Sucharita Das

Abstract Romance

2  

Sucharita Das

Abstract Romance

ইতির মধুচন্দ্রিমা

ইতির মধুচন্দ্রিমা

3 mins
490


প্রিয় ডায়েরি,


আমার আজকের ভাবনায় আছে পাশের বাড়ির ইতি। বেচারির এই মাস দেড়েক আগেই বিয়ে হয়েছে। জানিনা এই লক ডাউনের স্থিতিতে এটাও অনেক সদ্য বিবাহিতা দেরই সমস্যা কি না। তাও একটু হলেও খারাপ লেগেছে আমার ইতির এই সমস্যায়। জানিনা আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন কিনা।




ইস কতকিছু ভেবে রেখেছিল ইতি। হানিমুনে গিয়ে এই ড্রেস পড়বে,ওই শাড়ি পড়বে, একটু অন্য ধরনের সাজগোজ করবে, সব ভাবনায় জল ঢেলে দিলো এই করোনা ভাইরাস। সদ্য বিবাহিতা ইতি,ফাল্গুনেই তো বিয়ে হলো ওর। তারপর সিঙ্গাপুরে হানিমুনের এই ড্রিম ট্যুর টা ,ইতির দাদা ই প্ল্যান করেছিলো সব। ওদের বিয়েতে গিফ্ট করেছিল ইতিকে এই হানিমুন প্যাকেজ। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটালো এই ছোট্ট একটা অনুজীব। সত্যি এর থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেবার আছে আমাদের। যাইহোক আপাতত ইতির মুড ভীষণভাবে অফ হয়ে আছে এই ঘরবন্দী হয়ে। রণ মানে ওর হাজব্যান্ড অবশ্য ওকে বোঝানোর বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু ইতি কোনো কিছুতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। মা কে ফোন করেছিল ও, ওর মা বলেছে,"পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো ইতি, পাগল হয়ে গেছো নাকি? সারা দুনিয়া যেখানে তোলপাড় , সেখানে তুমি পড়ে আছো নিজের হানিমুন ক্যান্সেল হয়ে গেছে, তাই নিয়ে। আশ্চর্য মানসিকতা তোমার।" শাশুড়ি মা অবশ্য এতটা কড়া ভাষায় বলছেন না ওকে। তিনি বলছেন,"যাবে মা, যাবে তো, কিন্তু মাস কয়েক পর। সবকিছু একটু স্বাভাবিক হোক, তারপর যাবে ।" বেচারি ইতি এটাই তো কাউকে বোঝাতে পারছে না যে, মাস কয়েক পর এই সময়টা আর কখনও ফিরে আসবে না ওদের জীবনে। আর ঠিক সেই কারণেই ওর মনটা খারাপ হয়ে আছে। যেতে যে পারবেনা ওরা কোনো পরিস্থিতিতে ই , সেটা কি ইতি নিজেও বুঝতে পারছে না।যাইহোক মায়ের বকাঝকায় ইতি আরো বেশি করে চটে আছে আজ। সকাল সকাল মাকে ফোন করে বলতে গিয়েছিল ও নিজের দুঃখের কথা। কিন্তু মা উল্টে খানকয়েক কথা শুনিয়ে দিলো ওকেই। এমনিতেই চতুর্দিকে করোনা আক্রান্তের খবর শুনে শুনে ইতির মনে হচ্ছিল ,ও নিজেই অর্ধেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তার ওপর এই ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ এ ভুলভাল খবরে লোকজন‌ আরও বিভ্রান্ত করছে সবাইকে। মন তো খারাপ সবার ই।তার মধ্যে মা আবার শুরু করলো।"ধূর কিছু ভালো না আর "। নিজের ঘরে গিয়ে সোজা বিছানায় বসে পড়লো ও।আর ফোনটাকে রেখে দিলো দূরে।




রণ কিন্তু বুঝতে পারছে ইতির বর্তমান মানসিকতা। কারণ ওদের দুজনের ই অবস্থা তো এক ই। রণ নিজেও তো কতকিছু ভেবে রেখেছিল ওদের এই সুন্দর সময়টাকে নিয়ে। বিয়ের পরের এই মুহূর্ত টা তো আর ফিরে আসবে না ওদের জীবনে। আপাতত রণ ইতির গোমড়া মুখ দেখে বুঝে গেছে, সকালে মায়ের কাছ থেকে বকা খেয়েছে, তাই এই অবস্থা । রণ ওর মুড ঠিক করার জন্য ভাবতে লাগলো নতুন কোনো পন্থা। ঠিক সেই মুহূর্তে এই ঘরে প্রবেশ করলো একজন। সে এ বাড়ির ই সদস্য একজন। কিন্তু ইতির সঙ্গে তার এখনও পর্যন্ত শুধু মাত্র প্রাথমিক পরিচয় পর্ব টাই হয়েছে আর কি। পুরোপুরি পরিচয় হয়নি। এমনিতে সে ভীষণ ভদ্র। কখনও কাউকে কামড়ায় না সে। নাম তার স্নোয়ি। নরম তুলতুলে মিষ্টি একটা কুকুর ছানা।সেও খুব বেশিদিন হলো এ বাড়িতে আসেনি। সে ইতিকে দেখে কি বুঝলো কে জানে, ইতির পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করতে শুরু করলো। যেন কতকিছু বলতে চাইছে সে ইতিকে। ইতি নিজের কোলে তুলে নিলো ওটাকে। তারপর দুজনের কতো কথা। যেন একে অপরকে কতো কিছু বোঝাতে চাইছে । রণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। ওদের এই সুন্দর বন্ধুত্বের মুহূর্ত টাকে উপভোগ করছিল ও।





পরদিন থেকে ইতি তার এই নতুন বন্ধুটিকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আর স্নোয়ি ও ইতির আদর বেশ উপভোগ ই করছিল। কখনও কখনও আমাদের মন খারাপের দিনে, স্নোয়ি র মতো বিশ্বস্ত সঙ্গী অনেকাংশে ই আমাদের মনখারাপ ঠিক করে দেয়। স্নোয়ি কে পেয়ে আপাতত ইতি তার মধুচন্দ্রিমার দুঃখ ভুলেছে কিছুটা। কিন্তু রণের তো দুঃখ হয়ে গেছে ‌। কারণ তার অনেকটা সময় ওই স্নোয়ি টা নিয়ে নিচ্ছে যে। 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract