Tandra Majumder Nath

Romance Fantasy Others

3  

Tandra Majumder Nath

Romance Fantasy Others

অপরিণত ভালোবাসা(পরকীয়া প্রেম)

অপরিণত ভালোবাসা(পরকীয়া প্রেম)

9 mins
1.7K



সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার শ্রী গয়ারাম নস্করের পনেরোতম বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফরা উপস্থিত ছিলেন। আর সেই অনুষ্ঠানেই উপস্থিত হয়েছিলেন সুখ্যাত ফিজিসিয়ান সস্ত্রীক ডঃ অর্পন মুখার্জী। এদিকে স্বনামধন্য গাইনোলজিস্ট ডঃ অপরাহ্ন সরকার তিনিও তার স্ত্রী অপরাজিতা কে নিয়ে উপস্থিত হন। বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সবাই তখন আড্ডা খাওয়া দাওয়া, ডান্স নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সমস্ত ভিড়, হইচই, ডান্স খুব একটা পছন্দ করে না ডঃ অর্পনের স্ত্রী ঈশিতা। সমস্ত ভিড় ঠেলে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। ডঃ অর্পণ তখন তার কলিগদের নিয়ে ব্যস্ত,যেটা বরাবরই হয়ে থাকে সে। সামনের সুইমিং পুলটার ধার দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎই থমকে দাঁড়ায় ঈশিতা। সামনের মানুষটিকে দেখে আৎকে ওঠে, অজানা একটা যন্ত্রণা তার মনের মাঝে উদয় হয়। অস্ফুট স্বরে ঈশিতা বলে ওঠে,"অপরাহ্ন..তুমি..!"দু চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে যেতে থাকে সুতন্বী, অসামান্যা সুন্দরী ঈশিতার। সামনেই অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ডঃ অপরাহ্নও যেন মূর্তিমান হয়ে যায় ঈশিতাকে দেখে। কাঁপা কাঁপা পদক্ষেপে কাছে এসে স্মিত হেসে সেও বলে ওঠে, - ঈশা..তুমি?তারও যেন গলা ধরে আসে। দুজনেরই ভিড় অপছন্দ, সব কিছু ছেড়ে অদূরে গিয়ে দাঁড়ায় তারা দুজনে। - তোমাকে এভাবে এখানে দেখবো.. - ভাবতে পারোনি তাই না? আমিও ভাবিনি কখনো তোমার সাথে আবার দেখা হবে। আবার নতুন করে বুকের যন্ত্রণাটা তাজা হয়ে উঠবে। অপরাহ্ন কে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ঈশিতা বলে ওঠে। - আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি ঈশা.. আচ্ছা, আবার নতুন করে শুরু করা যায় না। অপরাহ্ন ঈশিতার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে ওঠে। - কি বলছো অপরাহ্ন? আমি বিবাহিতা.. আমার স্বামী একজন ডক্টর। যেটা ভেঙে গেছে তা আর জোড়া লাগা সম্ভব নয়। ঈশিতা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। - আমিও বিবাহিত ঈশা, শুনেছি তুমি আমার জন্য আর অপেক্ষা না করেই অন্য কারো সাথে ঘর বেধেছো? তাই মায়ের কথা রাখতে অপরাজিতাকে... - থাক সেসব..আমি আসছি..বুকের গহীনে কান্না চেপে ঈশিতা বলে ওঠে। - চলে যাচ্ছো.. আর একটু থেকে যাও প্লিজ.. - আমি তো থাকতেই চেয়েছিলাম অপরাহ্ন, কিন্তু তুমিই জায়গা দাওনি।


এখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। ঈশিতা আর দাঁড়ায় না, সে গটগট করে পেনসিল হিলের শব্দ করে ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে যায়। অপরাহ্ন ঈশিতার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঈশিতার ফর্সা শরীরে কালো রঙের জর্জেট শাড়িটা যেন লেপ্টে রয়েছে,পেছনের খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে টেনে সামনে নিতেই খোলা পিঠ আর কোমর এর ফাঁকা জায়গাটা প্রকাশ্যে আসে যা যেকোন পুরুষের নজর কাড়তে বাধ্য। দশ বছর আগে ঈশিতা তখন কলেজের থার্ড ইয়ার আর অপরাহ্ন ডাক্তারি পড়তে বিদেশ পাড়ি দেবে। সেদিনই শেষ দেখা হয়েছিল তাদের দুজনের, খুব কেঁদেছিল সেদিন ঈশা। সেই ছোট্ট থেকে তাদের একই সাথে একই বাসে স্কুলে যাওয়া। ঈশিতার পুতুলের বিয়ে দিতে গিয়ে একদিন তারাই মিছিমিছি বর বউ সেজে বিয়ে করে নিয়েছিল আর তাই দেখে বাড়ির বড়রা সেদিন হেসেই কুটোপাটি খেয়েছিল। একটু বড় হতেই দুজনের স্কুল আলাদা হতেই অপরাহ্ন আর ঈশিতা লুকিয়ে লুকিয়ে খুব কেঁদেছিল, তবে তাদের মেলামেশাটা বন্ধ হয়নি। বাড়ির সামনের পলাশ ফুল গাছে দোলনা বেঁধে দিয়েছিল ঈশিতার কাকা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতেই অপরাহ্ন ছুটে চলে আসতো ঈশিতার কাছে, ঈশিতাকে দোলনায় বসিয়ে পেছন থেকে ঠেলে দিত অপরাহ্ন। টিফিনের টাকা জমিয়ে ঈশিতার জন্মদিনে উপহার কিনে আনতো ছোট্ট অপরাহ্ন। লাল রঙের বেলোয়ারি চুড়ি, কোন বার টিপের পাতা, কোনবার ফুল এনে চুলে গুজে দিত ঈশিতার। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক। তাদের বন্ধুত্ব কখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিল বুঝতেই পারেনি তারা দুজনে। তারা যে শুধুও বন্ধু, এতে যে কোন খাদ নেই, কিন্তু এই সম্পর্ক যে অন্য পথে যাচ্ছে তা বুঝতে বাকি ছিল না ঈশিতার পরিবারের। দুজনের একসাথে দুর্গা পূজায় অঞ্জলি দেওয়া, বসন্ত পঞ্চমীতে শাড়ি পড়ে কলেজে যাওয়া কোন কিছুই বাদ পড়তো না তাদের। টিউশুনির প্রথম মাইনের টাকা দিয়ে ঈশিতার জন্য হলুদ জামদানি কিনে এনেছিল জন্মদিনের উপহার হিসেবে, বড় হওয়ার সাথে সাথে উপহারটাও তো বড়ই হবে।দোলনায় দোল খেতে খেতে একদিন ঈশিতা জিজ্ঞেস করেছিল, "আচ্ছা অপরাহ্ন তুমি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে না তো? "-ধুর পাগলি কোথায় যাব? যাবি তো তুই। তোর শ্বশুর বাড়ি। কথাটা বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠেছিল অপরাহ্ন কিন্তু নিশ্চুপ ছিল ঈশিতা।


 তখন ফার্স্ট ইয়ার পড়ছে ঈশিতা। এদিকে অপরাহ্ন রেজাল্ট ভালো করেছে সেই খবর দিতে ঈশিতার বাড়ি গিয়েছিল সে, আর সেদিনই প্রথম কেঁদেছিল অপরাহ্ন। তারই কিনে দেওয়া লাল ব্লাউজ আর হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি পড়ে মাথার খোপায় রজনী গন্ধা গুজে চায়ের ট্রেটা হাতে নিয়ে কয়েকজন অতিথিকে পরিবেশন করছে সে৷ ছেলে ডাক্তার,বাড়ি গাড়ি সব আছে, বাপের একটাই ছেলে এসব শুনে ঈশিতার বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে রাজি হয়। অপরাহ্ন সবটাই আড়াল থেকে শুনতে পায়। কথা গুলো শুনেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে তার, যার কারণ তার অজানা। পাত্র পক্ষ চলে যেতেই বিয়েতে বাধ সাধে স্বয়ং ঈশিতা। " আমি এই বিয়ে করতে পারবো না বাবা। আমি অপরাহ্ন কে ভালোবাসি, আর তাকেই বিয়ে করবো। " কথাটা উচ্চস্বরে স্পষ্টভাবে সকলের সামনে বলেছিল ঈশিতা। ঈশিতার বাবার বলিষ্ঠ হাতের থাপ্পড় সজোড়ে এসে লেগেছিল ঈশিতার গালে আর তখনই মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সে। "যার চাল নেই চুলো নেই, ভিখিরি ঘরের ছেলে একটা, জাত পাতের তো কোন বালাই তার ঘরে তোকে বিয়ে দেওয়ার থেকে তোকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবো "।ঈশিতার বাবার মুখ থেকে অমন কথা শোনার পর অপরাহ্নের আর সাহস হয়নি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। -ঈশা.. সে কি বলছে? আমাকে ও ভালোবাসে? কই আমি তো এতদিন এটা বুঝতে পারিনি। কখনো ভাবিনি ঈশা কে ছেড়ে থাকতে পারবো না আমি। সে আজ সকলের সামনে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছে। দুচোখ ভরে অশ্রু নিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিল সে। এরপর পড়াশোনার অছিলায় দুবছর বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছিল ঈশিতা তার একটাই কারণ সে চেয়েছিল অপরাহ্ন কিছু একটা করুক।


নিজের পায়ে দাড়াক। কিন্তু অপরাহ্ন ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে একটা সময় অপরাহ্ন দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছিল ঈশিতার সাথে। অপরাহ্ন কোথায় গেছে কেন গেছে কিছুই জানে না ঈশিতা। একদিন পলাশ গাছটার নীচে অপরাহ্ন এসে জানায়," বিদেশ যাচ্ছি, ডাক্তারি পড়তে। তুমি ভালো থেকো। " কবে ফিরবো জানি না। আমার জন্য অপেক্ষা কোর না। " দুজনেই সেদিন অশ্রুবন্যা বইয়ে ছিল। সেদিনের পর আজ আবার দেখা। অপরাহ্ন ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায় সেখানে যেখানে ডঃ অর্পন মুখার্জী মদের নেশায় বিভোর। দুজনেই নিজেদের মধ্যে বার্তালাপ করে যা তারা ছাড়া আর কারও বোঝার উপায় নেই সেই শোরগোলে। মাদকাসক্ত ডঃ অর্পনকে নিয়ে কোন মতে ড্রাইভার গাড়িতে তোলে, ঈশিতাও গাড়িতে উঠতেই, ড্রাইভার স্টার্ট দেয়। মধ্যরাতে ইশিতার ফোনটা বেজে ওঠে। ঘুমের ঘোরেই আধবোজা চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটি অচেনা নম্বর। ফোনটা কেটে দেয় সে। আবারও বেজে ওঠে,এবারেও সে ফোন কেটে দিতেই মোবাইলের স্ক্রিনে একটি ম্যাসেজ ভেসে ওঠে। " আগামীকাল বিকেলে গঙ্গার তীরে দেখা কোরো প্লিজ।"অপরাহ্ন "  ম্যাসেজটা দেখেই তারই পাশে বিছানায় শায়িত মদের নেশায় বিভোর নিজের স্বামী ডঃ অর্পণের দিকে দৃষ্টি ফেলে। পরদিন বিকেলে, দশ বছর আগে দেওয়া অপরাহ্নের জামদানি শাড়িটা পড়ে নিজেকে তৈরী করে সে বেড়িয়ে পড়ে। গঙ্গার থেকে অদূরে একটি গামারি গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ায় সে। কেন এসেছে সে অপরাহ্নের ডাকে। সে তো তার জীবনের অতীত,এখন সে অন্য কারও স্ত্রী।


কিন্তু মনের মধ্যে যে এখনও অপরাহ্নের উপস্থিতি বিরাজমান। অনেক অপেক্ষা করার পরও যখন অপরাহ্ন তার জীবনে ফিরে আসেনি, তখন সে বাড়ির পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসেছিল, সে ভেবেছিল তার এই নতুন মানুষটি ধীরে ধীরে তার ভালোবাসা দিয়ে হয়তো অপরাহ্ন কে ভুলিয়ে দেবে। ভুলিয়ে দেবে অতীতের সমস্ত স্মৃতি। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে নতুন সংসার গড়ে তুলতে চেয়েছিল সে। স্বামীর কাছে একটু ভালোবাসা, একটু স্পর্শ, একটু স্ত্রীর অধিকার ছাড়া আর তো কিছু চায়নি সে। কিন্তু তার স্বামী বিয়ের এই দশবছরে তাকে দেয়নি স্ত্রীর অধিকার, আবেগ মেশানো স্পর্শ করেনি তাকে। এত বছরেও সে যে নিঃসন্তানই রয়ে গেছে, শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়ির সবাই শুধু এটাই জানতে চায়, নতুন অতিথি কবে আসছে। কিন্তু কেউ একটাবার তার কথা, সেই ঈশিতার কথা কেউ জানতে চায়না যে সে কেমন আছে? অপরাহ্নকে না পাওয়া, স্বামীকে পেয়েও তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, মাতৃত্বের স্বাদ না পাওয়ার জ্বালা সমস্ত ভোগ করতে করতে হাফিয়ে উঠেছে সে। কাকে বলবে সে এত্ত সব কথা। শহরের মাঝে অট্টালিকা আর দালান কোঠার ভেতরে গুমড়ে মরছে দিনের পর দিন ঈশিতার সত্তা। আজ যখন অপরাহ্ন তাকে কাছে ডেকেছে তখন আর সে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। পুরোনো অতীত যেন সতেজ হয়ে ওঠে। এসব কথা ভাবতেই ভাবতেই ঈশিতা হঠাৎই তার পিঠে অদ্ভুত স্পর্শ অনুভব করে। কখন যেন অপরাহ্ন নিশব্দে সেখানে উপস্থিত হয়ে ঈশিতার ব্লাউজের খোলা পিঠে আলতো চুম্বন করে। শিউরে ওঠে ঈশিতা। পেছন ফিরতেই তার ওষ্ঠ যুগলে হাত রাখে অপরাহ্ন। -সসসসস....কিচ্ছু বোল না। শুধু তোমার ওই মায়াবী চোখে আমাকে হারিয়ে যেতে দাও।


তোমার মতন কাজল কালো নয়ন আর কারও দেখিনি ঈশা। তোমার শরীরে গন্ধ আমার শরীরে মাখতে ইচ্ছে করে। প্লিজ এবারে আর ফিরে যেও না। ঈশিতা সড়িয়ে দেয় অপরহ্নের হাত, সেখান থেকে সড়ে যেতে নেয়, কিন্তু বাধা পায় সে। অপরাহ্ন তার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। ঈশিতার দু গালে দু হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে অপরাহ্ন।ঈশিতার ওষ্ঠের কাছে নিজের ওষ্ঠযুগল নিয়ে যেতেই এক লহমায় সড়িয়ে নেয় নিজেকে। - এ হয় না অপরাহ্ন। আমি অন্য কারও স্ত্রী.. তুমিও তো কারও স্বামী। কান্না জড়ানো গলায় বলে ওঠে। - সমাজের চোখে এই ভদ্র সম্পর্কটা আর কতদিন নিজে কষ্ট পেয়ে টিকিয়ে রাখবে বলো তো? শুধু দায়িত্ব, কর্তব্য এসব করতে করতেই জীবনটা শেষ। ভালোবাসা আর কোথায় পেলাম।


 অপরাজিতাকে শুধু মায়ের কথায় বিয়ে করেছিলাম। ভালো তাকে বাসতে পারিনি। তবে স্ত্রীর অধিকার দিয়েছি, কিন্তু বিয়ের ছয় বছর পর আমরা আজও নিঃসন্তান। আর তুমি? তুমি তো স্ত্রীর অধিকার টুকুও পাওনি তাই না। অপরাহ্নের কথায় ডুকরে কেঁদে ওঠে ঈশিতা।- বাবা মা শুধু, টাকা সম্পত্তি বাড়ি গাড়ি দেখেই তোমাকে বিয়ে দিয়েছিল বোঝার চেষ্টা করেনি তুমি কি চাও। আর আজ তুমি সেই সমাজের কথা ভাবছো?নিরুত্তর ঈশিতা অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছে। অপরাহ্ন ঈশিতার গালে হাত ছুইয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে... আমি তোমায় ভালোবাসার রঙে রাঙাতে চাই ঈশা.. তুমি রঙিন হতে চাও না? বর্ণহীন জীবন ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারো না। সেদিন ছলছল নয়নে ঈশিতা দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে ছিল অপরাহ্নের দিকে। তারপর প্রতিদিন তাদের মেলামেশা আবার নতুন করে শুরু হয়। নতুন করে চাওয়া পাওয়া, আকাঙ্ক্ষা, সবই পূর্ণতা পায় একে অপরের কাছে। এমনই এক বিকেলে তারা দুজনে দেখা করতে যায় গঙ্গার তীরে। দুজনে সকলের অগোচরে হাতে হাত ধরে হাটতে থাকে। এমন সময় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। তারা কোনরকমে আধভেজা শরীরে অপরাহ্নের গাড়িতে গিয়ে বসে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে। শাড়ির আঁচলটা দিয়ে মাথার চুল গুলো সামনে এনে মুছতে থাকে সে। বৃষ্টিস্নাতা ঈশিতাকে যেন আজ আরও আকর্ষণীয় লাগছিল। অপরাহ্ন এগিয়ে যায় ঈশিতার দিকে, তার ঘাড়ে আলতো একটা চুম্বন করে। চমকে ওঠে ঈশিতা। দুজনে দুজনের দিকে দৃষ্টি ফেলে, একে অপরের ওষ্ঠ যুগল কাছা কাছি আসে। ভালোবাসার পরশে চোখ বন্ধ করে ফেলে ঈশিতা। অপরাহ্নের শার্টের কলার ঈশিতার হাতের মুষ্টিতে দুমড়ে মুচড়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা, চাহিদা আজ যেন পূর্ণতা পেতে চলেছে। জোড়ে জোড়ে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে, গাড়ির জানালায় বৃষ্টির ঝাপটা লাগতেই বিন্দু বিন্দু জল গুলি গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। 


অপরাহ্ন আর ঈশিতা একে অপরের মধ্যে লীন হয় যায়। তাদের বস্ত্র যেন লুটোপুটি খায়। কেটে যায় অনেকটা সময়। বাস্তবে ফিরে আসতেই নিজেরা এক অজানা সংকোচ অনুভব করে। উর্দ্ধশ্বাসে গাড়ি ছোটায় অপরাহ্ন। দুজনের মুখেই তখন কোন কথা নেই। বাইরে তখনও বৃষ্টি হয়ে চলেছে। বাড়ির অদূরে ঈশিতাকে নামিয়ে দেয় অপরাহ্ন। ঈশিতা আর পেছন ফিরে তাকায় না। দৌড়ে তার বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। চোখ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অশ্রুবন্যা। যা বৃষ্টির জলে বোঝা দুরূহ। হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতেই হঠাৎ সামনে বাধা পায় ঈশিতা।সামনে দাঁড়িয়ে স্বামী, ডঃ অর্পন। নিজের স্বামীর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে না। ঈশিতা নিজেও জানে না সে কি সত্যিই অন্যায় করে ফেললো তবে। তার স্বামীর চোখে আজ অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে সে।বাথরুম থেকে টাওয়ালটা নিয়ে এসে মাথা মুছিয়ে দেয় তার। "কই এমন ভালোবাসা তো আগে ছিল না।"এরপর একমাস আর অপরাহ্নের সাথে দেখা করেনি ঈশিতা। তবে ম্যাসেজে কথা হয়েছে কয়েকবার।ডঃ অর্পন এখন অনেক বদলে গেছে, সে নিজেও জানে না এমন বদলের কি কারণ। একদিন শরীরে অসুস্থতা অনুভব করায় ডাক্তার দেখায় ঈশিতা। জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। তার এই কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে ডঃ অর্পণ। কিন্তু ব্যতিক্রম হয় ঈশিতা। গাইনোলজিস্ট অপরাহ্ন ঈশিতার চেক আপ করে জানতে পারে ঈশিতা জমজ সন্তানের মা হতে চলেছে। যা ডঃ অর্পণের অজানাই থেকে যায়। অপারেশন টেবিলে অপরাহ্ন বলে ওঠে, -তোমার একটা সন্তান আমায় দিতে পারো না ঈশা। বড় আগলে রাখবো আমাদের ভালোবাসার স্মৃতিটাকে। প্লিজ.. না কোর না। আমি কথা দিচ্ছি আর ফিরে আসবো না। সেদিনের পর কথা রেখেছিল অপরাহ্ন। জমজ সন্তান জন্মানোর পর ঈশিতার কপালে আলতো চুম্বন করে একটি সন্তান নিয়ে অপারজিতার কোলে তুলে দেয় অপরাহ্ন। "সন্তানের জন্ম দিয়ে মা মারা গেছে আজ থেকে তুমিই ওর মা " অপরাহ্ন অপরাজিতাকে বলেছিল। এদিকে সন্তানের মুখ দেখে ডঃ অর্পণ ঈশিতার হাত ধরে বলে ওঠে,- আমি তোমাকে সত্যিই এতদিন ভালোবাসা দেইনি, কোন কিছুতেই অধিকার দেইনি, তবে এই সন্তান নিশ্চই আমাদেরই, আমার অজান্তেই হয়তো তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে ফেলেছিলাম নইলে এত বড় প্রাপ্তি হোত কি করে।। ঈশিতার চোখ গড়িয়ে জল নেমে আসে। মুখ ফুটে বলতে পারে না সে তার নিজের স্বামীকে যে এ যে তার সন্তান নয় এ যে তার অপরিণত ভালোবাসার ফল। অপরাহ্নকে যে আর তার আবারও ফিরে পাওয়া হোল না। তার ভালোবাসা আজও অপরিণতই রয়ে গেল।  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance