Indrani Bhattacharyya

Abstract Children Stories Fantasy

4.5  

Indrani Bhattacharyya

Abstract Children Stories Fantasy

জীবনের খতিয়ান

জীবনের খতিয়ান

2 mins
237


জীবনে সব মুহূর্ত ধরে রাখা যায় না। লিখে রাখা যায় না জমা খরচের খাতায়। স্মৃতিও ফাঁকি দেয় কখনো, কখনো। হারিয়ে যাবার সুযোগ খোঁজে না বলা কথারা। মাঝে মাঝে সুখ অসুখের হিসেব গুলিয়ে যায় । গল্পেরা তখন টুপটাপ ঝরে পড়ে বৃষ্টির মত। বেখেয়ালে আপন মনে ভেসে আসে শব্দ। কিছু কিছু সাজানো, বইয়ের মত। কখনো কফির কাপ হাতে কাঁচের সার্শিতে চুপচাপ চোখ রেখে দেখতে থাকি সেই অঝোর শব্দের ধারাপাত, আবার কখন যেনো চেতনে অবচেতনে নিজেরাই ভিজে যাই আপাদমস্তক। ল্যাম্প পোস্টের মাথায় আটকে থাকা ছেঁড়া ঘুড়ির গায়ে, ভিজে শালিকের পালকে কিংবা ছাতার ভাঁজে দু এক পশলা বেওয়ারিশ শব্দ লেগে থাকে বৃষ্টি থামার পরেও। কে জানে কিসের আশায়!


ঠিক এই সময়েরই অপেক্ষায় থাকে শব্দসন্ধানীর দল। কলমের আগায় আলতো করে ছুঁইয়ে নিয়ে খেরোর খাতায় বন্দী করে তাদের। জমে ওঠে মনের সাথে শব্দের রংমিলান্তি খেলা। কখনো সখনো জলছবির মত খাতা জুড়ে ফুটে ওঠে ছোট ছোট রূপকথা আর কখনো হারিয়ে যায় সারা জীবনের মত।

গতকাল বিকেলে আঁকশি দিয়ে তেমনি কিছু শব্দ পেড়েছিলেন লেখক রমাপদ মুন্সী। দত্তদের বাড়ির পুকুরে কচুপাতার ঝোপে কাঁচ পোকার মতো টলমল করছিল শব্দগুলো। ঠিক সেই সময়েই ওই পথে প্রতিদিনের মত ছাত্র পড়াতে যাচ্ছিলেন রমাপদ। তখনই চোখে পড়ে শব্দবিন্দুগুলো। সাথে সাথে জোব্বা থেকে শিশি বের করে যত্ন করে শব্দগুলো ভরে রাখেন গুছিয়ে। এই শিশিটা তিনি সব সময় নিজের কাছে রাখেন। বলা তো যায় না। কখন শব্দেরা ঝরে পড়বে। তাই চোখ কান খোলা রাখতে হয় সব সময়। টাটকা শব্দ না হলে আবার ভালো গল্প লেখা যায় না কিনা!


রাতের দিকে বাড়ি ফিরেই সযত্নে বের করেন শিশিখানা। তারপর টেবিলে রাখা কূপির নিভু নিভু আলোতে তুলে ধরেন সেটি। সাথে সাথে এক মুঠো সোনালী অভ্র যেনো ছড়িয়ে পড়ে শিশির ভেতর।


শব্দগুলো ততক্ষনে একে অপরের গায়ে লুটোপুটি,ঠোকাঠুকি, মাথা ঘষাঘষি করে আত্মপ্রকাশের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। রমাপদ বাবু তাড়াতাড়ি শিশির মুখটা খুলে কলমের সোনালী নিবটা আলতো করে ছোঁয়াতেই বেশ কিছু শব্দ সুড়সুড় করে উঠে আসে কলমের ডগায়। খাতা খুলে সেগুলো একে একে সাজিয়ে রাখতে থাকেন সেখানে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু শব্দ ভেঙে গেছে অগোচরে। কিছু শব্দের আবার আকার গেছে পাল্টে। তাদের তিনি নিজের মনের মতো করে খানিক গড়ে পিঠে নেন। গল্পের খাতিরে পাল্টে দেন চরিত্রদের নাম ধাম। এই ভাবে সারা রাত ধরে চলতে থাকে কালি, কলম , মনের অদ্ভুত খেলাধুলো। শিশি ভর্তি সব শব্দ কালির হরফে লিখে রাখতে রাখতে কখন যেনো রাতের আঁধার কেটে ফিকে হতে থাকে আকাশের রং। অবশেষে কেষ্ট দার চায়ের দোকানে উনুনের আঁচ ওঠার আগেই রমাপদ বাবুর নীল ডায়রির পাতা জুড়ে জন্ম নেয় একটা ফুটফুটে মিষ্টি গল্প।


রমাপদ বাবু লেখাটা আজই জমা দিয়ে এলেন স্টোরি মিররের পত্রিকার অফিসে। সকাল বেলা রোজকার মত রমাপদ বাবুর সাথে বৈঠক খানায় চা খাবার ফাঁকে আমিও পড়ে দেখেছি সেই নতুন গল্পের খসরা । সে এক দারুণ মজার গল্প। তোমরাও পড়তে চাইলে চোখ রেখো স্টোরি মিররের পাতায় I 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract