কালো মেয়ের উপাখ্যান 🖤 পর্ব ২
কালো মেয়ের উপাখ্যান 🖤 পর্ব ২
সবাই মিলে নিশিকে বললো , " নিশি আজকে তোমার কাহিনী শুনবো । তোমার সাথে কি ঘটনা ঘটেছিল ? " সবার কথা শুনতেই নিশির বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে , মুখটা ভয়ে শুকিয়ে যায় । আবার সেই সব ঘটনা ? যদিও সে ভোলেনি আর কোনোদিন হয়তো ভুলবে না তবুও সবাইকে বললে হয়তো একটু হালকা লাগবে মনটা এই ভেবে নিশি রাজি হয়ে গেল । নিশি যেই বলার জন্য মুখ খুলেছে ওমনি আবার দুপুরের খাবারের ডাক পড়লো । অগত্যা সবাইকে যেতে হোলো খাবার ঘরে । খাওয়ার সময় হঠাৎ শ্যামা বলে উঠলো , " আমি যখন রাস্তায় ফুল নিয়ে ঘুরতাম তখন একটা হোটেলের দাদু আমাকে ডেকে ভাত খাওয়াতো , কিন্তু শুধু ভাত - ডাল আর তরকারি দিতো । মাছ - ডিম - মাংস কিচ্ছু দিতো না । " এই বলে মাছের ঝোলের বাটিটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো । সাথে সাথেই মৌসি বলে উঠলো , " নিশি মেরি রানী বিটিয়াকো সির্ফ মাচ্ছি দে , রানী বিটিয়া আজ পেট ভরকে মাচ্ছি - চাবল খায়েগী "। এই বলে আদর করে শ্যামাকে বললো, " খান বিটিয়া রানী পেট ভরকে
খা " । শ্যামাও মনের আনন্দে খেতে শুরু করে । বিভা খেতে খেতে বললো , " মৌসি আজকে শ্যামা নিজের ব্যাপারে প্রথম কিছু বললো । এবার আস্তে আস্তে সব কথা জানতে হবে । কি করে ওর ঐ অবস্থা হয়েছিল । " সিতারা নিশিকে বলে , " নিশি তু আহিস্তা আহিস্তা শ্যামাসে বাত করনা । পাতাতো চলে আখির ক্যায়া হুয়া থা " ।
নিশি মুখে কোনো কথা না বলে ডানে - বায়ে মাথা নাড়লো ।
সবাই খাওয়া শেষ করে আবার গিয়ে বসলো আড্ডার আসরে । লায়লা বললো , " নিশি এবার বলো তোমার কথা । " নিশি শ্যামাকে বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজের কথা বলতে শুরু করলো ।
নিশি : আমার নাম কৃষ্ণকলি চৌধুরী । আমি কালো ছিলাম বলে ঠাকুমা আমার জন্মের পর আমার মুখ দেখেনি ।কিন্তু আমার বাবা আমাকে নাকি আদর করে মাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান শুনিয়েছিল
" কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
কালো বলে তারে গাঁয়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ’পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা, মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কি না চেয়ে আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কালো কাজল মেঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার ’পরে দেয় নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ। "
তারপরেই আমার নাম রাখে কৃষ্ণকলি । আমার বাবা - মা দুজনেই ভালো গান জানতো তাই আমিও গানটা একটু - আধটু শিখেছিলাম । যাইহোক বাবার একটি বড়ো শাড়ির দোকান ছিল । এছাড়াও মা বাড়িতেও শাড়ি বিক্রি করতো । আমাদের অবস্থা বেশ ভালো ছিল । সত্যি বলতে কোনো কিছুর কোনো অভাব ছিল না । আমি ছিলাম বাবার একমাত্র সন্তান । তাই আবদারের শেষ ছিল না , যখন যা চাইতাম পেয়ে যেতাম । আমি যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম তখন " নিশির কথার মাঝেই যামিনী বলে উঠলো , " তুমি গ্রাজুয়েট ? কোই কোনোদিন বলোনিতো ? " নিশি একটু আলতো হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো ।
নিশি গ্রাজুয়েট শুনে সবাই হতবাক । নিশি বলতে শুরু করলো ।
নিশি : আমি যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম তখন চোখে নানান স্বপ্ন । তখন স্বপ্ন দেখছি আরও বেশি ডিগ্রি অর্জন করে স্কুলের শিক্ষিকা হবার আর ঠিক সেই সময় বাবা তার এক বন্ধুর দিদির ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো । ছেলের বাড়ির লোক আমার গায়ের রং নিয়ে আপত্তি করলে বাবা গাড়ি - গয়না - নগদ টাকা যৌতুক হিসাবে দেবে শুনে পরে অবশ্য আর কিছু বলে নি । বেশ ধুমধাম করে আমার বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের পর থেকে ভালোই ছিলাম । আমার শ্বশুরবাড়ি ছিল অবস্থাপন্ন কাজেই কোনো কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম । কিন্তু ওদের যে কিসের ব্যবসা কিছুই জানতাম
না । তার উপর বাড়িটা ছিল বিরাট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা । বাড়িতে ছিলাম মাত্র ছয়জন লোক ও একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুর জিকো । লোক বলতে আমি ,
আমার স্বামী , শ্বশুর - শ্বাশুড়ী , আমার ননদ ও একটি কাজের লোক । জানিস সিতারা , আমার শ্বশুরমশাই এতো ভালো ছিল কিন্তু উনি নাকি একবার স্ট্রোক হবার পর থেকে পঙ্গু হয়ে যান । বিছানা থেকে উঠতেই পারতেন না । আমার স্বামী , ননদ, শ্বাশুড়ী মাঝেমধ্যে সপ্তাহ খানেকের জন্য বাইরে যেতো । তখন আমি একাই থাকতাম । একদিন হঠাৎ কথায় কথায় আমাদের কাজের ছেলেটির মুখ থেকে একটা কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম । ও বলেছিল আমি নাকি আমার স্বামীর ছয় নম্বর স্ত্রী । আমি শুনে প্রথমে খুব অবাক হয়ে যাই , তারপর মনে হোলো সব বাজে কথা । ছেলেটা নিশ্চয়ই আজকে সকাল সকাল গাঁজা টেনেছে । আসলে ও গাঁজার নেশা করতো তাই এটাই মনে হোলো । আমি ওর কথায় কান না দিয়ে উল্টো ধমক দিতেই দৌড়ে চলে যায় । তবে যাওয়ার সময় বলে,
" বৌদিমনি তোমার ভালোর জন্যই বললাম , এখনও সময় আছে পালাও । " ওর এই কথাগুলো আমার মাথায় যেন ঢুকেও ঢুকলো না । এই নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাইনি । বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন আমাদের বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টির আয়োজন হয় । আমার ননদ আমাকে সেদিন খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিল । তবে পার্টিতে লোক বেশি ছিল না । বেশ কিছুক্ষণ পর আমার স্বামী ও ননদের জোরাজুরিতে এক গ্লাস সরবত খেলাম । তারপর সবাই বসে কথা বলছি হঠাৎ দেখি মাথাটা কেমন ঘুরছে । আমার শরীর খারাপ লাগছে দেখে আমার স্বামী আমাকে শোবার ঘরে বিছানায় শুইয়ে দেয় । তারপর আমার আর কিছু মনে নেই । যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমার শরীরে একটা সুতো পর্যন্ত নেই , তারপর আবার আমার দুই পাশে দুটি লোক শুয়ে আছে । আমি রীতিমতো ভয়ে শিউরে উঠে কাপড় পড়েই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসি । আমার ঘরের পাশেই ননদের ঘর । আমি ননদের ঘরের দরজা খুলে ঢুকতে গিয়ে দেখি পুরো উলঙ্গ অবস্থায় আমার ননদ এবং আর ও দুটি পুরুষ । দেখেই তো আমার চক্ষু চড়কগাছ । কিন্তু তারপরেও আর যে দুটি চমক আমার জন্য অপেক্ষা করছিল সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি । আরও দুটি শোবার ঘরে গিয়ে দরজা খুলে দেখি একটা ঘরে আমার স্বামী ও একটি মহিলা । ঐ অবস্থা দেখে রাগ হলেও কোনো আওয়াজ না করে তার পাশের ঘরে গিয়ে দরজা খুলতেই আমার মাথায় যেন রক্ত চড়ে
গেল । দেখলাম আমার উলঙ্গ শ্বাশুড়ীকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে একটি অর্ধেক উলঙ্গ লোক । তখন আচমকা আমাদের বাড়ির কাজের ছেলেটার " বৌদিমনি তোমার ভালোর জন্য বললাম , এখনও সময় আছে পালাও " ঐ কথাগুলো মনে পড় গেল । বুঝতে পারলাম তার মানে ও যা বলেছিল সব সত্যি । এটাই ওদের ব্যাবসা । শরীর বেচে টাকা রোজগার করা ।