STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational Thriller

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational Thriller

হিসেব না মেলা দিনগুলো

হিসেব না মেলা দিনগুলো

5 mins
371

মাসিমা খাবার দিতে দিতে বললেন " নদীর ধারে গিয়ে বনভোজন করতে না গেলেই কি নয় তোদের? আমি জানি তোর ঠিক লাট্টু বাবুর বাড়িতে ঢুকতে যাবি। আমার কথা শোন তোরা এসব নিয়ে মজা করিসনা। আমার কথা শোন। বনভোজন কর কিন্তু লাট্টু বাবুর মহলে তোর যাবি না।"

মাসিমা ভয় হওয়াটা স্বাভাবিক জমিদার লাট্টু বাবু এ মহল গড়েছিলেন তার রক্ষিতা চম্মার জন্য। লাট্টু বাবু নিঃসন্তান ছিলেন। কিন্তু একদিন শোনা গেল চম্মা মা হতে চলেছে। সেই খবর পেয়ে লাট্টু বাবু স্ত্রী কমলা দেবী তার ভাইএর সাথে ষড়যন্ত্র করে চম্মাকে পুড়িয়ে মারা ঐ মহলে । তখন থেকেই নানা ভৌতিক ঘটনা ঘটে থাকে এই অঞ্চলে। এক ইংরেজ সাহেব ও মহল কিনে থাকতে এসেছিলেন কিন্তু সাহেব সহ তার গোটা পরিবার নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর এক অধ্যাপক এখানে থাকতে এসে নিখোঁজ হয়ে যায়। আসেপাসের বাড়ি ঘর তেমন নেই। কিছু কুমার বাস করতে নদীর ধারে তারাও কোথায় হারিয়ে গেলো। এখনো তিন যুবকের দল ওখানে গিয়ে কিন্ত কেউ ফেরেনি। এখন ওখানে কেউ যায় না।

কিন্তু আমার বন্ধু সতিশ প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনে জন্য এসেছে এখানে ও স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে অনুমতি নিয়েছে ঐ মহলে নদীর ওপারে জায়গায় বনভোজন করবে এবং দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করবে ওখানে কি আছে। ও কিছু যন্ত্র পাতি দেখিয়েছে যা দিয়ে এই ভৌতিক ঘটনা গুলোর ব্যাখ্যা পাবে। আসলে অনেকের ধারণা এই নদীর জলে বালির সাথে সোনার কনা পাওয়া যায়। আর এই সোনার কনা গুলো দখল করার জন্য চোরাকারবারিরা এসব গল্প ফেঁদেছে। এবং ওরাই ওখানে কেউ গেলে তাদের গায়েব করে দেয়। একটা কিছু হিসেবে গড়মিল আছে। কারণ চম্মা প্রতিশোধ নিলে জমিদার লাট্টুর স্ত্রীকে হত্যা করবেন , অন্যদের কেন হত্যা করবে?? কারণ চম্মা জীবিত অবস্থায় সবাইকে উপকার করতো। সে কারো ক্ষতি করবে কেন?? অথচ এতো গুলো মানুষ হারিয়ে গেলো কি করে তার হিসাব মিলছে না।

আমি ভুতের বলো দেবতার বলো কারো অস্থিত্বের কথা বিশ্বাস করি না। তবুও মাসিমা আমার পকেট একটা গীতা আর হাতে লাল একটা সুতো বেঁধে দিলো। আর বললো যাইহোক হয়ে যায় ওটা যেনো না খুলি ও সুতো নাকি আমাকে ওখানকার অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।

সতিশ একবারে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে দেখলাম।EMF অর্থাৎ Electro magnetic Field বা "তাড়িতচুম্বক ক্ষেত্র " নির্ণয় করাই হল এই যন্ত্র নিয়ে এসেছে । এটা দিয়ে ভুতের উপস্থিত জানা যাবে।ইলেক্ট্রনিক ভয়েস ফেনোমেনা (EVP) :যন্ত্রটিতে সংযুক্ত একটি শক্তিশালী মাইক্রোফোন আশেপাশের শব্দ মানে ভুতের কথাবার্তা রেকর্ড করতে পারে।ইনফ্রারেড টেম্পারেচার ডিটেকটর,Geiger counter: একটি উষ্ণতা অন্যটি রেডিয়েশনের ভিন্নতা পরিমাপ করে। ডিজিটাল ইনফ্রারেড ক্যামেরা, অতিবেগুনি রশ্মির দেওয়া টর্চ আরো কতকিছু।বাপি আপু আমাদের সঙ্গী হলেও ওরা ঠিক দুপুর হতেই বাহাদুরকে নিয়ে পালিয়ে এলো । সতিশ সহকারী সাথে আমি দাবা খেলতে হিসেবে রাখিনি কখন রাত হয়ে গেলো। আমরা তাঁবু তৈরি করে নিয়েছিলাম আগেই কারণ সবাই বলেছিলো যা করার নদীর এপার থেকেই করতে হবে। খিদে পেয়েছে তাই খাবার খেতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম সতিশ নেই ওর তাঁবুতে। ভয়ে আতকে উঠলাম তখন ফোন বেজে উঠলো। সতীশের ফোন "খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি মহলে আয় একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাবি। ভুত তুঁত এখানে কিছুই নেই।"

সতীশের সহকারী তাপস কিন্তু বেশ ভয় পেয়ে গেলো। ও বললো " সকাল থেকেই এখানে কোনো ফোন নেটওয়ার্ক ছিলো না। এখন এ কল কি ভাবে এলো‌"

কথা আমাকে ভাবালো। জোৎস্না রাত। বারোটা বাজে আমি যতোদূর জানি ভুতেরা একটিভ হয় রাত বারোটা থেকে ভোর তিনটে পর্যন্ত। আমি তাপসকে বললাম " ঠিক আছে আমরা সতীশ এর সন্ধানে ওপারে যাবো কিন্তু সেটা ভোর সাড়ে তিনটের পর।"

আরো একটু দেরি করে ভোর চারটা নাগাদ আমরা নদী পার হলাম। হাঁটু পর্যন্ত জন নেই এখানে। খুব সহজেই হেঁটে পার হয়ে প্রথমেই যেটা অবাক হলাম মহলটাতে কিন্তু প্রাচীনত্ব কোন ছাপ নেই যেনো সদ্য রঙ করা হয়েছে এমন লাগছে। ভুতুড়ে কোন কিছুই নেই।

সতিশ তাপস নিয়ে ওর যন্ত্র পাতি গুলো গোছাতে সহযোগিতা করতে বললো। এমন সময় আমার চোখ পড়ল টেবিলটার ওপর একটা বইএর ওপর। বই উল্লটে আমি পড়তে শুরু করলাম। লাট্টু বাবুর সাথে চম্মার মন্দিরে বিয়ে করার গল্পটা লেখা আছে। হঠাৎ দেখলাম আমার হাতে একটা টান অনুভব করলাম। একি শ্রাবন্তী কোথা থেকে এলো? আর আমি কিভাবে করুনাময়ী মন্দির চাতালে চলে এলাম। আর শ্রাবন্তী সাথে আমার কুড়ি বছর আগে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে আমার চেহারাটাও পাল্টে গেলো। আমার গালের কাঁচা পাকা দাড়িটা উধাও। ভুঁড়ি টাও মিলিয়ে গেল শরীরে তবে পরনের কাপড়টা এক আছে। তবে জামাটাও রোগা পাতলা হয়ে গেলো। মোবাইলে চেক করে দেখলাম সালটা ২০০২ হয়ে গেছে? অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে। আজ ২০২২ এর ৮ ই অক্টোবর। 

শ্রাবন্তী খুব খুশি। মন্দিরে পুরোহিত আমাদের বিয়ের মন্ত্র পড়ছে। হঠাৎ করে আমার হাতের লাল সুতোটা দেখে উনি বললেন " ওটা খুলে ফেলো"

বিয়ের সাথে লাল সুতো খোলার সম্পর্ক খুঁজে পেলাম না। তবু আবেগ বসে আমি হাত এগিয়ে দিলাম বামুন ঠাকুরের দিকে। হঠাৎ একটা সাদা ধোঁয়া পরিনত হলো ঠাকুর মশাই। শ্রাবন্তীও মিলিয়ে গেলো হাওয়ায়। আমি আবার আবিষ্কার করলাম নিজেকে মহলের পড়ার টেবিলে।

তাড়াতাড়ি বাকি গল্পটা পড়ার চেষ্টা করলাম। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল অন্য কাহিনী লাট্টু জমিদার চম্মার সন্তানকে কেড়ে নিয়ে । চম্মাকে মহল বন্দি করে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার ঘোরটা কেটে গেলো একি আমার ভাই ছোট হয়ে গেছে। আমি ছোট হয়ে গেছি। ভাই বলেছে " দাদা চল না একটু মাংস কসা খাবো। আমি এক চাইলে দেবে না মা তুই চাইলে দেবে। দুই জনে মিলে খাবো।" রান্না ঘরে যেতে মা বললো " ঠাকুরের লাল সুতোটা খোল তারপর আমিষ খাবি।" আমি আবার মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম " তুমি খুলে দাও।"

আগের বারের মতো আবার ঘটনার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেলো। আমি ফিরে এলাম লাট্টু বাবুর বসার ঘরে।

হঠাৎ দেখি একটা আয়না ভিতর থেকে সতীশ তাপসকে টানছে । তাপস চিৎকার করে বলছে" মানব বাবু আপানার পকেটে থাকে গীতাটা বেড়ে করে আমাকে দিন নয়তো আমি এই আয়নায় ঢুকে গিয়ে হারিয়ে যাবো। ".

কিন্তু তাপস কিভাবে জানবে আমার পকেটে গীতা আছে! আমাকে মাসি বলেছিলো" বিপদে পরবি তখন গীতা পড়বি"। আমি সেটাই করলাম। এবং মহলে থেকে বাড়িয়ে আসার চেষ্টা করলাম। একটা কোন শক্তি আমাকে আটকোণোর চেষ্টা করছে। নদীর এপারে এসে আমার জান ছিলো না। আপু বাপি, বাহাদুর আর স্থানীয় মন্দিরে একপুরুত ঠাকুর আমাকে জ্ঞান শুন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। আমি জ্বরে শুধু ভুগি নি। আমাকে কিছুদিন মানসিক চিকিৎসা করতে হয়েছিল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract