুঁয়ে। বাকি লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিকে বসে আছে।

