ছুটি
ছুটি
সিঙ্গারার ঠোঙাটা প্লেটে খালি করতেই কুশলবাবু দেখলেন পলাশবাবুর চশমার কাঁচটা একটু যেন ঝাপসা লাগছে।
চোখ মুছলেন পলাশবাবু, ‘আজ রঙ্গন থাকলে নিজেই বাড়িতে সিঙ্গারা ভাজতো।’
কলেজ-জীবন থেকেই তিনজনের বন্ধুত্ব। চাকরিজীবনে ভারতবর্ষের তিনকোনায় কাটালেও, মাঝেমাঝেই ওরা দেখা করতো। অবসরের পরে কলকাতায় ফিরে সবাই নিশ্চিন্ত হয়েছিল, এবার থেকে সপ্তাহে একবার অন্তত দেখা হবেই। কয়েকবছর হয়েছিলোও তাই, কিন্তু সতেরো সালে একসিডেন্টের পর থেকে রঙ্গনের জায়গাটা খালি হয়ে গিয়েছে।
কুশলবাবু বাইরের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলেন, 'রঙ্গনটাকে খুব মিস করি রে।'
পলাশবাবু চানাচুর ঘাঁটতে ঘাঁটতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, 'রঙ্গনটা রেকলেস। কে বলেছিলো ওইদিন আলাদা স্কুটার নিয়ে আসতে, আমাদের গাড়িটা কি দোষ করেছিল? ফার্মহাউসটা কিনলাম আমাদের আড্ডাখানার জন্য, আর-'।
কথার মাঝখানেই কলিংবেলটা বেজে উঠলো। পলাশবাবু বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে এগোলেন।
কুশলবাবু একমুঠো চানাচুর তুলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দরজার সামনে থেকে আর্তনাদটা শুনলেন।
দৌঁড়ে গেলেন তিনি, দরজার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে পলাশবাবু।
‘তিনবছর অনেকটা সময় রে, তোদের জন্য আমারও একটা টান আসছিলো।'
বাইরের গলার আওয়াজটা চেনা, হতভম্ব হয়ে গেলেন কুশলবাবু।'সকাল থেকেই ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো। মেজাজটা গরম করেই বাথরুমে ঢুকলাম স্নান সারতে। হঠাৎ বুকে ব্যাথা আর শাসকষ্ট, ঠিক মতো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথাটা ঘুরে গেলো ', কুশলবাবুর কাঁধে হাত রাখলেন রঙ্গনবাবু, 'আসলে গাড়ি একসিডেন্টে তোদের দুজনের চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার হার্ট-টা…. যাকগে, এতদিনে ছুটিটা পেয়ে গেলাম।'