ঘটনার নেপথ্যে !!
ঘটনার নেপথ্যে !!


না, রোগটা যে কি কোনো ডাক্তার ধরতে পারছে না। হাতের মধ্যে প্রথমে কিছু গুড়ি গুড়ি লাল দানার মত বেরিয়েছিল, তারপর সেগুলো বড় বড় ফোস্কা হয়ে ফেটে যাচ্ছে। রক্ত পুঁজ গড়াচ্ছে, তার সাথে দুর্গন্ধ। যন্ত্রণাটা সহ্য করতে করতে মাঝে মাঝে পাগল পাগল লাগে বৈশালীর।
ল্যাবের কোনো কেমিক্যাল থেকে রিএকশনে হয়েছে এমন। কিন্তু সব রকম টেষ্ট করেও ডাক্তাররা কমাতে পারছে না ওর হাতের এই ঘা। ফট করে দেখলে মনে হয় পুড়ে গেছে। দুর্গন্ধে কেউ সামনে আসে না। প্রবাল তো আসা ছেড়ে দিয়েছে শেষ এক মাস। বায়প্সি তেও কিছু আসেনি।
ডাক্তাররা বলেছে পচন আটকাতে এবার হাত দুটোই বাদ দিতে হবে। দু চোখের নোনা জল মোছারও ক্ষমতা নেই ঐ হাতের। আজ দু মাস বৈশালী ল্যাবে যায় না। হাত বাদ গেলে জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে। লোকের দয়ায় বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু এই হাতে যে সেটাও সম্ভব নয়।
হাত দুটোর দিকে আজকাল তাকাতে পারে না ও।
মুনিয়া আজ দেখতে এসে জানিয়ে গেছে প্রবালের নতুন আ্যফেয়ার চলছে সেকেণ্ড ইয়ার আর্টসের নয়নার সাথে। রাগে দুঃখে গা জ্বলে যায় বৈশালীর।
মাঝরাতে ফ্যানটা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থেমে যায়। প্যাঁচ প্যাঁঁচে গরমে উঠে বসে বৈশালী ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। হৃৎপিণ্ডটা যেন এক লাফে বেরিয়ে আসতে চায়.... ওটা কে!! ফ্যান থেকে সাদা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঝুলছে নিতা। মুখটা বিভৎস পোড়া, জিহ্ব
বেরিয়ে ঝুলছে। হঠাৎ গলার ফাঁসটা খুলে হাওয়ায় ভেসে আসে নিতার শরীর, গলে পড়া চোখ মেলে তাকায় সে, ঐ পুড়ে উল্টে যাওয়া ঠোঁটের ফাঁকে ফুটে ওঠে হাসির রেশ, -''সেদিন সলিউশনটা ইচ্ছা করেই বেশি ঢেলেছিলি তুই, তাই না? প্রবাল কে ছিনিয়ে নিতে পারিসনি সেই রাগে আমার মুখটাই পুড়িয়ে দিয়েছিলি তুই। কিন্তু সবাই ওটাকে দুর্ঘটনা বলল। তোর চোখের জলে গলে গেলো সবাই। পোড়ার যন্ত্রণা কেমন টের পাচ্ছিস তো!! সেটাও কাটিয়ে উঠেছিলাম জানিস। কিন্তু আমার এই বিভৎস মুখ দেখে যখন প্রবাল দূরে চলে গেলো সহ্য হয়নি। ফ্যানে ঝুলে শেষ করেছিলাম নিজেকে। আজ নিশ্চই সেই জ্বালাটা তুই টের পাচ্ছিস। যে হাত দিয়ে আমার জীবনটা তছনছ করেছিলি সেই হাতের কারণেই আজ তোর জীবনটাও ঘেঁঁটে ঘ । পোড়া মুখ নিয়েও হয়তো বাঁচা যায়। কিন্তু হাত ছাড়া তো তুই পঙ্গু, অথর্ব। ফ্যানে ওড়না বাঁধতেও পারবি না। '' খিলখিল করে হেসে ওঠে নিতা।
দু হাতে কান চাপা দিতে গিয়ে হাতের যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে বৈশালী।
-''দেখ, তোর জন্য পথ করে দিলাম। যন্ত্রণা থেকে মুক্তির এই একটাই উপায়। '' ফ্যানে বাধা ওড়নাটার ফাঁসটা দেখায় নিতা। টুলটা টেনে এনে খাটের উপর বসিয়ে দেয়।
সকালে বৈশালীর ঝুলন্ত লাসটা নামিয়ে একটু অবাক হয় ফরেনসিক টিম, টুলে বা ফাঁসের গায়ে পুঁজ রক্ত বা ফিঙ্গার প্রিন্ট কিছুই নেই। অথচ মেয়েটার হাতে দগদগে ক্ষত!! এটা কি করে সম্ভব !!