গঙ্গাসাগর স্নান-১: অরিন্দমের গঙ্গা সাগর অভিজ্ঞতা
গঙ্গাসাগর স্নান-১: অরিন্দমের গঙ্গা সাগর অভিজ্ঞতা
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
অরিন্দমের এবার নিয়ে ১৬/১৭ বার। গঙ্গাসাগর মেলায় ডিউটি। পুলিশের চাকুরিতে যোগ দেবার পর থেকে। ভারতবর্ষের বৃহত্তম মেলা। প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে ১লা মাঘে মকর সংক্রান্তির পুণ্য স্নান। লাখ লাখ পুন্যার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হয়-পুন্য লাভের আশায়। মাঝরাত থেকে হাড় কাঁপানো শীতে পবিত্র গঙ্গার বরফ শীতল জলে ডুব দিচ্ছে অগুনতি বিভিন্ন বয়েসের পুন্যকামি মানুষ। তীরে দাঁড়িয়ে গ্রেট কোটের উষ্ণতার মধ্যে ম্যানপ্যাক সেট হাতে কর্তব্যরত অরিন্দম এবং অন্য পুলিশ কর্মীরা অবাক শ্রদ্ধায় দেখে যায় এই স্নান। ওঁদের নিরাপত্তা দেখা এবং ম্যানপ্যাক সেটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পরিস্থিতির জানিয়ে দেওয়া ওদের কাজ। স্নান শেষে কেউ গোদান কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করে। গোদানে সবাই অংশ গ্রহণ করে না। তবে স্নান শেষে সবাই কপিল মুনির আশ্রমে পূজা দেবেই। এই কপিল মুনির আশ্রম স্থাপন এবং তার মেইনটেন্যান্স উত্তরপ্রদেশ সরকারের তত্বাবধানে। যেই কারণে মন্দিরে জমা পড়া অর্থ, সোনা দানা মেলা শেষে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের নজরদারিতে সেই সরকারের কোষাগারে জমা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই মহামেলার আয়োজক এবং ব্যাবস্থাপক। এন্ট্রি ফি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। যদিও তা মেলার বিশাল খরচের তুলনায় নগন্য মাত্র। বিদেশিরাও আসে। অগাধ কৌতূহল নিয়ে বিস্মিত চোখে দেখে এই মহামিলন এবং মহাস্নান। সাধারণত ইংরেজি জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে নির্দিষ্ট হয় এই পুণ্য স্নানের দিন। তবে তিথি অনুসারে দুই এক বছর ১৫ তারিখেও পুণ্য স্নানের দিন স্থিরীকৃত হয়েছে। অরিন্দম দেখেছে বাঙ্গালিদের থেকে অবাঙ্গালি বিশেষ করে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে হিন্দিভাষীদের আগমন অনেক বেশি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় অরিন্দম এই মেলার ব্যাবস্থাপনায় ক্রমাগত উন্নতি লক্ষ্য করেছে। একটা প্রবাদ বাক্য বহু দিন প্রচলিত ছিল “সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার”। এই প্রবাদের যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল বৈকি। তখন গঙ্গাসাগর এক দুর্গম, কষ্টসাধ্য তীর্থ যাত্রা ছিল। ছিলনা থাকার, পানীয় জলের এবং চিকিৎসার কোন ভাল ব্যাবস্থাপনা। পুণ্য শেষে বাড়িতে ফেরার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। কারণ সেই সময় যাতায়ত ব্যাবস্থা ছিল মূলত নদীপথে। মায়াগোয়ালিনির ঘাটে প্রায়শ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটত। এছাড়াও হোগলার ঘরে আগুন লেগে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করা তো ছিলই। অনেক বছর হল মায়াগোয়ালিনির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।(ক্রমশ)