জোকার
জোকার


শীতের শুরুতে প্রতিবারই সার্কাসের তাঁবু পড়ে এই মাঠে। এবারেও এসেছে রাজনন্দিনী সার্কাস। সেদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরেই অরিন বলল, "সার্কাসটা দেখে আসি চলো। ভালোই ভিড় হচ্ছে। আমি টিকিট কেটেই এনেছি। তাড়াতাড়ি রেডি হও।" সুমি তো খুব খুশি। হইহই করে বেরিয়ে পড়লাম তিনজনে।
নির্দিষ্ট সময়ে সরে গেল পর্দা । মঞ্চের চড়া আলোয় দেখা গেল, একটা জোকার পা ছড়িয়ে বসে খুঁত খুঁত করে কাঁদছে। অন্যদিক থেকে আর একটা জোকার হাতে একটা স্কেল নিয়ে বেরিয়ে এল," এই! কি হয়েছে রে? তুই কাঁদছিস কেন? "
১ম —" আমার দুঃখু হয়েছে খুব "।
২য় —"এ মা ! আমারও কেমন দুঃখু দুঃখু হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। আয়, দুজনে কাঁদি"। দুজনে গলাগলি করে কাঁদতে বসল।
২য় —"আচ্ছা, আমি কাঁদছি কেন" ?
১ম —" আমাকে দেখে "।
২য় —" তাহলে তুই কেন কাঁদছিস"।
১ম —(ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে) "আমার ছেলে মরে গেছে "।
দর্শকদের মধ্যে থেকে গুঞ্জন উঠল।
২য় —এ ই। যাঃ। আমিই তো তোর ছেলে। কোথায় মরেছি? "
১ম —(তিতি বিরক্ত হয়ে)" তাহলে আমিই মরে গেছি , যা। আজ আর কোনো খেলা হবে না।" চোখ মুছতে মুছত
ে চলে যায় প্রথম জোকার। "এই শোন, শোন" করতে করতে দ্বিতীয় জনও প্রথম কে ধাওয়া করে। চলে যেতে যেতেও একবার থমকে দাঁড়ায় দুজনে। দর্শকদের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে সমস্বরে বলে ওঠে , "খেলা কিন্তু শেষ নয়, খেলা সবে শুরু "।
সত্যিই মন ভরে গেছে খেলা দেখে। একদম শেষে ছিল ট্রাপিজের খেলা। অনবদ্য। স্বপ্নের মতো নরম নীল আলোয় ভেসে যাচ্ছে স্বপ্ন লোকের কয়েকটি ছেলে মেয়ে। তাদের সঙ্গে ওই প্রথম জোকার। কি অসাধারণ। খুব ভালো লেগেছে সুমির। ফেরার সময়ে কানাঘুষো শুনছিলাম, দুপুরের শো তে কার নাকি আ্যক্সিডেন্ট হয়েছে। সম্ভবত মারা গেছে কেউ।
পরদিন সকালে কাগজ টা খুলতেই নজরে পড়ল আ্যক্সিডেন্টের খবরটা। বাইকের খেলা দেখাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুমন্ত অগ্রবাল নামের এক যুবক। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই মারা যায় সে । মৃত সুমন্ত অগ্রবাল, এই সার্কাসেরই প্রথম এবং প্রধান জোকার অনন্ত অগ্রবালের পুত্র । সুমন্তর ছবির সাথে জোকারের সাজে ওর বাবার ছবিটা দেখে চমকে উঠলাম, এ কি। এ যে কালকের সেই প্রথম জোকার। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। লোকটা নিজের বুকফাটা কান্না লুকিয়ে রেখে আমাদের হাসিয়ে গেল। আমরা কেউ বুঝতেই পারলাম না!