গন্ধ
গন্ধ


রান্না হয়ে যাওয়ার পরে, খাওয়াদাওয়া চুকে গেলে, বাসন ধুয়ে, চারদিক ঝকঝকে করে দেওয়ার পরেও রান্নার একটা গন্ধ গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে রান্নাঘরটা জুড়ে। চেনা এই গন্ধের টানেই ভেতরে ঢুকলো ছোটন।
আজ রবিবার।
বাইশের-তিন, চালতাবাগান সরণির এই বাড়িটা ছোটন চিনতে পারেনি প্রথমে। একদিন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গন্ধটা ওর নাকে এলো। তারপরে চিনতে সময় লাগেনি। দুদিন নজর রেখেছিলো, বাবাকে বেরোতে দেখেছে, লক্ষ্য করেছে ওর ঠাকুমা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।
রান্নাঘরের পাশের ঘরে ছবিটা থাকার কথা।
আছে। বেশিরভাগ জিনিস একইরকম আছে।
খুব কান্না পেলো ছোটনের। প্রায় তিন বছর পরে!
ওপরওয়ালার অদ্ভুত খেলা, পৃথিবীতে কোটি কোটি বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ওকে নিজের বাড়ির কাছাকাছিই নিয়ে এলেন তিনি।
ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো ছোটনের।
দুপুরে কাজকর্ম সেরে ঠাকুমা শুয়ে পড়লে, ও সারা বাড়ি দাপিয়ে যখন খেলতো, তখন রান্নাঘরের এই গন্ধটা পেতো। মা-বাবা ফিরতো রাতে, ছোটনের হাতে তাই থাকতো অগাধ সময়।
তিন বছর আগের এক শীতে বিশ্রী রোগটা ধরা পড়ার মাস কয়েকের মধ্যেই ছোটন দেরাজের ওপর রাখা মালা পড়ানো একটা ছবি হয়ে গেলো। জন্মান্তর বলে কিছু হয় সেটা ও জানতোই না, জানলে কিছু একটা-
ঠাকুমার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ হলোনা?
***
শিবানী শাশুড়ির ঘর থেকে বেরিয়েই দেরাজের ওপর ছেলের ফটোটার দিকে দেখলো।
তারপর পা থেকে চপ্পলটা খুলে একটা বাজখাঁই চিৎকার করে ছুঁড়ে মারলো ফটোর সামনে দাঁড়ানো বিড়ালটার দিকে।