শ্যাওলা
শ্যাওলা
বাটির বাকি দুধটুকু শেষ করে উঁকি দিলো কানাই, উল্টোদিকের বাড়ির জানালায় তার নজর।
পাল্লাটা খুললো এবার, খোকন মুখ বাড়ালো, মুখভর্তি খাবার প্রানপনে চিবোচ্ছে। শেষ টুকরোটা মুখে দিয়েই হাসলো কানাইকে দেখে। তারপর বাটিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো রাস্তায়।
খিলখিলিয়ে হেসে কানাইও বাটিটা ছুঁড়ে দিলো়।
'একি কান্ড! আর তো পারা গেলো না।', রাতদিনের আয়া মালতি রেগেমেগে নিচে ছুটলো বাটি উদ্ধার করতে ।
কানাই আর খোকনের ভীষণ মজার খেলা এটা। ওদের মধ্যে একটা না-বলা ভাষা তৈরী হয়েছে যেন। ঘর থেকে বেরোতে দেওয়া হয়না বলেই কানাই বারান্দা আর খোকন জানালা দিয়ে খেলাটা খেলে।
আজ কানাইয়ের খোকনকে অনুসরণ করার দিন। ও যা করবে কানাইও তাইই করবে।
মালতি ফেরেনি এখনো, খোকনকে ইশারা করলো কানাই।
খোকন ওদের জানালার গ্রিলের যে অংশটা খোলা যায়,সেটা খুলে কার্নিশে এসে দাঁড়ালো। তিনতলার জানালা এটা।
কানাইয়ের দিকে অট্টহাস্য করে সুপারম্যানের ভঙ্গিতে লাফটা মারলো খোকন। নিচে উঁকি দিলো কানাই, ওর চোখে মুগ্ধতা!
ঘর ফাঁকা দেখে বসার টুলটা বারান্দার রেলিঙের সামনে টেনে আনলো কানাই।
***
দরজা খুললো প্রশান্ত।
'আসুন ডাক্তারবাবু'।
'খবর কেমন?'
'একইরকম। বাবার স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি লোপ পেয়েছে। ঠাকুমা কানাই ডাকতো, এখন ওইনামে না ডাকলে তাকায়না,' প্রশান্তর চোখে অসহায়তা, 'আর ইদানিং হ্যালুসিনেট করছে। ছোটবেলার বন্ধু খোকনকাকু, মারা গেছে বছরপাঁচেক, তার সাথে কথা বলে সারাদিন।'
ঠিক এইসময় বাইরের রাস্তায় ধপ করে ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো।