জ্বলদর্চি ( প্রথম ভাগ )
জ্বলদর্চি ( প্রথম ভাগ )
কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল সৃজার । চোখ কচলে বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেয়াল ঘড়িটা ঢঙ ঢঙ করে জানিয়ে দিল সকাল ন'টা।
আজ বুঝি আর অফিস যাওয়া হল না। রেডি হয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে ন'টা। বাস স্ট্যাণ্ডে এসে দেখে এসি পাঁচ জাস্ট বেরিয়ে গেছে। পরের বাস আসতে আরও পনের মিনিট। অফিস পৌঁছতে সওয়া এগারোটার কম নয় । বায়োমেট্রিক এটেণ্ডেন্স পরিষ্কার জানিয়ে দেবে লেক কামার।
একবার তার মনে হল একটা ক্যাজুয়াল লিভ নেবে। সব ঝামেলা খতম । কিন্তু তারও উপায় নেই। আজই একটা মিটিং ফিক্সড আছে। ক্লায়েন্ট ভিজিট আছে অফিসে । সেক্রেটারিকে ছেড়ে অনামুখোটা নড়বে না। অতএব পরের বাসেই যেতে হল।
অফিসে পৌঁছে অতুলের মুখোমুখি হতেই অতুলদা বললেন - যাও, আজ তোমার অনামুখো খেপেছে। দেখ যদি ঠাণ্ডা করতে পারো !
চুটকি বাজিয়ে মস্ত একটা হাই তুলে কিশোর ভার্মা ডাকলেন - মিস সৃজা !
- ইয়েস স্যার । সৃজা বলল - সরি ফর দ্য লেট।
- ইটস ওকে। লেটস বি রেডি ফর দ্য মিটিং।
সৃজা বলল - স্যার, আজ মিটিং ক্যান্সেল করে দিলে হোতো না ?
- হোয়াট ? আর ইউ ক্রেজি , সৃজা ? ক্লায়েন্ট মিটিং ক্যান্সেল করে দেব ? প্রোজেক্টটা আর থাকবে ? অল আর ওয়েটিং ফর দিস প্রোজেক্ট।
- মাঝে মাঝে দু'একটা প্রোজেক্ট ছেড়ে দিতে হয় কিশোর !
চেয়ারে বসা কিশোর ভার্মার গলা জড়িয়ে সৃজা বলল - আজ তোমার কি কথা ছিল ?
- কি ?
- আজ তুমি আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের পেপার্সে সাইন করতে এডভোকেটের বাড়ি যাবে বলেছিলে !
- এ্যাই ! দাঁড়াও, দাঁড়াও ! আমি কখন বলেছি আজ সাইন করব ?
- ওহ্ ভুলে গেছ দেখছি ! কাল রাতে আমার সঙ্গে এক বিছানায় থেকে ---
আরও পরিষ্কার করে বলব কি ?
- চুপ চুপ। দেয়ালেরও কান আছে। তুমি তো দেখছি এক্কেবারে নাক কান কাটা মেয়ে !
- ওওও ! তাই নাকি ? আমি শূর্পনখা ? তাহলে তুমি কি ভ্রাতৃভক্ত লক্ষ্মণ ? কাল রাতে ছিলে না আমার সঙ্গে ?
- আ: সৃজা ! করছ কি ? অফিসের কারও কানে গেলে ঢি ঢি পড়ে যাবে - তখন ?
- এত ভয় কেন তোমার ? বিয়ে তো করছই। তা'হলে ?
- এখন এ সব ছাড়ো। আগে ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করি , তারপর ভাবা যাবে!
সৃজা আহত হয়। গলা ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে যায়। চোখ তখন তার বহ্নিমান ।
- তা মানে ? তুমি আমাকে ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টির জন্য বিয়ের কথা বলেছিলে ? তাও আবার দু'বছরের কন্ট্রাক্টে ?
- আহ্ সৃজা রেগে যাও কেন ? এই তো সুযোগ! কয়েক লক্ষ টাকা হাতাবে। তোমার জীবনটাই পাল্টে যাবে ।
সৃজা ভালো করে চেনে কিশোরকে। একবার যদি কোন কথা বলে দিয়েছে; স্বয়ং ঈশ্বর এলেও তার নড়চড় হবে না । সে সুযোগটা গ্রহন করে। বেশ বুঝতে পারছে কিশোর তার সাথে চালাকি করছে।
তাই ঠিক করল সে মিটিং এ যাবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে রাতও কাটাবে।
বলল - ওকে ! ঠিক আছে। আমি যাব। কিন্তু আমাকে দু'ঘন্টা সময় দিতে হবে।
- দ্যাটস গুড। দু'ঘন্টা কেন ; তোমাকে চার ঘন্টা সময় দিলাম। কিন্তু কি করবে এই সময় নিয়ে ?
- বা রে ! ভালো মত সেজেগুজে আসতে হবে না ?
- না সাজলেই তোমাকে খুব সুন্দর দেখায়। সেজে কি করবে ?
- সে তো তোমার রুচিতে। ক্লায়েন্টের অভিরুচি তোমার মত নাও হতে পারে। তাই ঠিক করেছি অভিনব রূপে তোমার ক্লায়েন্টের সামনে হাজির হব। যাতে প্রোজেক্টটা তুমি ছাড়া অন্য কেউ না পায় ।
কিশোর ভার্মা আপ্লুত হয়ে বলল - কথা দিলায, টুমরো উইদিন ফার্স্ট আওয়ার উই উইল বি এনগেজড আওয়ারসেলভস ইন কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ।
হাউএভার ইট মে বি অ্যাজ ফাস্ট অ্যাজ দ্য প্রোজেক্ট ইজ এচিভড।
সৃজা তখনকার মত চেম্বার থেকে বেরিয়ে অতুলদাকে বলল - এবার যার খুশি সাহেবের সাথে দেখা করুন। আর কিচ্ছুটি হবে না।
সৃজা চলে গেল কনফারেন্স রুমে। নিজেকে অপরূপা সাজে সজ্জিত করল। রুমের সি সি টিভির সংযোগ কেটে দিয়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহের সিসি ক্যামেরা দু'তিনটে লাগিয়ে দিল ।
কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যে ছ'টায় মিটিং শুরু হল। প্রোজেক্ট ফাইলে সই হল। এবার আসল খেলায় মাতল সৃজা। মক্কেলের মুখে মুখ রেখে চুমু খেল। তারপর একসময় মক্কেলকে ম্যাসমেরাইজডের মত নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। মৌজমস্তি করল। আর ভোরবেলায় সিসিটিভি খুলে নিয়ে বাড়ি গেল।
পরের দিন অফিসে এসে দেখে কিশোর ভার্মা চেম্বারে নেই । মোবাইলে ফোন করে জানল সে এখন আর চিফ জি এম নয়। এখন সে সি এম ডি। তার সঙ্গে কথা বলতে হলে আগে সিজিএমের পারমিশন নিতে হবে।
সৃজা এর জন্য তৈরি হয়েই ছিল । অর্থাৎ সে সব কিছু জানত। কোন চাল দিলে ঘোড়াটা না গজটা জবাই হবে। তাই কিশোরের কথায় আঘাত না পেয়ে প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি হতে লাগল।