জঙ্গল রোডের বিভীষিকা
জঙ্গল রোডের বিভীষিকা
জঙ্গল তো নয় যেন গোলকধাধা। গত কয়েক ঘন্টায় যা ঘটে গেলো তাতে সায়নের জীবন বিভীষিকার হয়ে উঠেছে। ডাকসাইটে গাড়ি চোর সায়ন কিছুক্ষন আগে এই অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা চুরি করেছিল। পুলিশের চোখ এড়াতে জঙ্গল রোড দিয়ে পালাতে গিয়ে এই বিপত্তি।
সচর-আছর জঙ্গল রোডের ত্রিসীমানায় কেউ আসতে চায়না, জাায়গাটার বদনাম আছে। রাতে যেন কালো কালো কদের সব ছায়া দেখা যায়। তাই রাত্রে জঙ্গল রোড দিয়ে কোন ট্রাক বা বড় লরিও যায় না। সবাই এই রাস্তাটা কে এরিযেই চলে। কিন্তু আজ গাড়িটা চুরি করতে গিয়ে হাতাহাতি হয়়ে যায় গাড়ির মালিকের সাথে। বলিষ্ঠ দেহের লোকটার সাথে এঁটে উঠতে না পারায়়, ছুরির এক কোপে শরীর থেকে তার ডান হাতের কব্জি আলাদা করে দেয়়় সায়ন। তারপরই সে গাড়ী নিয়ে চম্পট দিয়েছিল জঙ্গল রোডের উদ্দেশ্যে।
এতক্ষণ গাড়ি চালিয়েও জঙ্গলটি পেরোতে পারল না সে। হঠাৎ তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা ফুটে উঠেছে, জঙ্গলটি এখনো পেরোতে পারেনি বলে নয়, রেয়ার-ভিউ আইনায় কার যেন ছায়া দেখেছে সে। পিছনে ফিরতেই অবাক হল সে, কারণ ব্যাক-সিটে তখন কেউই ছিল না। সায়ন আবার গাড়ি চালানোয় মন দেয়, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আবার ভয় পেয়ে যায়়়, রেয়ার-ভিউতে সেই আবছা ছায়ামুর্তিকে দেখে। কিন্তু এবারো পিছনে তাকিয়ে তাকে অবাক হতে হয়, কারন সে দেখে ব্যকসিট এবারেও ফাঁকা। কিছুক্ষণ পরে সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এমন করে মিনিট দশেক কাটানোর পর সে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিলো, এবং মাটির উপর ছিটকে পড়়লো। মাটিতে দাাঁড়াতেই যেন সাহস ফিরে পেল সায়়ন, আর ঠিক তখনই গাড়িটা একটা বৃক্ষে ধাক্কা খেল। এই ঘটনার সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যাক-সিটে বসা ব্যক্তিটিও নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। সায়ন অন্ধ্কারে লক্ষ্য করল, লোকটির ডান হাতের পাতাটা কব্জি থেকে নেই। আর সেই জায়গাটা দিয়ে একভাবে রক্ত গড়াচ্ছে যেন কিছুক্ষণ আগেই একটা ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে তার ডান হাতের পাতাটা কব্জি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। সায়নের বুঝতে দেরি হলনা ও কে। তারপরই লোকটিকে আক্রমনাত্মক ভাবে তার দিকে ছুটে যেতে দেখে সেও প্রানপনে ছুটতে লাগাল। ছুটতে-ছুটতে একসময় সে জলার পারে গিয়ে পৌঁছাল। পিছন ফিরে তাকাতেই ছুুুটন্ত বিভীষিকাকে ধেয়ে আসতে দেখল। বাঁচার প্রবল ইচ্ছা চেপে ধরল তাকে। কি করবে বুঝতে না পেরে দিল জলে আট লাফ। তারপর সাাঁতরে যখন সে জলার মধ্যভাগে পৌঁছলো তখন একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তাকে ধরার জন্য সেই হাত কাটা লোকটিও জলে নেমেছে, যদিও একটা হাত না থাকায় তার সাাঁতরাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সায়ন জলার অপর প্রান্তে উঠে পরল। সে আরো একবার পিছন ফিরে দেখল লোকটি জলার মাঝ বরাবরও পৌঁছে উঠতে পারেনি।
হঠাৎ সে যেন গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতে পেল। জলার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে পিছনে ফিরতেই সে দেখল জঙ্গল শেষ হয়ে বড় রাস্তা শুরু হয়েছে। সায়নের খুশির আর ঠিকানাই রইল না। এমন ভয়ঙ্কর বিভীষিকার হাত থেকে সে যে এত সহজে বেঁচে যাবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি।
জামা-কাপড় ভিজে শপশপ করছে, তাউ সে প্রান হাতে নিয়ে ছুটে বড় রাস্তার উপর উঠে পরল। সামনে দিয়ে বহু গাড়ি-ঘোড়া ছুুটে যাচ্ছে কিন্তু সায়নকে লিফ্ট দেয়ার জন্য কোন গাড়ি দাঁড়াচ্ছেনা। এমন সময় রাস্তার ওপার থেকে একটি আ্যম্বাসেডর গাড়িকে তার দিকে আসতে দেখে সে প্রানপনে হাত নেড়ে-নেড়ে লীফ্ট চাইতে থাকল।
গাড়িটা তার সামনে এসে দাড়ালো। গাড়়ির কাঁচে টোকা দিয়ে, সায়়ন হাাঁফাতে-হাাঁফাতে গাড়়ির চালক কাম মালিককে অনুরোধ করলো তাকে লিফ্ট দেওয়ার জন্যে। গাড়ি চালক ধীরে-ধীরে জানলার কাঁচ নামিয়ে প্রকাশে এল, সায়নের মেরুদন্ডড দিয়ে বরফ জলের ধারা নেমে গেল। বুকের গতি থেমে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো সে দেখল ড্রাইভার এর সিটে বসে থাকা ব্যক্তিটি তার ডান হাতটা গাড়ির জানালা দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে, আর সেই হাতের পাতা নেই। কাটা কব্জিটা থেকে রক্ত গড়িয়ে-গড়িয়ে গাড়ির দরজা বেয়়ে পরছে আর টায়ারটা তাতে ভিজে যচ্ছে।