Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Inspirational

4.0  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Inspirational

জীবন যন্ত্রণা( পঞ্চম পর্ব)

জীবন যন্ত্রণা( পঞ্চম পর্ব)

14 mins
252


নবীনে পরদিন খুব ভোরেই উঠে পড়েছিল। রতন তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলেছিল। আমরা রাত্রি দশটার আগেই শুয়ে পড়ি আর ভোরে চারটে উঠে পড়ি ,শীতে পাঁচটায়।বাবাজী বলেন এতে শরীর মন সুস্থ থাকে।আমার আগে অনেক শরীর স্বাস্থ্যের সমস্যা ছিল এই তিন চার এই আশ্রমে আসার পর থেকেই এই শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কোন সমস্যা নেই।নবীন বলল,এটা তো অভ্যাস,এই নিয়ে একটা ইংরাজী প্রবাদ আছে। আমাদের আগে মা ঠাকুরমাদের দেখতাম কোন কাগ ভোরে উঠে পড়তেন।আমিও এত সকাল না হোক ছটায় উঠে পড়ি। রতন দা এত সকালে উঠে কী করো!বাবাজী দামোদরে স্নানে যান, মেঘলা আকাশেও সূর্য না দেখা দিক ঠিক সূর্য উদয়ের সময় উনি স্নান সেড়ে অনেক ক্ষন সূর্য প্রনাম করেন। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কোন কালেই বিরতি নেই। শীতের সময় কেবল কম্বল গায়ে স্নান সেড়ে ফেরেন বাকী সময় খোলা গায়ে।গেরুয়া বসনে আশ্রমে ফেরেন।বৃষ্টির দিনে!ছাতা থাকে ,গায়ে কিন্তু ভিজে গেরুয়া বসন।তুমি কী করো!আমি আশ্রমের পুকুরে স্নান সেড়ে বাবাজীর মন্দির ধোয়া মোছা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করি,বাবাজীর পুজোর ফুল তুলে রাখি তার পর আমাদের ঘরদোর বারেন্দা পরিস্কার করি।সকালে চা খাও না!না বাবাজী আমি ত্রিফলার জল খেয়ে গরম জল খাই।তুমিও খাবে এর অনেক গুন।গতকাল এত নজর করেনি বাবাজীর পায়ে কাঠের খরম। তিনি দামোদরে স্নানের জন্য রওনা হতে দেখে নবীন বলল,আপনার সঙ্গে আমি যাব বাবাজী!বাবাজী গম্ভীর গলায় বললেন খুব ভালো কথা এসো।রতন কে বলল,নবীনকে খরম এক জোড়া দাও।


সব কিছুই অতিরিক্ত যেন রাখা থাকে।নবীন খরম পরে বেশ অস্বস্তিকর লাগছিল। বাবাজী বললেন দুচারদিন খরম পরে চলতে অসুবিধা হবে পরে ঠিক হয়ে যাবে।একটু ধীরে ধৈর্য নিয়ে নবীন বাবাজীর সাথে দামোদরে স্নান গেল। ভোরে আলো ফুটেছে, পাখির ডাক তখন শোনা যাচ্ছিল না। দুর থেকে গতকাল ভোরে বাবাজীর দামোদরের মাঝে স্নান সূর্য প্রনাম দেখেছিল আজ এক সঙ্গেই পাশাপাশি। বেশ ভালো লাগছিল।এইখানে জল নাকি কোমরের নিচে নামে না যত গ্রীষ্মের খরা হোকবালি তুলে অনেকটা গভীর এখন আর বালি তোলা নিষেধ পাশে একটা চরার মত আটাত্তারে বন্যায় এই চরা নদীর মাঝে জেগে ওঠে কিছু গৃহহীন মানুষের বসবাস ,সরকারী খাস জায়গা দীর্ঘ দিন বসবাস করায় বসবাসের লিজ স্বত্ব পেয়েছিল। অতিরিক্ত বালি তোলার কারনে এই চরার ক্ষতি হচ্ছিল বড় বন্যায় ধস নামছিল। তারা স্থানীয় পঞ্চায়েত জেলাশাসক সবাই কে জানালেও বালি মাফিয়ারা সব ম্যানেজ করছিল পরে এক ব্যক্তি হাইকোর্টটে জনস্বার্থ মামলা করেছে এখন বালি তোলার উপর ইনজাংশন জারি আছে তাই বালি মাফিয়ারা জব্দ। এখানে আর একটু ভিতরদিকে গেলে মানুষ ডুবে যাবে।বাবাজী এতটা জলে যান না।জলের মধ্যে ধস নামতে পারে কোমরের নিচে জলে স্নান করেন আর বন্যার সময় তো নদীতে নামতেই হয় না।আশ্রমের কাছ অবধি জল চলে আসে। ঐখানেই স্নান সূর্য প্রনাম সেড়ে আশ্রমে ফিরে যান।সকালে স্নান সেড়ে শরীরটা কেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন লাগছিল। সূর্য প্রনামে মনের মধ্যে একটা আনন্দ আর পরিতৃপ্ত ভাব ,ভিজে পোষাকে আশ্রমের ফেরার পথে হালকা মৃদু হাওয়া এক স্বর্গীয় সুখানুভূতি কী ভীষণ ভালো লাগছিল।নবীন বলল বাবাজী আমিও আপনার সাথে নিয়মিত স্নানে আসব।উত্তম, এতে তোলার মনে গ্লানি দুর হবে আত্মবিশ্বাস বাড়বে মন প্রফুল্ল থাকবে।আশ্রমে ফিরে নবীন পোষাক বদল করল ।মন্দিরে ধ্যান যোগ পূজা বাবাজীর নিজস্ব ব্যাপার। এরপর তিনি জল গ্রহন করেন।নবীনকে রতন পোষাক পরিচ্ছদ বদলের পর বলল তুমি কী ত্রিফলার জল গরম জল এসব খাবে! না কালকের মত ফলার খাবে?নবীন বলল,তোমরা যা করো আমি তাই করব আমিও এই আশ্রমের একজন। বাবাজী আর আমি ত্রিফলার জল খেয়ে গরম জল খাই তুমিও খাবে এর অনেক গুন।


এদিন আর নবীন ঘুমায় নেই গতকালের মত সেই দুঃস্বপ্নের সারারাত জেগে হাঁটা চোখে ঘুম জড়িয়ে আসার মত পরিস্থিতি নেই।বাবাজী তখনও মন্দিরে একজন গ্রামের মানুষ ক্ষেত মজুর এলে,রতন তাকে বাগানে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছু নির্দেশ পরামর্শ দিল। নবীন তাদের পিছু পিছু গেছিল। ঐ ক্ষেত মজুর আজ নবীনকে দেখে খানিক বিষ্ময়ে রতন কে বলে ইনাকে তো আগে আশ্রমে দেখিনি!

রতন বলল,এবার দেখবে।উনি যুবক শিক্ষিত মানুষ এমন মানুষ এই আশ্রমে যদি থাকেন তবে তো এই আশ্রমের ভবিষ্যত সুরক্ষিত থাকবে, আমিও ষাটের ধাক্কা আর বাবাজী আরও বেশী।ক্ষেত মজুর নবীনের উদ্দেশ্য বলল ছোট ঠাকুর আমি তরুণ মেটে এই গ্রামের মানুষ। এই আশ্রমেই কাজ করি।নবীন বলল,হ্যাঁ তোমার কথা রতন দা গতকাল বলেছে।তরুণ ক্ষেত বাগানে কাজে লেগেছিল। রতন বলল এবার চলো ,তুমি পারতো একটু যোগাসন করবে আমি করি আমার দেখে শিখতে পারো বেশী নয় আধ ঘণ্টা তাতেই হবে।রতনের ঘরের মেঝে শতরঞ্জি পেতে রতন যোগাসন করছিল। নবীন কিছু কিছু জানে। বহুদিন চর্চা ছিল না নতুন উদ্যোগে পদ্মাসন, সর্বাঙ্গাসন চক্রাসন মৎসাসন করে নিজের ফিটনেস বাড়াতে উদ্যোগী। জীবন টা সে নতুন করে গড়তে চায়।বিয়ের সিদ্ধান্ত আর দরিদ্র ঘরের সন্তান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করে প্রেমে হাবুডুবু আর নিজের কেরিয়ার বিষয়ে সময় না দেওয়া যত্নশীল না হওয়া মা বাবা দাদাকে অগ্রাহ্য করে বিয়ে তার ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত সে বেশ কবছর দিল। এবার একটু দ্বায়িত্ববোধ নিয়ে চলতে চায়। কাম আর সংসার নারী সে অনেক ভোগ করল, চিনল দেখল আর তাতে মোহ মুক্তি ঘটেছিল।আটটার পর থেকেই গ্রামের কিছু বালক বালিকাদের দল মন্দিরের সামনে খোলা চত্বরে বসেছিল। ওরা সবাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছাত্রী।বাবাজীর ইচ্ছাক্রমে এক একটা ক্লাসের ছাত্র ছাত্রী একদিন সপ্তাহে আসত বাবাজী সব বিষয় পড়াত বিনা পয়সায় মুলত গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে।এদিন সপ্তম শ্রেণির পালা।বাবাজী মন্দির থেকে বের হয়ে ত্রিফলার জল খেয়ে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বসলেন, নবীন কে ডেকে বললেন এদের তুমি পড়াবে, দেখো তোমার ভালো লাগে কিনা। ছাত্র ছাত্রীদের বললেন তোমাদের নতুন স্যার, অনেক অভিজ্ঞতা আছে।শহরের ভালো স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন।


দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের তার পড়ানোর এক সময় অভ্যাস ছিল, সপ্তম শ্রেণি পড়াতে তার কোন অস্বস্তির অসুবিধা হচ্ছিল না। না হলেও বারোজন ছাত্র ছাত্রী রতন সবার জন্য কলা পাতায় এক সময়ে ভিজে চিড়ে দই কলা গুড় দিয়ে গেল। ছেলেমেয়ে গুলো গরীব দেখে পোষাক পরিচ্ছদেই বোঝা যাচ্ছিল। তারা এই পড়াশোনার সাথে খেতে পেয়ে যেন বেশী তৃপ্ত।


সেদিন দশটার পর ওরা চলে গেলে বাবাজীর বললেন তুমি বেশ ভালো পড়ালে আমার এত সব অভিজ্ঞতা নেই, নলেজ হলেই তো হয় না! পড়ানোর কৌশল চাই।


নবীন বলে বাবাজীর আমি একটা গরীব বস্তির দুই ভাই বোন কে পড়াতাম। ছেলেটি তখন সেভেন মেয়েটা ক্লাস ফাইভ। আমি সব বিষয় পড়াতাম দুজনেই মাধ্যমিকে খুব ভালো ফল করেছিল। শহরের বড় বড় স্কুলের নাম হয় আমাদের কোন নাম মুল্য নেই।আমার ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যাচ করার ক্ষমতা ছিল না।কোন স্কুলের শিক্ষক নয় আমাদের পড়ানোর মূল্যায়ন হয় না।মাঝ পথে এই পেশা ছেড়েছিলাম যদিও এই পেশাই আমার মনকে আনন্দ দিতো।


তোমার মূল্যায়ন কেউ না করুক যদি মনে করো এখানে ভালো পড়াও, এ গ্রামে ইস্কুলে শিক্ষক কম আবার ভালো পড়ায় না।যোগ্যতা নেই না ফাঁকিবাজ সে বিতর্কে যাব না।এগ্রামের অনেক ছেলে মেয়েরা এই প্রাইভেট টিউশন পড়াতে পনের কুড়ি কিমি দুরে শহরে যায় অনেক কষ্ট অনেক সময় নষ্ট। আর গরীব ঘরের ছেলেমেয়েদের অবস্থা আরও করুন। তোমার যদি মেধা থাকে কাজে লাগাও। সর্বজন সুখায় সর্বজন হিতায়ও আমাদের সনাতন ধর্মের বানী।নিজের ক্ষুদ্র গন্ডিতে না থেকে সবার জন্যে ভাবো।যেটুকু তোমার ক্ষমতা সেটাই উজার করে দাও।আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।


আমার একটা বিনীত প্রস্তাব আছে বাবাজী


বলো নির্দ্বাধায় বলো।আমারও সব জ্ঞান নেই পরামর্শ দরকার। রতন খুব ভালো মানুষ কিন্তু ওর আমার প্রতি এত ওর সমীহ শ্রদ্ধা যেন আমি অভ্রান্ত! আরে বাবা একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া কেউ অভ্রান্ত নয়।


আমার প্রস্তাব যদি ছেলেমেয়েদের সকল ছটায় আসতে বলেন আর একটা ক্লাসের নয় দু তিনটে ক্লাসের কারণ সপ্তাহে একদিনে সব বিষয়ে পড়ানো এই দুঘন্টা তার মধ্যে খেতে কিছু সময় যায়।


তোমার প্রস্তাব ভালো কিন্তু দুতিনটে ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের যদি আসতে বলি এই সামান্য মন্দির চত্বরে ধরবে না। বরং দিন দুটো করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটো ক্লাসের ছেলেমেয়েদের আসতে বলো।ছটা আটটা আর আটটা দশটা।তুমি তো যোগ ধ্যান পূজা আরাধনা করছ না তোমার এই বয়সে তা করতে বলছি না বরং ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দাও। সঙ্গে নৈতিক জ্ঞান বোধ দেবার চেষ্টা করো গল্পের ছলে নানা কাহিনী থেকে।


নবীন বলল এসব ঠিক আছে আমার মনে হয় আপনার আশ্রমের যা জমি ঠিক মত এর সদ্ব্যবহার করলে আমরা গরীব অনাথ পাঁচ সাতটা ছেলে মেয়ে পালন করতে পারি।


বাবাজীর খুব হাসছিলেন। তার পর বলল তোমার প্রস্তাব খুব ভালো আমার মনেও এমন স্বপ্ন আছে কিন্তু কী জানো! অনেক আইনি ঝামেলা, যদি তোমার আশ্রমের কোন শিশুর হঠাৎই অপঘাতে মরে বা তোমার সহপাঠীদের দ্বারা আক্রান্ত হয় অনেক ঝামেলা পুলিশের নজরে এলে আর রক্ষা নেই।আমি এতসব ঝামেলায় নেই।তুমি যদি উদ্যোগ নাও পরে নেবে আগে এগ্রামের এই আশ্রমের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়তে দাও আরও কিছু মানুষের সাহায্য সহযোগিতার দরকার। তবে তোমার এই ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য একটা সাদামাঠা ঘর করতেই পারি বৃষ্টির দিনে ওরা খোলা মন্দির চত্বরে পড়তে পারে না।আমিও এতটা ভাবি না তোমার বয়স কম আমার তো আর তেমন স্বপ্ন দেখার সাহস হয় না পঁয়ষট্টি হয়ে গেল।আর কতদিন! যা কিছু করা মনের একটু প্রশান্তির জন্য।


বাবাজী আমি যদি কোন স্বপ্ন ভাবি আপনার আশীর্বাদ পাবো নিশ্চয়।


নিশ্চয়ই পাবে সাফল্য আসবেই তার মানে নেই, চেষ্টা উদ্যোগ আগে দরকার তার পর সাফল্য ব্যর্থতা।মা ফলেষুকদাচন। কাজ করবে ফলের আশা করো না।


তোমাকেই বলছি আমার পেনশন বেনিফিটের টাকায় এই আশ্রমের জমি ঘর মন্দির। এখন যা এখানে আয় হয় চলে যায়। আমার পেনশনেরর টাকার একটা অংশ স্ত্রীকে পাঠাই ওর ভরনপোষনের খরচের দ্বিগুণ কারণ যারা করছে ছেলে মেয়ে হলেও আমি তার স্বামী হিসাবে তার পরিচর্যার জন্যও ছেলেমেয়েদের খরচ দি।তার শর্তেও আমার অনেক টাকা পেনশন থেকে এ কবছর ব্যঙ্কে জমা। যদি তোমার কিছু করার ইচ্ছা থাকে একটা বড় সাদামাটা মাটির দেওয়াল আর টালীর ছাওনী হলঘর করে দি।পঞ্চাশ ষাট জন যেন ছেলেমেয়েরা বসতে পারে।তুমি দেখো যদি এখানেই থাকার পাকাপাকি মনস্থির করো পরে আরো ভাবব।


আমি নিশ্চিত বাবাজী আপনাকে দেখে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত। কিছুই জীবনে পারব না ভেবেছিলাম আত্মহত্যার ইচ্ছা হচ্ছিল তবে শাস্ত্র মতে আত্মহত্যা মহাপাপ তাই অজানার পথে চলে ছিলাম। ভেবেছিলাম না খেয়ে বা সর্পঘাতে রোগ অসুখে যদি মারা যাই কোন আফসোস নেই।তার পর ঈশ্বরের কৃপায় আপনার হঠাৎই সাক্ষাত পেলাম।


সব তার লীলা। আমরা নিমিত্ত মাত্র।


এমন গঠনমূলক আলোচনায় বাবাজী আর নবীনের মনে পরিতৃপ্তির সাথে নতুন মিশন লক্ষ্যের যেন দিশা পেয়েছিল।


তপতীর চিন্তা উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছিল। যে মানুষটা একদিন ভালোবেসে পাগল ছিল, তার মানসিক আর্থিক মন্দা দশায় এমন আঘাত করে ভীষণ অনুতপ্ত ছিল সঙ্গে চাকরী করলেও একজন বিশ্বাসী সঙ্গীর দরকার মেয়েটার দিকে তাকালে দুঃখ লাগে।কত বাবার আদর ভালোবাসা পেতো।তিন চার দিন মিষ্টির দোকান খোলা হয়নি। পরেশ দ্বায়িত্ব নিয়ে মিষ্টির দোকান চালাবে যদি দোকানের সব কিছুই তাকে লিখিত করে দেয়।


তপতী বলল এ তোর মূর্খের মত কথা,ব্যাঙ্ক লোনে এই দোকান ব্যাঙ্কের কাছে দায়বদ্ধ এখন লোনে জর্জরিত আর তোকে দোকান লেখার আমি কে! তোর জামাই বাবুর নামে লোন। সম্পদ আর ঋণের দায় দুটোই ওর।


আমি তাহলে ভুতের বেগার খাটবো কেন! অন্যের দোকানে কারিগরের কাজ করলে ঠিক বেতন পাবো।


তাই করগে, তবে পারলে তোর জামাই বাবুর মেসের ঠিকানা দিচ্ছি খোঁজ নে ওখানে আছে কী না থাকলে আমার কাছে নিয়ে আসবি। বলবি দিদি তোমাকে ডেকেছে।


আমি এসবে নেই তোদের মধ্যে কী অশান্তি রাগারাগি হয়েছে আমার কী দরকার! আমাকে দূকথা শোনাবে।দরকারে তুই ওর মেসে যা।


ছোট ভাই বেকার, পাড়ার রকে আড্ডা দেয় তার কোন সংসারে দায় নেই। রাজনীতি আর হৈচৈ মস্তানী করে মিছিল মিটিং করে দু পয়সা যা পায় মদ গিলে রাতে বাড়ি ফিরে বিনা পয়সার হোটেলে খায়।সে তো এসবের ধরা ছোয়ার বাইরে তাকে বলা আর মাটির দেওয়াল কে বলা সমান।বাবা মায়ের কোন মানসিক হেলদোল নেই বরং আপদ বিদায় হয়েছে এমনটাই হাবভাব। মা তো নবীনের নামে নানা ভাবে তপতীর কানে বিষ ঢালত। তিল কে তাল করে নবীনের নানা দোষ ত্রুটি বলত।তপতী উত্তেজিত হত।নবীনের প্রতি একটা নেতিবাচক ধারনা হয়েছিল। ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে বলে আমাদের হেনস্থা করে।নবীন তা করত না ,তাহলে তো নিজের বাড়ি আত্মীয়স্বজন মা বাবার অমতে বিয়ে করত না!


তপতীর বিয়েটাই বাড়ির বাবা মা ভাই রা মেনে নিতে পারেনি, তাদের সংসারে সব আয়ের টাকা দিক।মুখে ভালোবাসা আর সহানুভূতি পাবার নাটক করত।


তপতীর মেয়েকে যত্নের জন্য একটা আয়া রাখতে হয় এত বড় সংসার সে ভাবে তার যত্ন নিতো না।


তপতী ক্রমে বুঝতে পারছিল বাড়ির সবাই তার কাছে স্বার্থ নিলেও তার মানসিক উদ্বেগের শরিক নয়।দোষ তারই কিন্তু নবীনের বিরুদ্ধ বিষ ঢেলে ঢেলে তাদের মধ্যে দুরত্ব তৈরী,মানসিক দৈনিক অস্থিরতা তাদের দাম্পত্য জীবনে বিশেষ করে যৌন জীবনে বড় ক্ষতি করেছিল। তপতীর তাচ্ছিল্য আর অবহেলা যেমন নবীনকে হীনমন্যতায় মানসিক দুর্বল করে তেমনি যোগ্য তরুণ ডাক্তার অবিবাহিত জীবনে তপতীকে শুধুমাত্র কদিনে ফুর্তির সাথী করেছিল।তপতী নিজেকে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। যৌনতা তার জীবনের একটা বড় বিষয়।চাকরীর আগে কতদিন সে নবীন সাথে সন্ধ্যার সময় সিনেমার হলে পার্কে বা নির্জন স্থানে সম্ভোগ সহবাস অবধি করেছে তার শারীরিক চাহিদা যেমন তেমনি বেপরোয়া। নবীন তাকে ইদানিং তৃপ্ত করতে পারত না,দোষ যত না নবীনের তার চেয়েও তপতীর তীব্র বাক্যবান কটাক্ষ আর মানসিক হেনস্থার শিকার নবীন কেমন নিজের যৌনতার উচ্ছাস কুঁকড়ে থাকত।মনের সাথে যে এর গাড় সম্পর্ক তপতী নার্সের কাজ করে জানতে চাইত না। নবীন নিজেকে গুটিয়ে নিতো,আর মা বাবার তপতীর প্রতি আদর সোহাগ তপতীর কাছে দিন দিন নবীন দুরে সরে যাচ্ছিল,সংসার ছেড়ে তাই আশ্রমে নবীন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।নতুন করে জীবনের বাঁচার স্বপ্ন দেখছিল।


তপতী বুঝেছিল তার সঙ্গে কেউ নেই। নিজেই একদিন নবীনের পুরাতন শহরের মেসে গেল। অনেক বার সে গেছে।একটু ভয় সংশয় ছিল যদি এখানে নবীন থাকে! তাকে পাল্টা অপমান করতে পারে। যাইহোক তবু সে এসবের পাত্তা দেয় না। কি করবে! গায়ে হাত তুলবে না। হয়ত আবার বেশ্যা বলবে! বলুক না! সে তো ডাক্তারের সাথে আছে! মিথ্যার কিছু নয়।তাকে তপতীর দরকার সংসার করতে।তৃপ্ত করতে পারো না স্পষ্ট বলেই দেবো!এতসব চিন্তাই সার! মেসের এক ছেলে তপতীর পূর্ব পরিচিত নবীন এই মেসে এসেছে কীনা জিজ্ঞেস করতেই বলল,কী ব্যাপার ম্যাডাম! নবীন এখানে আসবে কেন! কোন গন্ডগোল মনে হচ্ছে!


নবীন আসেনি সেটাই স্পষ্ট করে বলুন , বাকী অনুমান পরে করবেন।


ছেলেটি একটূ হেসে বলল,আপনি যেন একটু রেগে যাচ্ছেন। আপনাকে তো বললাম ওর আসবে কেন! এতো সহজ কথা আসেনি।


ঘুরিয়ে কথা বলা আপনার স্বভাব! বলে আর উত্তরের অপেক্ষা না করে তপতী ফিরে এল।


কদিন পর নবীনের গ্রামের বাড়ি গেল। এবাড়ীর বৌ কিন্তু কোনদিন আসেনি।ব্রাহ্মণ পরিবারের তাই নাকি তাদের বিয়েতে ওদের অমত ছিল। এই জন্য তপতীর জেদ ছিল জীবনে নবীনের গ্রামের বাড়ি যাবে না।নবীন কে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল। কোন দিন আমাকে বাড়ি বৌ হিসাবে সম্মান দিলে আমি তোমাদের বাড়ি যাব।


আজ আর জেদ ছিল না।গ্রামের উপর দিয়েই বাস রুট,বাস থেকে নেমে গ্রামের মানুষদের জিজ্ঞেস করে করে নবীনের বাড়ির সন্ধান তপতী পেলো।


মাটির বাড়ি খড়বাঁশের ছাউনি আগেকার দিনের মাটকোটা ঘর। সদরের কপাট নাড়তেই এক বয়স্কা মহিলা বের হয়ে এসেছিল। তাকে দেখে একটু আবেগ নিয়ে বৃদ্ধা বলে, নবীনের মুখে যা শুনেছি তুমি কী মা তপতী?


তপতীর কথা বাড়িতে নবীন বলেছিল। বাড়ির মা বাবার কথা সে ভাবে বলেনি তবু গতবছর নবীনের বাবা মারা যায় নবীন বাড়িতে পারোলৌকিক কাজে গ্রামের বাড়িতে এলেও তেমন গুরুত্ব পায়নি।তাই হালচাল দেখে তপতীকে আনার সাহস পায়নি। তপতী তার বাবার বাড়িতে নিজের মত শ্বশুরের মৃত্যুর পরবর্তী পালন ক্রিয়াকর্ম করেছিল। নবীন এ বিষয়ে তাকে তার মত পালন কাজ কর্ম করতে বলে। শ্বশুর বাড়ির প্রতি তপতীর ধারনা মোটেও ভালো ছিল না।


বয়ষ্কা মহিলা বিধবা মা তপতী সম্ভাষন শুনে শাশুড়ি অনুমানে প্রনাম করে বলে


আপনি নবীনের মা নিশ্চয়।


হ্যাঁ দুর্ভাগ্য আমার এভাবে পরিচয় হল। হেসে বলে তুমি তো মা বেশ সুন্দরী শুনেছি নার্সের চাকরী করো, আর তোমার এক মেয়ে হয়েছে!ঘর দিয়ে এসো মা।


তপতীর চোখে জল এসেছিল। বলল,আপনার ছেলে তো আনল না,আমি একা নিজেই এলাম।


বেশ করেছ! তোমার শ্বশুর আগের মানুষ বড় গোঁড়া জাতপাত কারনে তোমাকে বিয়ে করলে নবীনকে এ বাড়ীতে আসতেই মানা করেছিল। দূঃখে নবীন আসেনি।বাবা মারা যাবার খবর শুনে এসেছিল। তখন বলেছিল তোমাকে পরে আনবে। ওর খবর কী তুমি একা কেন মা ও তো তোমার সঙ্গে আসতে পারত!


তপতীর বুকটা যেন ধাক্কা খেল বুঝেছিল নবীন এখানে আসেনি এখবর বৃদ্ধা মাকে কী করে বলবে! যে আজ দশ বারো দিন তার কোন খোঁজ সন্ধান নেই!বেঁচেই আছে কিনা তার জানা নেই। একটু সংযত হয়ে বলে,


আমি আজ আর বাড়িতে ঢুকব না মা।একটা অফিসের কাজে এ গ্রামে এসেছিলাম। তাই ভাবলাম একবার শ্বশুর বাড়িটা দেখে যাই, এসে তো স্বয়ং মায়ের সাক্ষাৎ পেলাম আর আমার কিছু দরকার নেই। এবার একদিন আপনার ছেলেকে নিয়ে আসব।তখন থাকব।


সে কি মা ! তাই হয় বাড়ির বৌমা তুমি,ঘরের লক্ষ্মী এভাবে কী দরজা থেকেই বিদায় নেয়!


তপতীর বুকের ভিতরটা মোচর দিচ্ছিল। বাড়িতে গেলে যদি সত্যি কথা ফাঁস হয়ে যায়! এই বৃদ্ধা মা বড় কষ্ট দুঃখ পাবেন তাই বলল ,মা আমার আজ খুব তাড়া আছে, আপনার ছেলে হয়ত এ বাড়ীতে শীঘ্রই আসবে । আর আপনার তখন আলোচনা করবেন , আমি এখানে আশ্রয় পেলে আমার পোস্টিং নিকট কোন হাসপাতালে করে নেবো। আপনাদের সঙ্গে এখানেই থাকব। আজ ভীষণ তাড়া আছে, আজ আসি।


তপতী আর দাঁড়াল না বৃদ্ধা আবার প্রনাম করে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করল।তার দুচোখ জলে ঝাপসা মনের ভিতর তোলপাড় করছিল।মনে হচ্ছিল নবীনের মা ভীষণ ভালোমানুষ, মা ছাড়া সম্ভাষন করে না। মনে একটা ক্ষীণ আশাছিল যদি নবীন তার গ্রামের বাড়ি এরপর আসে মায়ের মুখে আমার কথা শুনে নিশ্চয়ই আমার সাথে যোগাযোগ করবে। নিজের বাড়ির প্রতি তপতীর কেন আস্থা হারিয়েছিল সব স্বার্থপর তার কথা তার কন্যা নবীন কারোর কথা ওদের ভাবনায় নেই!তার মনের অশান্তি আশঙ্কা কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না!


তপতীর মন এতটাই বিভ্রান্ত আর উদ্বেগ আকাঙ্খায় পরিপূর্ণ। ডাক্তার সাথে তার কমাসে অবৈধ সম্পর্ক আর তার মনে দিচ্ছিল না।ডাক্তার বাবু তপতীর লাস্য ময়ী যৌবনের উদ্মদনায় তার একক জীবনের এক ঘেয়েমী দুর হত। এজন্য তাকে অনেক উপহার গহনা দিতো তপতীর অবশ্য গহনা উপহার নয় নবীনের অক্ষমতা মানসিক পরিবর্তন আর মায়ের কানে বিষ ঢালার কারনে নবীনের সঙ্গ ইদানিং তার ভালো লাগছিল না কেমন অসহ্য লাগছিল। তাই একজন সম্ভোগ আনন্দের সঙ্গি তিনি আবার বয়সে ছোট আর ডাক্তার! একটা চরম দুর্বলতা সঙ্গে নতুন ভাবে পরিতৃপ্তির কারনে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল


আজ বুঝেছিল মন মানুষকে কী না করতে পারে! সব কিছুই তার আজ অরুচী অনুতাপ আকাঙ্খা আর ভবিষ্যত একাত্বের ভয় গ্রাস করেছিল। ডাক্তার যে সুখের পাখি এই বোধ তার আছে।তারা এই অস্বাভাবিক আচরণ আর সম্ভোগ অনীহার কারণ জিজ্ঞেস করলে ,তপতী তাকে সব বলল।


ডাক্তার বললেন এত ঘাবড়ানোর বিষয় নয়।ও হয়ত দুরে গেছে সঙ্গে কিছু টাকা আছে ফুরুলেই চলে আসবে ।


তপতী বলে ও শুন্য হাতে গেছে যে পরিস্থিতিতে ওকে আমি বের করে দি ওর হাতে কানা কড়ি ছিল না।ভাবছি পুলিশকে জানাব।


এ ভুল করো না,উনার অসম্মান আর তুমিও পরে ঝামেলায় পড়বে।পুলিশ কাজের কাজ কিছুই করবে না ঝামেলার মাস্টার।


তাহলে পেপারে ছবি দিয়ে নিরুদ্দেশ বিজ্ঞাপন দেবো!


মোটেও না।কোথায় কি পরিস্থিতিতে আছে বিশ্বাস কী! শারীরিক মানুষিক ক্ষতি না করে এত টেনশন নিও না এনজয় করো। যা হবার হবে।তুমি স্বাধীন সক্ষম আর সময় কাটানোর জন্য কাজ আছে মেয়ে আছে।সামান্য কারনে সে যদি ভুলতে পারে,মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে পারে এত নিজেকে খেলো করো না।জীবন এনজয়ের জন্য টেনশন নেবে কেন!


তপতীর মুখে বিষন্নতা উদ্বেগ যেন কমার লক্ষ্যন নেই।


ডাক্তার বাবু বলে," নিজের জীবনটাকেই বিষময় করছ।কদিন ধরে তোমাকে টেনশনে অস্থির দেখছি। আমার আর ভালো লাগছে না।"


তপতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,


"তুমি ব্যাপারটা নিজের মত করে ভাবছ না।তোমার আর দোষ কী! আমার বাবা মা ভাই সবাই তো দেখছি উদাসীন।আমি ভীষণ বড় ভুল করে করে ফেলেছি। সংশোধন হবে কীনা জানি না।মানুষটা ভালো নিরীহ আমাকে বিশ্বাস করত। হঠাৎ হঠাৎ এত রাগ ক্রোধটাই আমার কাল "


বলতে বলতে তপতী কেমন ভাবুক আনমনা চুপচাপ দেখে ডাক্তার ভাবছিল আর একে নিয়ে ফুর্তি আমোদ হবে না। এতটা আবেগ তাড়িত! দুর ছাই মনে মনে একটূ হতাশ হয়ে তপতীর কাছ থেকে চলে গেল।


তপতী ভীষণ নিঃসঙ্গ বোধ করছিল। মেয়েটার কথা ভেবে নবীন ফিরবে না! আমি যাই দোষ করি মেয়েটা তো নিষ্পাপ!একটা ক্ষীণ আশা আবার আশঙ্কা যদি ও বেঁচেই না থাকে! আত্মহত্যা বা অন্য ভাবে।মানুষের জীবনের আর দাম কী! না হলে পনের দিনে কোন খোঁজ খবর নেই,বাড়ী মেস! আমার উপর রাগ ক্রোধ অভিমান যাইহোক, মায়ের কাছে কী যাবে না! ও কী বেঁচে আছে ! শেষ চেষ্টা নামী দামি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় বেশ কবার নিরুদ্দেশ সন্ধান কলমে বিজ্ঞাপন দিল ,নবীনের পুরাতন ছবি দিল। এত করেও তার মনে হচ্ছিল ক্ষীণ আশা হয়ত একদিন ফিরে আসবে।


তপতী আর গ্রামের কাছে হাসপাতাল পোস্টিং ভালো লাগে না।তার কলঙ্ক মানুষ জানে তারাই নবীনের কান ভারী করেছে।বেপরোয়া তপতীর আর মনোবল কাজ করছিল না।ভাবছিল ছিল শ্বশুর বাড়ির দিকে কোন হাসপাতালে বদলী নেবে।দুরে থাকবে কেউ চিনবে না।


কোয়ার্টার পেলে থাকবে না হলে মা মেয়ে ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকবে। যদি নবীনের সন্ধান পাই নিজে গিয়ে যেখানেই পাবো, ক্ষমা চেয়ে আমার সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।


 

"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy