ভালোবাসা এমনও হয়
ভালোবাসা এমনও হয়
ছোট্ট পাপাই এর এবছর দশ বছর পূর্ণ হোল। জন্মদিনে সবাই অনেক অনেক উপহার এনেছে পাপাই এর জন্য, কিন্তু সব থেকে পছন্দের উপহারটা হোল তার মাসিমনির দেওয়া ঠাকুমার ঝুলি আর নন্টে ফন্টের কমিক্স গল্পের বইটা। ঠাকুমার ঝুলি বইটা পেয়ে পাপাই আর পাপাই এর বছর তেরোর দিদি রীতা তো বেজায় খুশি। তারা ঠিক করে, বিকেল বেলায় তো এখন কেউ মাঠে খেলতে যায়না তাই তারা ঘরের বারান্দায় বসে ঠাকুমার ঝুলি গল্পের বইটা পড়বে। রীতা পাপাই এর থেকে বড় তাই সে গল্পের বইটা জোড়ে জোড়ে পড়তে থাকে আর পাশে বসে পাপাই মন দিয়ে গল্প শুনতে থাকে। গল্প পড়তে পড়তে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায় তার খেয়ালই থাকেনা দুজনের। তাদের মায়ের সন্ধ্যারতির সময় হলে তবেই উঠে পড়ে। আবার পরদিন বিকেল হওয়ার অপেক্ষা করে তারা, কারণ শুধু গল্পের বই পড়লে মা যে বকুনি দেবে ক্লাসের বই গুলোও তো পড়তে হবে। দুদিন যেতে না যেতেই পাপাই আর রীতা একটা জিনিস লক্ষ্য করে, তারা বিকেল বেলায় যেখানে বসে গল্পের বই পড়ে সেখানে প্রতিদিন একটা ব্যাঙ এসে তাদের পাশে বসে। ব্যাঙটাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে পাপাই এর খুব আনন্দ হোল।
মশা কামড়ালে পাপাই আর রীতা যে মশা গুলো হাতের তালুতে মেরে ফেলতো সেগুলো ব্যাঙটার সামনে রাখতেই খেয়ে নিত। আবার কোন মশাকে উড়তে দেখলেই সেগুলোকে ধরার চেষ্টা করতো। ব্যাঙটার এই রকম আচরণ দেখে দুজনেই তো দারুণ খুশি তাদের নতুন একটা বন্ধু হোল। পাপাই প্রতিদিন একটা করে বিস্কুট ভেঙে বিকেল বেলায় খেতে দিত ব্যাঙটাকে, আর ব্যাঙটাও সবটা খেয়ে নিত। তবে পাপাই আর রীতা লক্ষ্য করে ব্যাঙটাকে সারাদিনে কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না কিন্তু বিকেল হলেই লাফাতে লাফাতে পাপাই এর পাশে এসে বসে মন দিয়ে রীতার ঠাকুমার ঝুলি গল্প পাঠ শোনে। হাল্কা শ্যাওলা রঙের মাঝারি সাইজের কুনো ব্যাঙটির সাথে ধীরে ধীরে গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে তাদের দুজনের। পাপাই তো আবার ব্যাঙটার নামও রেখে দিয়েছে ছুটকি। বিকেল হলেই পাপাই ছুটকি বলে ডাক দিতেই ব্যাঙটা লাফাতে লাফাতে পাপাইয়ের কাছে এসে বসে। রীতা একদিন বিকেলে নেলপালিশ পড়ছিল ছুটকিও লাফাতে লাফাতে পাশে বসে, রীতা আবার আদর করে ছুটকির কপালে নেল পালিশের টিপ পড়িয়ে দেয়। কিন্তু দিনের পর দিন চলতে চলতে একদিন ঠাকুমার ঝুলি আর নন্টে ফন্টে বইটা পড়া শেষ হয়ে যায়। এখন আর পাপাই এবং রীতা বিকেলে বারান্দাটায় গিয়ে বসে না। তাদের গল্পের বই শেষ হতেই এখন তারা কার্টুনে মনোনিবেশ করে।কয়েকদিনের মধ্যেই রীতা আর পাপাই তাদের নতুন বন্ধু ছুটকিকে ভুলে যায় কিন্তু ছুটকি প্রতিদিন বিকেলে পাপাই আর রীতার জন্য বারান্দাটার থামের কোণায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু প্রতিদিনই ব্যর্থ হয়ে ছুটকি ফিরে যায়। এমনই একদিন ছুটকি বিকেলে থামের কোণায় বসে অপেক্ষা করছে তখনই সেখানে রীতা আর পাপাইয়ের মা ছুটকিকে দেখতে পায়। - এমা.. এই ব্যাঙটা কোথা থেকে এলো? ছিঃ ছিঃ ঘরের দাওয়ায় ব্যাঙ... হুস হুস.. তাদের মা ঝাটাটা নিয়ে ব্যাঙটাকে মারতে মারতে তাড়িয়ে দেয়। তারপর আর ছুটকি সেই বারান্দায় আসেনি। পাপাই আর রীতাও ভুলে গেছে তাদের নব বন্ধুর কথা। অনেকদিন পর...একদিন রীতা আর পাপাই পাড়ারই এক ডোবার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে,তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। ডোবার পাশের রাস্তায় তখনও আলো জ্বলেনি।তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে নইলে যে মায়ের কাছে বকুনি খেতে হবে। হঠাৎ করে কিছু একটা পাপাই এর পায়ের ওপর এসে পড়ে। - এই দিদি দাড়া,..কথাটা বলেই কেঁদে ওঠে পাপাই। - কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? - আমার ওপর কি যেন এসে পড়লো? বলেই আবারও ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠে পাপাই.. দুজনেই তখন পথের মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। রীতা আশে পাশে দেখার চেষ্টা করে, কি এসে পাপাই এর পায়ের ওপর পড়েছে। এমন সময় ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলে উঠতেই তারা দুজনেই দেখতে পায় তাদের থেকে কিছুটা দূরে একটি বিষধর সাপ শুয়ে আছে। সাপ দেখে দুজনেই চমকে ওঠে। কিন্তু রীতা বড্ড সাহসী, হুশ হুশ করতেই সাপটা ধীরে ধীরে রাস্তার পাশের জঙ্গে ঢুকে পড়ে। - ভাগ্যিস ভাই, তোর পায়ে কিছু একটা লেগেছিল তাই তো আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম নইলে যে কি হোত... এমন সময় ঘ্যা ঘু..করে একটা ব্যাঙ ডেকে ওঠে। নীচে তাকাতেই তারা দুজনে দেখে তাদেরই চেনা সেই ব্যাঙটি। কপালে লাল রঙের নেলপালিশের টিপ.. - ছুটকি?তুই এখানে..? পাপাই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। - ছুটকি থ্যাঙ্ক ইউ, তুই আজ আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছিস। চল তোকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। তোকে কতদিন দেখিনি। রীতা বলে ওঠে। - হ্যাঁ রে দিদি আমরা তো ছুটকি কে ভুলেই গিয়েছি কিন্তু ও আমাদের ভোলেনি। - ঠিক বলেছিস। আয় ছুটকি, আমাদের সাথে চল.. কথাটা বলেই রীতা হাটু মুড়ে বসে। ছুটকির মুখটার দিকে দুজনেই তাকিয়ে তাকে, ছুটকিও রীতা আর পাপাইএর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, চোখটা বোধহয় জলের জন্যই চিক চিক করছিল ছুটকির।-কি রে আয়, আমার হাতে আয়.. রীতা ডাক দেয়.. কিন্তু ছুটকির যেন কি মনে হয় সে পেছন ফিরে লাফাতে লাফাতে চলে যায় অনেকটা দূরে। আবারও পিছন ফিরে তাকিয়ে তাদের দুজনকে দেখে নেয় একবার। তারপরই ছলাং করে ডোবায় গিয়ে ঝাপ দেয় ছুটকি। রীতা আর পাপাই সেদিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।