আমার চোখে বিদায়ী বছর ২০১৯
আমার চোখে বিদায়ী বছর ২০১৯
একটা করে বছর আসে। আবার চলে যায়। এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতির নিয়ম। বিদায়ী বছর অনেক কিছু নিয়ে যায়, আবার দিয়েও যায়। এ যেন একটা অবিরত চলতে থাকা রিলে রেস। ব্যাটন হাত বদল করে ছুট, ছুট, ছুট। যা নিয়ে যায় তা স্মৃতিপটে লেখা হয়ে থাকে। যা দিয়ে যায়, তা সম্ভাবনা কে জিয়িয়ে রাখে। একজন মধ্যবিত্ত মানুষ হিসেবে প্রথমে ব্যাক্তিগত পাওয়া, না পাওয়া, সুখ, অসুখের কথা বলি। ২০১৯ এ মায়ের চলে যাবার বয়েস এক বছর অতিক্রান্ত হল। যদিও মায়ের অশরীরী অস্তিত্ব সব সময় জানান দেয়, “আমি ছিলাম, আছি, চিরকাল থাকব তোদের বুকে”। ঈশ্বর সদয়। স্ত্রী, পুত্র, পরিবার নিয়ে জীবন সঠিক ছন্দে চলছে। ২০১৯ আমার একটা সাধ পূর্ণ করেছে। সর্বাধিক প্রচলিত বাংলা কাগজ “আনন্দবাজার পত্রিকা’ তে আমার গল্প প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের চাকুরী আমার পেশা, পেটের দায়। আর লেখালিখি করা আমার ভালবাসা। স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে বৈ কি। বাণিজ্যিক পত্র পত্রিকায় এর আগেও লেখা মনোনীত হয়েছে। তবুও, আনন্দবাজার তো আনন্দবাজারই। বিদায়ী বছরে আরও একটা তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি “Story Mirror” এর মত একটা রাইটিং প্ল্যাটফর্মে আমার লেখা প্রকাশিত ও প্রশংসিত হচ্ছে। এবার আসি বৃহত্তর ক্ষেত্রে ২০১৯ নিয়ে আমার ভাবনা। গর্বে বুক ভরে গেছে অর্থনীতিতে আবার একজন ভারতীয় তথা বাঙালির নোবেল জয়ের খবরে। হ্যা, অভিমন্যু ব্যানার্জীর কথা বলছি। এবার আসি সেইসব বিষয়ে, যা ২০১৯ সালে অভিপ্রেত ছিল না। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, চাকুরী ক্ষেত্রে সঙ্কোচন নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দণ্ডমুণ্ড কর্তাদের কোন হেলদোল নেই। দেশ উত্তাল হয়ে আছে নাগরিক পরিচয়ের বিতর্কে। এই আইনের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাক্তিগত মতামত দেওয়া থেকে বিরত থেকেও কিছু কথা না বলে পারছি না। কেন্দ্রীয়
সরকারের উদ্দেশ্য হয়ত খারাপ নয় কিন্তু প্রয়োগ পদ্ধতি ঠিক নয় একেবারেই। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপি দলের কিছু নেতার কথা বার্তা থেকে এমন একটা ধারণা গড়ে উঠেছে যে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ ভারতবর্ষ থেকে সব মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিন্দনীয় ভাবে সেই গুজবে হাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মূল্যবান প্রাণহানি, ট্রেন, বাস পোড়ান, সরকারি বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য অনেক রাজ্য প্রশাসন, বিরোধী দল, ধর্মীয় কুচক্রী মাতব্বরদের ইতিহাস ক্ষমা করবে না। ইতিহাস প্রশ্ন তুলবে একদিন কেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন প্রয়োগের আগে আইনে লিপিবদ্ধ ধারাগুলি নিয়ে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঠিক ভাবে অবগত করেন নি? কেন বিভ্রান্ত জনগণকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা এই আইনের ধারাগুলির সম্পর্কে অবহিত করা হয় নি? ইতিহাস ক্ষমা করবে না সেইসব সমাজ বিরোধীদের যারা সম্পূর্ণ ট্রেন, রেল স্টেশন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে। এই “ভারত তীর্থে” হিন্দু মুসলমান “একই বৃন্তে দুটি ফুল”। তবে সেই সাথে এটাও সিরিয়াসলি ভাবার দরকার অত্যধিক জনসংখ্যার চাপে নুইয়ে পড়া এই দেশে বেআইনি ভাবে প্রবেশকারিদের স্থান দেওয়া কি উচিত? এই দেশকে ভালবেসে অথবা অন্য দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে কি তারা আসছে? অন্ধ ধর্মীয় আনুগত্য করার দিন কিন্তু শেষ। আশা রাখি-আগত বছরে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে, নুতন প্রজন্মের সামনে কর্মক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে, শিক্ষা কারিগরি সাহিত্য সংস্কৃতি ধর্ম নিরপেক্ষতা সব ক্ষেত্রেই দেশ আবার অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। তবেই তো “ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে”।