পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন
পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন
বাইক আরোহী পিক-আপ বাড়ায়। কুয়াশার আসতরন ভেদ করে এগিয়ে চলে গন্তব্যের দিকে। সকালের নরম কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ চারপাশটাকে একটা ঝাপসা আসতরনে ঢেকে রেখেছে। সূক্ষ্ম পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা সূর্যের আলতো আলোকে ফিল্টার করে, একটি উষ্ণ, মৃদু আভা তৈরি হয়েছে। পরিবেশটা শান্ত এবং স্থির কিন্তু মাঝেমাঝে কানে আসা শব্দগুলি ম্লান এবং দূরবর্তী হচ্ছে, যা পরিবেশের ভয়ঙ্কর ভাবটা আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই শব্দের উৎস কোথা থেকে আসছে সেটা আরোহনকারী জানেনা। মৃদু কুয়াশা শিশির-চুম্বিত পৃষ্ঠগুলিকে শীতল এবং স্যাঁতসেঁতে করে তুলেছে। ধূসর কুয়াশার রঙগুলি অতি যত্ন করে, প্যাস্টেলের মতো প্যালেট তৈরি করে এই পরিবেশে ছড়িয়ে দিয়ে এক অজানা অনুভুতি জাগিয়ে তুলেছে। স্নিগ্ধ কুয়াশার দল সামনের দৃশ্যমানতা হ্রাস করে, রহস্য এবং অস্পষ্টতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তৈরি করেছে অলৌকিক গুণওয়ালা ভিন্ন জগতের পরিবেশ, যেখানকার গোপনীয়তা আবৃত। কুয়াশার আসতরন ছিন্ন করে সে যতো এগোচ্ছে রহস্য ততই দৃঢ় হচ্ছে। এক পর্যায় সে উপলব্ধি করে, তার পায়ের নীচে উপত্যকাটির কোনো চিহ্নমাত্র নেই। রহস্যময় এক ধূসর কুয়াশার উপর দিয়ে তার বাইক চলছে। এ অজানা পথ পৃথিবীর কখ্যপথের মতো সহজ না। বিষণ্ণতা এখানকার বাতাসে ভেষে বেড়াচ্ছে। সে যতো এগোচ্ছে বিষণ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাইক আরোহী বুঝতে পারে তার স্নায়ুগুলো কর্ম খমতা হারাচ্ছে। বিষাদ তাকে গ্রাস করছে। সে আরো প্রবলভাবে ঢুকে পরছে আজানার রাজ্যে। এখানে শান্তিপূর্ণ নীরবতা আগের তুলনায় হ্রাস। তখন যে শব্দগুলি ম্লান শোনাচ্ছিলো, সেগুলি এখন জোরালো। শব্দের তীব্রতা জানান দিচ্ছে সেগুলি আর্তনাদ। বাইক আরোহীর কাছে এখন ব্যপারটা বেশ পরিষ্কার। যে পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে সে এসে পরেছে, সেখান থেকে ফেরার আর কোনো পথ নেই। এখানে আছে শুধুই বিষণ্ণতা, শুধুই দুঃখ, শুধুই বেদনা।
অবশেষে অফুরন্ত কখ্যপথটি শেষ হয়। বাইক সমেত নীচে পরে যেতে থাকে সে। ঝুপ শব্দের সাথে পরে যায় কোনো তরলের মধ্যে। তরলটা প্রচন্ড গরম। তার সাথে আরো ওনেকেই আছে সেখানে। তারাও মানুষ। যথাযথ ভাবে বলতে গেলে, পাপি মানুষ। ঠিক তারই মতো। তারাও ঠিক তারই মতো মদ্যপ অবস্থায় ফুটপাথের উপর গাড়ি তুলে দিয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকা মানুষগুলোর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। পৃথিবীর আদালতে তাদের বিচার হয়নি। কিন্তু এই আদালত প্রত্যেকটা কর্মের হিসাব রাখে, কাউকে বঞ্চিত করেনা। কড়ায় গন্ডায় উসুল করে নেয়। সবকিছুর জন্য পুরস্কার ও তিরোস্কার করে।
এমন সময় খ্যাচ করে সে কিসের যেন খোঁচা খায়। বিশালকায় কেউ বিরাটদর্শন খুনতি দিয়ে তরলটাকে নাড়ছে। ফলে তরলে একটা ঘূর্নি সৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্নির আকার বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে তাদের সকালকে গ্রাস করে ফেলে। তারা তলিয়ে যায় সেই ঘূর্নাওমান ফুটন্ত তরলের গভীরে।

