লজ্জা
লজ্জা


-মা.... মা...গো...ও মা..
নিজের ঘর থেকে দেবযানী ডাকতে থাকে।
-কি হোল কি এত চিৎকার করছিস কেন..?
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করেন দেবযানীর মা বর্ণালী দেবী।
- ও মা আমার যে আজ পিরিয়ড হয়েছে....কিন্তু..
ধীরস্বরে বলে ওঠে দেবযানী।
- পিরিয়ড হয়েছে তো এত জোড়ে বলার কি আছে অসভ্য মেয়ে। জানিস না বাড়িতে একটা বড় দাদা আছে।
ধমকের সুরে বলে ওঠেন বর্নালী দেবী।
- জোড়ে কোথায় বললাম মা...
- তোর পিরিয়ড হয়েছে নতুন কি...? কচি খুকি তো তুই নোস.. ডাকছিস কেন আমায়..?
-ওমা আমার যে স্যানিটারি ন্যাপকিন গতমাসেই শেষ হয়ে গেছে। সবকিছু লকডাউন হয়ে যাওয়ায় নতুন কিনতেই পারিনি, এখন কি হবে...?
- এই যে এই হোল তোর দোষ। গতমাসে যখন শেষ হয়েছে,তখনই আমাকে বলতি আমি একসময় গিয়ে নিয়ে আসতাম। এখন এই লকডাউনের মধ্যে কিভাবে যাব আমি। দোকান তো সেই বড় রাস্তার মোড়ে।
-ও মা তুমি কিছু একটা করো প্লিজ...!
- এই ছাড় তো...একদম জ্বালাবি না আমাকে.. তোর বাবাটাও এখানে নেই নাহলে তোর বাবা কে তাও বলতাম যেভাবে হোক নিয়ে আসার জন্য।
- ও মা.... এখন কি হবে...?
- কি আবার হবে, আমার ঘরে দুটো সুতির কাপড় আছে, সেটাই ব্যবহার করিস না হয়, এখন কিছু করার নেই.. এই মাসটা কষ্ট কর একটু।
- কাপড়...? কোনদিন ব্যবহারই করিনি মা...
- কোনদিন শুনেছিস এভাবেও আবার সব লকডাউন হয়ে যায়...? যত্ত জ্বালা হয়েছে আমার..
-ঠিক আছে, তুমি বলে দিও কিভাবে ব্যবহার করবো। আমি স্নানে যাচ্ছি।
এমন সময় বাইকে স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজ শোনা যায়,
- মা.. দাদা কোথায় যাচ্ছে এই লকডাউনে...?
- আমি কি করে বলবো..? আমাকে কি বলার প্রয়োজন মনে করে নাকি..?
- ওহ মা তুমি সবসময় এত রেগে থাকো কেন বলোতো..?
-তোদের কর্ম কান্ড দেখে, বুঝলি তো.. যা এবার স্নান করে আয়। আর আমাকে উদ্ধার কর...
কিছুক্ষণ পর......
- মা.. ও..মা.. খেতে দাও
দেবযানীর বড় দাদা দেবু উচ্চস্বরে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।
- ও মা এরই মধ্যে চলেই এলি, হাত মুখ ধুয়ে নে আমি আসছি।
- মা...মা....ও মা.....
এবারে দেবযানী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই চিৎকার করে ডাকতে থাকে।
- এই অসভ্য মেয়ে, ষাড়ের মত একদম চেঁচাবি না। কি হয়েছেটা কি শুনি।
তড়িঘড়ি করে দেবযানীর ঘরে প্রবেশ করে বর্ণালী দেবী।
- মা এটা কে আনলো...?
কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে বলে দেবযানী।
- কি এটা...?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে বর্ণালী দেবী।
- স্যানিটারি ন্যাপকিন...!এটা এখন কে আনলো...?
বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে দেবযানী।
- আমি কি করে জানবো বলতো...!
এমন সময় রান্না ঘর থেকে দেবযানীর দাদা দেবু উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে,
- মা... ও মা.. খেতে দাও না.. ধুর ভাল লাগেনা
- এই এত অধৈর্য্যের কি আছে, বোস খাওয়ার আনছি,
বর্ণালী দেবী রান্না ঘরে যেতে নিতেই দেবু বলে ওঠে,
- মা...বুনু কে বোলো সুতির কোন কাপড় ব্যবহার করতে হবে না। এই সময় পরিষ্কার স্যানিটারি ন্যাপকিনই ব্যবহার করতে হয়।
বর্ণালী দেবী থমকে দাঁড়ায়, নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেবুর দিকে তাকিয়ে থাকে।
- কি হোল..? ওমন ভাবে কি দেখছো...?
- না..মা..নে প্যাকেটটা তাহলে তুই....
- হ্যাঁ, আমি এনেছি, আর তুমিও তো অদ্ভুত মা... ঘরে যখন স্যানিটারি ন্যাপকিন নেই তখন তো আমাকে বললেই পারতে, তা নয় বুনুকে কাপড় ব্যবহার করতে বলছো। তুমি জানো ব্যবহার করা কাপড় কত ক্ষতিকর...?
- তুই কি বলছিস এসব..? তোর লজ্জা লাগছে না এইসব কথা অকপটে বলে যাচ্ছিস...
হতভম্ব হয়ে যান বর্নালী দেবী নিজের ছেলের মুখে এসব কথা শুনে।
- ওমা লজ্জা লাগবে কেন...? এতে কি লজ্জার কিছু আছে...? আমার তো মনে হয়না। আর এটা কিনতে তো কোন ছেলেরই লজ্জা হওয়া উচিত নয়, বরং বোনের জন্য মায়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে হাতে দেওয়াটাই দায়িত্ববোধ। আর তাছাড়া বুনু আমার হাতে প্রতিবছর রাখি বাধে, ভাই ফোটা দেয়, আমি ওকে কথা দিয়েছি নিজের বোনের সবসময় খেয়াল রাখবো।
- এই দেবু.. তুই ঠিক আছিস তো বাবা...! এতো লাজুক ছেলে হঠাৎই এতো আপডেট কবে হলি রে..! এতগুলো কথা বলে ফেললি একটুও লজ্জা লাগলো না।
- হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আর লজ্জা লাগবে কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ছেলেরা যদি দোকান থেকে খোলামেলা ভাবে কন্ডোম কিনতে পারে,তবে এটা কিনতে অসুবিধে আর লজ্জা কিসের। মা বোনেদের সুরক্ষার জন্য এইটুকু তো করতেই পারি।
বর্ণালী দেবী নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেবুর দিকে তাকিয়ে কি বলবেন ভাবতে থাকেন,
-সত্যিই আজকের ছেলে মেয়েরা কত উন্নত, ওদের চিন্তাধারায় কত পরিবর্তন, আর আমরা বোধহয় আজও সেই সেকেলেই রয়ে গেলাম। নইলে নিজের মায়ের সামনে এতগুলো কথা কি করে অকপটে বলে ফেলতে পারে।
- আরে...! কি হোল কি..? খেতে দাও.. অমন স্ট্যাচু হয়ে আছো কেন...?
ছেলের ডাকে সম্বিত ফিরে পান বর্ণালী দেবী।