কালচক্র
কালচক্র
অন্তিম পর্ব
একটু ধাতস্হ হয়ে নীলের হাতটা ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে দেখা গেল ক্ষত বেশ গভীর। অনেকটা রক্ত বেরিয়ে জমাট বেঁধে ফুলে আছে। "কি করব আমরা এখন? "- জিজ্ঞেস করল রাহুল। "গাড়ীতে বসে থাকা ছাড়া আর কি করার আছে? "- আমি বললাম। "সারারাত এইভাবে এখানে থাকা possible নয়। নীল তুই ড্রাইভ করতে পারবি?"- জিজ্ঞেস করল রাহুল।
নীল বলল -,"atleast এখান থেকে বেরোতে হবে। পারব আমি! " আমাদের মধ্যে একমাত্র নীল- ই ড্রাইভ করতে পারত।
গাড়ি start নিয়ে চলল অজানা রাস্তা দিয়ে এই অভিশপ্ত জঙ্গল থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩ ঘন্টা এদিক ওদিক ঘোরার পর অবশেষে আমরা বড় রাস্তা খুঁজে পেলাম। এই সময় টা প্রতি টা মূহুর্তে মনে হচ্ছিল কেউ আমাদের লক্ষ্য রাখছে। পেট্রল প্রায় শেষের দিকে। মোবাইলে টাওয়ার এসেছে দেখে থানা-য় ফোন করে সবটা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কাছের ফলকে জায়গার নাম দেখে জানানোর পর কাছের থানা থেকে আমাদের ওখানেই থাকতে বলা হ'ল। ওরা আসবে আমাদের নিয়ে যেতে।
বৃষ্টি নামল। আমরা গাড়িতে বসে আছি। একঝলক ঠান্ডা বাতাস আর বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিল। ঋ বলতে শুরু করল ,
"১৮০০ সালের প্রথম দিকে যখন উইলিয়াম জর্জ আর তার দলবল Borra cave খুঁজে পান, শোনা যায় নাকি তারও ১০-১২ বছর আগে কোনো বৃটিশ আর্কিওলজিস্ট হুকমপেটা আর পডেরু -র মাঝামাঝি কোনো জায়গার সম্পর্কে জানতে পেরে ওখানে কোনো গুহার খোঁজ চালান। তবে তাদের দলের একজন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় আর সাহেব নিজে অসুস্হ হয়ে পড়ায় পুরো দলটা ফিরে আসে। শোনা যায় প্রায় ২০০০ বছর আগের কোনো ঘটনার কথা শুনে জায়গা টা মোটামুটি locate করার চেষ্টা করেছিলেন সাহেব। "
থামল ঋ। আমি জিজ্ঞেস করলাম "২০০০ বছর আগের কোন ঘটনা? আর ঐ বৃটিশ সাহেবের ই বা কি হ'ল?"
ঋ বলল "এতকিছু তো পাইনি। এইটুকুই জেনেছিলাম।"
পুলিশ অফিসার আর উদ্ধারকারী দল এসে পড়ল। আমরা মোটামুটিভাবে location টা বোঝাতে পারলাম। উদ্ধারকারী দল জঙ্গলের ভিতরে চলে গেল। আমরা জিপ্-এ উঠলাম। আরেকজন অফিসার বিরজু-র গাড়ি-টা নিয়ে কাছাকাছি কোথাও থেকে পেট্রল ভরে থানায় আসবে।
যাওয়ার পথে অফিসার-কে প্রায় সবটাই খুলে বললাম আর ঐ বৃটিশ সাহেবের কথা যেটুকু জেনেছি সেটাও বললাম। সবটা শুনে উনি যা বললেন তার সারাংশ দাঁড়াল, সেই বৃটিশ সাহেব কোনো প্রাচীন পুঁথি থেকে কিছু একটা জেনে এখানে আসেন। বছর ২৫-এর বৃটিশ সাহেব এখানকার লোকাল কিছু লোক কে নিয়ে জঙ্গলে যান। কিন্তু সেখানে কোনোভাবে তাদের দলের মধ্য তিরিশের এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। সাহেবের হাতের কোনো একটা গভীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ ও সেটা থেকে ঘা হতে শুরু করলে সাহেব অসুস্হ হয়ে পড়েন, ফলে তারা ফিরে আসেন। সাহেব এর কিছুদিন পর থেকেই পাগলের মত আচরণ শুরু করেন। হঠাৎ হঠাৎ রক্ত, পূজার বেদী, এইসব বলে চেঁচিয়ে উঠতেন আর বিরবির করে কিছু বলতেন। এর পর হঠাৎ একদিন তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। আর তাকে দেখা যায়নি।
আমরা নীল- এর হাতে first aid করিয়ে রাত টা থানা -তেই কাটালাম। পরদিন দুপুরে খবর এল আমাদের বলা জায়গা মত তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো ঢিবি, গুহা বা তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। অফিসার আমাদের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে গেলেন কিছু query, id proof -এর copy নিজের কাছে রেখে। আজ রাতের ট্রেনে- ই ফিরব আমরা।
ট্রেনে উঠে সব luggage রেখে seat -এ বসলাম। অল্প আলোতে গুহায় দেখা নারীমূর্তি আসলে আমাদের ভ্রম ছিল, বা আলোছায়ার খেলা ছিল, এমনটাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম তাই অফিসার-কে এই বিষয়টা জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি। যাইহোক ট্রেন ছাড়তে এখনও ১০ মিনিট বাকি। গতকালের ক্লান্তি-তে একটু চোখ বুজল নীল।
চোখের সামনে ভেসে উঠল গত রাতের ছবিটা। একটা বিকটদর্শন মূর্তি ...আছাড় খেয়ে পড়ার সময় ঠিক যার বেদী-র উপর পড়ে হাতটা থেঁতলে গিয়ে রক্ত পড়েছে ওর....
আর...... ভেসে উঠল আজ থেকে ২০০০ বছর আগের ছবি। এক ২৫ বছরের যুবকের হাত কেটে রক্ত নিয়ে এক মহিলা পূজা করছে একটা মূর্তির, এক বছর ৩৫ এর যুবক সেই মহিলা-কে মেরে হাতের বাঁধন খুলে দিচ্ছে ঐ যুবকের। তারপর প্রায় ২ দিন ধরে একটা গুহা থেকে বেরোনোর প্রাণপন চেষ্টার পর সেই বছর ৩৫-এর যুবক তূর্যবর্মণ কোনোরকমে বাইরে বের করতে সক্ষম হয় সেই যুবক কে। যুবক বেরিয়ে আসলেও তূর্যবর্মণ বেরোতে পারেননি। সেই গুহাতেই আটকে যান। বছর ২৫-এর যুবক গুহা থেকে বেরিয়ে আসলেও সেই জঙ্গল, সেই দেবতার মূর্তি তাকে জঙ্গল ছেড়ে বেরোতে দেয়নি, কারণ তার রক্তে সেই ভগবান পূজা পেয়েছিল, তার হাতেই তিনি পূজা পেতে চান..... বারবার। না, সেই যুবকের আর ফেরা হয়নি। ঐ জঙ্গলের- ই রূপ, রস গন্ধে সে ঐ নাম না জানা ভগবানের মূর্তির প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেছে। সে পারেনি জঙ্গলের আর ঐ দেবতার হাতছানি উপেক্ষা করতে। জীবনের বাকি সময়টা সে.......
ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজে চোখ খুলল নীল। হাতের ব্যান্ডেজ করা কাটা জায়গাটার উপর একবার হাত বুলিয়ে নিল। ওকে যে ফিরে যেতে হবে! ফিরতেই হবে ওকে। খুব সাবধানে luggage টা নামিয়ে নিল। বাকি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। সবাই ক্লান্তিতে ঘুমোচ্ছে। মনেমনে বলল,"থ্যাংস ঋ".....ট্রেন-টা সবে গড়াতে শুরু করেছে। লাফিয়ে স্টেশনে নেমে পড়ল নীল। নীল-কে তার সঠিক গন্তব্যে পৌছে দিয়ে পিছনে ফেলে রেখে ফিরে চলল ধাতব জন্তু টা।
-সমাপ্ত-