গল্পের নামঃ- দাগ। পার্থ রায়
গল্পের নামঃ- দাগ। পার্থ রায়
টুবলুর চাকুরীর নিয়োগপত্রটা যেন মানসীর কাছে একটা মুক্তির পরোয়ানা হয়ে এসেছে। পালকের মতো হাল্কা লাগছে নিজেকে। অনেকদিন পরে হারিয়ে যাওয়া ভাললাগাটা ফিরে এসেছে। দেবোত্তম অকালে চলে যাবার পরে ছোট্ট টুবলুকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিল। টুবলু তখন ক্লাস সিক্সে। কোম্পানি থেকে যে টাকা পেয়েছিল মানসী, সেটা ভাঙ্গিয়ে কষ্টে সৃষ্টে চলছিল। কিন্তু টুবলুটা ক্লাস নাইনে উঠতেই খরচা সামলাতে নাভিশ্বাস উঠল।
ছেলেটা পড়াশুনায় বরাবরই মনোযোগী। একটা জেদ চেপে গেলো মানসীর ওকে বড় করবে। দুই এক জায়গায় রান্নার কাজ ধরল। কিন্তু তাতে যা পেত কুলাতো না। টুবলু আপত্তি করেছিল। ছেলেকে বুকের মধ্যে নিয়ে বলেছিল, “তুই যেদিন চাকরী পাবি, সেদিনই আমি সব কাজ ছেড়ে দেব। তুই খুব মন দিয়ে পড়াশুনা কর”। মাঝে মাঝে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখত। এভাবেই একদিন বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ল। এক পঙ্গু বৃদ্ধকে দেখভাল করতে হবে। ভাল মাহিনার বিনিময়ে মানসীকে মাশুল দিতে হত। সুযোগ পেলেই লালসার অক্ষম হাত মানসীর শরীর ঘাটত। ঘৃণায় কুঁকড়ে যেতে যেতে অনেকবার কাজ ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিল। টুবলুর কথা ভেবে পারেনি। ওর সারা শরীরে ক্লেদাক্ত স্পর্শগুলো অনুভব করত। মনে হত অজস্র নোংরা দাগ ওর শরীরে। জোরে জোরে সাবান ঘষতে থাকত। একটু আগে ছেলেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ফোনে জানিয়ে দিয়েছে আর কাজে যাবে না। আজ স্নানঘরে নগ্ন মানসী একরাশ খুশিতে লক্ষ্য করল সেই দাগগুলো আর নেই।