Tandra Majumder Nath

Abstract Inspirational

3  

Tandra Majumder Nath

Abstract Inspirational

ঘুড়ি উৎসব

ঘুড়ি উৎসব

3 mins
635


বিশ্বকর্মা পূজোর দিন, কিছু কিছু জায়গায় ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ঘুড়ি উৎসবে কত নানান রঙের ঘুড়িকে সেদিন আকাশে উড়তে দেখা যায়। শুধু বিশ্বকর্মা পূজো কেন, সারা ভাদ্র আশ্বিন মাস জুড়ে আকাশে বিভিন্ন নামের সব ঘুড়ি উড়তে থাকে। রাস্তার অলি গলি থেকে বাড়ির ছাঁদের থেকে শুধু একটাই শব্দ ভেসে আসে, একসাথে উচ্চস্বরে তীব্র চিৎকারে কানা ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার জোগাড়, "ভোকাট্টা।ঘুড়ির সে কত বাহার, বিশ্বকর্মা পূজোর আগে দোকানে দোকানে দেখা যায় বিভিন্ন রকম সব ঘুড়ির পসরা নিয়ে বসে। সে ঘুড়ির কত বাহারি নাম,পেটকাটি, চাঁদিয়াল, শতরঞ্চি, বজ্ঞা, মোমবাতি, চিল ঘুড়ি। 


লাটাই এর কত বাহার দেখা যায়। ঘরে ঘরে সব বালকসম ছেলেদের থেকে শুরু করে ঘুড়ি প্রেমী প্রাপ্তবয়স্করা পর্যন্ত শুরু করে দেয় ঘুড়ির সুতোতে মাঞ্জা দেওয়ার কাজে। বিশ্বকর্মা পূজোয় হাওয়া থাকুক বা না থাকুক, রোদ উঠুক বা না উঠুক আকাশে ঘুড়ি ঠিকই উড়বে। কচি কাঁচা থেকে শুরু করে ছেলেদের মধ্যে এই ঘুড়ি নিয়ে উত্তেজনার কারণে রাতের ঘুম যেন উড়ে যায়। এই ঘুড়ি উৎসবের কারণেই কিছু মানুষ ঘুড়ি তৈরী করে উপার্জন করে। তাহলে বলা যেতে পারে ঘুড়িটাও সমাজের মানুষদের আনন্দ দেওয়া থেকে, উপার্জন হওয়া থেকে, সকলকে একজায়গায় মিলিত করতে একটা জরুরী ভূমিকা পালন করে। ঘুড়ি উৎসবের আগে ঘুড়ি বিষয়টা নিয়ে যা তোড়জোড় দেখা যায় তা কিন্তু দুমাস যেতে না যেতেই তার আর সিকি মাত্রও দেখা যায় না। ঘুড়ি উৎসবের আগে যেই চাঁদিয়াল বা পেটকাটি ঘুড়িটার এত কদর ছিল, যার গায়ে বিভিন্ন রকম রঙ মাখানো হোল, সাবধানে অতি যত্ন করে ঘরের মধ্যে রাখা হোল তারপর যখন আকাশে উড়লো সবাই একত্র হয়ে চিৎকার করতে থাকলো, উচুতে আরও উচুতে উড়তে... চাঁদিয়ালটা বড় খুশি হোল, সবার নজর এখন তার ওপরে।সে উড়ছে তো উড়ছেই মনে বাসনা হোল সব কিছু ছাড়িয়ে আকাশের অনেক ওপরে উড়ে যাবে। মনে যে তার আর আনন্দ ধরে না।


নীচের মানুষ গুলোকে ছাড়িয়ে সে নিজের ইচ্ছেমত উড়তে থাকে হঠাৎই টান পড়ে তার সুতোয় আর তখনই সব কচিকাঁচারা চিৎকার করে ওঠে, "ভোকাট্টা" ব্যস তক্ষুণি চাঁদিয়ালের দর্পচূর্ণ হয়। তার আর আকাশের সব থেকে উচুতে ওড়া হোল না। যেই মানুষগুলো এতক্ষণ তাকে নিয়ে মাতামাতি করছিল তারা আর কেউ খোজ রাখলো না সেই চাঁদিয়ালের। চাঁদিয়ালটা ছেড়া সুতো নিয়ে উড়তে উড়তে ল্যাম্প পোস্টের তারে গিয়ে আটকে যায়। কয়েকদিন ঝুলে থাকে সেখানে তারপর হাওয়ার দাপটে উড়তে উড়তে কোন গাছের ডালে আটকে যায় সেখানে কয়েকদিন ঝুলে থাকে এদিকে চাঁদিয়ালের শরীরের অবস্থা দিন দিন জীর্ণ শীর্ণ হয়ে চলেছে, নজর কাড়া রঙ উঠে গিয়ে তা বর্ণহীন হয়েছে,কিছু জায়গা ছিড়ে গেছে।


সেখান থেকে উড়তে উড়তে কোন নদী বা নালায় গিয়ে পড়তেই তার খাপকাঠি বেড়িয়ে আসে, কাগজ ভিজে জলে গুলে যায় কেউ তখন আর সেই চাঁদিয়াল বা পেটকাটি বা শতরঞ্চির সলিল সমাধি দেখতে আসে না। কোন ফ্যাক্টরিতে জন্মানোর পর তার ঠাটবাট ছিল অন্যরকম,কত্ত কদর তার,কত্ত আদর, সবাই এতদিন তাকে নিয়ে মাতামাতি করছিল কিন্তু আজ সে যখন ভোকাট্টা হয়ে দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করে সলিল সমাধি হতে চলেছে তখন আর কেউ নেই তার হয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে। ঠিক তেমনই অবস্থা এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূর। বাবার আদরে বড় হয়ে ওঠা মেয়েটার, আবদার ছিল, আলসেমি ছিল, অনেক আশা আকঙক্ষা ছিল কিন্তু বিয়ে হতেই সব কিছু যেন কিছু দিনের মধ্যে পালটে যায়। বিয়েতে কত রোশনাই, কত তোড়জোড়, সবাই নববধূকে দেখতে আসে হাতে অবশ্যই উপহার নিয়ে আসে। প্রথম কয়েকদিন এত ভালো কাটে যেন সে সর্বসুখ পেয়েছে। 


ধীরে ধীরে একের পর এক দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে। একসময় মেয়েটার খেয়াল সবাই রাখতো এখন সে গৃহবধূ তাই তাকেই সকলের খেয়াল রাখতে হয়। গৃহ কর্মে নিপুণা হলেই মিলবে প্রশংসা নইলে মিলবে নিন্দা আর অশান্তি। সেই ঘুড়ির মত রঙিন থেকে বেরঙিন হয়ে গৃহবধূ, চুলের যত্ন, নখের যত্ন, মুখের যত্ন সেসব আর নেওয়া হয় না। সপ্তাহে দুবার বেড়াতে যাওয়া সেসব দায়িত্বের ভারে অতীত। গৃহবধূটাও একসময় সবকিছুর জলাঞ্জলি দিয়ে মনে মনে সলিল সমাধি হতে থাকে তার, কারও কিন্তু সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। কষ্ট গুলো বোঝার কেউ নেই। এভাবেই ভোকাট্টা চাঁদিয়াল বা পেটকাটির মত কোথাও গুমড়ে মরতে থাকে কোন বাড়ির সমস্ত কাজের দায়িত্বে চাপা পরা গৃহবধূ। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract