হিপোক্রিস্ট
হিপোক্রিস্ট
হিপোক্রিস্ট
অল্পতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি ?
মুরকির মোয়া চায় , চাই ভাজা ভেটকি …
কিশলয় বইয়ে কবিতাটি পড়েছিলাম পাঠ্য সিলেবাসে থাকার দরুন । কবিতাটি তখন মজার ছলেই নিয়েছিলাম । এখন বুঝি আমাদের সমাজে এই দামোদর শেঠের মতো মানুষের কোন অভাব নেই । প্রতি দশটা মানুষে একটি করে দামোদর শেঠ থাকাটা খুব কমন বিষয় । এরকম একজনকে নিয়েই আজকের কাহিনী বা রম্যরচনা ।
কাহিনীর প্রয়োজনে তার নাম ধরে নিলাম এক্স । তো সেই এক্সের মধ্যে দামোদর শেঠ কিভাবে আমে দুধে মিশে আছে আমি আজ জানাব । ধরুন এক্স নামক মহিলাটির জন্ম অজ পাড়া গ্রামে । সেটা কোন সমস্যার কথা নয় । গ্রাম ও শহর কোনটাই কারো স্ট্যাটাস সিম্বল হতে পারে না । তো এক্সের বিয়ে হলো শহরে । পাত্রের বাড়ি শহরের কেন্দ্রতে । আমরাও থাকি একই শহরে কিন্তু টাউন্সিপ এলাকায়। আমার মধ্যবিত্ত সংসারে একটা হ্যাপেনিং জিনিস যদি আছে তো সেটা হলো দুম দারাক্কা কোন শখ পূর্ন করে ফেলা । এই ধরুন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার চেষ্টা অনেকটা বলা যায় । একটা পুরোনো এম্বাসেটর আছে জানেন তো দাদা একেবারে জলের দর নেবেন ?
এই একটা সোফা আছে একেবারে রাজকীয় জিনিস মাইরি , কিনবেন ?;
হয়ত আমাদের বাড়িতে স্থানাভাবের কারণে একটা সোফা রাখার কথাই আসে না । হয়ত সাইকেলে চেপে বাজার করা লোকটার চার চাকা চালাবার কথাই নয় তবুও ওই যে বললাম দুধের স্বাদ ঘোলে .. তো আমরা না না করেও কিনেই ফেলি সেইসব জিনিসপত্র । অনেকসময় সেগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় । আবার কখনো কখনো সেগুলো একান্তই অপ্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে বাড়ির এক কোনে ঠাঁই পায় । তবুও আমরা শখ সাধ্যের মধ্যে পূরণ করার চেষ্টা করি। তো যার কথা বলছিলাম , মানে কেন্দ্রীয় চরিত্রটি । তিনি থাকেন মোটামুটি একটা ভালো জায়গায় । বাড়িটি অতি নিম্নমানের এলাকার তুলনায় তবুও ওই যে পশ এরিয়া । তো এক্স , ওনার বাড়িতে না আছে কোন অতি মূল্যবান সামগ্রী , নিদানপক্ষে একটা দুচাকা গাড়ি । তবে এক্স মনে প্রানে বিশ্বাস করেন যে তার যদি গাড়ি কিনতেই হয় তো সেটা হওয়া উচিত রয়েল এনফিল্ড , অডি , বি এম ডাব্লু । আমার আই টেনকে দেখলেই এক্স কটাক্ষ করে যে আমার কি চক্ষু লজ্জা নেই যে এই সস্তার গাড়িটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। পশ এরিয়াতে বাড়ি হবার কারণে এলাকা স্বাভাবিক গাছপালাহীন । তো গরম হওয়া স্বাভাবিক।তো এক্সকে যেই বলা হলো যে একটা যদি একটন এসি কেনা যায় তো ভালো হয়। আমাদের এক্স বুঝিয়ে দিল যে তাদের এলাকার লোকেরা নাকি পাঁচ টন এসি ছাড়া কিনতে পারেনা। আমাদের একটি ডাইকিন কোম্পানির এক টন এসি আছে । আর যন্ত্রটি এতটাই ঠান্ডা যে বেশিক্ষন তাকে জাগ্রত রাখার সাধ্য আমার বাপ ঠাকুর্দার নেই । তাই সত্যি বুঝতে পারি না পাঁচ টন ! মানে কি হিসেবে কথাটা বলে ।
মোদ্দা কথা হলো এই মারি তো ছক্কা আর লুটি তো মক্কা করতে গিয়ে এক্স নামক ম্যাডাম ঘোল খেয়ে বসে আছেন। যেখানেই যেতে হোক ভরসা আটো বা টোটো । গরমে অবস্থা গলদঘর্ম । বেড়াতে যাব তো সুইজারল্যান্ড করে দেশের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও ইহজীবনে যাওয়া হলো না । আমাদের তো দিঘা বা বকখালি গিয়েও খুশি ধরে না । এবার বলবেন মানুষ কি অটো চড়ে না ? মানুষ কি ফ্যানের হওয়ায় ঘুমাতে পারে না ?
কথা সেটা নয় মশাই । কথা হলো সাধ্য অনুযায়ী চলা । মানে যতটা চাদর ততটাই পা ছড়িও । মানুষকে অনর্থক ছোট করা , ব্যঙ্গ করা তার ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়ে । এদিকে তুমি তো সাধ্যের বাইরে গিয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে , সামান্য প্রয়োজনটুকুও পূরণ করো না । এই আক্র দরের বাজার তাতে যতটা সম্ভব ততটা নিয়েই বাঁচতে হবে না হলেই মুশকিল । নিজের হাই স্ট্যাটাস দেখাতে গিয়ে লোকের রক্ত জল করা টাকায় কেনা শখকে পদদলিত করা বা পাতি কথায় এই হিপোক্রিসির কোন স্থান নেই।