গোয়েন্দা বৌ
গোয়েন্দা বৌ
কখনো কখনো পুরুষরা ভেবে থাকেন, তার বৌ তাকে কতো ভালোবাসে, ফোন করে বার বার আপনার খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু তা আসলে কখনোই সত্য নয়। আসলে ঐ অজুহাতে আপনার ওপর সে নজর দারি চালতে চায় সেটাই বুঝতে হবে আপনাকে এবং সেই ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে হবে। নয়তো ভারি বিপদ। বলতে বলতে গিন্নি নামক বাঘানী ফোন
--হ্যালো.. হ্যালো..
--হ্যাঁ বলো.... এর চেয়ে বেশি হেলে পরে যাবো।
-- ফাজলামি না করে ।কি করছো বললো।সারাদিনে নিজের একটা ফোন করতে ইচ্ছে হয়না । বিয়ের পরে কোথাও তো নিয়ে যাওনি বৌ ফেলে বাইরে বাইরে.তাই ডানা মেলে উড়ছ তাই না । বাড়ি আসো ডানা ছেটে দেবো।
ইচ্ছে না থাকলেও , করলার মতো তিতো, নারকেল মতো ঝুনো মহিলাকে বলতে হলো
--সুইটি , মাই বেবি ,রাগ করো কেনো। তোমার সবজি টব্জি যা লাগবে নিয়ে এসবো ঠিকঠাক.বাবু কি করছে,আমাকে miss করছে নিশ্চিত ?
--বৌ বাচ্ছা খবর নিয়ে তোমার কি? তুমি মস্তি করো খালিবয়েই গেছে ওর তোমাকে খুঁজতে । বরং ভালো ই আছে দিব্যি আছে, কেউ নোংরা হাতে, আলু ভাতের চটকাচ্ছে না ওকে ধরে ধরে। আদর করতে শেখে নি বাচ্চা দের।
পুরুষদের এটাই মুস্কিল , যতো ডিগ্রী থাকুক আপানার স্ত্রীর কাছে আপনি সবচেয়ে আনাড়ি।
কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-- কি রান্নাবান্না করলে আজ তাহলে ,,
--কাঁচকলা দিয়ে পাতলার মাছের ঝোল । তুমি থাকলেই যত ফ্যাচাং হয় খাবারের । তা তুমি কি খেলে দুপুরে ?
সত্যি কথা বলতে এই ঝামালা বা ফ্যাচাং শব্দটা শুনে ভাববেন না পাঁচ পদ রেঁধে খাওয়ান উনি আমায়। আলু কিংবা পেঁপে টা সিদ্ধ করে দেয়। তার বদলে সব আনাজ সবজি কেটে দিতে হয় আমায়। ভয়ে ভয়ে বললাম
-মটন বিরিয়ানি আর রায়তা । অন্যকিছু ছিলো না
--শয়তান লোক একটা। ফিরে আসো তোমার হচ্ছে।
শরীর সুস্থ রাখতে , এতো নিষেধাজ্ঞা ভাষাটি সম্ভব। বললাম
আর দুইদিন অনিয়ম হবে আরকি।
--হ্যাঁ সাতদিন ধরে বিরিয়ানি গিলে এসে পেট ব্যামো ধরাও আবার । সাবধানে থেকো । ঠান্ডা গরম লাগিয়ে শরীর খারাপ করে আমাকে বিপদে ফেলো না। আর বেশি বাউন্ডুলেপনা করো না জানতে পারলে খবর আছে।
সব বন্ধরা সেলফি তুলে সোস্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা কতো like comments পায় আমি কিছুই করতে পারিনা। এই বৌ এর জন্য।
পৃথিবীতে সব জিনিসপত্র ফেরত দেওয়া না গেলে , গ্যারান্টি ওয়্যারান্টি আছে শুধু বৌএর রিপ্লেসমেন্ট নেই। তাই একটু মিষ্টি ভাবে জিজ্ঞেস করলাম।
--তোমার খাওয়া দাওয়া শেষ?
--হ্যাঁ, বললো ফ্রিজে দুপুরে টক ডাল রেখে দিয়ে ছিলাম সেটা দিয়ে খাবো আরকি।
যদিও এটাই আমার ভাগ্য ফ্রিজের খাবার নিজেকে গরম করে খেতে হয় রাতে । তবু একটু প্রশংসা করে বললাম
--আহহা ।তোমার রান্না করা আম ডাল কতদিন খাইনি.,,
--তাহলে চলে এসো না এখুনি।
খুব উৎসাহ নিয়ে বললাম।
--তা বলতে, দরজা খোল.দাঁড়িয়ে আছি তো,
ফোন কেটে দরজা খুলতেই বললাম
-- সারপ্রাইজ ,দ্যাখো, কেমন চমকে দিলাম বল....
কষ্ট একটাই তোমার ভাগের ভাতটা আমাকে দিয়ে দেবে বুঝি .এসো ভাগ করে খায়ে নবো
--ও গুড়ে বালি। অত প্রেম দরকার নেই । দুপুরে যখন তোমাকে ফোন করেছিলাম, তখন ট্রেনের শব্দ আর চাওয়ালার হাঁক শুনেছিলাম । তারপর আরও শিওর হবার জন্য তোমার মেল চেক করে টিকিট বুকিং হিস্ট্রি দেখে নিয়েছি । তখনি বুঝেছি ব্যাটা চালাকি করে সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছে । তাই আমিও বেশি করে ভাত রান্না করেছি । সাথে ডিম সিদ্ধ করে রেখেছি। এখন যাও আমার জন্য ডিমের কালিয়া করে। আনো সাত দিন ধরে শুধু সিদ্ধ খেয়ে আছি।
--আমার সব আশায় জল ঢেলে দিলে যে । এইজন্যই বলে বৌ নামক গোয়েন্দাকে কোন পার্সনাল পাসওয়ার্ড বলতে নেই ।ফোনটা নষ্টের গোড়া । এখন বানাও ডিমের কালিয়া। তাও যদি আমাকে একপিস খেতে দেয়। গুনে গুনে চারটৈ ডিম রেখেছে।