Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Gopa Ghosh

Tragedy

5.0  

Gopa Ghosh

Tragedy

গুরুদেব

গুরুদেব

6 mins
1.0K


রমা তিয়া কে স্কুলে ঢুকিয়ে সোজা চলে এলো মলের সামনে কারণ বাচ্চাদের অন্য মায়েরা সব ওখানেই থাকে ছুটি পর্যন্ত। এসেই জিজ্ঞেস করলো

"কাল যে নীল শাড়ি পরা ভদ্রমহিলা আমার সাথে কথা বলছিলেন ওনাকে দেখেছিস কেউ?"

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে

"হ্যাঁ ওই তো, ডাব ওলার কাছে"

রমা দেখে এগিয়ে যায়। রমা পিছন ফিরতেই বাসন্তী বলে ওঠে

"আবার কি নতুন নাটক শুরু হলো?"

ভারতী একটু মুচকি হেসে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল, আবার সবাই আগের গল্পে মশগুল হয়ে গেল।

আসলে রমার শাশুড়ির একটা কথা রমার রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে । রমার তিন জা থাকলেও সবাই আলাদা, আর শাশুড়ি মা খুব বড় অঙ্কের পেনশন পান বলে, সব ছেলে বউ তাকে কাছে রাখতে চায় কিন্তু রমার শাশুড়ি অহল্যা কারো কাছে খুব বেশিদিন থাকেন না । যখন যেখানে থাকেন সেই মাসের পেনশনের টাকাটা বৌমার হাতেই তুলে দেন। এখন আছেন রমার কাছে। আর কালকে শাশুড়ি মা বলেই ফেললেন

"এবার আমার বয়েস হচ্ছে রমা, আমার একটা ইচ্ছার কথা তোকে আজ বলছি, যদি তুই আমাকে একটা নাতির মুখ দেখাতে পারিস তাহলে আমি তোর কাছেই থাকব"

রমা জানে শাশুড়ি মায়ের একটা নাতির মুখ দেখার খুব ইচ্ছা কিন্তু সুকুমার কিছুতেই রাজি নয় বলে

"এই যুগে একটা বাচ্চা মানুষ করতেই হিমশিম খাচ্ছি, তুমি আর এসব কথা বলে আমার মাথাটা খারাপ কোরো না তো। আর তুমি চাইছো ছেলে হোক কিন্তু যদি আবার মেয়ে হয় তখন কি হবে?"

কথাটা সত্যি । সুকুমারের যা আয় তাতে সংসারটা যাহোক করে চলে যায়। কিন্তু শাশুড়ির পেনশনের টাকাটা থাকলে ওদের সংসারটা আরো একটু ভালোভাবে চলতে পারে। সুকুমার কে এইসব কথা বললেই ওর সাথে তর্ক লেগে যাবে । শাশুড়ি মা রমাকে দৈব ওষুধের কথা বলেছিল। বলেছিল,

"তুই কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখিস কোন দৈব ওষুধের সন্ধান পাস কিনা কারণ আমি জানি দৈব ওষুধ মনের ইচ্ছা পূরণ হতে পারে"

রমা এই কথাটা শুধু জয়ন্তীকে বলেছিল। সেই সময় পাশে ওই নীল শাড়ি পরা ভদ্র মহিলা বসেছিল , ওর মেয়ে এই বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাই ওর সাথে আগে থেকে আলাপ ছিল না। তখন আর কোন কথা হয়নি কিন্তু ছুটির পর মেয়ে কে নিয়ে স্কুল থেকে বেরোনোর সময় ওই নীল শাড়ি পরা ভদ্রমহিলা ওকে ডেকে একান্তে কিছু কথা বলেছিল

"আপনি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব?"

রমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মহিলার দিকে তাকালে উনি বলে ওঠেন

"আমি আগের দিন আপনার কথা শুনেছি, আপনি যদি সময় করতে পারেন আমি একটি দৈব ওষুধের কথা বলতে পারি"

রমা খুব খুশি হয়ে মহিলাকে বলেন

"হ্যাঁ সময় ঠিক করে নেব, কাল সকালে তিয়াকে স্কুলে দিয়ে আপনার সাথে দেখা করব তখন শুনে নেব আজ একটু তাড়া আছে"

পরের দিন তাই স্কুলে তিয়াকে দিয়েই উনি ওই মহিলার খোঁজ করছিল। সেদিন জানল মহিলাটির নাম পম্পা। পম্পা ওকে এক গুরুদেবের কাছে নিয়ে যাবে বলল কিন্তু রমা সুকুমার কে না জানিয়ে যাওয়াটা ঠিক মনে করল না। বাড়ি ফিরে শ্বাশুড়িকে বললো পম্পার কথা। শ্বাশুড়ি খুব খুশি হয়ে বলল

"হ্যাঁ তুই যা আর সুকুমার এসব বিশ্বাস করে না তাই ওকে এখনই কিছু বলার প্রয়োজন নেই"

রমা চিন্তা করল শাশুড়ি মা এটা একদম ঠিক কথাই বলেছেন কারণ সুকুমারকে বললে ব্যাপারটা কেঁচে যেতে পারে।

সেদিন তিয়াকে আর স্কুলে পাঠালো না, শাশুড়ি মায়ের কাছে রেখে রমা পম্পার কথামতো বারাসাত স্টেশনে গিয়ে হাজির হল। দেখল আগে থেকেই পম্পা ওখানে দাঁড়িয়ে সঙ্গে আর একজন মহিলা ও আছেন। ওরা একটা টোটো করে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে নামল । রমার মনে হল প্রায় এক কিলোমিটারের একটু বেশি দূরত্ব বারাসাত স্টেশন থেকে। একজন গেরুয়া কাপড় পরা ভদ্রলোক ওদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। রাস্তায় গুরুদেবের নামে অনেক সুখ্যাতি শুনতে শুনতে এসেছে পম্পার কাছে। সুদৃশ্য চেয়ারে বসে আছেন নব মহারাজ। এটাই ওনার নাম। পম্পার নির্দেশে রমা ওনার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। পম্পা আগে থেকেই দিক্ষিত নব মহারাজের কাছে তাই নব মহারাজ পম্পাকে দেখেই বলে উঠলেন

"অনেক দিন তোকে দেখিনি, আজ কাকে নিয়ে এসেছিস?"

পম্পা তখন রমার কথা মহারাজ কে বললেন। মহারাজ এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন রমার দিকে, কেমন যেন একটু অস্বস্তি হতে থাকলো রমার তাও যে কাজের জন্য এসেছে সেটার জন্য ও চুপ করে রইলো।

কিছুক্ষণ পর নব মহারাজ বললেন

"তোকে আমার কাছে দীক্ষা নিতে হবে, আর সবাই জানে আমি দীক্ষা সকালে দিই না রাতে দিই তাই তুই আজ এখানে থেকে দীক্ষা নিয়ে যাবি"

রমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পম্পার দিকে তাকিয়ে রইল। পম্পা ইশারায় উঠে বাইরে আসতে বলল। রমা বাইরে গিয়েই পম্পা কে বলল

"আমার পক্ষে রাতে থাকা সম্ভব নয় কারণ তোমাকে আগেই বলেছি সুকুমার এইসব জিনিস পছন্দ করে না আমি শুধু শাশুড়ির কথায় এখানে এসেছি"

"ঠিক আছে তুমি দাদাকে বলেই একদিন সময় করে এসো আমি মহারাজকে বলে রাখছি"

সেদিন রমা বাড়িতে এসে শাশুড়িকে সব খুলে বলল। শাশুড়ি তার উত্তরে বলল

"তুমি দীক্ষা টা নিয়ে আসতে পারতে কারণ নব মহারাজের নাম আমি শুনেছি তুমি বরং কাল গিয়ে দীক্ষা টা নিয়েই এসো আর যে দৈব ওষুধ দেবে সেটাও ঠিক মত খেও"

"কি বলছেন মা আপনার ছেলে জানলে আমাকে আর জ্যান্ত রাখবে না"

"ওটা আমার উপর ছেড়ে দাও আমি বলবো তুমি কুসুম দের বাড়ি গেছো তাই আর না করোনা"

কুসুম হল ওর ননদের মেয়ে। রমা অনেক চিন্তা করে ঠিক করলো শাশুড়ি মা যখন বলছেন তখন দীক্ষা নিয়ে নেওয়া যাক।

সুকুমার অফিস বেরোনোর পর সেদিন দিয়াকে শাশুড়ি মায়ের কাছে রেখে একটা শাড়ি আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে ও দীক্ষা নিতে চলে গেল। এবারে পম্পাকে আর কিছু জানালো না। নব মহারাজের বাড়িতে গিয়েই বুঝতে পারল একটা কোন অনুষ্ঠান চলছে মাইকে খুব জোরে জোরে কীর্তন হচ্ছে, আর সেই কীর্তনের সুরে নব মহারাজ আরো শিষ্যদের নিয়ে নেচেই চলেছে। রমাকে দেখেই নব মহারাজ হাত ধরে কাছে টেনে নিলেন কিন্তু নাচতে রাজি না হয়ে পাশের চেয়ারে বসে পড়ল রমা।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে গেল । একজন ভদ্রলোক ওকে ডেকে বলল,

"আপনি আজ দীক্ষা নেবেন মহারাজ বললেন তাই আপনাকে স্নান করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে নব মহারাজের ঘরে যেতে হবে"

সেইমতো রমাও সব গুছিয়ে এনেছিল তাই স্নানের ঘরটা ভদ্রলোককে দেখিয়ে দিতে বলে ও তৈরি হতে চলে গেল।

দীক্ষা নেওয়ার জন্য নব মহারাজের ঘরে গিয়ে দেখলো ঘরের মাঝখানে একটা অগ্নিকুণ্ড সেখানে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে আর মহারাজ চোখ বুঝে সামনের আসনে ধ্যান মগ্ন। রমা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিন্তু আশ্চর্য নব মহারাজ চোখ না খুলেই রমাকে বললেন

"আমার পাশের আসনে বস"

অনেক রাত পর্যন্ত মহারাজ ওই ভাবেই ধ্যানমগ্ন থাকলেন তারপর চোখ খুলে রমাকে বললেন

"তুই আমার কাছে কি চাস"

রমা এর উত্তরে এতটাই ইতস্তত করতে লাগলো যে ওর মুখ ফুটে কোন কথা বের হলো না। নব মহারাজ এবার মুচকি হেসে বললেন

"তুই না বললেও আমি তোর মনের কথা জানি তাই এই রস টুকু পান কর"

বলে একটা ছোট বাটিতে একটু পানীয় এগিয়ে দিলেন

রমা সেটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল কিন্তু মহারাজের চোখ ওই পানীয়র দিকে থাকায় ওকে পান করতেই হলো। ব্যাস এরপর আর খুব একটা জ্ঞান ছিল না রমার।

সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখলো গায়ে এক ছিটেফোটাও কাপড় নেই। গায়ে অসম্ভব ব্যথা। আর বুঝতে বাকি রইলো না ওর কিছু। কিন্তু এখন কি করবে কিছুই ভেবে পেলো না। একবার ভাবলো মহারাজকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে কেনো তার এই সর্বনাশ করলো? আবার পরে ভাবলো এইসব করতে গেলে সুকুমার জেনে যাবে।

আধ্যাত্মিকতার নামে কিছু নোংরা প্রকৃতির মানুষ তাদের পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করছে। ওর মতো এইরকম কত মেয়ের সর্বনাশ করতে পিছ পা হচ্ছে না।

সেদিন ওখান থেকে বেরিয়ে সারা রাস্তা এই চিন্তা করতে করতেই এলো রমা। শেষে বাড়িতে অশান্তি হবে জেনেও থানায় সব জানাবে ঠিক করলো। রমা ভাবলো ও যদি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আরো কত মহিলা ওই আধ্যাত্মিকতার ভেকধারী মহারাজের শিকার হবে। এই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকা অন্যায়। সুকুমার কে সব জানিয়ে রমা থানায় ডাইরি করলো মহারাজের নামে। চোখ খুললো রমার শাশুড়ির।


Rate this content
Log in

More bengali story from Gopa Ghosh

Similar bengali story from Tragedy