Partha Roy

Classics

2  

Partha Roy

Classics

আমার মা (পার্থ রায়)

আমার মা (পার্থ রায়)

2 mins
830


শাড়ি, ব্লাউজে লেগে থাকা অপত্য অন্ধ পুত্রস্নেহ, মাথার নারকেল তেলের স্নেহশীল গন্ধ, সংস্কার হীনতা, ভুল-ভ্রান্তি, ব্র্যান্ডেড শৌখিনতা (নিভিয়া ক্রিম, কোলগেট পেস্ট, শালিমার নারকেল তেল ইত্যাদি), মাঝে মাঝে টিপিক্যাল টিভি সিরিয়াল টাইপ শাশুমা হওয়া, বই-ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস - এই সব, এই সব কিছু পেছনে ফেলে পূর্ণ অনাথ করে চলে গেছে আমার মা, আমাদের তিন ভাইয়ের মা। বাবাকে হারিয়েছিলাম ২৮ বছর আগে। পূর্ববঙ্গীয় মায়ের একটা ধারণা ছিল প্রথম দুই পুত্রবধূ পশ্চিমবঙ্গীয়, সুতরাং তাঁর মৃত্যুর পরে এরা এদের স্বামীদের (মায়ের ছেলেদের) দিয়ে অনেক আচার অনুষ্ঠান পালন করাবে। এতে ছেলেদের কষ্ট হবে। নানা রকম অসুবিধা হবে। তাই বিভিন্ন সময়ে পুত্রবধূদের আগেই বলে গেছে, “আমার মৃত্যুর পরে যেন ছেলেরা শুধুমাত্র সিদ্ধ ভাত খায়। কাছা পরার থেকে তো ফতুয়া, পাজামা পরা সুবিধাজনক। কাছা পরলে মোবাইল ফোন টাকা পয়সা রাখা অসুবিধা। আজকাল কেউ খালি পায়ে হাঁটে না”। যদিও বাবা-কাকাদের বেলা যেমন করেছি, কাছা পরে একাদশী মানা যতটা নিয়ম মানা যায়, সবই করেছি। লক্ষ্মী পূজোর আগে থেকে মুখে চোখে খুশী ছলকে পড়ত। ছিটকে থাকা অন্য ছেলে, ছেলে বৌ, নাতি নাতনীরা আমার ফ্ল্যাটে জড়ো হবে, একসাথে পূজো, রাতে খাওয়া দাওয়া – এসব কিছু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করত। এর পরেও লক্ষ্মী পূজো হতে থাকবে, মা থাকবে না। ভালবাসতে জানত জীবনকে, নিজেকে- আমার মা। খুব শখ ছিল দুই নাতনীর বিয়ে দেখে যাওয়ার, এই ইচ্ছেটা পূরণ হয় নি। মা চলে গিয়ে আমাকে যেন অনেক খানি ফাঁকা সময় হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছে, “বাবু, সব সময় বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চললে হয় না রে। একটু জিরিয়ে নে, একটু পেছন ফিরে দ্যাখ”। তাই মায়ের আলমারি থেকে তাঁর দুটো এ্যালবাম বের করে সাদা কালো ছবিগুলোকে সাজিয়ে, আঠা দিয়ে আটকে নিতে নিতে কখন সব ঝাপসা হয়ে গেল। অনেক সময় বকাঝকা, শাসন করেছি, রুড হতে হয়েছে (ডাক্তারবাবু অপছন্দের হলে ওষুধ খেতে না চাওয়া, নিষিদ্ধ খাদ্য দ্রব্য না পেলে ছেলে মানুষী এমন সব)। এখন মনে হয় হয়তো আমার ব্যবহারে মনে মনে কষ্ট পেয়েছে, না বকাঝকা করলেই তো হত। মা চলে গেছে বছর দেড়েকও তো হয় নি। যদিও মায়ের রেখে যাওয়া শূন্যতা, স্মৃতি-গন্ধভারের স্নেহালিঙ্গন আর বারে বারে চোখ ভিজে আসা থেকে বের হতে গেলে আমার একটা পাগল পারা ব্যস্ততার খুব দরকার ছিল। পারি নি, ব্যর্থ হয়েছি। যত ব্যাস্ত থাকার চেষ্টা করিনা কেন, অফিস থেকে ফিরে দরজা দিয়ে ঢুকলে মনে হয় এই সময় তো মায়ের এসে দাঁড়াবার কথা। অথবা অফিস যাবার সময়? জানালা দিয়ে হাত নাড়ত। এমন আরও কত মুহূর্ত। থাকো মা, থাকবে তুমি, এভাবেই প্রতি পলে, আমার সাথে, আমাদের সবার সাথে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics