কাপালিক নয় ভাগ
কাপালিক নয় ভাগ
নওলকিশোর সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে গুহার চারিদিকে পাহারার বন্দোবস্ত করলেন। এত পুলিশ দেখে শ্মশানযাত্রীরা একটু সন্ত্রস্ত হল। অত্যুৎসাহী কেউ খবর নিতে গেলে পুলিশের ধমক খেয়ে ফিরে এল। আপন কাজ সেরে রওনা দিল।
দুপুথ বেলা। এমনিতে শ্মশান শুনশান। তায় পুলিশের অবস্থানে অপেক্ষারত কাক শকুনেরাও যেন ভয় পেয়ে নড়ে চড়ে বসল। দারোগা শুন্যে কয়েকটা গুলি ছুঁড়লেন। ভয়ে বটগাছ থেকে পাখিরা উড়ে গেল। এখন শ্মশানটায় অরণ্যের শান্তি। নওলকিশোর জনাদশেক পুলিশ নিয়ে গুহার ভেতরে ঢোকার তোড়জোড় করতে লাগলেন। বেশ কয়েকটা ডিনামাইট গুহামুখে পেছনে পাশে চারিদিকে পুঁতে দিলেন। রিমোট নিজের হাতে নিয়ে দশজনে কোনমতে গুহায় প্রবেশ করলেন। আজ কোন একটা হেস্তনেস্ত করার মতলবে তিনি যেন মরীয়া হয়ে আছেন। অন্ধকার গুহায় সন্তর্পনে টর্চের আলো ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও তাদের হাতের টর্চ জ্বালিয়ে দিল। পরিষ্কার আলোয় দেখলেন গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ। আর গুহাময় চামচিকে আলোর বন্যায় গোটা গুহায় পঙ্গপালের মত উড়তে থাকল। দারোগা নির্দেশ দিলেন গর্ভগৃহের দরজা খুলতে। যথারীতি তা' পালন করা হ'ল । দারোগা প্রবেশ করতেই দেখলেন সব ফাঁকা । শুধু শিব ও কালীর মূর্তি যথাস্থানে রয়েছে।
কোথায় গেল তারানাথ ?
ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে বিফল মনোরথে গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন । গুহার মধ্যে বিকট আঁশটে গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল সকলের। কেউ কেউ বমনেচ্ছা প্রকাশ করতেই দারোগা সকলকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়ে নিজেও সবার আগে পা বাড়ালেন।
আগেই বলেছি গুহার প্রবেশ পথ একটি কিন্তু অদ্ভুত ভাবে নির্গমনের পথ বেশ কয়েকটি। এ' কথা দারোগাও জানেন বটে কিন্তু এখন আর সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায় নি। অগত্যা নিয়মবিরুদ্ধ হলেও তাঁরা প্রবেশ পথ ধরে হামাগুড়ি দিতে দিতে বাইরে আসার উদ্যোগ করলেন। কিছুটা যেতেই নজরে পড়ল গোপেশ্বরের মৃতদেহ। দারোগা অবাক হলেন। গোপেশ্বরের দেহ তো ট্রাকে রাখা আছে!!
তখন তো আর এখনকার মত মোবাইল ছিল না। তবে ওয়ারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন দেহ ট্রাকেই সুরক্ষিত আছে এবং পাহারা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দারোগা একটু নিশ্চিন্ত হতেই মৃতদেহের পাশে থমকে দাঁড়ালেন। এ যে গোপেশ্বরের দেহ! তবে কি তারানাথের ধোঁকা বাজি এখনও চলছে ?
আবার যোগাযোগ করলেন এবং জানলেন ট্রাকের মৃতদেহ গোপেশ্বরেরই। তিনি ভালো করে মাটিতে পড়ে থাকা একটা দেহ পরীক্ষা করে দেখলেন এটাই গোপেশ্বর। নিশ্চয় তারানাথ এখনও তাঁর যাদু দেখাচ্ছে।
এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে বাইরে পাহারায় থাকা জনৈক পুলিশ কর্মচারীকে ভেতরে ঢুকতে দেখা গেল। দারোগা নওলকিশোর বললেন - কি ব্যাপার অনিলবাবু ! আপনি কেন ভেতরে আসছেন ? দেখছেন আমরা বেরোচ্ছি।
- স্যার, ভয়ঙ্কর সর্বনাশ হয়ে গেছে।
দারোগা বললেন - গোপেশ্বরের দেহ ট্রাকে নেই ? এই তো !
- না স্যার ! গোপেশ্বর নয়। রামু। রামুর দেহটা শ্মশানের বটতলায় বাঁধানো চাতালে পড়ে আছে দেখেই আপনাকে খবর দিতে এলাম।
- তো স্যাটিলাইট ফোনেই বলতে পারতেন।
- পারতাম স্যার, কিন্তু ...
- কিন্তু কি ? ওসব কিন্তু পরন্তু পরে হবে। দেখছেন আমাদের অবস্থা ! দুর্গন্ধে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসছে।
পুলিশ কর্মীটি আগে কোন গন্ধ পায় নি। কথাটা শুনতেই তারও গা বমি বমি ভাব হল। বলল - তাই তো স্যার ! আমিও পাচ্ছি।
বলে গলগল করে বমি করতে শুরু করল। এত বমি জীবনে কেউ কোনদিন দেখে নি। মনে হ'ল যেন আগ্নেয়গিরি থেকে লাভাস্রোত বেরিয়ে আসছে।
এত বমি গড়িয়ে আসছে যে প্রবেশপথ বন্ধ হবার জোগাড়। নওলকিশোর ঐ পুলিশকে বেরিয়ে যেতে বললেন। পুলিশটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল । বলল - দারোগাবাবু, তোমাকে অভিযান না করতে বলেছিলাম। আমার কথা শোন নি। নাও এবার বোঝো ঠ্যালা। সামনেও আসতে পারবে না; পিছিয়েও যেতে পারবে না।
দারোগা কোমরের পিস্তল বের করে পুরো পিস্তল খালি করে দিলেন। কিন্তু ওই পর্য্যন্তই। আগন্তুকের কোন ভাবোদয় হল না। যেন কিছুই হয় নি - এমন ভান করে নিষ্পৃহ হয়ে রইল। তারানাথের অস্তিত্ব সম্পর্কে দারোগার আর কোন সন্দেহ রইল না। যাক , তা'হলে তারানাথ এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে।
দারোগা এগিয়ে আসার চেষ্টা করতে লাগলেন। পিছনে যেতে পারতেন। কিন্তু নির্গমন পথের কোন হদিস পান নাই বলে পিছিয়ে যেতে মন চাইল না। বমির সমুদ্রে কোনমতে নাক মুখ বন্ধ করে এগিয়ে যেতে থাকলেন। যত এগোন বমির স্রোত তত প্রবল হয়। একসময় দারোগাসমেত সবাইকে গর্মগৃহের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আর তারানাথের সন্দেহযুক্ত পুলিশটি ও তত গুহার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। দারোগার মনে হল আর কোনদিন হয়তো গুহার বাইরে বেরোনো সম্ভব হবে না। তাঁর না হয় কোন পিছুটান নেই; কিন্তু অন্যান্য পুলিশদেরও মনে হল আর বেঁচে থাকা যাবে না। কেন যে মরতে তারা দারোগার কথায় সায় দিয়ে গুহায় ঢুকল !
( চলবে )

